সূরা হুদ । রুকু ১০। হযরত মুহাম্মদ (সঃ_) কে সান্তনা প্রদান।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন।
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
রুকু ১০ । আয়াত ১১০- ১১২৩
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সান্তনা প্রদান।
আযাব বিলম্বিত হবার হেকমত, যথাসময়ে আযাব আসার নিশ্চয়তা, এবং আদেশ পালনের প্রতি উত্সাহ প্রদান। (১১০-১১৫)
অতীতকালের সম্প্রদায়সমূহের ধ্বংসলীলার আশু ও গৌণ কারণ: (১১৬-১১৯)
ঘটনাবলী বর্ণনায় কতিপয় হেকমত ও উপকারিতা:(১২০)
চরম বিরুদ্ধবাদীদের সহিত শেষ কথা। (১২১ -১২৩
১১০ ও ১১১নং আয়াত: রসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদান।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১০) নিশ্চয়ই আমি মূসাকে কিতাব দিয়াছিলাম,অতঃপর ইহাতে মতভেদ ঘটিয়াছিল। তোমার প্রতিপালকের পূর্বসিদ্ধান্ত না থাকিলে উহাদের মীমাংসা হইয়া যাইত। উহারা অবশ্যই ইহার সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে ছিল।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১১) যখন সময় আসিবে তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক উহাদিগের প্রত্যেককে তাহার কর্মফল পুরাপুরি দিবেন। উহারা যাহা করে তিনি সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
---------------------------------------------------------------------------------------------
মক্কার মুশরিকরা মুহাম্মদ (সঃ) আহ্বান প্রত্যখ্যান করে এবং কুরআনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে। তখন আল্লাহ রসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদানের নিমিদত্ত এই আয়াত নাযিল করেন।
আল্লাহ জানাচ্ছেন, আমি এর আগেও মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ।
তার উম্মতরাও কিতাবকে গ্রহণ করেনি।
মতভেদ করেছিল। একদল স্বীকার করেছিল আরেকদল করে নি।
তেমনি আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাই করছে। কেউ বিশ্বাস করছে আবার কেউ প্রত্যাখ্যান করছে।
তারা বিভ্রান্ত এবং সন্দেহের মধ্যে আছে।
মহান আল্লাহ যখন সময় হবে তখন তাদেরকে কর্মফল দিবেন।
তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে মহান আল্লাহ সবিশেষ অবগত।
১১২ ও ১১৩ নং আয়াত: বিশ্বাসের দৃঢ়তা।
---------------------------------------------------------------------------------------
(১১২) সুতরাং তুমি ডেভাবে আদিষ্ট হইয়াছ তাহাতে স্থির থাক এবং তোমার সঙ্গে যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহারাও স্থির থাকুক; এবং সীমালংঘন করিও না। তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই তিনি তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
-------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৩) যাহারা সীমালংঘন করিয়াছেতোমরা তাহাদের প্রতি ঝুঁকিয়া পড়িও না, পড়িলে অগ্নি তোমাদের স্পর্শ করিবে। এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকিবে না এবং তোমাদের সাহায্য করা হইবে না।
---------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ রাসুল (সঃ) ও তার অনুচরদের সত্যের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসের আহ্বান জানিয়েছেন।
আল্লাহর নির্দেশ ও নিষেধাবলীর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেন।
সে সাথে সতর্ক করেছেন যাতে সীমালংঘনকারী বা জালেমদের দিকে ঝুঁকে না পড়ে । অর্থ্যাৎ তাদের কথা শুনতে নিষেধ করেছেন।
যারা শুনবে তারা জাহান্নামে যাবে।
আল্লাহ ছাড়া তাদেরকে সাহায্য করবার আর কেউ থাকবে না।
১১৪ ও ১১৫ নং আয়াত: সালাত কায়েম।
-------------------------------------------------------------------------------------
(১১৪) তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে । সত্ কর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটাইয়া দেয় । যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে, ইহা তাহাদের জন্য এক উপদেশ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৫) তুমি ধৈর্য ধারণ কর, কারণ আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদিগের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
--------------------------------------------------------------------------------------------
দিবসের দুই প্রান্তভাগ অর্থ সকাল ও সন্ধ্যা এবং রাতের প্রথম অংশে সালাত কায়েম করতে বলেছেন।
