সূরা হুদ। রুকু ১ । সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা হুদ। রুকু ১।
আয়াত ১
পরম দয়ালু, দয়াময় আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি কারো উপর জুলুম করেন না, যিনি তার বান্দাকে সতর্ক না করে শাস্তি দেন না, যিনি সতর্ককারী হিসাবে রাসুল (সঃ)কে পাঠিয়েছেন। লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিং নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর।
সূরা হুদ।
ভূমিকা : এটি মক্কী সূরা। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উদ্দেশ্য ছিল মক্কাতে ইসলামের আকীদা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করা। তাই এই সূরাতে আখেরাত রিসালাত এবং তাওহীদ সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সে সাথে সাথে মুশরিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে যে সব প্রশ্ন তুলে তারও জবাব দেয়া হয়েছে।তাদের ভ্রান্ত কার্যাবলী সম্পর্কে একদিকে নিন্দা ও অপরদিকে তাদের এজন্য সতর্ক করা হয়েছে। তারা যদি সাবধান না হয় তবে তাদের জীবনে শাস্তি নেমে আসবে।
বেশ কয়েকজন পয়গম্বর বিশেষ করে হযরত নূহ (আঃ) এর ইতিহাসের উপর আলোকপাত করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর উম্মতদের ঈমানের উপর অবিচল থাকতে আহ্বান করা হয়েছে এবং সে সাথে সাথে ইসলাম বিরোধীদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানানো হয়। হযরত নূহ (আঃ) এর পর আদ জাতির কাছে হযরত হুদ (আঃ) আসেন। তিনি তার জাতিকে পাপ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
এই সূরাতে আল্লাহর ন্যায় বিচারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যখন মানুষ আল্লাহর প্রসারিত দয়া ও করুণার হাতকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় তখন আল্লাহর করুণা থেকে সে বঞ্চিত হয়। এবং আল্লাহর শাস্তি তার উপর নেমে আসে।
রুকু ১। আয়াত: ১ -৮
সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
১ নং আয়াত: তওহীদ ও রেসালতের প্রকৃতি।
----------------------------------------------------------------------------------
(১) আলিফ লা ম রা, এই কিতাব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হইতে; ইহার আযাতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে ।,
---------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------
(২) তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করিবে না, অবশ্যই আমি তাঁহার পক্ষ হইতে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
----------------------------------------------------------------------------------
এই সূরা শুরু হয়েছে 'হুরুফে মুকাত্তায়া' দিয়ে ।
এই কিতাব এসেছে অন্তর্নিহিত জ্ঞানসম্পন্ন প্রজ্ঞাময়ের কাছ হতে।(হাকীমিন খাবীর)
আয়াতসমূহকে সুসংহত করা হয়েছে। অর্থ্যাত্ কুরআনে যে সব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে , দলীল-প্রমাণ দ্বারা তা পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এত কোন রকম ত্রুটি নেই।
এরপর আয়াতসমূহকে বিশদভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছ।
শিক্ষণীয়: এই হরফে মুকাত্তায়া দিয়ে শুরু করার উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআন শাশ্বত মুজিযা এবং চিরন্তন অলৌকিক নিদর্শন। এই বর্ণমালা একত্রিত করেই কুরআন লিখিত হয়েছে। এই গ্রন্থের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। মানব জাতির জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য বিধানাবলীসুসংহত ভাবে লেখা আছে।
২ নং আয়াত: তওহীদ।
----------------------------------------------------------------------------------
(২) তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করিবে না, অবশ্যই আমি তাঁহার পক্ষ হইতে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
----------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করা যাবে না।
হযরত মুহাম্মদ (নঃ) কে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছেন।
