সূরা হুদ। রুকু ৩। হযরত নূহ (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। 


সূরা হুদ- রুকু ৩ 
আয়াত ২৫ - ৩৫
হযরত নূহ (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়। 


২৫ ও ২৬ নং আয়াত:: হযরত নূহ (আঃ) কে সুস্পষ্ট সতর্ক বার্তা দিয়ে প্রেরণ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫) আমি তো নূহকে তাহার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠাইয়াছিলঅম। সে বলিয়াছিল, 'আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী, 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬) যেন তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর 'ইবাদত না কর; আমিতো তোমাদের জন্য এক মর্মন্তুদ দিবসের শাস্তি আশংকা করি।'
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

হযরত নূহ (আঃ) এর রেসালত সম্পর্কে বলা হয়েছে। 
বার্তার বিষয়বস্তু ছিল (১) তাঁর কওমকে তাদের পাপ সম্পর্কে সতর্ক করা এবং  (২) এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান জানিয়েছেন। 
সতর্ক করেছিলেন যন্ত্রণাময় দিনের শাস্তির জন্য। 

২৭ নং আয়াত:: সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরোধিতা। 
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৭) তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা, যাহারা ছিল কাফির তাহারা বলিল, 'আমরা তোমাকে তো আমাদের মত মানুষ ব্যতীত কিছু দেখিতেছি না; আমরা তো দেখিতেছি, তোমরা অনুসরণ করিতেছ তাহারাই, যাহারা আমাদের মধ্যে বাহ্য দৃষ্টিতেই অধম এবং আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখিতেছি না; বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি।'’
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • তৎকালীন সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকদের বিরোধিতা। 
  • তারা নবী-রাসুলদের তাদের নেতৃত্বের হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে। 
  • নূহ (আঃ)কে তারা একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে বিবেচনা করে। 
  • যদিও নবী রাসুলরা স্পষ্ট করে বলেছেন আমরা অন্যদের মত মানুষ, ফেরেশতা নই। 
  • তারা  অনুসারীদের ইতর নীচু শ্রেণীর লোক মনে করে। 

পাপী ও কাফিরদের তিনটি সহজাত প্রেরণা। : 
(১) ঈর্ষা বিদ্বেষ যা তাদের দৃষ্টি ও চিন্তা শক্তিকে আবদ্ধ করে দেয়। 
(২) আর্থিক ও সামাজিক নেয়ামত আল্লাহর দান। এ কথা ভুলে গিয়ে নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করে। 
(৩) অহংকার ও আত্মরম্ভিতার কারণে অন্যদের হীন চোখে দেখে।

২৮ নং আয়াত: হযরত নূহ (আঃ) নেতাদের তিরস্কারে ভ্রুক্ষেপ না করার জন্য কওমের প্রতি আহ্বান। 
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৮) সে বলিল,'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁহার নিজ অনুগ্রহ হইতে দান করিয়া থাকেন, আর ইহা তোমাদের  নিকট গোপন রাখা হইয়াছে আমি কি এই বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করিতে পারি, যখন তোমরা ইহা অপছন্দ কর?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নূহ (আঃ) বিনয়ের সাথে তাঁর কওমকে জানালেন রবের পক্ষ হতে তাঁর নবুয়্যতের  সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে।
  • আল্লাহ তাঁকে রহমত দান করেছেন। 
  • যা তিনি গোপন রেখেছেন। 
  • অনর্থক বা অযৌক্তিক কোন কথা আমি বলছি না (নবী-রাসুলরা যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে কথা বলেন। 
  • তাঁরা কারো উপর ধর্মীয় বিশ্বাসকে চাপিয়ে দেন না। 
  • আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান ও বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা দিয়েছেন। 
  • তিনি চান মানুষ জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধিকে ব্যবহার করে সত্যকে গ্রহণ করুক। 

