রোগীদের প্রতিষেধক, সান্তনা এবং ব্যবস্থাপত্র। - ১
মানুষ জীবনে বেঁচে থাকলে নানা রকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে।কেউ হতে পারে ছোট রোগে আবার কেউ হতে পারে দুরারোগ্য রোগে। এই সুস্থতা ও অসুস্থতা দুটোই আল্লাহর নিয়ামত। আমরা এ জন্য সাধারণত আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করি।
আমরা সাধারণ মানুষেরা স্বাভাবিকভাবে রোগ থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাই। আবার সে সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করি। আমাদের বিশ্বাস কুরআনের আয়াতের উপর আমল করে রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং মনে প্রশান্তি আসে।
মানুষ বেঁচে থাকলে জীবনের কোন না কোন সময় জীবন পরিবর্তনকারী শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিবে। যা আমার এখন হয়েছে। ক্রণিক কিডনী ডিজিজের রোগী আমি। ডাইলেসিস করতে হচ্ছে । কানের নীচে গলায় ক্যাথেড্রা ঢুকিয়ে। উঃ! কি বেদনা দায়ক। এই অসুস্থতা এবং চিকিৎসা আমার অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনারে উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ সময় বদীউজ্জামান নূরসীর “রিসালতে নূর” বইটা পড়ি। পড়ার পর আমার চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতি ইতিবাচকে রূপান্তরিত হয়। তিনি এখানে রোগীদের পবিত্র কুরআনের আলোকে সান্তনা ও ব্যবস্থা্পত্র দিয়েছেন।
প্রথম প্রতিষেধকঃ
হে উপায়হীন রোগী! দুঃখ পেও না, ধৈর্যধারণ কর।
তোমার এই অসুস্থতা তোমার দুঃখ নয় বরং একপ্রকার মহৌষধ । কারণটা কি বলছি। ধর, তোমার জীবনটা একটি ’মূলধন’ । এটা এক সময় শেষ হবে। যদি ‘ফল’ পাও তার মানে তুমি লাভ করলে আর যদি ’ফল’ না পাও তবে তুমি লোকসান করলে। আসলে আমাদের জীবনটা যদি আমরা গাফেলত ও আরামের সাথে কাটিয়ে দেই, তবে মনে হয় আমাদের জীবনটা দ্রুত ফিুরিয়ে গেল। সেই সময় ‘অসুস্থতা’ এসে জীবনের আয়ুকে দীর্ঘায়িত করে। আয়ুকে দ্রুত শেষ হওয়া থেকে বাধা দেয়। ধরে রেখে দীর্ঘ করে যাতে ফল দিয়ে শেষ হয়। তাই বলা হয় অসুস্থতা দ্বারা আয়ু দীর্ঘায়িত হয়। একটি প্রবাদ বাক্য সবারই মুখে মুখে প্রচলিত আছে । “বালা-মুসিবতের সময় খুব দীর্ঘ, আরাম ও আনন্দের সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। ”
দ্বিতীয় প্রতিষেধকঃ
হে ধৈর্যহীন রোগী!
ধৈর্যধারণ কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। তোমার এই অসুস্থতার প্রতি মিনিট সাধারণ জীবনের এক ঘণ্টা ইবাদতের সমান হতে পারে। মনে রাখবে- ইবাদত দুই ধরণের। একটি হল ইতিবাচকঃ যেমন- সালাত, দোয়া, যা আমরা জানি ও প্রাকটিস করি। আমিাদের এই ইবাদত সবাই দেখে।
আরেকটি নেতিবাচক ইবাদত। যা একজন ব্যক্তি তার অসুস্থতা ও মুসিবতের সময় অনুভব করে। তখন কিন্তু সে পরিষ্কার (খালিছ) হৃদয়ে দয়াময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অসুস্থতার সাথে যখন জীবন অতিবাহিত হয়। তখন মানুষ আল্লাহর প্রতি কোন অভিযোগ না করেই ইবাদত করে।
একজন ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞতা আদায়কারী রোগীর এক মিনিটের অসুস্থতা এক দিনের ইবাদতের সমান। তাই আমার উপদেশ তোমার এক মিনিটের জীবনকে হাজার মিনিটের সমান তোমার দীর্ঘায়ু লাভ করিয়ে দেয়া অসুস্থতার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
তৃতীয় প্রতিষেধকঃ
হে সহায়হীন রোগীঃ