তিনি একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদ দাতা। (নাজিরুওঁ ওয়া বাসীর)
তিনি আল্লাহর দুটো প্রত্যাদেশ নিয়ে কাজ করেছেন। একটি মন্দ বা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর সতর্কবাণী প্রচার করা আর দ্বিতীয় বান্দাকে রহমতের সুসংবাদ দেয়া।
৩ ও ৪ নং আয়াত: পাপের জন্য অনুশোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করা।
----------------------------------------------------------------------------------
(৩) আরও যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁহার দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য উত্তম জীবন উপভোগ করিতে দিবেন এবং প্রত্যেক গুণীজনকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা দান করিবেন। যদি তোমরা মুখ ফিরাইয়া নাও তবে আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি মহাদিবসের শাস্তির।
----------------------------------------------------------------------------------
(৪) আল্লাহরই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
----------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্রাহর কাছে সবাইবক প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।
তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
নবী ও রাসুলগণ মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে উদ্দুদ্ধ করা হয়েছে
তারপর তার (মহান আল্লাহ) দিকে ফিরে যেতে অর্থ্যাত্ ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করা এবং আল্লাহর হুকুম পালন করতে সংকল্প করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মহান আল্লাহ একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম উপকরণ উপভোগ করাবেন। এই বাক্যটির দ্বারা পার্থিব সব সুযোগ সুবিধা, আরাম আয়েশের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে "সীমাহীন অনুগ্রহ" আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই সমৃদ্ধি পৃথিবী থেকে শুরু হয় আর সমাপ্তি ঘটে পরকালীন জীবনে।
প্রত্যেক অনুগ্রহ লাভের অধিকারীকে তিনি তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন।
অর্থ্যাত্ মহান আল্লাহ মানুষকে এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন।
যে বেশী আমল করবে তাকে বেশী প্রতিদান দিবেন।
তবে যে পাপাচারী এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তাদের মহাদিবসে অবশ্যই শাস্তি দিবেন।
অনুধাবন:
পাপাচারী ও আল্লাহতে অবিশ্বাসীদের যতই প্রাচুর্যের অথিকারী হোক না কেন পরকালে নিশ্চিতভাবে তারা তাদের আচরণের জন্য উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করবে।
৫ নং আয়াত: কপটতা এবং কথা ও কাজে অমিল মানুষ।
----------------------------------------------------------------------------------
(৫) সাবধান! নিশ্চয়ই উহারা তাঁহার নিকট গোপন রাখিবার জন্য উহাদের বক্ষদ্বিভাঁজ করে। সাবধান! উহারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন উহারা যাহা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তাহা জানেন। অন্তরে যাহা আছে, নিশ্চয়ই তিানি সবিশেষ অবহিত।
----------------------------------------------------------------------------------
এমন লোকের কথা বলা হয়েছে যারা তাদের অন্তরগুলোকে গুটিয়ে রাখে অর্থ্যাত্ মুখে যা বলে অন্তরে তার উল্টা চিন্তা করে।
এরা মানুষকে বিভ্রান্তির গভীরে নিমজ্জিত করে।
নবী (সঃ) এর আমলে মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করত কিন্তু প্রকাশ্যে তারা প্রমাণ করত যে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
দুশ্রেণীর লেকের কথা বলা হয়েছে ।একটি শ্রেণী ছিল যারা নবী (সঃ) কে দেখলে নিজেদের বুক দুভাঁজ করে ফেলত এবং কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়ত।
আরেক শ্রেণী নির্বোধ লোক ছিল যারা গুনাহের কাজ করে তা লুকানোর জন্য বুক দুভাঁজ করে ফেলত ও কাপড় দ্বারা নিজেদের ঢেকে ফেলত । তারা ভাবত এভাবে তারা আল্লাহ থেকে নিজেকে গোপন করতে সক্ষম হয়েছে।
মহান আল্লাহ অন্তরের কথাসমূহ সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞান সম্পন্ন।
