বার্ধক্য চিন্তা।
বার্ধক্য । একটি অবশ্যম্ভাবী জীবনের স্তর। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলে আসবেই। দ্বিতীয় শৈশবে ফিরে যাওয়া আর কি। প্রথম শৈশবে সবাই আনন্দিত । আদর , যত্ন, ভালবাসা সব পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয় শৈশবে? প্রশ্নবিদ্ধ। কার কপালে কি আছে তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে শান্তিতে কাটান যায় জীবনটা। আর যদি ভাগ্য অপ্রসন্ন হয় তবে আর দুঃখের শেষ নেই। সত্যি এটি একটি খুব জটীল অভিজ্ঞতা।
বয়স হবার পর আর সে সাথে শারিরীক অক্ষমতা এসে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় যে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হচ্ছে আমার - তাে হচ্ছে স্বাধীনতা হারানোর ভয়। বিশেষ করে আপনি যদি অর্থনৈতিক ভাবে সন্তানদের উপর নির্ভরষীল হন - তাহলে অবশ্যই স্বাধীনতা হারাবেন।
আর ধরুন - আপনি স্বচ্ছল। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চান । তাহলে কি হবে? একাকীত্বে পেয়ে বসবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। আমি অনেক বৃদ্ধ- বৃদ্ধা কি দেখছি একাকীত্ব কিংবা সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন। একেক জনের দুই বা ততোধিক সন্তান। ভর-ভরন্ত সংসার। সন্তানেরা বড় হয়ে চাকরী-বাকরী করে নিজের জীবন বেছে নিয়েছে। সেখানে বৃদ্ধ- বৃদ্ধার খোঁজ নেয় কে? তারা হয়ে যান বোঝা। বাড়তি খরচ ।
আসলে বার্ধক্য আমাদের এনে দেয় অন্যদের উপর নির্ভরশীলতা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকলেও স্বাস্থ্যগত কারণে আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বা পড়বে। স্বাস্থের অবনতি বিশেষ করে যদি প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে তবে তার আর দুঃখের শেষ নেই। তার পরিবার বা পরিচর্যাকারী যদি মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন না হয় নারকীয় যন্ত্রণাই তিনি ভোগ করবেন।
পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা রুমের ৫৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন "আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বলতা দিয়ে, এরপর তিনি দুর্বলতার পরে শক্তি দিয়েছেন, তারপর তিনি শক্তির পরে দিয়েছেন দুর্বলতা ও শুভ্রকেশ। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। আর তিনি বিস্তৃত জ্ঞান সম্পন্ন, ক্ষমতাবান। "
সূরা মুমিন (গাফিরে ) ৬৭ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, " তিনিই যিনি তোমাদেরকে ধুলামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন । তারপর নুতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে , তারপর আলাক (জমাট রক্ত) থেকে , তারপর তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করে আনেন, তারপর যেন তোমরা তোমাদের যৌবনে পৌঁছতে পার ।
তারপর যেন তোমরা বৃদ্ধ হও। আর তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আগেই কালসম্পন্ন করে আর যেন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে পার এবং যেন তোমরা উপলব্ধি করতে পার।
এখানে দুর্বলতা বলতে বার্ধক্যকালকে বোঝানো হয়েছে । এট সে সময় যখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি এবং শারিরীক শক্তি লোপ পেতে থাকে। এ সময় মানুষ দুর্বল হয়ে যায়, অস্থি এবং শরীরের হাত-পা সঞ্চালন দুর্বল হয়ে যায়। চুল সাদা হয়ে যায়।
মানুষ তৈরীর মূল উপাদান মাটি। মানুষ যে খাবার খায় তা মাটিতে হয়। প্রত্যেক মানুষ বীর্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষের বংশ ধারা এই মাটি থেকে উত্পাদিত খাবারের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। এরপর মায়ের গর্ভাশয়ে বিভিন্ন স্তর অতিহ্রম করে সে জন্ম নেয় ।
জীবনের কয়েকটি স্তর তাকে অতিক্রম করতে হয়। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রারম্ভিক বার্ধক্য এবং সবশেষে সম্পূর্ণ বার্ধক্য । আল্লাহ কে কতটা বয়স পাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নির্ধারিত বয়সে পৌছে গেলে তাকে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।