আমরা সাধারণত মনে করি মানুষ এই পৃথিবীতে আনন্দ উৎসব এবং জীবনের স্বাদ আস্বাদনের জন্য এসেছে। আসলে কি তাই - নিজেকে প্রশ্ন করুন। বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্য করুন - এই পৃথিবীতে আগমনকারীর অনবরত প্রস্থান, শিশু থেকে যুবক, এবং যুবকদের বৃদ্ধ হওয়া, সব সময় নিঃশেষ ও বিচ্ছিন্নতার গহ্বরে পতিত হওয়া। মানুষ এই প্রাণী জগতের সবচেয়ে পরিপূর্ণ, সর্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মালিক। প্রাণীকুলের সম্রাট। তারপরেও দেখুন - অতীতের তিক্ত ও মিষ্ট অভিজ্ঞতাসমূহ এবং ভবিষ্যতের বালা-মুসিবতের কথা চিন্তা করে বর্তমানে পশুর তুলনায় নিচু, দুঃখময় ও কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করে। এতে কি বোঝা যায় ?- মানুষ এই দুনিয়ায় শুধু মাত্র সুন্দর, আনন্দ ও শান্তিতে বসবাস করার জন্য আসে নি। মানুষকে আল্লাহ এক বিশাল মূলধন দিয়েছেন। তা হচ্ছে ‘আয়ু’। মানুষকে ব্যবসার দ্বারা অনন্ত ও চিরস্থায়ী জীবনের শান্তি অর্জনের জন্য কাজ করতে পাঠিয়েছেন।
যদি তোমার ‘অসুস্থতা’ না থাকত তবে তোমার মধ্যে গাফেলত ও উদাসীনতার জন্ম নিত এবং দুনিয়াকে একটি আমোদপূর্ণ স্থান হিসাবে গ্রহণ করতে। পরকাল, কবর,মৃত্যু - কিছুই মনে রাখতে না। মূল্যবান জীবনের মূলধনকে সম্পূর্ণ অর্থহীন কাজে ব্যবহার করতে। এই অসুস্থতা তাৎক্ষণিকভাবে তোমার চোখ খুলে দেয়। তোমার দেহকে বলেঃ “তুমি অমর নও, অভিভাবকহীন নও, তোমার দায়িত্ব আছে। অহংকার ত্যাগ কর, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর, চিন্তা কর। কবরে যেতে হবে জানো, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত কর। “ - এ ক্ষেত্রে আমার অসুস্থতা প্রতারণাহীন উপদেশদাতা এবং সতর্ককারী এক পথ প্রদর্শক। অসুস্থতাকে ধন্যবাদ। হে আল্লাহ! আমাকে অসুস্থতায় সবর ও ধৈর্য দাও। আমীন।
চতুর্থ প্রতিষেধকঃ
হে অভিযোগকারী রোগী!
অভিযোগ করার অধিকার তোমার নেই। বরং কৃতজ্ঞতা ও সবর কর। তোমার দেহ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তোমার সম্পদ নয়। তুমি তা তৈরী করনি কিংবা ক্রয় করনি। তার মানে এগুলোর মালিক তুমি নও। অন্য কারো সম্পদ। যে তার মালিক সে তার ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবে।
এখানে একটি উদাহরণ দেয়া যাক।
একজন ধনী শিল্পী এক দরিদ্র লোককে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কারুকার্য খচিত পোশাক পরিয়ে মডেল বানাল। এখন যদি এই ধনী শিল্পী এই কারুকার্যখচিত পোশাক খাট বা কোন পরিবর্তন করে তবে কি কারুকার্যখচিত বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি কি বলতে পারবে “ আমাকে কষ্ট দিচ্ছ। সৌন্দর্য বর্ধনকারী পোশাকটিতে পরিবর্তন এনে আমার সৌন্দর্য নষ্ট করছ। “ নিজেকে প্রশ্ন করুন - এই কথা বলার অধিকার আপনার আছে কি-
হে রোগী! এই উদাহরণ সামনে রেখে বুঝতে চেষ্টা কর তোমার চোখ, কান, বিবেক-বুদ্ধি ও কালবের মত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুন্দরতম নামসমূহের (আসমাউল হুসনা) শৈল্পিক নিদর্শন। এই শৈল্পিক নিদর্শন বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে। যেমন - তুমি ক্ষুধার্ত অবস্থায় “রাজ্জাক” নাম দিয়ে চিনতে পার। অসুস্থ অবস্থায় চিনতে পার “শাফী” নামকে। “আসমাউল হুসনার” এক অংশের হুকুমসমূহের মধ্যে দুঃখকষ্ট প্রদর্শন করে। এর মধ্যে হিকমত ও রহমতের রশ্মি থেকে আসা আলো দিয়ে যদি পর্দা উন্মোচিত হয় , তাহলে দেখবে ভয়ংকর ও ঘৃণ্য অসুস্থতার আড়ালে আকর্ষণীয় ও সুন্দর অর্থ খুঁজে পাবে।
পঞ্চম প্রতিষেধকঃ
হে অসুস্থতায় আচ্ছাদিত রোগাক্রান্ত রোগী!