সৎ কাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয়। অর্থ্যাৎ পূণ্য পাপকে মুছে ফেলে।
যারা কুরআনের নির্দেশিত বিধান মতে চলবে তাদের জন্য কুরআন অনন্য উপদেশ।
আল্লাহ রসুল (সঃ)কে ধৈর্য ধরতে বলছেন। অর্থ্যাৎ আনুগত্যে অটল থাকতে আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোকদের কর্মফল কখনো ব্যর্থ করেন না। যেমন নামাজী লোকদের শ্রমফল আল্লাহ দিয়ে থাকেন।
১১৬ ও ১১৭ নং আয়াত: আল্লাহর গজবের কারণ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৬) তোমাদের পূর্বযুগে আমি যাহাদেরকে রক্ষা করিয়াছিলাম তাহাদের মধ্যে অল্প কতক ব্যতীত সজ্জন ছিল না, যাহারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাইতে নিষেধ করিত। সীমালংঘনকারীরা যাহাতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ পাইত তাহারই অনুসরণ করিত এবং উহারা ছিল অপরাধী।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৭) তোমার প্রতিপালক এইরূপ নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে জনপদ ধ্বংস করিবেন, অথচ উহার অধিবাসীরা পূণ্যবান।
---------------------------------------------------------------------------------------------
পূর্বকালে বিবেক বা সজ্জনধারী ব্যক্তি বাক্বিয়াতুন' সংখ্যায় কম ছিল।
এই বিবেকবান ব্যক্তিরা মানবতার কারণে সদুপদেশ দিত এবং পৃথিবীতে বিপর্য়য় ঘটাতে নিষেধ করত।
যারা সীমালংঘনকারী ছিল তারা সাময়িক সুখের কারণে অপরাধীদের অনুসরণ করতে দ্ধিধা করত না।
তরা অসৎকর্ম কখনো পরিত্যাগ করে নি।
তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোগ বিলাস।
মহান আল্লাহ পূণ্যবানদের জনপদ কখনো ধ্বংস করেন না।
যে সমাজের মানুষেরা যখন অন্যায় ও অপকর্মে মেতে উঠে তখন সেই জনপদ ধ্বংস করেন ।
মানুষ যখন অন্যের অধিকার খর্ব করে, প্রতারণ, শঠতা বৃদ্ধি পায়, খুন-রাহাজানির মত ঘটনা ঘটে সেই সমাজে আল্লাহর গজব এসে পড়ে।
১১৮ ও ১১৯ নং আয়াত: আল্লাহর গজবের আরেকটি কারণ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৮) তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিলে সমস্ত মানুষকে এক জাতি করিতে পারিতেন, কিন্তু তাহারা মতভেদ করিতেই থাকিবে।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১১৯) তবে উহারা নয়, যাহাদেরকে তোমাদের প্রতিপালক দয়া করেন এবং তিনি উহাদেরকে এইজন্যই সৃষ্টি করিয়াছেন। "আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করিবই , তোমার প্রতিপালকের এই কথা পূর্ণ হইবেই।
---------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ যদি চাইতেন তবে সবাইকে সত্কর্মশীল বানাতে পারতেন।
যদিও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সত্কর্মশীল হতে, কিন্তু তিনি সবাইকে সত্কর্মশীল বানানো ইচ্ছা করেন না। মানুষকে তার নিজের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
মানুষের মধ্যে মতৈক্য কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে না।
প্রতিটা মানুষ তার আপন কর্মের স্রষ্টা।
আল্লাহ যাদেরকে দয়া করেন তারা মতানৈক্য করবে না।
যারা বিশুদ্ধ চিত্তে বিশ্বাস করবে এবং ভাল কাজ করবে তারা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
একদল মানুষ যাবে জান্নাতে আরেক দল যাবে জাহান্নামে।
১২০ নং আয়াত: ঘটনাবলী বর্ণনা করার উপকারিতা।
--------------------------------------------------------------------------------------------
(১২০) রাসুলগণের ঐ সকল বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বর্ণনা করিতেছি, যদ্বারা আমি তোমার চিত্তকে দৃঢ় করি, ইহার মাধ্যমে তোমার নিকট আসিয়াছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য আসিয়াছে উপদেশ ও সাবধানবাণী ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ রাসুল (সঃ)কে এই সূরাতে পূর্ববর্তী রাসুলগণের বৃত্তান্ত কেন জানালেন তার কারণ বলেছেন।
প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসুল (সঃ) এর চিত্ত দৃঢ় করবার জন্য।
ওহীর মাধ্যমে সকল কাহিনী প্রকাশ করেছেন এবং সত্যর স্বরূপ তুলে ধরেছেন।
যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য রয়েছে উপদেশ এবং সতর্কবাণী ।
১২১ ও ১২২ নং আয়াত: সত্যপ্রত্যখ্যান কারী ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১২১) যাহারা ঈমান আনে না তাহাদেরকে বল, 'তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করিতে থাক, আমরাও আমাদের কাজ করিতেছি,
