দোয়া ও বদ দোয়া।
দোয়া এবং বদ দোয়া।
ভূমিকাঃ
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য । আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁর নিকট সাহায্য চাচ্ছি, তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদের নাফসের অনিষ্টতা ও ‘আমলের খারাবী’ হতে বাঁচার জন্য আমরা তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি । আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেহ গোমরাহ করতে পারে না, আর যে গোমরাহ হয় তাকে কেউ হেদায়েত করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই , তিনি এক ও অদ্বিতীয় , পরাক্রমশালী । হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল। তিনি তাঁকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছেন। দরূদ ও সালাম সৃষ্টির সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি , তাঁর পরিবার পরিজন ও সাথীদের প্রতি এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করবে তাদের প্রতি।
সম্মানিত সুধী বোনেরা, আচ্ছালামু আলাইকুম।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে দোয়া ও বদ দেোয়া।
প্রথমে আসুন আলোচনা করি
দোয়া বলতে আমরা কি বুঝি?
দোয়া অর্থ চাওয়া, প্রার্থনা করা। একজন সাধারণ ব্যক্তি কর্তৃক বড় কারো কাছে ভয়-ভীতি ও বিনয় সহকারে ডাকা । সহজ ভাষায় বলতে গেলে 'দোয়া" হচ্ছে আল্লাহ মানুষকে যা দান করেছেন তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল যা দিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত উপায়ে মহান আল্লাহর সাথে যোগাযোাগ করতে পারে। দোয়া হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার বান্দার কথপোকথন। আল্লাহর কাছে আমাদের চিন্তা, আমাদের চাওয়া পৌছানোর মাধ্যম। আমরা আমাদের ইহকাল ও পরকালের ভালর জন্য ভাল যা খুশী চাইতে পারি। আমরা আমাদের নিজেদের জন্য , বন্ধুদের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য, মেহমানের জন্য এমন কি উম্মাহ ও মানবতার জন্য দোয়া চাইতে পারি। আল্লাহকে অনুরোধ করতে পারি।
আমরা আল্লাহর বিনম্র দাস। আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছি।
দোয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করছি। আমার সমস্যার কথা বলছি । মনে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ আমার কথা শুনবেন এবং আমার প্রয়োজন অনুযায়ী রহমত ও বরকত দিবেন। আমাকে দয়া করবেন। ক্ষমা করবেন।
দোয়া আসলে কি
রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ "দোয়াই ইবাদতের মগজ।"
তিরমিজি হাদীস নং ৩২৯৩)
রাসুল (সঃ) আরো বলেন, "আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া অপেক্ষা মূল্যবান জিনিস আর কিছুই নেই।
(তিরমিজি, হাদীস নং ৩২৯২)
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, 'যার জন্য দোয়ার দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে অর্থ্যাৎ যাকে দোয়া করার তওফিক দান করা হয়েছে তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে।
(তিরমিজি ৩৫৪৮)
দোয়ার মাধ্যমে আমরা যে আল্লাহর কাছে শুধু প্রার্থনা করি তা নয় সে সাথে সাথে আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাংখা মঞ্জ ুর বা অস্বীকার করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই আছে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদের বলেছেনঃ
প্রথমে ,
সূরা বাকারার ১৫২ নং আযাতে এরশাদ করেছেন, "তোমরা আমাকে স্মরণ কর, তাহলে আমিও তোমাদের স্মরণ করব।"
সুরা গাফিরের ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, "তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদতে বিমুখ, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। "
সুরা জুমু'আ ১০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, "আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করিবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করিবে, যাহাতে তোমরা সফলকাম হও।
মহান আল্লাহ তাঁর কাছে কেউ কিছু চায়, কিংবা প্রত্যাশ্যা করুক সেটা পছন্দ করেন। তিনি তাঁর কাছে কেউ কিছু চায় সেজন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে নানান বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। । বান্দার দোয়াকে আল্লাহ স্বাগত জানান। সাহায্য সহযোগিতা করেন।
বান্দা যদি তার প্রতিপালককে আন্তরিকতা সহকারে কাকুতি মিনতি করে ডাকে তবে আল্লাহ তার সেই ডাকে সাড়া দেন।
সংক্ষেপে যদি বলতে যাই তবে দোয়া করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত হয়ে নম্রতা ও বশ্যতা সহকারে নিজের অসহায়ত্ত্ব ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা প্রকাশ করা। প্রকাশ্যে হতে পারে আবার অপ্রকাশ্যে হতে পারে।, আমাদের জানা অজানা সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা যায় । তাই নিঃসন্দেহে দুআ হল ইবাদতের একটি অপরিহার্য অংশ। দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মূল।