আমার বর্তমান সময়ে আমার অভিজ্ঞতার দ্বারা এ বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমার অসুস্থতা আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ। এটা আল্লাহর আমার প্রতি রহমানী উপহার। আমি অযোগ্য। তা সত্বেও আমি গত আট নয় বছর থেকে দেখেছি কিছু মানুষ সুস্থতা লাভের জন্য দোয়া চাইতে বা শিখতে আসে। আমি দেখেছি তাদের ও আমার মাঝে যৌবনের উন্মাদনা নেই। আমাদের গাফলত থেকে উদ্ভুত তীব্র জৈবিক চাহিদা গুলো এক অর্থে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখছে। সহ্য সীমার মধ্যে অসুস্থতা আল্লাহর দয়া ও দানকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
আমি বলতে চাই, “ হে আল্লাহ, আমি অসুস্থতার বিরোধী নই। অসুস্থতার জন্যই আমি তোমাকে বুঝতে পারছি। দু’আ করছি। অসুস্থতা আমাকে পুরোপুরি সচেতন না করা পর্যন্ত আমি যেন ধৈর্য ধারণ করি। আমার বিশ্বাস অসুস্থতা তার দায়িত্ব শেষ করার পর খালিক রাহীম (দয়াময় স্রষ্টা) ইনশাল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করবেন। আমি আরো বলতে চাই, আমার মত অনেক মানুষ সুস্থতার কারণে উদাসীনতায় পড়ে সালাতকে ত্যাগ করে এবং কবরকে নিযে চিন্তা করে না। আমরা আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ার জীবনের এক ঘণ্টার বাহ্যিক আনন্দের জন্য আখিরাতের অনন্ত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করছি। ধ্বংস করে দিচ্ছি। অথচ অসুস্থতার অবশ্যম্ভাবী গন্তব্যস্থল যে কবর হতে পারে ভুলে যাচ্ছি। সে অনুযায়ী আমল করছিনা। অথচ এখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, “অসুস্থতাই তোমার জন্য সুস্থতা আর তোমার মত অনেকের ক্ষেত্রে সুস্থতাই হচ্ছে মূলত অসুস্থতা।”
ষষ্ঠ প্রতিষেধকঃ
হে কষ্টসমূহের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী রোগী!
অতীতের আনন্দঘন দিন এবং বালা-মুসিবতের দিনগুলো স্মরণ কর - হয় তুমি, ‘আহ’ অথবা ‘উহ’ বলবে অথবা ‘আলহামদুলিল্লাহ বলবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের কষ্টের সমাপ্তির পর শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ কষ্টের সমাপ্তি আনন্দের। আসলে মানুষের দুঃখকষ্ট ও বালা-মুসিবতের বিদায় আমাদের মনে আনন্দ রেখে যায় এবং কৃতজ্ঞ হয়। কষ্টের সমাপ্তি থেকে আসা মুক্তি। আর এই মুক্তিতে থাকে সুপ্ত আনন্দ। এখন তোমর বর্তমান সাময়িক অসুস্থতার ফলাফল এবং অন্তর্নিহিত সওয়াবের কথা চিন্তা কর। ইনশাল্লাহ এটাও চলে যাবে । আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর।
এর অপর আরেকটি দিক ভাবি। এই দুনিয়ার আনন্দের কথা চিন্তা করি। যদি দুনিয়া চিরস্থায়ী হয়, মৃত্যু না হয়, বিচ্ছিন্নতা ও নিঃশেষের বাতাস না বয়, বিপদসংকুল ভবিষ্যত না আসে তাহলে কি হত - তহলেও কি আমরা দুঃখ পেতাম-
উপায় নেই । কারণ এই দুনিয়া একদিন আমাদের ‘বেরিয়ে যাও’ বলবেই। একদিন সে আমাদের আর্তনাদ না শোনার জন্য তার কান বন্ধ করবেই।
তাই আমার নিবেদন, অসুস্থতার সতর্কবাণী দ্বারা এখনই আমাদের দুনিয়ার প্রতি প্রেমকে পরিত্যাগ করা উচিত। আমাদের অন্তর থেকে দুনিয়ার প্রতি প্রেম পরিত্যাগ করা উচিত।
অসুস্থতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় “তোমার শরীর পাথর বা লোহা থেকে তৈরী নয়। অনবরত পৃথক হয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য বহনকারী বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী। কাজেই অহংকার ছাড়, দুর্বলতাকে বুঝ, মালিককে চিন, তোমার দায়িত্বগুলোকে জান, দুনিয়াতে কি জন্য এসেছ - তা শিখ। যেহেতু দুনিয়ার আনন্দ ধারাবাহিক ও মজাদার হচ্ছে না। ঐ আনন্দ হারানোর জন্য অসুস্থতাকে বাহানা বানিয়ো না। অসুস্থতার মাঝে নিহিত আধ্যাত্মিক ইবাদত ও আখিরাতের সওয়াবের কথা চিন্তা কর এবং তা থেকে আনন্দ পাবার চেষ্টা কর।
সপ্তম প্রতিষেধক।
সুস্থতায় আনন্দকে হারানো হে রোগী!