২৯ ও ৩০ নং আয়াত:: নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নূহ (আঃ) ও অনুসারীদের নীচু ভেবে অবহেলা করার জবাব। 
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৯) 'হে আমার সম্প্রদায়! ইহার পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধনসম্পদ যাচ্ঞা  করি না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহরই নিকট এবং মুমিনদেরকে তাড়াইয়া দেওয়া আমার কাজ নয়; তাহারা নিশ্চিতভাবে তাহাদের প্রতিপালকের সাক্ষাত্‌ লাভ করিবে। কিন্তু আমি তো দেখিতেছি তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। 
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩১) হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাহাদেরকে তাড়াইয়া দেই, তবে আল্লাহ হইতে আমাকে কে রক্ষা করিবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করিবে না? 
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • ধর্ম প্রচারের জন্য নূহ (আঃ) কোন সম্পদ চান না। 
  • এর জন্য তাদের চিন্তিত হবার কারণ নেই। 
  • তাঁর পারিশ্রমিকের প্রতিদান মহান আল্লাহ দিবেন। 
  • ইমানদার ব্যক্তিদের বিতাড়ন করা তার কাজ নয় । 
  • অর্থ্যাত্‌ সমাজের দুর্বল ও দরিদ্র মানুষদের তিনি অবহেলা করেন না। 
  • একদিন সবাইকে রবের সাথে সাক্ষাত্‌ হবে। 
  • তিনি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দেখেন মূর্খ সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী হিসাবে। 
৩১ ও ৩২ নং আয়াত:: কওমের আরো কিছু অবান্তর ধারণার জবাব। 
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩১) 'আমি তোমাদেরকে বলি না, 'আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার আছে, আর না অদৃশ্য সম্বন্ধে আমি অবগত এবং আমি ইহাও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। তোমাদের দৃষ্টিতে  যাহারা হেয় তাহাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ তাহাদেরকে কখনই মঙ্গল দান করিবেন না; তাহাদের অন্তরে যাহা আছে তাহা আল্লাহ সম্যক অবগত। তাহা হইলে আমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হইব।'’
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩২) তাহারা বলিল, 'হে নূহ! তুমি তো আমাদের সঙ্গে বিতন্ডা করিয়াছ- তুমি বিতন্ডা করিয়াছ আমাদের সঙ্গে অতি মাত্রায়; সুতরাং তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদেরকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর।' 
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • কওমের ধারণা ছিল নূহ (আঃ) এর কাছে আল্লাহর ভান্ডারসমূহ আছে। 
  • নূহ (আঃ) অদৃশ্য সম্পর্কে জানেন। 
  • আমি কোন মালিক নই। 
  • উপরের সব অবান্তর ধারণার জবাবে বলেন 
  • আমি একজন সাধারণ মানুষ এবং সেভাবেই জীবন যাপন করি। 
  • মহান আল্লাহ তাঁকে ওহী পাঠান, সেই ওহী তিনি মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। 
  • তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জানেন না।
  • আল্লাহ তাঁকে যতটুকু অবহিত করেন তিনি ততটুকু বলতে পারেন। 
  • আমার অনুসারীদের অভিজাত শ্রেণী থেকে হতে হবে এমন কোন কথা নেই। 
  • নবী-রাসুলরা আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি। 
  • আমি জালিমদের অন্তর্ভ‍ূক্ত নই। 
  • মহান আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে কি আছে তা পরিষ্কারভাবে জানেন।  
  • নূহ (আঃ) এর যুক্তিপূর্ণ কথা যখন খন্ডন করতে পারে নি তখন তাকে সে অহেতুক বিতর্ক করছে বলে অফবাদ দেয়। 
  • নূহ (আঃ) এর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ঐশী শাস্তি আনতে বলেন। 
  • তাহলে তারা বুঝতে পারবে নূহ (আঃ) সত্যবাদীদের অন্তভূ‍র্ক্ত। 
৩৩ ও ৩৪ নং আয়াত:: ঐশী শাস্তির নমুনা দেখতে চাওয়ার উত্তর। 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৩) সে বলিল, ইচ্ছা করিলে আল্লাহই উহা তোমাদের নিকট উপস্থিত করিবেন এবং তোমরা উহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না। 
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৪) আমি তোমারেকে উপদেশ দিতে চাহিলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসিবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করিতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তাঁহারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন।'
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • ঐশী শাস্তি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে। তার দ্বারা  সম্ভব নয়।  
  • আমি শুধু সতর্ককারী। 
  • ঐশী শাস্তি নেমে আসলে কেউ ব্যর্থ করতে পারবে না। 
  • ফলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। 
  • আমার দায়িত্ব হল তোমাদের উপদেশ দেয়া। 
  • আল্লাহ যদি বিভ্রান্ত করতে চান তবে উপদেশ কোন কাজে  আসবেনা। 
  • আল্লাহ রব। তাঁর কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। 