এখান থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামে রয়েছে দোয়ার সুমহান মর্যাদা। দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। একজন সৎ, চরিত্রবান, মুমিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হল দোয়া করা। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণে চিত্ত নিমগ্ন করতে পারলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। মনের চিন্তা, ভার , পেরেশানি অনেকখানি দূর হয়ে যায়। জীবনের সব কাজ আল্লাহর নাম এবং দোয়া দিয়ে শুরু করা তাতে রহমত ও বরকত হয়। মনে আসে প্রশান্তি।
আমরা যদি কোন সমস্যায় পড়ি তবে আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে কাকুতি মিনতি করে দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। কায়মনোবাক্যে বিনয়ের সঙ্গে আন্তরিকভাবে দোয়া করতে হয়।
এই দোয়া করার কতগুলি বিশেষ শর্ত ও আদব আছে।
দোয়ার আদব বা নিয়মঃ
দোয়া শুরু করার পূর্বে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করা।
দোয়ার শুরু ও শেষে দরূদ পড়া।
দোয়ার আগে কোন নেক কাজ করা।
নেক কাজের কথা স্মরণ করা।
বিনয় ও নম্রতার সাথে একনিষ্ঠভাবে দোয়f করা ।
পাক পবিত্র অবস্থায় দোয়া করা।
উদাসীন না হয়ে আন্তরিকতার সাথে দোয়া।
আল্লাহর করুণার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা। নিরাশ না হওয়া
তাড়াহুড়া না করা।
পর্দা করা।
বিনয় ও নম্রতার সাথে দোয়া করা।
কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা।
আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলী দিয়ে তাঁকে ডাকা।
সুন্দর নামের বিষয়ে রবের কথাঃ
সূরা আরাফে ১৮০ নং আল্লাহ এরশাদ করেছেন "আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাকে সেসব নামের দ্বারা ডাক।"
আল্লাহর প্রতি একীন রাখতে হবে যে আমার দোয়া কবুল হবে। গভীর মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে হবে।
দুই হাত তোলা। হাতের তালু থাকবে আকাশের দিবক, যেভাবে একজন নতজানু সাহায্য প্রার্থী সাহায্যর জন্য হাত তোলে।
রাসুল (সঃ) বলেন,"যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কিছু চাইবে তখন হাতের তালু দিয়ে চাইবে। ; হাতের পিঠ দিয়ে নয়।
(আবু দাউদ১৩১৮নং)
বারবার চাইবে। দুনিয়াতে এবং আখেরাতে যা কিছু কল্যাণকর তাই চাইকে।
দোয়া কবুলের শর্তঃ
দোয়াকারীকে আল্লাহর রবুবিয়্যত, উলুহিয়্যাত এবং আসমা সিফাতের প্রতি একাত্ববাদী হতে হবে।
নেক কাজ করা ও গুনাহ পরিত্যাগ করা।
হারাম পানাহার থেকে বেঁচৈ থাকা।
পোশাক ও উপার্জন হালাল হওয়া।
মিথ্যা, গীবত, হিংসা, বিদ্বেষে দূর করা।
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করা।
মাতা পিতার অবাধ্য না হওয়া।
দোয়ার কতিপয় ফজিলত, উপকারিতা ও বৈশিষ্ট...
১। দু’আকারী ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী স্বীকার করে বিশুদ্ধ নিয়তে দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। নিয়তের বিশুদ্ধতাই প্রত্যেকটি কাজ কবুলের পূর্বশর্ত।
২। দু’আর মধ্যে রয়েছে স্রষ্টার আনুগত্য ও হীনতা-দীনতার প্রকাশ।
মহান আল্লাহ সুরা আ’রাফের ৫৫ ও ৫৬ নং আয়াতে বলেন, তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি মিনতি করে এবং অতিগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে ডাক, ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর দয়া/করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।
৩। ইখলাছ তথা একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহ ডাক। আল্লাহ বলেন, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। অতএব তাকে ডাক একনিষ্ঠ ইবাদতের মাধ্যম (সুরা মু’মিন আয়াত-৬৬)
৪। ধৈর্য এবং নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সুন্দরতম নামের উসিলায় বিনয়ে সহিত নীরবে দু’আ করা। আল্লাহ বলেন, তোমরা নামাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য চাও।
৫। অযু করে ক্বিবলামুখী হয়ে নেক আমলের মাধ্যমে দু’আ করা এবং দু’আ কবুলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া।
৬। দু’আর আবেদনের পাশাপাশি হারাম খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র বর্জন করে দু’রাকা’আত নামাজের পর আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দুরূদ পড়ে দু’আ করা।
৭। সংকল্প ও আকুতির মাধ্যমে দু’আ কবুলের প্রবল আশাবাদী হওয়া। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা দু’আ করবে তখন প্রার্থিত বিষয়টি লাভের বিষয়ে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখবে এবং বলবে হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও আমাকে প্রদান কর, কেননা আল্লাহকে বাধ্যকারী কেউ নেই। (ছহীহ বুখারী)
কখন কোথায় কিভাবে দোয়া বা প্রার্থনা করলে দোয়া কবুল হয়...