তোমার অসুস্থতা সুস্থতার মাঝে যে নিয়ামতের স্বাদ আছে তাকে ধ্বংস করে না বরং তার স্বাদকে আরো বাড়িয়ে দেয়। কারণ কোন কিছু যদি সব সময় বিরাজমান থাকে তবে তা তার প্রভাব হারিয়ে ফেলে। এরফলে আহলে হাকীকত এবং বাস্তববাদীগণ একমত যে ” কোন কিছুকে তার বিপরীত অবস্থা থেকে অনুভব করা যায়।” যেমন - অন্ধকার না থাকলে আলো বোঝা যায় না, স্বাদহীন হয়। ঠান্ডা না থাকলে গরম বোঝা যায় ন, আনন্দহীন হয়।ক্ষুধা না থাকলে খাবারে মজা পাওয়া যায় না। অসুস্থতা না থাকলে সুস্থতার আনন্দ উপলব্ধি করা যায় না। অসুস্থতা থাকলে সুস্থতা বিস্বাদ হয়।
এ পৃথিবীতে সব ধরণের নিয়ামতের যেমন সুস্থতা ও সবলতা স্বাদ আস্বাদনের ক্ষমতা যেমন দেয়া হয়েছে তেমনি অসুস্থতা ও দুঃখ-কষ্ট দেয়া হয়েছে।
তাই নিজেকে জিজ্ঞাস্যঃ তোমার মাথায় হাত অথবা পেটে এই অসুখ যদি না হত তাহলে মাথা, হাত ও পেটের সুস্থতায় বিদ্যমান স্বাদ ও আনন্দের স্থায়ী নিয়ামত কি ভাবে পেতে- কিভাবে শুকরিয়া আদায় করতে -
অষ্টম প্রতিষেধকঃ
আখিরাত নিয়ে চিন্তিত হে রোগী!
অসুস্থতা সাবানের মত পাপ সমূহর ময়লাগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে। হাদীসে আছে অসুস্থতা হচ্ছে গুনাহ মাফের উসিলা । গাছের পরিপক্ক ফলগুলি যেমন গাছগুলোকে নাড়া দিলে পড়ে যায় - তেমনি ঈমানদার রোগীর গুনাহসমূহ অসুস্থতার কাাঁপুনির দ্বারা ঝরে পড়ে।
চিরন্তন জীবনের সার্বক্ষণিক অসুস্থতা হচ্ছে আমার পাপ সমূহ । আসলে আমার অন্তর, বিবেক এবং রূহের জন্য এক ধরণের আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হচ্ছে আমার দুনিয়ার জীবন।
এখন তুমি যদি পাপ সমূহের কথা চিন্তা না কর, আখিরাতকে না জানো , আল্লাহকে না চিনো তবে মনে রেখ তোমার এক ভয়ংকর রোগ হয়েছে । দুনিয়ার সব কিছুর সাথে তোমার অন্তর, রূহ ও নাফসের সম্পর্ক আছে। বিশেষত আখিরাতকে না জানার কারণে মৃত্যুতে চিরস্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা আছে। কারণ তুমি ক্ষত-বিক্ষত এক দুনিয়াসম রোগে আক্রান্ত। তোমার উচিত হচ্ছে তোমার এই ক্ষত বিক্ষত দেহের জন্য “ঈমান” নামক সঠিক প্রতিষেধকের। তোমার বিশ্বাসকে সংশোধন করা দরকার।
যে আল্লাহকে চিনে না, তার জন্য রয়েছে দুনিয়ার সমান বালা-মুসিবত। আর যে আল্লাহকে চেনে তার দুনিয়া নূর ও আনন্দে পরিপূর্ণ যা সে তার ঈমানী শক্তি দিয়ে অনুভব করে। এই ঈমান থেকে যে আধ্যাত্ম্যিক স্বাদ সে পায় তাতে তার অসুস্থতার কষ্টসমূহ চাপা পড়ে যায়।
নবম প্রতিষেধকঃ
হে স্রষ্টাকে জ্ঞাত রোগী!
