সূরা হুদ। রুকু ৭। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও মেহমানদের ঘটনা।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। 

সূরা হুদ। 

রুকু ৭ । আয়ত ৬৯ -  ৮৩। 

হযরত ইব্রাহীম (আঃ} ও মেহমানদের ঘটনা। 


৬৯ নং আয়াত:: সম্ভাষণ করার নিয়ম ।

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৯) আমার ফিরিশতাগণ  তো সুসংবাদ  লইয়া ইব্রাহীমের নিকট আসিল। তাহারা বলিল, 'সালাম'। সেও বলিল, 'সালাম'। সে অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গো বত্‌স লইয়া আসিল। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • দুইজন ব্যক্তির মধ্যে দেখা হলে তারা পরস্পরকে 'সালাম' বলে সম্ভাষণ করবে। 

  • সালাম অর্থ সে  তার জন্য শান্তি কামনা করবে।

  • মেহমানকে আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে খাদ্য বস্তু দেবে। 


৭০ থেকে ৭৪ নং আয়াত : আল্লাহর রহমত ও করুণার প্রকাশ। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭০) সে যখন দেখিল তাহাদের হস্ত উহার দিকে প্রসারিত হইতেছে না, তখন তাহাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করিলএবং তাহাদের সম্বন্ধে  তাহার মনে ভীতি সঞ্চার হইল। তাহারা বলিল, 'ভয় করিও না, আমরা তো লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হইয়াছি।'’

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৭১) আর তাহার স্ত্রী দন্ডায়মান এবং সে হাসিয়া ফেলিল। অতঃপর আমি তাহাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়'কুবের সুসংবাদ দিলাম। 

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৭২) সে বলিল, 'কী আশ্চর্য! সন্তানের জননী হইব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ! ইহা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার।" 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৩) তাহারা বলিল, 'আল্লাহর কাজে তুমি বিষ্ময় বোধ করিতেছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রহিয়াছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি তো প্রশংসার্হ ও সম্মানার্হ।

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৪) অতঃপর যখন ইব্রাহীমের ভীতি দূরীভূত হইল এবং তাহার নিকট সুসংবাদ আসিল তখন সে লূতের সম্পদায়ের সম্বন্ধে আমার সঙ্গে বাদানুবাদ করিতে লাগিল। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

৭৫ নং আয়াত: হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর চরিত্র। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৫) ইব্রাহীম তো অবশ্যই সহনশীল, কোমল হৃদয় , সতত আল্লাহ -অভিমুখী। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • unchecked

    বিনম্রচিত্ত এবং সহনশীল।

  • unchecked

    কোমল হৃদয় ।সকলের জন্য দয়া ও সহানুভূতি ছিল।

  • unchecked

    আল্লাহ অভিমুখী। অর্থ্যাত্‌ তিনি সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন।

  • unchecked

    অপরাধীদের শাস্তি প্রদানে নমনীয় ছিলেন।  


৭৬ নং আয়াত: ইব্রাহীম (আঃ) কে  মুশরিকদের শাস্তির সংবাদ। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৬) হে ইব্রাহীম ! ইহা হইতে বিরত হও; তোমার প্রতিপালকের  বিধান আসিয়া পড়িয়াছে; উহাদের প্রতি তো আসিবে শাস্তি , যাহা অনিবার্য। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • unchecked

    ইব্রাহিম (আঃ) ফেরেশতাদের সাথে বিতর্ককরছিলেন। 

  • unchecked

    তাকে থামতে বলা হয়। 

  • unchecked

    আল্লাহর বিধান যখন চলে আসে তখন শাস্তি অনিবার্য। 

  • unchecked

    আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সি বিধান লংঘন করতে পারে না। 


৭৭ হতে  লুতের সম্প্রদায়ের নৈতিক অধঃপতন। 

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৭) এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের নিকট আসিল তখন তাহাদের আগমনে সে বিষন্ন হইল এবং নিজেকে তাহাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করিল এবং বলিল, 'ইহা নিদারুণ দিন!!" 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৮) তাহার সম্প্রদায় তাহার কাছে উদভ্রান্ত হইয়া ছুটিয়া আসিল এবং পূর্ব হইতে তাহারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। সে বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! ইহারা আমার কন্যা, তোমাদের জন্য ইহারা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে হেয় করিও না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই? 

