নিজে আমল না করে অন্যকে উপদেশ নিন্দনীয় কাজ।

 বার্ধক্য ভাবনা। 


বয়সের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে গিয়েছি । শরীর আর চলে না। ক্রণিক কিডনী রোগে আক্রান্ত। গত ৭ই এপ্রিল হাতে ফিস্টুলা করা হয়েছে। ডাইলিসিস করতে হবে। কিন্তু মন দুর্বল হয় নি। শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। হিসাব করছিলাম জীবনে কি করলাম আর কি পেলাম। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া তিনি আমাদের কুরআনের মত এক মহাগ্রন্থ দিয়েছেন। আর সেই সাথে এই কুরআন পড়ার মানসিকতা দিয়েছেন। যা আমাকে জীবনের বাস্তবতাকে হাসি মুখে গ্রহণ করতে শিখিয়েছে। ভাবছি কুরআন থেকে আমি যে সব শিক্ষা বা উপদেশ বুঝতে পেরেছি তা নিয়ে লিখব। 

দেশে একটি প্রবচন চালু আছে। "আপনি আচরি ধর্ম শেখাও অপরে।" 


আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা অন্যদের উপদেশ দিতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু নিজের জীবনে সে উপদেশ অনুসরণ করেন কি না - সে সম্পর্কে বিশেষ নজর দেন না। তারা যখন কাউকে কোন কিছু শিখাবার চেষ্টা করেন তা আর গ্রহণযোগ্যতা পায় না। 

শিক্ষা: নিজে আমল না করে অন্যকে উপদেশ নিন্দনীয় কাজ। 


মহান আল্লাহ সুরা বাকারার ৪৪ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন   ' তোমরা মানুষকে পুণ্যের (ন্যায়ের পথ)  আদেশ দাও আর তোমাদের নিজেদেরকে ভুলে যাও , অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো? তোমরা কি অনুধাবন করো না। 


দেখুন অন্যকে উপদেশ দিয়ে নিজে না করলে ক্ষতি কি? 

আসলে উপদেশ দেয়া ভাল। শুধু উপদেশ দিয়ে ক্ষান্ত হলেই হবে না। সে অনুযায়ী কাজও করতে হবে। কাজ হীন উপদেশ নিন্দনীয় কাজ। 

আমাদের সমাজে বিভিন্ন পেশার অনেকেই আছেন যাদের কথা ও কাজে এবং কথা ও চিন্তায় সামঞ্জস্য থাকে না। বড় বড় আদশ্যের কথা বরা তাদের পেশা । তারা মুখে বলে এক কথা কিন্তু মনে ভাবে অন্য জিনিস। অন্য মানুষকে ভালো হবার আহ্বান জানায় অথচ নিজেরা তা মানে না। স্বার্থের জন্য তারা কাজ করে। যেমন নির্বাচনের সময় দেখা যায় নির্বাচন প্রার্থীরা নিজেদের জনগণের সেবক রূপে উপস্থাপন করে। নির্বাচিত হবার পর দেখা যায় জনগণের উন্নতি হোক না হোক জন সেবকের অনেক আর্থিক উন্নতি হয়েছে।  

আরো দেখুন: আমরা সন্তানকে, বাসার সাহায্যকারীকে বলি 'মিথ্যে কথা বলতে নেই।" কিন্তু তাদের সামনেই আবার মিথ্যা কথা বলে ফেলি।"”

সরকারী কর্মচারী হয়ে ধর্মীয় লেবাস পড়ে উপদেশ দেই , "লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।" কিন্তু সেই আমি টেবিলের তলা দিয়ে হরদম ঘুষ নিচ্ছি। 

এটা করতে আমাদের বিবেক একটুও বাধা দেয় না। কারণ সে তার কাজের সপক্ষে ন্যয্য যুক্তি দিয়ে ফেলি। 


কুরআন ও সুন্নাহতে মানুষকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করেছে। যারা অন্যকে উপদেশ দিচ্ছে কিন্তু নিজেরা তা থেকে বিরত থাকছে না তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন কঠোর শাস্তি। হাদীসে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। 

হজরত উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি  রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি: 

কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। এর ফলে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে আসবে সে এটা নিয়ে বার বার চক্কর দিতে থাকবে' যেভাবে গাধা চাকির চারিপাশে  বারবার ঘুরতে থাকে। 

জাহান্নামীরা তাকে জিজ্ঞাসা করবে , হে (অমুক) লোক! তোমার এ অবস্থা কেন?

তুমি কি লোকদের সৎ কাজের আদেশ দিতে না এবং অসৎ কাজ হতে বিরত থাকার কথা বলতে না? 

উত্তরে সে  বলবে : আমি করতাম কিন্তু আমি নিজে তা মানতাম না। (বুখারী ৩২৬৭, ৭০৯৯ ও মুসলিম ২৯৮৯)। 

এ সম্পর্কে আরেকটি হাদীস আছে। 

মিরাজে যাবার সময় হজরত রাসুল (সঃ) এক শ্রেণীর লোকদের দেখেন যাদের জিহ্বা জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে । 

হযরত রাসুল (সঃ) জিব্রাঈল (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা? 

তিনি বললেন: এরা হলো তোমার উম্মতের দুনিয়াদার বক্তা। তারা অন্যদের যে সব ভালো কাজের আদেশ করত , কিন্তু নিজেরা করত না। (মুসনাদে আহমদ)  

আসলে ভাল কথা বলা যত সহজ পালন করা তত সহজ নয়। নিজে যদি না করতে পারে সে কাজ অন্যকে বলা উচিত নয়। নবী(সঃ) এর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। হজরত রাসুল (সঃ) এর কাছে একদিন এক লোক তার সন্তানকে নিয়ে এসে বলল, আমার সন্তান প্রচুর মিষ্টি খায়। আপনি যদি নিষেধ করেন তবে সে আর খাবে না। রাসুল (সঃ) তাকে সাত দিন পর আসতে বললেন। এরপর এি ৭ দিন তিনি মিষ্টি না খাওয়অর অব্যাস রপ্ত করলেন। তারপর ছেলেটিকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করলেন। কাহিনীর তাৎপর্য এই যে, তুমি নিজে যা কর অন্য কেউ তা করলে তাকে নিষেধ করতে পার না।   

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url