অসুস্থতার মধ্যে বিদ্যমান দুঃখ ও ভয়-ভীতির কারণ হলো অসুস্থতা অনেক সময় মৃত্যুর উসিলা হয়। সাধারণত দেখা যায় গাফেলতের দৃষ্টিতে মৃত্যু একটি ভয়ংকর জিনিস যা মানুষের মনে ভীতি ও উদ্বেগের জন্ম দেয়।
প্রথমতঃ বিশ্বাস রাখ, মৃত্যুক্ষণ নির্ধারিত। একে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত ঃ মৃত্যু বাহ্যিকভাবে ভয়ংকর মনে হলেও আসলে তা নয়।
কুরআন থেকে প্রাপ্ত নূরের আলোয় আমরা বলতে পারি, মুমিনের জন্য মৃত্যু হচ্ছে “জীবনের দায়ভার থেকে মুক্তি, দুনিয়া নামক পরীক্ষাগার থেকে মুক্তি, শিক্ষা ও পালনের সমষ্টিগত ইবাদতের সমাপ্তি, পরজগতে প্রস্থানকারী বন্ধু ও আত্মীয়র কাছে পৌঁছার উসিলা , প্রকৃত ও আসল চিরস্থায়ী বাসস্থানে গমন।
তাই মৃত্যুকে ভয়ংকর হিসাবে না দেখে রহমত ও শান্তির সূচনা হিসাবে দেখুন।
আল্লাহর ওলিরা মৃত্যুকে ভয় হিসাবে দেখে না। দেখে আরো ইবাদতের মাধ্যমে সওয়াব অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া।
দশম প্রতিষেধকঃ
অপ্রয়োজনীয় কৌতূহলের অধিকারী হে রোগী!
তুমি তোমার অসুখের জটীলতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। এই উৎকণ্ঠা তোমার রোগকে আরো জটীল করে। এখন তুমি যদি আরোগ্য লাভ করতে চাও তবে উৎকণ্ঠিত হয়ো না। অসুখের যে ফায়দাগুলো, সওয়াব এবং তা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যাবে এরূপ চিন্তা কর। উদ্বেগ পরিহার করে অসুখকে সমূলে উৎপাটন কর।
শারিরীক অসুস্থতায় উৎকণ্ঠার কারণে এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা আসে যা রোগকে আরো বৃদ্ধি করে। যদি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সন্তুষ্টির দ্বারা অসুখের মাঝে যে হিকমত আছে তা যদি চিন্তা কর তবে উদ্বেগ দূর হয়। এর রোগের একটি গুরুত্ব পূর্ণ শিকড় উৎপাটিত হয় । আর রোগও কিছুটা কম হয়। এখানে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। মনে কর তোমার এক দিরহাম অসুস্থতা উৎকণ্ঠার দ্বারা ১০ দিরহামের অসুস্থতায় পরিণেত হয়। যদি উৎকণ্ঠা দূর হয় তবে অসুস্থতা দশ ভাগের নয় ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
উৎকণ্ঠা একদিকে যেমন অসুস্থতা বৃদ্ধির কারণ, তেমনি অন্যদিকে ইলাহী হিকমতকে কটাক্ষ, ইলাহী রহমতের সমালোচনা ও খালিক রাহীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে দেখা হয়। ফলে অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পায়।
সোজা কথায় কৃতজ্ঞতা যেমন নিয়ামতকে বৃদ্ধি করে তেমনি অভিযোগ ও অসুস্থতা বৃদ্ধি করে।
উদ্বিগ্নতা নিজেও এক ধরণের অসুখ। আর প্রতিষেধক হল ঔষধের হিকমতকে জানা। যেহেতু তুমি অসুখের হিকমত ও ফায়দাগুলো জানো সেহেতু ঐ অসুখের উৎকণ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে মুক্তি লাভ কর। ‘উহ’ এর বদলে ‘আহ’ বল। “হায় আমার কি হবে” বলার পরবের্তে “আল হামদুলিল্লাহি আলা কুল্লিা হাল” বল।