সূরা হুদ। রুকু ৬। হযরত সালেহ (আঃ) ও তার জাতির পরিণতি।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। 

সূরা হুদ। রুকু ৬

আয়াত: ৬১ - ৬৮

হযরত সালেহ (আঃ) ও তার জাতির পরিণতি।  


৬১ নং আায়াত: মানুষের সৃষ্টি  ও বসবাস মাটিতে। 

--------------------------------------------------------------------------

(৬১) আমি সামুদ জাতির নিকট তাহাদের ভ্রাতা সালিহকে পাঠাইয়াছিলামসে বলিয়াছিল, 'আমার সম্প্রদায়!' তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য ইলাহ নাই। তিনি তোমাদের মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন । এবং উহাতেই  তিনি তোমাদের বসবাস করাইয়াছেন্র। সুতরাং তোমরা তাহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর আর তাহার দিকেই প্রত্যাবর্তন করনিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটে, তিনি আহ্বানে সাড়া দেন। 

-------------------------------------------------------------------------------------

  • সালেহ  (আঃ) তাঁর জাতিকে নিরংকুশভাবে আল্লাহর এবাদত করতে আহ্বান করেছেন। 

  • কারণ তিনি  সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। 

  • তিনি মানুষকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। 

  • আর এই মাটিতেই তাদের জন্ম এবং বৃদ্ধি।  

  • মাটিতে একটি  নির্দিষ্ট বয়সকাল পর্যন্ত বসবাস করান। 

  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান করেন। 

  • কারণ মানুষকে একসময় আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। 

  • এটা নিশ্চিত যে আমাদের রব একদম আমাদের নিকটে। 

  • তিনি মানুষের প্রার্থনা শোনেন এবং কবুল করেন।




৬২  নং আয়াত: মুশরিকদের সন্দেহ  বাতিকতা। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬২) তাহারা বলিল, 'হে সালিহ!  ইহার পূর্বে  তূমি ছিলে আমাদের আশা স্থল। তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করিতেছ 'ইবাদত করিতে তাহাদের, যাহাদের 'ইবাদত করিত আমাদের পিতৃপুরুষেরা? আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর  সন্দেহে রহিয়াছি সে বিষয়ে, যাহার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহ্বান করিতেছ। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • সালেহ (আঃ) তাঁর জাতির কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন। 

  • তিনি ছিলেন তাঁর জাতির আশা ভরসার স্থল।

  • তাঁর বিকল্প কাউকে চিন্তা করতে পারত না। 

  • তারা ভেবেছিল তিনি তাদের নেতা হবেন। 

  • সিলেহ (আঃ)  তাদের পূর্ব পুরুষের রীতি অনুযায়ী উপাসনা করতে নিষেধ করছেন। 

  • তিনি যে তওহীদের দিকে ডাকছেন তা নিয়ে তারা গভীর সন্দেহের মধ্যে আছে। 

  • তারা দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে পড়ে গেছে।  

  • তাদের অনুরোধ তাদের যেন নিষেধ না করা হয়। 



৬৩ নং  আয়াত:: সালেহ (আঃ) এর উত্তর। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৩) সে বলিল, ' হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁহার নিজ অনুগ্রহ দান করিয়া থাকেন, তবে আল্লাহর শাস্তি হইতে আমাকে কে রক্ষা করিবে, আমি যদি তাহার অবাধ্যতা করি? সুতরাং তোমরা তো কেবল আমার  ক্ষতিই বাড়াইয়া দিতেছ।

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • সালেহ নবী তার জাতির উদ্দেশ্যে বলেন তোমরা যে আমাকে তওহীদের বাণী এবং মূর্তিপুজা না করার যে আহ্বান আমি জানাচ্ছি তা প্রচার করতে নিষেধ করছ তা মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। 

  • আল্লাহর স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি।

  • সে সাথে তিনি আমাকে অনুগ্রহ দান করেন। 

  • আমি আল্লাহর আদেশ না মানলে কে আমাকে আল্লাহতায়ালার আযাব থেকে রক্ষা করবে। 

  • তোমাদের এই পরামর্শ আমার ক্ষতি ছাড়া আর কোন উপকার করবে না। 


৬৪ নং আয়াত: আল্লাহর নিদর্শন হিসাবে উট। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৪) 'হে আমার সম্প্রদায়!  ইহা আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। ইহাকে আল্লাহর জমিতে চরিয়া খাইতে দাও। ইহাকে কোন কষ্ট দিও না, কষ্ট দিলে আশু  শাস্তি  তোমাদের উপর আপতিত হইবে। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুশরিকরা সালেহ (আঃ) এর কাছে স্পষ্ট মুজেযা দেখতে চায়। 

  • আল্লাহ নিদর্শন হিসাবে একটি উষ্ট্রীকে পাঠান। 

  • উষ্ট্রীটিকে যমীনে ছাড়িয়া দিতে বলেন যাতে সে নিজে চরিয়া খেতে পারে। 

  • এখানে নালেহ (আঃ) স্বার্থপরতা ত্যাগ করে  উষ্ট্রীটিকে তাদের চারণভূমিতে বিচরণ করদে দিতে বলেন। 

  • তাকে যদি কষ্ট দেয়া হয় তবে তাদের উপর শীঘ্রই আল্লাহর গযব এসে পড়বে। 



৬৫ -৬৮ নং আয়াত:: সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও ধ্বংস। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৫) কিন্তু উহাকে উহারা বধ করিল। অতঃপর সে বলিল, 'তোমরা তোমাদের গৃহে তিন  দিন জীবন উপভোগ করিয়া নাও। ইহা একটি প্রতিশ্রুতি যাহা মিথ্যা হইবার নয়। 