১। নামাজের সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের (আত্তাহিয়াতু) পর
২। আযানের সময়, আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়।
৩। নিরাপরাধ ব্যক্তি অত্যাচারিত হওয়ার সময়।
৪। জুমা’আর দিনে ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ করার পর্যন্ত সময়
৫। শেষ রাতে এবং ফরয নামাজের পর
৬। রমযান মাস
৭। পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে
৮। সফরের সময়
৯। হজের সময়
১০। আরাফাতের দিন
১১। পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফের সময়
১২। সাফা ও মারওয়া সায়ী করার সময়
১৩। আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে ধর্না দেয়া এবং নিজের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ও বিপদের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা।
১৪। পবিত্রাবস্থায় কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দু’আ করা । এবং দু’আর শুরু ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে ওপর সালাত ও ছালাম প্রদান করা।
পবিত্র কুরআনে সূরা মারিয়ম হযরত জাকারিয়া কিভাবে দোয়া করেছিলেন তা বলা আছে।
আল্লাহ সূরা মারইয়ামে,র ২য় আয়াতে এরশাদ করেছেন, “ইহা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁহার দাস জাকারিয়ার প্রতি।”
আল্লাহ যে সব অনুগ্রহ করেছিলেন তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর পরের আয়াতে হযরত জাকারিয়া কিভাবে দোয়া চেয়েছিলেন তার উল্লেখ করেছেন । এরশাদ করেছেন,
৩ নং আয়াত “ যখন সে তাহার প্রতিপালককে আহবান করিয়াছিল নিভৃতে।
এর অর্থ হচ্ছে হযরত জাকারিয়া (আঃ) নির্জন কক্ষে হতে পারে রাত্রে গোপনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য চুপি চুপি দোয়া করা সুন্নত। কারণ এরকম দোয়ার মধ্যে থাকে একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা।
এর পরের আয়াতে দেখেন কিভাবে কাকুতি মিনতি করে বিনীত ভাবে তিনি চাচ্ছেন।
৪র্থ আয়াত, “ আমার অস্থি দুর্বল হইয়াছে, বার্ধক্য আমার মস্তক শুভ্রোজ্জল হইয়াছে; হে আমার প্রতিপালক ! তোমাকে আহ্বান করিয়া আমি কখনো ব্যর্থকাম হই নাই।
৫ ম আয়াত: “ আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্ররা দ্বীনকে ধ্বংস করিয়া দিবে, আমার স্ত্রী বন্ধ্যা সুতরাং তুমি তোমার নিকট হইতে আমাকে দান কর উত্তরাধিকারী।
তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে নিজের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। বয়স জনিত কারণে তার অস্থি যা তার শরীরের ভিত্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। চুল পেকে গেছে। তিনি বার্ধক্য কবলিত হয়ে দুবর্ল হয়ে গেছেন। তার উপর তার স্ত্রী সন্তান ধারণের বয়স পেরিয়ে গেছেন। । এসব জেনে শুনেও তিনি প্রার্থনা করছেন। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন যে তার কাছে চেয়ে কখনো ব্যর্থকাম হন নি। আল্লাহ কখনো তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন নি। আল্লাহ দয়া করে তাঁর সকল দোয়াই কবুল করেছেন। সেই সাথে সাথে তিনি দৃঢ় আশা করেন এবং বিশ্বাস করেন আল্লাহ তাঁর এই প্রার্থনাও কবুল করবেন।
এতক্ষণ তো দোয়া নিয়ে আলোচনা করলাম। দোয়ার বিপরীতে আছে বদ দোয়া। আমরা অনেকসময়ে বিপদে আপদে, রাগে , ক্ষোভে বা খারাপ আবেগের বশবর্তী হয়ে অন্য মানুষ বিশেষ করে যার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছি তাকে বদ দোয়া করি বা তার অমঙ্গল কামনা করি।
আসুন আগে জেনে নি বদ দোয়া কি?
কোন ব্যক্তির অমঙ্গল বা অনিষ্ট চেয়ে প্রার্থনা করাই হচ্ছে বদ দোয়া বা অকল্যাণ কামনা করা। আরবীতে একটি শব্দ আছে -লা'নত । যার অর্থ রহমত ও দয়া থেকে দূর করে দেয়া। বাংলায় এর প্রতিশব্দ অভিশাপ। আমরা সাধারণত বলি বদদোয়া।
পারিবারিক জীবনে দেখা যায় সামান্য কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলেই একে অন্যকে বদ দোয়া করে বা অভিশাপ দেয়।অনেকেই রাগকে সংযত করতে পারে না। এরা কথায় কথায় বদ দোয়া করে। কাকে করে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। মানুষ,বাতাস, জড় বস্তু, স্বামী স্ত্রীকে আবার স্ত্রী স্বামীকে, এমনকি নিজ সন্তানকে।
দেখুন সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার শোভা এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু কোনটাই চিরকাল আপন থাকে না। একদিন না একদিন ধোঁকা দিয়ে চলে যাবেই। সম্পদ হালাল এবং হারাম দুভাবেই কামাই করতে পারি। এ অর্থ আমরা আমাদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করি।
সেই সন্তানের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পিতা-মাতা বদদোয়া বা অভিশাপমূলক কথাবার্তা বলে। পরে আফসোস করে। এর ফলে নিজেই নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।