৩৫ নং আয়াত:: নূহ (আঃ) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। 
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৫) তাহারা  কি বলে যে, সে ইহা রচনা করিয়াছে? বল, ' আমি যদি ইহা রচনা করিয়া থাকি, তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হইব। তোমরা যে অপরাধ করিতেছ তাহা হইতে আমি দায়মুক্ত। 
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • ততকালীন কাফিররা প্রচার করত নূহ (আঃ)যা বলছেন তা কার রচনা করা বাণী। আত্‌ল্লাহর নয়। 
  • এর জবাবে নূহ (আঃ) জানান তিনি লিখে থাকলে তার অপরাধ। 
  • কিন্ত তিনি লিখেননি।
  • কাফেররা অবিশ্বাস করে অপরাধ করছে। 
  • হযরত নূহ (আঃ) অপরাধ হতে দায়মুক্ত। 


সংক্ষেপে আমার অনুধাবন। 

(ক) হযরত নূহ (আঃ) কে সুস্পষ্ট সতর্ক বার্তা দিয়ে প্রেরণ। (২৫, ২৬) 

  • বার্তার বিষয়বস্তু ছিল (১) তাঁর কওমকে তাদের যন্ত্রণাময় শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করা এবং  (২) এক আল্লাহর ইবাদতে আহ্বান। 

(খ)  সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরোধিতা।  (২৭ ও ২৮)

 i) বিরোধিতার কারণ:  ঈর্ষা বিদ্বেষ ,নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ  

ভাবা এবং অহংকার ও আত্মরম্ভিতার কারণে অন্যদের হীন 

ভাবা ।

ii)  নূহ (আঃ) বিনয়ের সাথে নবুয়্যতের  সুস্পষ্ট প্রমাণ  দেন। 

     তা হচ্ছে:  আল্লাহর রহমত,অনর্থক এবং অযৌক্তিক কথা 

      না বলা, ধর্মীয় বিশ্বাস জোর করে না চাপান।  

(গ) নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অবান্তর কথার জবাব: (২৯,৩০, ৩১, ৩২) 

  • ধর্ম প্রচারের জন্য তাঁর কোন পারিশ্রমিক নাই। প্রতিদান মহান আল্লাহ দিবেন। 

  • সমাজের দুর্বল ও দরিদ্র মানুষদের তিনি অবহেলা করেন না। 

  • নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দেখেন মূর্খ সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী হিসাবে। 

  • আল্লাহর ধন ভান্ডারসমূহ তাঁর কাছে নাই।

  •  অদৃশ্য সম্পর্কে জানেন না। যতটুকু আল্লাহ জানান ততটুকু জানেন।

  • তিনি কোন মালিক নন। একজন সাধারণ মানুষ ।

  • আল্লাহর মনোনীক ব্যক্তি। 

  • মহান আল্লাহ তাঁকে ওহী পাঠান।

  • তিনি  জালিমদের অন্তর্ভ‍ূক্ত নন। 

  • মহান আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে কি আছে তা পরিষ্কারভাবে জানেন।  

  • নূহ (আঃ) যুক্তিপূর্ণ কথা বলেন অহেতুক বিতর্ক করেন না। 

(ঘ) কাফেরদের ঐশী শাস্তির নমুনা দেখতে চাওয়ার উত্তর।(৩৩,৩৪)  

  • ঐশী শাস্তি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে। 

  • ঐশী শাস্তি নেমে আসলে কেউ ব্যর্থ করতে পারবে না। 

  • নবীর দায়িত্ব সতর্ক করা ও  উপদেশ দেয়া। 

  • আল্লাহ বিভ্রান্ত করলে উপদেশ কোন কাজে  আসবেনা। 

  • আল্লাহ রব। তাঁর কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। 

(ঙ) নূহ (আঃ) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। (৩৫) 

  • নূহ (আঃ) যা বলছেন তা তাঁর রচনা। আল্লাহর নয়। 

  • নূহ (আঃ) জানান তিনি লিখেননি।

  • কারণ তা অপরাধ। 

  • কাফেররা অবিশ্বাস করে অপরাধ করছে। 

  • নূহ (আঃ) অপরাধ হতে দায়মুক্ত। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url