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৬) যখন আমার নির্দেশ আসিল তখন আমি সালেহ ও তাঁহার সঙ্গে যহারা ঈমান আনিয়াছিল তাহাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করিলাম এবং  রক্ষা করিলাম  সেই দিনের লাঞ্ছনা হইতে। তোমার প্রতিপালক তো মহাশক্তিমান, পরাক্রমশালী।

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৭)  অতঃপর যাহারা সীমালঙ্ঘন করিয়াছিল মহানাদ তাহাদেরকে আঘাত করিল; ফলে উহারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হইয়া গেল;

---------------------------------------------------------------------------------------------

(৬৮) যেন তাহারা সেখানে কখনও বসবাস করে নাই। জানিয়া রাখ! সামুদ সম্প্রদায় তো তাহাদের প্রতিপালতকে অস্বীকার করিয়াছিল। জানিয়া রাখ! ধ্বংসই হইল সামুদ সম্প্রদায়ের পরিণাম। 

--------------------------------------------------------------------------------------------


সমিুদ জাতির ধ্বংসের কারণ। 


সামুদ জাতি অর্থশালী এবং শক্তিশালী ছিল । অহংকার ও আত্মরম্ভিতার কারণে তারা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং শির্কে লিপ্ত হয়। হযরত সালেহ (আঃ) সামুদ জাতিকে আল্লাহর প্রতি ইমান আনার আহ্বান জানান।অল্প কিছু লোক বাদে নবীর কথা তারা শুনেও নি মানেও নি। তারা মোজেযা দেখার দাবী করে। 

হযরত সালেহ (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। পাহাড় থেকে উষ্ট্রি বেরিয়ে আসল। তাকে স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করার অধিকার দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা উষ্ট্রীটিক মেরে ফেলে। তখন আল্লাহ তাদের মহানাদের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেন। অহংকারের কারণে আল্লাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করাই তাদের ধ্বংসের মূল কারণ 






আমার সংক্ষেপে অনুধাবন:


রুকুর মূল আলোচ্য বিষয়:

(ক) মানুষের সৃষ্টি  ও বসবাস মাটিতে। (৬১)

(খ) সালেহ (আঃ) ও মুশরিকদের মধ্যে কথপোকথন।  (৬২, ৬৩) 

(গ) আল্লাহর নিদর্শন হিসাবে উষ্ট্রিী প্রেরণ(৬৪)

(ঘ)   সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও ধ্বংস। (৬৫ -৬৮) 


অনুধাবন: 

  • অহংকারের কারণে আল্লাহকে তুচ্ছ জ্ঞান করাই সামুদ জাতির ধ্বংসের মূল কারণ ।

  • সমাজের ক্ষমতাবান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অহংকার সেই সমাজকে বিপথে পরিচালিত করে এবং ধ্বংসের কারণ হয়। 

  • দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা সাধারণত আল্লাহ এবং পরকাল বিশ্বাস করে। এজন্য তারা ত্য্যাগ করতে প্রস্তুত । 

  • অবিশ্বাসীরা আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসুলে বিশ্বাস করে না। তাদের উপদেশ অনুসরণকরেন না।  কারণ তারা পার্থিব জগতকে বেশী ভালবাসে। 

  • তারা কারণ হিসাবে সাধারণত বাপ-দাদা ও প্রচলিত প্রথার দোহাই দেয়। 

  • নবী-রাসুলরা সাধারণত উপদেশ দাতা হয়ে থাকেন। কিন্তু শাফায়েতকারী নয়

  • তাদের উপর সমাজ নেতারা জুলুম করে তখন আল্লাহর গজব নেমে আসে।

  • হঠকারী ও ক্ষমতালোভী নেতারা সাধারণত চাটুকার ও চক্রান্তকারী হয়ে থাকে। তারা ঈমানদারদের বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে জয়ী হয় কিন্তু অবশেষে আল্লাহর কৌশলে কখনো কখনো এই দুনিয়াতে ধ্বংস হয়ে যায়। আর আখেরাতের আযাব হয় আরো কঠিন। 

  • আল্রাহ তার বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য  নেয়ামত রাজী দান করেন। শুকরিয়া আদায় করলে বান্দা আরো বেশী পায়। কিন্তু কুফরী করলে সব ধ্বংস হয়ে যায়। নেয়ামত তার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়। 

  • আল্লাহ জালিম জনপদকে ধ্বংস করেন অন্যদের শিক্ষা দেবার জন্য। 

  • কখনো কখনো মাত্র এক/দুইজনের কারণে গোটা সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়।উট হত্যা করেছিল মাত্র দুইজন। কিন্তু পুরো সামুদ জাতির উপর গযবের সূচনা হয়। যদিও তাদেরকে  সংশোধনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়। 

  • কুচক্রীদের কৌশল আল্লাহ ব্যর্থ করে দেন। কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না। যেমন সামুদ জাতির নেতারা বুঝতে না পেরে উটকে পানি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। 

  • মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দুনিয়াতে ছোটখাট শাস্তির আস্বাদন করিয়ে থাকেন। তাদেরকে ভয় দেখান। যাতে সঠিক পথে ফিরে আসে। 

  • সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দে অবশেষে সত্যেরে জয় হয়। যেমন সালেহ ও তার দুর্বল ইমানদার লোকেরা আল্লাহহর গযব থেকে নাজাত পেয়ে গিয়েছিল। মিথ্যার পূজারী  শক্তিশালীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।


মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন  আমাদের এই জীবনীগুলো থেকে শিক্ষা নেবার তৌফিক দান করেন। আমীন।  


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url