সেজন্য সে আবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এই প্রার্থনা যদি এমন সময়ে করে যখন আল্লাহ শোনেন বা দোয়া কবুল করে নেন তখন তা নিজের উপর এসেই বর্তায়। নিজের ধ্বংস নিজেই কামনা করা আর কি।
সূরা বাকারার ১৫৯ আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ”তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।” তাই প্রত্যেক বাবা-মার উচিত রাগের মাথায় সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সন্তানের অমঙ্গল কামনা না করা।
সূরা ইউনুসের ১১ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরাণ্বিত করিতেন, যেভাবে তাহারা তাহাদের কল্যাণ ত্বরাণ্বিত করিতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যু ঘটিত। সুতরাং যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহাদেরকে আমি তাহাদের অবাধ্যতার উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দেই।"
এই আয়াতে আল্লাহ পাপী ও অন্যায় কাজকারীদের প্রতি ইংগিত করেছেন। মানুষ সাধারণত তার কল্যাণ বা বৈষয়িক শান্তি লাভের জন্য তাড়াহুড়ো করে। কিন্তু ,মহান আল্লাহ এখানে অকল্যাণকে দ্রুত কামনা করার প্রসেংগে মানুষের একটি অবস্থা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ যদি শাস্তি দানে তাড়াহুড়ো করলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। মহান আল্লাহ মানুষকে তড়িঘড়ি করে শাস্তি দেন না। মানুষকে শুধরে নেবার জন্য সময় দেন।
একজন মুসলিম বিশ্বাস করে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। আপনি এমন সময় কারো অকল্যাণ কামনা করলেন যখন আল্লাহ দোয়া কবুল করে নিল। যার অকল্যাণ কামনা করলেন সে হতে পারে আপনার সন্তান, ছেলের বৌ কিংবা বাবা-মা। রাগের মাথায় করে বসলেন। ধরুন, আল্লাহ কবুল করে নিল। রাগের মাথায় বা দুঃখ পেয়ে যে অকল্যাণ কামনা করেছিলেন তার বাস্তবায়ন কি সহ্য করতে পারবেন? অসম্ভব।
আরেকটি কারণে আমরা প্রায়শই অকল্যাণ কামনা করি। তা হল ব্যক্তি স্বার্থ। আমরা যদি হজরত মুহাম্মদ (সঃ) জীবন পর্যালোচনা করি তবে তাকে কখনো দেখব না যে ব্যক্তি স্বার্থে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। আপনি কোন কারণে নিজেকে বঞ্চিত মনে করে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে বিচার চাইতে পারেন। ইসলাম নিজের ব্যক্তিগত কিংবা পরিবারের কারো কোন ক্ষতি সমর্থন করে না। মনে রাখবেন নিজের সন্তান, আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যরা আপনার জিহ্বা থেকে রক্ষা পাবার বেশী অধিকার রাখে।
পারিবারিক জীবনে দেখা যায় সামান্য কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলেহাদীসে ই একে অন্যকে বদ দোয়া করে বা অভিশাপ দেয়।অনেকেই রাগকে সংযত করতে পারে না। এরা কথায় কথায় বদ দোয়া করে। কাকে করে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।
আছে "তিন ব্যক্তির দোয়া সরাসরি কবুল হয়। তারা হলেন অত্যাচার ও অবিচারের শিকার ব্যক্তি, মুসাফির ও সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া।”
তিরমিজির ১৯০৫ নং হাদীসে
অনেক বাবা-মাই একটি ভুল করে। সন্তানের উপর রেগে গিয়ে বদ দোয়া করে বসে। অথচ তাদের উচিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যে আল্লাহ তাদের সরল পথ প্রদর্শন করে এবং হেদায়েত করেন।
”ভাগ্য ভাল আল্লাহ সব দোয়া কবুল করেন না।"
যারা অপরিণামদর্শী, শুধু তারাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে না। পৃথিবীতে আমরা দেখি, যারা বিজ্ঞ, জ্ঞানী, তারা হন দূরদর্শী, তারা ভবিষ্যৎ সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বর্তমান সময়ে কষ্ট স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু যারা অজ্ঞ, অপরিণামদর্শী, মূর্খ, শুধু তারাই বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং ক্ষণস্থায়ী আরাম, আয়েশের পিছনে নিজেদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করে। আধ্যাত্মিক জীবনেও যারা পরকালের সুখ শান্তিতে বিশ্বাস করে না, তারা ঐ অপরিণামদর্শী মূর্খ লোকের মতই নির্বোধ। তারা পরকালের সুখ-শান্তির জন্য ইহকালে সামান্য কষ্টও স্বীকার করতে রাজী নয়। তারা ইহকালের ক্ষণস্থায়ী সুখের পিছনে ছুটে বেড়ায়। কারণ তাদের অজ্ঞতা তাদের আধ্যাত্মিক দিক থেকে অন্ধ করে দেয়। তাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে বোঝার বা অনুধাবন করার ক্ষমতা থাকবে না। এদেরকেই কুরাানের ভাষায় বলা হয়েছে মূক ও বধির। পরকালের অবিশ্বাসের দরুণ এরা আল্লাহ্র প্রতি বিদ্রূপ প্রদর্শন করে, তাৎক্ষণিক শাস্তি দাবী করে।