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১২২) 'এবং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষা করিতেছি।'
---------------------------------------------------------------------------------------------
অবিশ্বাসীদের সর্বোচচ চেষ্টা আল্লাহর পরিকণ্পনাকে বানচাল করতে অক্ষম।
আল্লাহরপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবেই।
যারা বিশ্বাসী এবং সত্য গ্রহণকারী তাদের উচিত হবে ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ যে কর্তব্য দিয়েছেন তা পালন করে যাওয়া।
অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে - তোমরা প্রতীক্ষা কর তোমাদের অশুভ পরিণতির জন্য। আর আমরা প্রতীক্ষা করব শুভ পরিণতির জন্য।
১২৩ নং আয়াত: আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
---------------------------------------------------------------------------------------------
(১২৩) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং তাঁহারই এবং তাঁহারই নিকট সমস্ত কিছু প্রত্যানীত হইবে। সুতরাং তুমি তাঁহার 'ইবাদত কর এবং তাঁহার উপর নির্ভর কর। তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।
---------------------------------------------------------------------------------------------
আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর দৃশ্য ও অদৃশ্য , প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহ।
আমাদের তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আমাদের সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকণ্পনার অধীন।
সুতরাং আমাদের আল্লাহর ইবাদত করকে হবে।
'ইবাদত' শব্দটি শুধু নামাজ রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর অর্থ অনেক ব্যপক। যেমন :
আল্লাহকে বুঝতে চেষ্টা করা।
তাঁর উপস্থিতি সব সময় নিজের মধ্যে অনুভব করা।
আল্লাহ আমাকে যে দয়, রহমত, বরকত এবং কল্যাণ দিয়েছেন তা অনুভব করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
শয়নে, স্বপনে , কর্মে - সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করা।
আল্লাহর ইচ্ছাকে অনুধাবন করা।
তাঁর ইচ্ছাকে মেনে চলা এবং তার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা।
নিজেরে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধ করা।
সংক্ষেপে সূরা হুদ::
এই সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে আল্লাহর ন্যয় বিচারের উপর। যখন মানুষ আল্লাহর প্রসারিত দয়া ও করুণার হাতকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় তখন সে আল্লাহর করুণা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে অবধারিতভাবে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে।
প্রত্যাদেশ বা ওহী :
সাধারণত নবী-রাসুলরা আল্লাহর কাছ থেকে দুই ধরণের প্রত্যাদেশ পায়।
প্রথমত : মন্দ বা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর সতর্কবাণী।
দ্বিতীয়ত: বান্দার জন্য আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ।
১ হতে ২৪ নং আয়াতের বিষয়বস্তু কিভাবে আল্লাহ মানুষের অকৃতজ্ঞতা , মিথ্যার প্রতি ভালবাসা , দম্ভ, অগংকার, কুচক্রপনা প্রর্ভতি করুণা ও ধৈেংর্র সাথে মোকাবিলা করেন।
২৫ -৪৯ নং নূহ নবী ও তার জাতির কাহিনী। তার জাতি তাঁকে নিয়ে ঠট্টা বিদ্রূপ করে এবং তাঁর তওহীদের প্রতি আহ্বানে সাড়া দেয় না। আল্লাহ নূহ (আঃ)কে নৌকা তৈরা করতে বলেন এবং তার জাতিকে প্লাবন দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
৫০ থেকে ৬৮ নং আয়াত: হুদ নবী ও তার সম্প্রদায় আদ জাতির কথা বলা হয়েছে। হুদ (আঃ) তার জাতিকে আল্লাহর সাথে শরীক করতে নিষেধ করেন এবং এক উপাস্যের উপাসনা করার আহ্বান জানান।
সালেহ নবীও তাইকরেন। আল্লাহ যে উট পাঠিয়েছিলেন তার অসম্মান করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা হত্যা করে। নবী (আঃ) দের ততারা প্রত্যখ্যান করে। আল্লাহ তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেন।
৬৯ - ৯৫ নং আয়ত: হযরত লুত (আঃ) তাঁর জাতিকে নৈতিক অবনতির বিরুদ্ধে সাবধান করে দেয়। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করে না।
হযরত শোয়েব (আঃ) ওজনে কম , প্রতারণা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সাবধান করে কিন্তু তারা তাতে কর্ণফাত করে না। ফলে তারা তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করে।