আবোল তাবোল ভাবনা।

 বার্ধক্যে আবোল তাবোল ভাবনা।

আমার বার্ধক্যর সাথে একটি রোগও এসেছে - তা হল ক্রণিক কিডনী ডিজিজ । সপ্তাহে দুইবার ডাইলিসিস করতে হয়। বেশ কষ্টদায়ক । হতাশা আক্রমণ করে।এই অসুস্থতার পাশাপাশি নিঃসঙ্গতা আকর্ষন করে। কারণ আমার জীবনের তেপ্পান্ন বছরের পথ চলার সাথী আল্লাহর কাছে চলে যায়। এই নিঃসঙ্গতা এমন নিঃসঙ্গতা যা কঠিন অন্তকরণের অধিকারীকেও ব্যথিত করে তুলে। অন্যের মমতাকে আকর্ষণ করতে চায়। 

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের কাছে নিজেকে রাহমানুর রাহীম হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। মহান আল্লাহ মমতাময়ী মায়ের মত রহমত দিয়ে আমাদের লালন পালন করেন। আমরা যদি ঈমানের দ্বারা তার সাথে সংযোগ করতে পারি তবে এই নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্ত থাকতে পারি।  আল্লাহকে  জেনে অসুস্থতা থেকে উদ্ভুত নিজের ভাষায় তার নিকট দোয়া চাই তবে তাঁর রহমতের দৃষ্টি অবশ্যই তোমার প্রতি আকৃষ্ট করবে। যেহেতু তিনি আছেন, সেহেতু তোমার যত্ন তিনি করবেন। 

বাস্তব প্রমাণ আমি নিজে। আমার আর মন্জুর কোন বার্ধক্য পরিকল্পনা ছিলনা। দুজনেই যেমন আয় করেছি , আবার ব্যয়ও করেছি। বার্ধক্যে কিভাবে চলব তা নিয়ে কখনো ভাবি নি। কিন্তু সব সময় চেষ্টা করেছি ঈমান ও আত্মসমর্পণের দ্বারা আল্লাহর সাথে সংযোগ গড়ে তুলতে।  যেহেতু তিনি আছেন সেহেতু তোমার যত্ন তিনি করবেন।  ঈমান ও আত্মসমপর্ণের দ্বারা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে না তুললে আমাকে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হত। আমার অসুস্থতা, আর্থিক প্রয়োজন, মানসিক প্রশান্তি - সব প্রয়োজনেই আল্লাহকে পাই। 

অনেক সাধারণ ঘটনার গভীরে আল্লাহ্‌র যে ইচ্ছা এবং রহমত  কাজ করে তার স্বরূপ  উপলব্ধি করতে পারি। এই বুঝতে পারাটাই জ্ঞান। তবে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা পূরণের জন্য বান্দাকে অনেক দুঃখ-দুর্দ্দশা, বিপদ-আপদের পরীক্ষা দিতে হয়। যে ধৈর্য্য, সহিষ্ঞুতা , দৃঢ়তা ও প্রার্থনার মাধ্যমে সেই বিপদকে অতিক্রম করতে পারে, সেই পৌঁছাতে পারে নির্দ্দিষ্ট মঞ্জিলে। 

পড়ছিলাম পবিত্র কুরআনে সূরা ইউসুফ। নবী ইউসুফ ছিলেন মহাজ্ঞানী। তাঁর শৈশব শুরু হয় মাতৃহারা হয়ে। সৎ ভাইদের হিংসার কারণে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে, মিশরে ক্রীতদাস রূপে বিক্রী হন। ইউসুফের বিপদ ও দুর্যোগের মধ্যে নিহিত ছিল মহান আল্লাহর মঙ্গলময় ইচ্ছা। ইউসুফ ধৈর্য, আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা, আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ - আল্লাহ তাঁকে রহমত দান করেন এবং মিশরের শাসনকর্তা হন। আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তিনি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানবতার সেবা করবেন। তাঁর জীবনের উত্থান ও পতনের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ আমাদের জীবনের গুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দিচ্ছেন। আজকে আমাদের কাছে যেটা মনে হচ্ছে ভুল, শয়তানের ফাঁদ বা ষড়যন্ত্র। ভবিষ্যতে তা নাও মনে হতে পারে।  


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url