দেখুন সূরা আনফালের ৩২ নং আয়াতে। আল্লাহকে মুশরিকরা নির্বোধের মত প্রতিদ্বন্দিতায় আহ্বান করে কারণ তারা আল্লাহ্র অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়।
স্মরণ কর কিভাবে তারা বলেছিলো, "হে আল্লাহ্ ! ইহা যদি প্রকৃতই তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ কর, অথবা আমাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রেরণ কর ।
আল্লাহ পরবর্তী আয়াতে কি বলছেন দেখুন
৩৩। কিন্তু যখন তুমি তাদের মাঝে অবস্থান করছো তখন আল্লাহ্ তাদের জন্য শাস্তি প্রেরণ করবেন না। যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তখনও তিনি তাদের ইহা [শাস্তি] প্রেরণ করবেন না।
আলোচ্য এই আয়াতটি হচ্ছে মক্কার কাফেরদের এক ধরণের বিদ্রূপ। আবু জাহেল এই উপহাসটি করেছিল প্রার্থনার ভঙ্গীতে। এর উত্তর পরবর্তী দুটি আয়াতে দেয়া হয়েছে। একমাত্র নির্বোধরাই ভাবতে পারে যে আল্লাহ্ তাদের হুকুম মত চলবেন বা তাদের উপহাস, বিদ্রূপের জবাব দেবেন। মক্কার মুশরিকরা নিজেদের কুফরী ও অস্বীকৃতির দরুণ যদিও আসমানী আযাব প্রাপ্তিরই যোগ্য, কিন্তু মক্কায় রাসূলে করীম (সাঃ) এর উপস্থিতি ব্যাপক আযাবের পথে অন্তরায় হয়ে ছিল। মহানবীর মদিনায় হিজরতের পরে যদিও ব্যাপক আযাব এর অন্তরায় দূর হয়েছিল, কিন্তু তারপরেও অনেক দুর্বল মুসলমান যারা হিজরত করতে পারছিলেন না, তাঁরা আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন। সুতরাং ব্যাপক আযাবের প্রশ্নই আসে না। উপরন্তু আল্লাহ্র দ্বার ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত। কিন্তু যদি কোন নাস্তিক হটকারী ব্যক্তি অহংকারে অন্ধ হয়ে আল্লাহ্র করুণাকে মনে করে অক্ষমতা, তবে তাদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আবু জাহেলের ও তার অনুসারীদের কি পরিণতি হয়েছিল তা সকলেরই জানা। বদরের যুদ্ধে আবু জাহেল ও আরবের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মুসলমানদের হাতে নিহত হন। এই ছিল তাদের উদ্ধতপনার শাস্তি। মক্কার কাফেররা মুসলমানদের কাবা শরীফে প্রবেশে বাঁধা দান করেছিল - তার শাস্তিও তারা ভোগ করেছিল। কোরেশরা দাবী করতো তারাই কাবা শরীফের অভিভাবক। কাবা শরীফের অভিভাবক তারাই হতে পারে, যারা পূণ্যাত্মা - কারণ কাবা ঘর শুধুমাত্র এক আল্লাহ্র উপাসনার জন্য নির্মিত হয়েছিল। সেখানে কোরেশরা কাবা ঘরে বিভিন্ন মূর্তির উপাসনা করে কাবা ঘরের পবিত্রতা নষ্ট করে দেয়। কোরেশদের দেব-দেবীর উপাসনার ধরণও ছিল অতি বিচিত্র ও অপবিত্র ও হাস্যষ্কর অনুষ্ঠান। তারা পূজার আনুষ্ঠানিকতায় তালি দিত, শিষ দিত এবং অনেক সময়ে উলঙ্গ অবস্থায় কাবা ঘরকে প্রদক্ষিণ করতো। তাহলে কিভাবে তারা কাবা ঘর যা এক আল্লাহ্র পবিত্র উপাসনার জন্য তৈরী, তার অভিভাবকত্ব দাবী করতে পারে ?
যদি সত্যি সত্যি আল্লাহ তাদের কথা শুনতেন, তবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়তো। কিন্তু পরম করুণাময় তাদের ধ্বংস না করে সময় মঞ্জুর করেন। যেনো তারা ভবিষ্যতে অনুতাপ করার সুযোগ পায়। কিন্তু তারা তাদের এই সময়ের সদ্ব্যবহার না করে পাপে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এদের আধ্যাত্মিক জগত অন্ধকারময়- ফলে এরা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে হবে বঞ্চিত। চক্ষু থেকেও এরা হবে অন্ধ ব্যক্তির ন্যায়। অন্ধ ব্যক্তি যেমন হাত্ড়ে হাত্ড়ে পথ চলে, এরাও জীবনের পথে কোন সঠিক দিগ্ নির্দ্দেশনা পাবে না। এরা বিভ্রান্তির মধ্যে বাস করবে। "আমি তাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে দেই।"
কুরআনের বাণীর সত্যতা প্রমাণের জন্য তারা চ্যালেঞ্জ করে, যদি বাণী সত্যি হয় , তবে ঠিক আছে আমরা তো বিশ্বস করলাম না। আসমান থেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে শাস্তি দাও।
আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কাফেরদের মধ্যে উপস্থিত থাকায় গজব দিতে চান নি।
তাছাড়া আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করেন।
মহান আল্লাহর রহমত শাস্তির চাইতে বেশী। তিনি শাস্তি দেয়ার আগে ধৈর্য় ধরেন। তিনি ক্ষমাশীল। কেউ অন্যায় করে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করেন।
আল্লাহ অভিশাপ দেন ।
সূরা বাকারার ১৫৯ আয়াত" আমি যেসব সুস্পষ্ট [নিদর্শন] প্রেরণ করেছি তা এবং কিতাবী জাতিদের নিকট পথ নির্দেশ স্পষ্ট করার পরও, যারা তা গোপন করে, তাদের উপরে আল্লাহ্র অভিশাপ এবং অভিশাপকারীগণও তাদের অভিশাপ দেয় ।"