৬ নং আয়াত: আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত এবং তার নিরংকুশ সর্বাত্মক জ্ঞান।
-----------------------------------------------------------------------------
(৬) ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি উহাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছুই আছে।
---------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে বিচরণশীল সব প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন।
তিনি হচ্ছেন মানুষের জীবিকা ও জীবনোপকরণের মালিক।
তিনি জানেন সকল প্রাণীদের আবাসস্থল এবং সংরক্ষণস্থল।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিতাবে লিখিত আছে।
অনুধাবন:
প্রত্যেক প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আল্লাহ শুধু জীব সৃষ্টি করেন নি তার প্রতিপালনের দায়িত্ব আল্লাহর। তবে এর অর্থ এই নয় যে মানুষ তার জীবিকার জন্যআল্লাহর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। জীবিকার জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করে চেষ্টা চালাতে হবে।
৭ নং আয়াত: মানুষের আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে জড়িত মৌলিক বিষয়।
----------------------------------------------------------------------------------
(৭) আর তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁহার আরশ ছিল পানির উপর, তোমাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য। তুমি যদি বল, 'মৃত্যুর পর তোমরা অবশ্যই উত্থিত হইবে, কাফিররা নিশ্চয়ই বলিবে, 'ইহা তো সুস্পষ্ট জাদু।"
----------------------------------------------------------------------------------
মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির আগে আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
মহাকাশ বা আকাশমন্ডলী বলতে উর্ধজগতের সব কিছু বোঝাচ্ছে।
আর পৃথিবী বা জমিন দ্বারা নিচের সমস্ত জিনিস বোঝাচ্ছে।
এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে মানুষ মৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা।
পরীক্ষার বিষয়বস্তু হল কে কত বেশী ভাল কাজ করতে পারে। কে বেশী কাজ করে তা নয় ।
মানুষের মৃত্যুর পর পুনরুত্থান হবে।
তাতে যারা অবিশ্বাস করে অর্থ্যাত্ কুফরি করে তারা পবিত্র কুরআনকে পরকালীন জীবনের সংবাদ পরিবেশনকারী মনে না করে তাকে সুস্পষ্ট যাদু বলে মনে করে।
অনুধাবন::
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম এবং নানা পরীক্ষার ভিতর দিয়ে আত্মিক উৎকর্ষতা এবং পূর্ণতা অর্জন করবে। প্রকৃতিতে আল্রাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার বিষয়বস্তু ঈমান ও সৎকর্ম ।
কাজের সংখ্যা নয়। কাজের গুণ বিচার করা হবে। অতিরিক্ত কাজের সংখ্যার চাইতে কাজে ইখলাস, বিনয়, নম্রতা কত বেশী তা বিচার করা হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে পরীক্ষা নেয়া মানে একদল উত্তীর্ণ হবে আরেকদল ব্যর্থ কবে। ইহকালের জীবনের পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে পরকালে।
৮ নং আয়াত: বান্দাদের সতর্কী করণ
----------------------------------------------------------------------------------
(৮) নির্দিষ্ট কালের জন্য আমি যদি উহাদের হইতে শাস্তি স্থগিত রাখি তবে উহারা নিশ্চয় বলিবে, 'কিসে উহা নিবারণ করিতেছে? সাবধান! যে দিন উহাদের নিকট উহা নিবৃত্ত হইকব না এবং যাহা লইয়া উহারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করে তাহা উহাদেরকে পরিবেষ্টন করিবে।
----------------------------------------------------------------------------------
মানুষ যাতে আল্লাহর অবাধ্য না হয় এবং পাপ কাজ না করে সেজন্য নবী রাসুলগণ সতর্ক করেন।
আল্লাহ মানুষকে পাপ এবং তাঁর অতীত ভুলের সংশোধনের জন্য সময় দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের কারণে পাপচারী সম্প্রদায়য়কে বিচার করে শাস্তি দিতে বিলম্ব করেন।
এর অর্থ এই নয় যে সে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে গেছে।
তারা রসিকতা করে বলত কে তাদের শাস্তি দিতে নিবারণ করছে?
