সূরা হুদ। রুকু ২ । মানুষের মন মানসিকতা।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন


দয়াময়, পরম দঢালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 

সূরা হুদ । রুকু ২ 
আয়াত - ৯-১১
মানুষের মন-মানসিকতা। 

----------------------------------------------------------------------------------

(৯) যদি আমি মানুষকে আমার নিকট হইতে অনুগ্রহ আস্বাদন করাই ও পরে তাহার নিকট হইতে উহা প্রত্যাহার করি তখন সে অবশ্যই হতাশা ও অকৃতজ্ঞ হইবে। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০)আর যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করিবার পর আমি তাহাকে সুখ-সম্পদ আস্বাদন করাই তখন সে অবশ্যই বলিবে, 'আমার বিপদ-আপদ কাটিয়া গিয়াছে, আর সে তো হয় উৎফুল্ল ও অহংকারী। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১) কিন্তু যাহারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্ম পরায়ণ তাহাদেরই জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। 

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহর রহমত দিতে পারেন আবার উঠিয়ে নিতে পারেন। 

  • তখন মানুষ হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। 

  • দুঃখ কষ্টে ধৈর্য ধরতে পারে না। 

  • দুঃখ-কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া হয়।

  • অকল্যাণ চলে যায়।  

  • সে উল্লসিত ও গর্বিত হয়ে পড়ে। 

  • ধৈর্য ধারণকারী ও আমলে সালেহ পালনকারীর জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। 


শিক্ষণীয়: এখানে মানব প্রকৃতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমরা সাধারণত ভাবি সুখ ও শান্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দুঃখ কষ্ট আল্লাহর অসন্তুষ্টি - এটা ভাবা ঠিক নয়। সাধারণত দেখা যায় সুখ স্বাচ্ছন্দে্যর ফলে মানুষ উদ্ধত হয়ে যায় এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করে। তারা বোঝে না সুখ যে কোন সময়ে দুঃখে রূপান্তরিত হতে পারে। আবার অপরদিকে দুঃখী মানুষের জীবন সুখে পরিপূর্ণ হতে পারে। তাই ইসলামের উপদেশ সুখ ও সমৃদ্ধি যেন কাউকে অহংকারী ও উদ্ধত না করে আবার তেমনি বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। 


১১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তাই বলেছেন প্রকৃতপক্ষে যারা ধৈর্যশীল এবং সৎকর্ম পরায়ণ তারাই সৌভাগ্যের অধিকারী হবে।  


১২-১৪ নং  আয়াত:: আল্লাহ ও রেসালতের প্রকৃতি। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১২) তবে কি  তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছেতাহার কিছু তুমি বর্জন করিবে এবং ইহাতে তোমার মন সংকুচিত হইবে এইজন্য যে, তাহারা বলে, 'তাহার নিকট ধনভান্ডার প্রেরিত হয় না কেন অথবা তাহার সঙ্গে ফিরিশতা আসে না কেন? তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ের কর্মবিধায়ক।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৩) তাহারা কি বলে, 'সে ইহা নিজে রচনা করিয়াছে?' বল, 'তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা ইহা অননুরূপ দশটি স্বরটচত সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাহাকে পার , ডাকিয়া নাও।'’

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৪) যদি তাহারা তোমাদের আহ্বানে সাড়া না দেয় তবে জানিয়া রেখ, ইহা তো আল্লাহর ইলম মুতাবিক অবতীর্ণ এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। তাহা হইলে তোমরা আত্মসমর্পণকারী হইবে কি?  

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

আল্লাহ ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পরিচয়।

(ক) আল্লাহ: 

(i)  আল্লাহ ওহী নাযিল করেন। 

        (ii) আল্লাহ সব কিছুর কর্ম বিধায়ক। 

        (iii) আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। 

(খ) রাসুল :

  • রাসুল (সঃ) কাছে যে ওহী আসে তিনি তা প্রকাশ করেন। 

  • অবিশ্বাসীদের খুশী করার জন্য নাযিলকৃত ওহীর অংশবিশেষ ছেড়ে  দেন না । 

  • রাসুল ধনভান্ডার বা মালাক সাথে নিয়ে না  আসার কারণে অন্তর সংকুচিত করেন না।।

  • তিনি হলেন সতর্ককারী। 


১৫ ও ১৬  নং আয়াত: নিয়্যত অনুযায়ী কর্মফল প্রদান।  

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৫) যে কেহ পার্থিব জীবন ও উহার শোভা কামনা করে, দুনিয়ায় আমি উহাদের কর্মের পূর্ণ ফলদান করি এবং সেখানে তাহাদেরকে কম দেয়া হইবে না। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৬) উহাদের জন্য আখিরাতে দোযখ ব্যতীত অন্য কিছুই নাই এবং উহারা যাহা করিয়া থাকে তাহা নিস্ফল হইবে এবং উহারা যাহা করিয়া থাকে তাহা নিরর্থক। 