অভিশাপকারীগণ অর্থাৎ ফেরেশ্তা ও মানব গোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে যারা অভিশাপ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে যারা অভিশপ্ত তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। সেই সাথে বঞ্চিত হবে ফেরেশ্তা ও বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর শুভাশীষ থেকে। কারণ তারা আল্লাহ্কে অস্বীকার করার ফলে নিজের আত্মার উপরে অত্যাচার করে। আল্লাহ্ মানুষের আত্মাকে পুতঃ এবং পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন। অভিশাপ দ্বারা আত্মার পবিত্রতা কলুষিত হয়ে যায়। কলুষিত আত্মা মহান স্রষ্টার অনুগ্রহ লাভে ব্যর্থ হয় ফলে অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়। আল্লাহ্র সান্নিধ্য আত্মাকে করে আলোকিত, পরিতৃপ্ত, শান্ত এবং জ্ঞানী। অপর পক্ষে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্কে অস্বীকার করে, তাদের আত্মা হয় পথভ্রান্ত, উদভ্রান্ত, অন্ধকারে আচ্ছন্ন ও বিচলিত। পৃথিবীর জ্ঞান, বিজ্ঞান তাদের মানসিক এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না। এই অবস্থায়ই হচ্ছে অভিশপ্ত অবস্থা।
১৬০। কিন্তু যারা অনুতাপের মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করে এবং প্রকাশ্যে [সত্যকে] ঘোষণা করে, আমি তাদের তওবা কবুল করি, কারণ আমি বার বার তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
১৬১। যারা ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করে এবং কাফিররূপে মারা যায়, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত এবং ফেরেশ্তাগণ ও সকল মানুষের অভিসম্পাত।
১৬২। তারা সে অবস্থায় স্থায়ী হবে , তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না, তাদের [ভাগ্যে] কোন অবসরও দেয়া হবে না।
'অভিশাপ' এটা শুধুমাত্র মুখের কথা নয়। অভিশপ্ত হচ্ছে আত্মার এক বিশেষ অবস্থা। এই অবস্থা আল্লাহ্র অনুগ্রহের ঠিক উল্টো। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও রহমত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোর ভূবনে নিয়ে আসে। ফলে আত্মার মধ্যে জন্ম নেয় শান্তি, অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ।এরকম অবস্থায় বান্দার মধ্যে জন্ম নেয় ন্যায়-অন্যায় বোঝার ক্ষমতা, ভালকে মন্দ থেকে পার্থক্য করার ক্ষমতা, ফলে তিনি হন বিবেকবান এবং আল্লাহ্র রহমতের ফলে তার সমস্ত সত্তা শান্তিতে ভরে যায়। পৃথিবীর দুঃখ ব্যাথা, লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। অনাবিল শান্তি এবং আলোর ভূবনে হয় আত্মার অগ্রযাত্রা।
অভিশাপ প্রাপ্ত অবস্থা ঠিক এর বিপরীত। অনেকে মনে করে মুখে উচ্চারণ করলেই অভিশাপগ্রস্থ করা যায় কোনও ব্যক্তিকে, কিন্তু তা ঠিক নয়। তাই ইংরেজী প্রবাদ আছে, 'Causeless curse will not come.' কিন্তু যদি অত্যাচারী নিপীড়িত ব্যক্তি আল্লাহ্র কাছে এর প্রতিকার চায় তাহলে তার কান্না আল্লাহ্র আরশকে কাঁপিয়ে দেয়, ফলে অত্যাচারিত ব্যক্তির অভিশাপের ফলে অন্যায়কারী, অত্যাচারী ব্যক্তির উপর আল্লাহ্র রোষানল পতিত হয়। তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যায়কারী বা অত্যাচারী তার নিজের আত্মার উপরে অত্যাচার করে। ফলে আত্মার শান্তি হয় বিঘ্নিত। ঐ ব্যক্তি সর্বদা থাকে ভীত, সন্ত্রস্ত, বিচলিত, পৃথিবীর উপর সে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এরাই হচ্ছে অভিশপ্ত আত্মা। এটা হচ্ছে এক ধরনের মানসিক অবস্থা।
এতক্ষণ তো বদ দোয়া করার কথা বললাম। আমাদের বেঁচে থাকতে হবে মযলুমের বদ দোয়া থেকে।
আসলাম (রহঃ) হতে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় আযাদকৃত গোলাম হুনীকে একটি সরকারী চারণভূমির রক্ষক নিযুক্ত করেন। তাকে নির্দেশ দেন সে যেন জনসাধারণের দিক হতে নিজের হাতকে সংকুচিত করে অর্থ্যাত্ তাদের উপর যুলুম না করে এবং মজলুম অর্থ্যাত্ অত্যাচারীতদের বদ দোয়াকে ভয় করে। কারণ আল্লাহ মযলুমের দোয়া কবুল করেন।
রাসুল (সঃ) নিজ সন্তানকে অভিশাপ দিতে নিষেধ করেছেন। "তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্ততির বিরুদ্ধে এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করো না। তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুহূর্তের জ্ঞানপ্রাপ্ত নও, যখন যা কিছুই চাওয়া হয় তিনি তোমাদের তা দিয়ে দেবেন। [মুসলিম]
এই হাদীস থেকে বোঝা যায় রাগের মাথায় নিজের পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করা নিষেধ। সন্তানকে সব সময় ভাল দোয়া করা চাই। মনে রাখতে হবে
রাসুল (নঃ) বলেছেন, "মুমিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না।"
[সুনানে তিরমিযী ২০৮৬]
তিনি আরো বলেছেন, "তোমরা পরস্পর আল্লাহর লা'নত,তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দিবে না।' [সুনানে তিরমিযি]
রাসুল (সঃ) বলেছেন, "মুসলমান তো সেই ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।"
[ সুনানে তিরমিযী-২৬-২৭ , সুনানে আবু দাউদ-২৪৮১ নং হাদীস।]
