মানুষ যত অন্যায় ও অধার্মিকতায় আসক্ত হয়, তত তার অন্তদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে।
আজকের চিন্তা।
মানুষ যত অন্যায় ও অধার্মিকতায় আসক্ত হয়, তত তার অন্তদৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে।
সূরা ইয়াসীন পড়ছিলাম। ৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, " আমি তাদের গলদেশে ঘিরে বেড়ী পরিয়েছি, যা তাদের চিবুক পর্যন্ত পৌঁছিয়াছে। ফলে, তাদের মাথাকে উর্ধমুখী করতে বাধ্য করা হয়েছে। [যেনো তারা দেখতে না পায়। ]
আল্লাহ রূপক অলংকারের মাধ্যমে মানুষের নৈতিকতা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহর প্রকৃতির আইনে পরিচালিত হয়। অনেক মানুষ আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর আইন তথা নৈতিক আইনকে অস্বীকার করে। এই নৈতিক আইনসমূহ অস্বীকার করার অর্থ হল নিজের আত্মাকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করা। আল্লাহর জ্যোতি এবং সান্নিধ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা। যেমন স্বার্থপরতা, ঘুষ- দুর্নীতি করা মহাপাপ। যারা এ ধরণের পাপ কাজে নিয়োজিত তারা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। নিজের আত্মসুখ নিয়ে মহাব্যস্ত। তারা আত্ম ত্যাগের যে মহিমা বা মহত্ব বোঝে না। আমাদের চারপাশে যদি আমরা তাকাই তাহলে আমরা বুঝতে পারব। এফ বি খুললে বা দুদকের কাজ পর্যালোচনা করলেই এ চরম সাত্য আমরা উপলব্ধি করতে পারি। যারা এরকম আত্মসুখে নিমগ্ন তারা ভুলে যায় যে, প্রতিটি কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আছে। প্রত্যেক কাজের ফল আছে। ভাল কাজের যেমন ফল আছে তেমনি খারাপ কাজেরও প্রতিক্রিয়া আছে। এই প্রতিক্রিয়া এমন যে পাপীর সমস্ত সত্ত্বাকে সে আচ্ছন্ন করে রাখে। মহান আল্লাহ এরকম অবস্থাকে রূপক অলংকারের মাধ্যমে বলছেন "গলদেশে ঘিরে চিবুক পর্যন্দ বেড়ি পরিয়েছি।" এই বেড়ীটা আর কিছুই নয়। পাপরে বেড়ী যা চিবুক পর্যন্ত প্রসারিত। সে পাপ চিন্তা ছাড়া আর কোন কিছুই চিন্তা করতে পারে না। যেমন শক্ত বেড়ী যদি গলাকে ঘিরে রাখে তবে তার মাথা নাড়াবার আর ক্ষমতা থাকে না। মুখটা উপরমুখী হয়ে থাকে। তার চারপাশে কি ঘটছে সে আর দেখতে পায় না। নিজের অন্যায় আচরণ যা তার নিজের ও সমাজের কত বড় ক্ষতি করছে তা উপলব্ধি করে না। তার আত্মিক বিকাশ বন্ধ হয়ে যায় আর সে সাথে তার আত্মার সমৃদ্ধি লাভের দুয়ারও বন্ধ হয়ে যায়।
এ ধরণের লোকদের উদ্দেশ্যে পরের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন " এবং ওদের সম্মুখে প্রাচীর ও পেছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি উপরন্তু তাদের আবৃত করেছি। সুতরাং তারা [সত্যের আলো] দেখতে পায় না।
বাস্তব সত্যি। বাংলাদেশে আমাদের অবস্থা এমনই হয়েছে । আমাদের চারপাশ এমন এক প্রাচীরে ঘিরে ধরে আছে যে আমাদের আত্মিক অগ্রগতির বদলে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমাদের আত্মিক মুক্তির কোন আশাই নেই। বর্তমানে হোমরা চোমড়াদের যে দুর্নীতি দেখছি তাতে মনে হয় আমাদের আত্মিক বিকাশের শেষ রশ্মিটি অস্তমিত। এটাতো গেল এই দুনিয়ার কথা।
আখেরাতে কি হবে? অন্যায়কারীকে তো জাহান্নামে যেতেই হবে। এই গণগণে আগুনের মধ্যে যদি এভাবে হাতে পায়ে এবং গলদেশে বেড়ী পরানো হয় - তবে অবস্থা কি হবে? একদিকে আগুনে পোড়ার কষ্ট আরেক দিকে কোন নড়াচড়া না করতে পারো - কি ভয়ংকর অবস্থা। এই পার্থিব জীবনে সত্যকে অসবীকার করে, অনৈতিক আচরণ করে । এর ফলাফল মানুষ উপলব্ধি করে কিন্তু এর ভিতরে যে কুত্সিত চেহারা আছে তা প্রকাশ পায় না। তা প্রকাশ পাবে আখেরাতে।
আখেরাতের শিকল ও বেড়ী এবং চারপাশের প্রাচীর আসলে মানুষ দুনিয়ার জীবনেই হাতে পায়ে পড়ে নেয়।পার্থিব জীবনে সে মনে করে সে স্বাধীণ । সে যা খুশী তাই করতে পারে। আসলে সে তার রিপুর তাড়নায় বন্দী। মহান আল্লাহ তাদের চোখের উপর এমন রিপুর আবরণ দিয়ে দিয়েছেন যে তারা পরকালীন জীবন নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।