----------------------------------------------------------------------------------------------

(৭৯ ) তাহারা বলিল,'তুমি তো জান, তোমার কন্যাদিরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নাই; আমরা কি চাই তাহা তো তুমি জানোই। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৮০) সে বলিল, 'তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকিত অথবা যদি আমি আশ্রয় লইতে পারিতাম কোন সূদৃঢ় স্তম্ভের!'’

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৮১) তাহারা বলিল, 'হে লূত! নিশ্চয়ই আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফিরিশতা। উহারা কখনই তোমার নিকট পৌঁছিতে পারিবে না। সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময় তোমার পরিবারবর্গ সহ বাহির হইয়া পড় এবং তোমাদের মধ্যে কেহ পিছন ফিরে তাকাইবে না, তোমার স্ত্রী ব্যতীত। উহাদের যাহা ঘটিবে তাহারও তা্হাই ঘটিবে। নিশ্চয় প্রভাত উহাদের জন্য নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়? 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৮২) অতঃপর যখন আমার আদেশ আসিল তখন আমি জনগণকে উল্টাইয়া দিলাম এবং উহাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করিলাম প্রস্তর-কংকর। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৮৩) যাহা তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্ণিত ছিল। ইহা জালিমদের হইতে দূরে নয়। 

--------------------------------------------------------------------------------------------

  • unchecked

    ফেরেশতাদের দেখে লুত (আঃ) বিষন্ন হয়ে পড়েন। 

  • unchecked

    কারণ তিনি ভাবছিলেন তাদেরকে তিনি তার জাতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না। 

  • unchecked

    তার জাতি ছিল সমকামী ও বেহায়া।  

  • unchecked

    এই পাপিষ্ঠদের হাত থেকে তার মেহমানদের রক্ষা করার  বুদ্ধি ও শক্তি কোনটাই তার ছিল না। 

  • unchecked

    তাই তিনি সমস্যার সমাধানের জন্য তাঁর কন্যাদের  বিয়ের  প্রস্তাব দেন। 

  • unchecked

    এ কাজটা ছিল পবিত্র। 

  • unchecked

    পাপিষ্ঠরা তা অস্বীকার করে। কারণ তারা রমণীবিলাসী নয়। 

  • unchecked

    আল্লাহকে ভয় করার আহ্বান জানালেন ।

  • unchecked

    তার মেহমানদের সাথে অশালীন আচরণ করে তাকে হেয় না করার আহ্বান জানালেন। 

  • unchecked

    পাপিষ্ঠদের দুরাচার ও আস্ফালন দেখে লুত (আঃ) অসহায় বোধ করেন। 

  • unchecked

    মনে মনে ভাবছিলেন তিনি যদি শক্তি প্রয়োগ করতে পারতেন অথবা অন্য কোন শক্তিশালি দলের সাহায্য পেতেন। 

  • unchecked

    তাহলে তিনি তার অতিথিদের নিরাপদে রাখতে পারতেন। 

  • unchecked

    এরপর অতিথিরা লুত (আঃ) এর উদ্বিগ্নতা দেখে ফেরেশতারা তাদের পরিচয়এবং আল্লাহ কেন তাদের পাঠিয়েছেন তা অবহিত করে। 

  • unchecked

    আল্লাহর অনুমতি নিয়ে ফেরেশতারা তাদের ধ্বংস করে দেন। 

  • unchecked

    তার সত্যপ্রত্যাখ্যানকারী স্ত্রী তার সাথে যায় নি এবং ধ্বংস হয়ে যায়। 

  • unchecked

    হযরত লুত তার স্ত্রীকে ছাড়া যাত্রা শুরু করেন। 

  • unchecked

    মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন অতি প্রত্যুষে নির্ধারিত শাস্তি আসবে। 


আমার অনুধাবন: 

 

  • বাড়ীতে কোন অতিথি আসলে তাকে খুশীমনে 'সালাম' দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। তাকে যথোপযুক্ত সম্মান এবং সে সাথে সাথে অতিথি আপ্যায়নের জন্য উত্তমখাদ্য দিতে হবে


  • গজবে ধ্বংস হওয়া দুটি  জাতি।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করায় কয়েকটি জাতি রাতারাতি ধূলোয় মিশে যায় । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সালেহ (আঃ) সামুদ জাতি এবং হযতে লুত (আঃ) এর জাতি।


সালেহ(আঃ) এর সামুদ জাতি:


সামুদ জাতি অত্যন্ত সমৃদ্ধিশীল জাতি ছিল। তাদের জীবন যাত্রার মান অত্যন্ত উচ্চে ছিল কিন্তু মানবতা ও নৈতিকতার মান ছিল অত্যন্ত নিম্ন মুখী। সমাজে কুফর ও শির্কের  প্রসার লাভ  করছিল। সমাজের নেতৃ স্থানীয় ব্যক্তিরা নানা অন্যায় ও অবিচারে করত। হযরত সালেহ (আ}) যে সত্যের দাওয়াত দিতেন তাতে সমাজের দুর্বল ও  নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা সাড়া দিয়েছিল। তার জাতির বেশীরভাগই তার  অবাধ্য থেকে যায়। তারা সালেহ (আঃ) এর কাছে পাহাড় থেকে উষ্ট্রী বের করে আনার মোজেযা দাবী করে। তাদেরকে সতর্ক করে দেবার পরও তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলে এবং তাদের উপর গজব নেমে আসে। তাদের সবার অপমৃত্যু ঘটে। 

 

হযতে লুত (আঃ) এর জাতি::


এই জাতির নৈতিক অবক্ষয় হয়েছিল এবং বিকৃত পাপাচারে তারা মেতে উঠে। এদের প্রাচুর্যময় জীবন যাত্রা তাদের বেপরোয়া করে তোলে এবং তাদের মাঝে সমকামিতার প্রবণতা দেখা যায়। এই জঘন্য অপকর্ম করে তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। অবশেষে একদিন গজব নাযিল হয় এই পাপচারী জাতির বিরুদ্ধে। 


  • অহংকারের কারণে আল্লাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করাই সামুদ  ও লুতের জাতির ধ্বংসের মূল কারণ ।

  • সমাজের ক্ষমতাবান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অহংকার সেই সমাজকে বিপথে পরিচালিত করে এবং ধ্বংসের কারণ হয়। 

  • দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা সাধারণত আল্লাহ এবং পরকাল বিশ্বাস করে। এজন্য তারা ত্য্যাগ করতে প্রস্তুত । 

  • অবিশ্বাসীরা আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসুলে বিশ্বাস করে না। তাদের উপদেশ অনুসরণ  করেন না।কারণ হিসাবে সাধারণত বাপ-দাদা ও প্রচলিত প্রথার দোহাই দেয়। 

  • হঠকারী ও ক্ষমতালোভী নেতারা সাধারণত চাটুকার ও চক্রান্তকারী হয়ে থাকে। তারা ঈমানদারদের বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে জয়ী হয় কিন্তু অবশেষে আল্লাহর কৌশলে কখনো কখনো এই দুনিয়াতে ধ্বংস হয়ে যায়। আর আখেরাতের আযাব হয় আরো কঠিন। 

  • আল্লাহ জালিম জনপদকে ধ্বংস করেন অন্যদের শিক্ষা দেবার জন্য। 

  • কখনো কখনো মাত্র এক/দুইজনের কারণে গোটা সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়।উট হত্যা করেছিল মাত্র দুইজন। কিন্তু পুরো সামুদ জাতির উপর গযবের সূচনা হয়। যদিও তাদেরকে  সংশোধনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়। 

  • কুচক্রীদের কৌশল আল্লাহ ব্যর্থ করে দেন। কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না। যেমন সামুদ জাতির নেতারা বুঝতে না পেরে উটকে পানি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। 

  • মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দুনিয়াতে ছোটখাট শাস্তির আস্বাদন করিয়ে থাকেন। তাদেরকে ভয় দেখান। যাতে সঠিক পথে ফিরে আসে। 

  • সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দে অবশেষে সত্যেরে জয় হয়। যেমন সালেহ ও তার দুর্বল ইমানদার লোকেরা আল্লাহহর গযব থেকে নাজাত পেয়ে গিয়েছিল। মিথ্যার পূজারী  শক্তিশালীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।


ইতিহাস সাক্ষী অভিশপ্ত লুতের জাতি সমকামিতার অপরাধে ধ্বংস হয়েেছিল। হযরত লুত (আঃ) তাদেরকে বাবর বার হালাল প্রথায় নারীদের সাথে যৌন চাহিদা পূরণের আহ্বান জানান সত্বেও তারা সে কথা শুনে নি। 

বর্তমান বিশ্বে সমকামিতার নামে যে আয়োজন ও কুপ্রথা চালু হচ্ছে  তা অসামাজিক , অমানবিক এবং অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রচকাশ। এই জঘন্য অপরাধকে আধুনিকতা এবং অধিকারের কথা বলে পাপাচারের প্রসার ঘটাচ্ছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এর উল্লেখ করে মানুষকে সতর্ক করে দিচ্ছেন। 

                                                                                                                                                                                                                             



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url