মানুষ যেমন উত্তম বস্তু আন্বেষণ করতে তাড়াহুড়ো করে তেমনি শাস্তি অন্বেষণে তাড়াহুড়ো করে। তারা নবীদের চ্যালেঞ্জ করে, তোমরা যদি সত্যি নবী হও তবে শাস্তি আনয়ন কর। যা দিয়ে তোমরা ভীত প্রদর্শন করছ।
তাদের এই চাওয়ার উত্তরে আল্লাহ বলছেন, আমি যদি তাদের চাওয়া অনুযায়ী শাস্তি প্রেরণ করতাম তবে তাদের ধ্বংস ও মৃত্যু হত। কিন্তু আমি তা না করে তাদের সংশোধিত হবার পূর্ণ সুযোগ দেই।
দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে মানুষ যখন তার নিজ কল্যাণের জন্য দোয়া করে আমি তা মঞ্জুর করি।
কিন্তু মানুষ যখন রাগান্বিত থাকে বা কষ্টে থাকে তখন সে নিজের জন্য বা আপন সন্তানের জন্য বদ দোয়া করে। তাকে আমি এজন্য ছেড়ে দেই কারণ তা সে মুখে চাচ্ছে। অন্তর থেকে নয়। এখন আমি যদি মানুষের বদদোয়া অনুায়ী ধ্বংস করা শুরু করি তবে মানুষ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যেত। ।
হাদীস" তোমরা নিজেদের উপর, নিজেদের সন্তানের উপর, ও নিজেদের সম্পদ ও কারবারের উপর বদ দোয়া করো না। এমন না হয়ে যায় তোমাদের বদ দোয়া কাজে লেগে যায়। যেমন এমন সময় দোয়া করলে যখন দোয়া কবুল হয়।
কাফেররা নবীদের চ্যালেঞ্জ করে যে তোমরা যে আযাবের ভয় দেখাও তা এক্ষুনি নিয়ে আসো।পবিত্র কুরআন এর জবাবে বলছে আল্লাহ বিচক্ষণ ও দয়ালু। তাই তিনি এটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাদের বিপদকালীন অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।। যখন বিপদ আসে তখন সব বক্রতা দূর হয়ে যায় এবং আল্লাহকে ডাকতে থাকে। আবার যখন বিপদ কেটে যায় তখন যায় উদাসীন হয়ে।
হাদীসে আছে নবী (সঃ) বলেছেন, তোমরা একে অপরের উপর অভিসম্পাত করবে না যে, তোমার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত পতিত হোক এবং তুমি, দোজখী হও। এবং তোমাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হোক বলে বদ দোয়া করবে না। (তিরমিযি, আবু দাউদ) ।
আমরা যদি মহানবী (সঃ) এর জীবন চরিত পাঠ রে তাহলে দেখা যায় তার উপর মুনাফিকরা এত অত্যাচার করেছিল তারপরেও তিনি তাদের অভিসম্পাত করেন নি। তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া যায়।
হযরত আবকু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী এরশাদ করেছেন, যখন বান্দা কোন কিছুর উপর অভিসম্পাত করে তখন সে অভিসম্পাত বাক্যটি আসমানের দিকে উড়ে যায় কিন্তু এর জন্য আসমানের দরজাগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর সে যমীনের দিকে ফিরে আসে। যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে যদি সে অভিসম্পাতের উপযোগী না হয় । অভিসম্পাত তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। (তিরমিযি, আবু দাউদ)
রাসুল (সঃ) এর চলার পথে কাঁটা পুতে রাখার গল্প সবাই জানেন। তাকে কখনো অভিসম্পাত করেন নি। বরং যখন সে অসুস্থ হয় তখন তাকে দেখতে যান।
হযরতের চাচা আবু জেহেল তাঁর উপর সীমাহীন অত্যাচার করেছিল । কিন্তু তিনি কখনো তাকে অভিসম্পাত করেন নি।
আমাদের সমাজে দেখা যায় মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে একান্ত আপনজনকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কারণে বদ দোয়া করে।
সূরা কাহাফ ৪৬ নং আয়াত: " সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য"
তারা বাবা-মায়ের চোখের মণি। তাদের আনন্দ। কিন্তু কি করে তারা আবার রেগে গিয়ে তাদের অকল্যাণ কামনা করে। রসুল (সঃ) মানুষকে তার সন্তান, সম্পদ এবং তার নিজের বিরুদ্ধে অকল্যাণ কামনা করতে নিষেধ করেছেন। যেমন -আপনি হয়ত বললেন — এরকম হবার আগে আমার মরণ দিলে না কেন এমন সময় আপনি দোয়া করছেন । হতে পারে তখন আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং করেও নিলেন তখন কি হবে? মুসলিম ৩০১৪
৮৮ ও ৮৯ নং আয়াত::হযরত মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া।
-------------------------------------------------------------------------
(৮৮) মূসা বলিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো ফিরআউন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ যদ্বারা, হে আমাদের প্রতিপালক! উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, উহারা তো মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।'
এর পরের আয়াতে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন তিনি কবুল করেছেন।
-------------------------------------------------------------------------
(৮৯) তিনি বলিলেন, 'তোমাদের দুইজনের দু'আ কবুল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করিও না।"
-------------------------------------------------------------------------
মূসা (আঃ) কেন বদ দোয়া করেন?