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • কাফেরদের সওয়াব প্রাপ্তির ধারণা খন্ডন করা হয়েছে। 

  • যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের সৎকর্মে র প্রতিদান দুনিয়াতে দেয়া হয়। 

  • তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছু নাই। 


শিক্ষণীয়: মানুষের সকল কাজ মূল্যায়ন করা হবে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে। মানুষ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় না রেখে সৎকর্ম করে তবে পরকালে তার কোন ফল হবে না। পার্থিব জগতেই তারা তাদের প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র ইমানদার বিশ্বাসীরা পরকালে পুরস্কার আশা করতে পারে। 



১৭ নং আয়াত: ইমানদার লোকদের কুরআনের সত্যতায় বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৭) তাহারা কি উহাদের সমতুল্য যাহারা প্রতিষ্ঠিত উহাদের প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর, যাহার অনুসরণ করে তাঁহার প্রেরিত সাক্ষী এবং যাহার পূর্বে ছিল মূসার আদর্শ ও অনুগ্রহ স্বরুপ? উহারাই ইহাতে বিশ্বাসী। অন্যান্য দলের যাহারা ইহাকে অস্বীকার করে দোযখই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। সুতরাং তুমি ইহাতে সন্দিগ্ধ হইও না। ইহাতো তোমার প্রতিপালক প্রেরিত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • দুধরণের লোকদের কথা বলে হয়েছে। 

  • unchecked

    একদল যারা তাদের রবের থেকে প্রেরিত 'সুস্পষ্ট প্রমাণে' বিশ্বাস করে এবং তেলওয়াত করে। 

  • unchecked

    এর পূর্বে হযরত মূসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনে। 

  • unchecked

    আরেকদল এগুলোতে বিশ্বাস করে না।

  • unchecked

    তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে আগুন। 

 

১৮  হতে ২৪ নং আয়াত: বিশ্বাসকারী ও অবিশ্বাসকারীদের পরিণামের বিবরণ।  

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৮) যাহারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে তাহাদের অপেক্ষা জালিম আর কে? উহাদেরকে উপস্থিত করা হ্ইবে উহাদের প্রতিপালকের সম্মুখে এবং সাক্ষিগণ বলিবে, 'ইহারাই ইহাদের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল।" সাবধান! আল্লাহর লানত জালিমের উপর।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৯) যাহারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং উহাতে বক্রতা অনুসন্ধান করে; এবং ইহারাই আখিরাত প্রত্যাখ্যান করে। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২০) উহারা পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারগ করিতে পারিত না এবং আল্লাহ ব্যতীত উহাদের অপর কোন অভিভাবক ছিল না, উহহাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হইবে। উহাদের শনিবার সামর্থ্যও ছিল না এবং উহারা দেখিত ও না। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২১) উহারা নিজেদেরই ক্ষতি করিল এবং উহারা যে অলীখ কল্পনা করিত তাহা উহাদের নিকট হইতে উধাু হইয়া গেল। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২২)  নিঃসন্দেহে উহারাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রন্থ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৩) যাহারা মুমিন, সত্‌কর্মপরায়ণ এবং তাহাদের প্রতিপালকের প্রতি বিননয়াবনত, তাহারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হবে। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৪) দল দুইটির উপমা অন্ধ ও বধিরের এবং চক্ষুষ্মান ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্নের ন্যায়, তুলনায় এই দুই কি সমান? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? 

----------------------------------------------------------------------------------


চক্ষুষ্মান ও শ্রবণ শক্তিসম্পন্ন অন্ধ ও বধির

১.আল্লাহকে মিথ্যা অপবাদ     ১. আল্লাহকে মিথ্যা অপবাদকারী

প্রদানকারী জালেম নয়।              এবং জালেম। 


২. সাক্ষীরা তাদেের পক্ষে          ২. সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেবে রবের উপর মিথ্যা 