তাদের ধর্ম নিয়ে রসিকতা এক সময় তাদের শাস্তি লাভের কারণ হয়ে দাঁড়াবে তাতে সন্দেহ নেই।
ঈমানদার মুসলিমদের যুক্তি খন্ডন করবার মত কোন যুক্তি থাকে না তখনই তারা এরকম ঠাট্টা বিদ্রূপে মেতে উঠে।
সূরা হুদ রুকু ১
আয়াত : ১-৮
শিরোনাম: তওহীদ ও রেসালতের প্রকৃতি।
শুরু করছি দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে যিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ, যিনি আমাদের অন্তরের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব বিষয়ে জানেন। যিনি আমাদের সুসংহত কুরআনের মাধ্যমে জীবনে চলার পথ নির্দেশ দিয়েছেন। সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা পাঠিয়েছেন। যিনি এক ও অদ্বিতীয় । যিনি আমাদের তওবা ইস্তিগফার কবুল করেন । লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর।
এই রুকুর মূল আলোচ্য বিষয়:
তওহীদ ও রেসালতের প্রকৃতি। (১,২)
পাপের জন্য অনুশোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করা। (৩,৪)
কপটতা এবং কথা ও কাজে অমিল মানুষ।(৫)
আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত এবং তার নিরংকুশ সর্বাত্মক জ্ঞান। (৬)
মানুষের আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে জড়িত মৌলিক বিষয়। (৭)
বিদ্রপকারীদের সতর্কী করণ ।
আমার অনুধাবন:
আমাদের একমাত্র উপাস্য মহান আল্লাহ। হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে তিনি প্রত্যাদেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি প্রত্যাদেশ হল পাপ বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক বাণী। অপরটি হল আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ।সুসংহত বিধানাবলী সহ কুরআন পাঠিয়েছেন যাতে মানব জাতির জীবন সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।
মানুষের আয়ু, জীবন ও জীবিকার মালিক আল্লাহ। নিষ্ঠার সাথে তওবা ইস্তিগফার করা দীর্ঘায়ু ও প্রচুর রিযিক প্রাপ্তির এক উত্তম আমল।
আমল অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন।যে পাপাচারী এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতে বিশ্বাসী নয় তাকে মহাদিবসে শাস্তি দিবেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্ত সত্কাজ করেছে আল্লাহতায়ালা তার সত্ কাজ ও ইবাদতের জন্য আরো শক্তি দেন।
মহান আল্লাহ মানুষের অন্তরের কথা জানেন। এই রুকুতে সেসব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা তাদের অন্তরগুলোকে গুটিয়ে রাখে অর্থ্যাত্ মুখে যা বলে অন্তরে তার উল্টা চিন্তা করে। উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্তির গভীরে নিমজ্জিত করা।
সেই আমলে মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করত কিন্তু প্রকাশ্যে প্রমাণ করত চেষ্টা করত তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দৃষ্টান্ত হিসাবে দুশ্রেণীর লেকের কথা বলা হয়েছে ।এক শ্রেণী ছিল যারা নবী (সঃ) কে দেখলে নিজেদের অন্তর গুটিয়ে রাখে এবং নিজেকে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়ত।
আরেক শ্রেণী নির্বোধ লোক ছিল যারা গুনাহের কাজ করে তা লুকানোর জন্য অন্তর গুটিয়ে ও কাপড় দ্বারা নিজেদের ঢেকে ফেলে ভাবত - তারা আল্লাহ থেকে নিজেকে গোপন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রত্যেক প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আল্লাহ জীব সৃষ্টি ও তার প্রতিপালন করেন। এর অর্থ এই নয় যে মানুষ তার জীবিকার জন্য শুধু আল্লাহর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। জীবিকার জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করে চেষ্টা চালাবে।
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম এবং নানা পরীক্ষার ভিতর দিয়ে আত্মিক উত্কর্ষতা এবং পূর্ণতা অর্জন করা। প্রকৃতিতে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার বিষয়বস্তু ঈমান ও সত্কর্ম । কাজের সংখ্যা নয়, গুণ বিচার করা হবে। অতিরিক্ত কাজের সংখ্যার চাইতে কাজে ইখলাস, বিনয়, নম্রতা কত বেশী তা বিচার করা হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে পরীক্ষা নেয়া মানে একদল উত্তীর্ণ হবে আরেকদল ব্যর্থ হবে। ইহকালের জীবনের পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে পরকালে।
পরকালীন জীবনের সংবাদ পরিবেশনকারী কুরআনকে যারা যাদু মনে করে এবং ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে। যেমন শাস্তি কেন দেয়া হচ্ছেনা, দেরী কেন - এগুলো বলে ঠাট্টা মশকরা করে। তাদের সতর্ক করা হচ্ছে যখন যথার্থ সময় আসবে তখন আর তাদের পক্ষে ক্ষমা চাইবার কোন পথ থাকবে না।