মূসা (আঃ) বহুদিন ধরে ফেরাউনকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয়া সত্বেও তারা তা গ্রহণতো করেইনি উপরন্ত অত্যাচার ও উত্পীড়নের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।
মূসা (আঃ) অনুভব করেন ফিরআউন ও তার দলবলের মধ্যে কল্যাণের কোন লেশ নেই।
তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করতে করতে নিরাশ হয়ে যান।
তাই তিনি তাদের কুফরের কারণে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করেন।
তিনি আল্লাহর কাছে চান যে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ তাদেরকে দেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে নিতে।
কারণ পার্থিব সম্পদ ও ভোগ বিলাস মানুষকে পথভ্রষ্ট করে দেয়।
কারণ তারা মনে করে তাদের সম্পদ তাদের শক্তির উৎস।
গুনাহগারদের পার্থিব আড়ম্বর সাধারণ মানুষকে বিপথে চালিত করে।
মহান আল্লাহ মূসা ও হারূনের দোয়া কবুল করেন।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করার দোয়া কুফর নয়।
আল্লাহর পথে স্থির থাকতে বলেন এবং নির্বোধের পথ অনুসরণ করতে নিষেধ করেন।
এখান থেকে শিক্ষণীয় একমাত্র ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে আল্লাহর অনুগ্রহভাজন ঠিক করা যায় না। আল্লাহর অবাধ্য এবং সত্য বিমুখ অনেক লোককে আল্লাহ অনেক জাগতিক সম্পদ দান করেন।
দ্বিতীয়ত হল যারা যারা সমাজের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার ও উত্পীড়ন করে, তাদের সতর্ক করার পরও যদি তারা সংশোধিত না হয় ঈমানদাররা তাদের হাত থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করতে পারে। ঈমানদাররা তাদের দোয়ায় দৃঢ় ও অবিচল থাকলে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।
৯০ - ৯২ নং আয়াত: মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া বাস্তবায়ন।
-------------------------------------------------------------------------
(৯০) আমি বনী ঈসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফিরআউন ও তাঁহার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত সহকারে সীমালংঘন করিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল তখন বলিল, ;আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ঈসরাঈল যাহাতে বিশ্বাস করে।নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভূক্ত' ।
-------------------------------------------------------------------------
(৯১) এখনো! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করিয়াছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তভূর্ক্ত ছিলে।
-------------------------------------------------------------------------
(৯২) 'আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হইয়া থাক। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল।
-------------------------------------------------------------------------
ফিরাউন ও তার দলবল মূসা (আঃ) ও তার অনুসারীদের হত্যার জন্য অনুসরণ করে।
মহান আল্লাহ নীল নদের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দেন।
মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হয়ে যায় ।
ফিরাউন ও তার দলবল পার হতে গেলে চারিদিক থেকে পানি এসে নিমজ্জিত করে ফেলে এবং তাদের মৃত্যু হয়।
ডুবে যাবার সময় ফিরাউন ঈমান আনে কিন্তু আল্লাহ তা গ্রহণ করেন নি।
মহান আল্লাহ ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ ফেরআউনের দেহ সংরক্ষণ করেন।
এখানে শিক্ষণীয় হচ্ছে জেনুইন বদদোয়া আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়।
ন্যায়ের সীমালংঘন মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না।
অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত।
মৃত্যুর ফেরেশতা হাজির হবার পর তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করেরন না।
আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দকে কখনো নিঃসাড় অবস্থায় ছেড়ে দেন না।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যাদের মধ্যে ধর্মের বাণী প্রচার করছিলেন তাদের বিমুখিতা দেখে মন খারাপ করার প্রয়োজন নাই। কারণ মূসা (আছঃ) এর সাষে
ফেরেশতাদের এবং শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর ঈমান আনলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। মাফ চাইবার সুযোগ সে হারিয়ে ফেলেছে।
সবশেষে বলব আল্লাহর কাছে দোয়া বা বদ দোয়া করা মানব চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষ যেভাবেই হোক ছোট কাল থেকে শিখে যায় দোয়া চাওয়া। এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের দোয়ার উপর আস্থা উঠে গেলেও অভ্যাস বশত আমরা পরস্পরের কাছে দোয়া চাই এবং দোয়া করি। রেগে গেলে বদ দোয়া দিয়েও বসি।
একজন মানুষের সফলতার পিছনে আমরা দোয়া খুঁজি । মনে করি মা-বাবা বা কারো দোয়ায় সে সফল হয়েছে।
আমরা একজন ভিক্ষুককেও কিছু টাকা দান করে দোয়া চেয়ে নেই।
শবে মেরাজে মহান আল্লাহর নিমন্ত্রণে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তার সাথে সাক্ষাত্ করতে যান। মহান আল্লাহ তার অথিথিকে যে উপহার দেন তার মধ্যে আছে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। কিভাবে আল্লাহর কাছে দোয় করতে হবে।
সূরা বাকারার ২৮৬ আয়াত::
আল্লাহ কাউকে তার সামর্থ ব্যতীত দায়িত্ব দেন না।ভাল এবং মন্দ যে যা উপার্জন করবে, সে তারই প্রতিদান পাবে।
হে আমাদের রব! আমরা যদি বিস্মৃত হই বা ভুল করি, আপনি আমাদের অপরাধী করবেন না।
হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।
হে আমাদের রব! আর আপনি আমাদেরকে এমনকিছু চাপিয়ে দিবেন না, যেটা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন ক করুন এবং আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। আপনি আমাদের অনুগ্রহ করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক । সুতরাং আপনি আমাদেরকে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।
মহান আল্লাহ আমাদের বদ দোয়া করা থেকে বিরত থাকার এবং দোয়া করার তওফিক দান করুন।সবার জন্য আমরা যেন কল্যাণ কামনা করতে পারি। আমিন।
আল্লাহ আমাদের তাঁর শেখানো ভাষা ও নিয়মে, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণে লাভে আশ্রয় প্রার্থণা করার তৌফিক দান করুন আমীন। ছুম্মা আমীন