   সাক্ষ্য দিবে।                           আরোপ করেছে।


৩. আল্লাহর অভিশাপ নেই।     ৩. আল্লাহর অভিশাপ জালিমদের উপর।           


৪. আল্লাহর আয়াতে বক্রতা      ৪. আল্লাহর আয়াতে বক্রতা খোঁজে এবং

খুঁজে না এবং আখেরাতে            এবং আখেরাতে অস্বীকারকারী। 

অস্বীকারকারী নয়। 

৫. আল্লাহ এদের অভিভাবক।   ৫. আল্লাহর পরিবর্তে তাদের কোন 

                                              অভিভাবক ছিল না। তারা না শোনা 

                                               ও দেখার কারণে দ্বিগুণ শাস্তি পাবে।


৬. যারা বিশ্বাসী ও সত্‌কর্মপরায়ণ   ৬.  এরা অন্য উপাস্য বানিয়ে নিজেদের 

বিনয়ী তারা জান্নাতে যাবে। সেটাই      ক্ষতি করে। আখিরাতে তারা সবচেয়ে 

তাদের চিরস্থায়ী আবাস।                  বেশী ক্ষতিগ্রস্থ । 


৭. এরা বিশ্বাসী ।                        ৭.  এরা অবিশ্বাসী 






সংক্ষেপে আমার অনুধাবন :

(ক) মানুষের মন-মানসিকতা। (৯-১১) 

(i)আল্লাহর রহমত উঠিয়ে নিলে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। 

(ii) দুঃখ কষ্টে ধৈর্য  রাখতে পারে না। 

(iii) স্বাচ্ছন্দ্য  হলে উল্লসিত ও গর্বিত হয়ে পড়ে। 


(খ) আল্লাহ ও রেসালতের । (১২-১৪)

আল্লাহ

        (i)  আল্লাহ ওহী নাযিল করেন। 

        (ii) আল্লাহ সব কিছুর কর্ম বিধায়ক। 

        (iii) আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই। 

রাসুল (সঃ) 

(i) রাসুল (সঃ) কাছে যে ওহী আসে তিনি তা প্রকাশ করেন। 

(ii) অবিশ্বাসীদের খুশী করার জন্য নাযিলকৃত ওহীর অংশবিশেষ ছেড়ে  দেন না । 

(iii) রাসুল ধনভান্ডার বা মালাক সাথে নিয়ে না  আসার কারণে অন্তর সংকুচিত করেন না।।

(iv) তিনি হলেন সতর্ককারী। 


(গ)  নিয়্যত অনুযায়ী কর্মফল প্রদান।  (১৫-১৬)

(i) কাফেরদের সওয়াব প্রাপ্তির ধারণা খন্ডন। 

(ii) যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের সৎকর্মের প্রতিদান দুনিয়াতে দেয়া হয়। 

(III) তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছু নাই। 


(ঘ) ইমানদার লোকদের কুরআনের সত্যতায় বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন (১৭)

  • দুধরণের লোকদের কথা বলে হয়েছে। 

  • unchecked

    একদল যারা তাদের রবের থেকে প্রেরিত 'সুস্পষ্ট প্রমাণে' বিশ্বাস করে এবং তেলওয়াত করে। এর পূর্বে হযরত মূসা (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনে। 

  • unchecked

    আরেকদল এগুলোতে বিশ্বাস করে না এবং তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে আগুন। 

 

(ঙ) বিশ্বাসকারী ও অবিশ্বাসকারীদের বৈশিষ্ট্য  (১৮-২৪) 


  1. বিশ্বাসকারী দলকে চক্ষুষ্মান ও শ্রবণ শক্তিসম্পন্ন এবং অবিশ্বাসীদের দলকে অন্ধ ও বধির বলা হয়েছে। 

  2. অবিশ্বাসীরা আল্লাহকে মিথ্যা অপবাদ দেয় এবং জালিম।

  3. তাদের রবের সামনে হাজির করা হবে। 

  4. .অবিশ্বাসীদের পক্ষে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেবে রবের উপর মিথ্যা আরোপ করেছে।

  5. আল্লাহর অভিশাপ জালিমদের উপর।           

  6.  অবিশ্বাসীরা আল্লাহর আয়াতে বক্রতা খোঁজে এবং আখেরাতে অস্বীকারকারী। 

  7. তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। 

  8. বিশ্বাসীদের অভিভাবক আল্লাহ। অবিশ্বাসীদের  আল্লাহর পরিবর্তে তাদের কোন অভিভাবক ছিল না। তারা না শোনা  ও দেখার কারণে দ্বিগুণ শাস্তি পাবে।

  9. অবিশ্বাসীরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে। 

  10. যারা বিশ্বাসী,সৎকর্মপরায়ণ এবং বিনয়ী তারা জান্নাতে যাবে। অবিশ্বাসীরা অন্য উপাস্য বানিয়ে নিজেদের  ক্ষতি করে। আখিরাতে তাদের চিরস্থায়ী আবাস জাহান্নাম। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url