সূরা কাহফ । রুকু ১২।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা কাহফ। রুকু ১২। আযাত ১০২-১১০। পুনরুত্থান দিবসের পুরস্কার ও শাস্তি।
১০২ নং আয়াত:
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০২) যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা কি এরপরও মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমারই বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? নিশ্চয়ই আমি কাফিরদের আতিথেয়তার জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছি।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৩ নং আয়াত:
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৩) বল, আমি কি তোমাদেরকে কাজের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থদের সংবাদ দেব?
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৪ নং আয়াত:
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
ওরাই তারা দুনিয়ার জীবনে যাদের প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়েছে যদিও তারা মনে করে যে তারাই সুন্দরভাবে কাজ করছে?
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কোন কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য শুধু সহী নিয়তই যথেষ্ট নয়। সঠিক পথও হতে হবে।
- নিয়ত সহী হলেও তা অর্জনের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রসুল যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে হতে হবে।
- অন্যথায় সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।
১০৫ নং আয়াত:
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৫)ওরাই তারা যারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে, ফলে তাদের কৃতকর্ম বিফল হয়ে যায়, সুতরাং কিয়ামতেরদিন আমি তাদেরকে কোন গুরুত্বই দেব না।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৬ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৬) এটাই তাদের প্রতিফল জাহান্নাম, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহ ও রাসুলগণকে বিদ্রূপের বিষয় হিসাবে গ্রহণ করেছে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৭ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৭) নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৮ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৮) সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তর কামনা করবে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
১০৯ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৯) বল, যদি আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র কালি হয় তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে-যদিও আমি অনুরূপ সাহায্য (কালি)আমি নিয়ে আসি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আল্লাহর সিফাত ও গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে।
- আল্লাহর গুলাবলী ও তার কুদরত এত বেশী যে তা লিখতে গেলে সবগুলো সাগরের পানি যদি কালি হয় তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর কুদরত লিখে শেষ করা যাবে না।
১১০ নং আয়াত:
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১১০)বলে দাও, আমি কেবল তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ; সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ করে সে যেন সৎকাজ করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
- হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অন্যান্য মানুষের মতই একজন মানুষ।
- অন্যান্য মানুষের সাথে তার পার্থক্য তাকে ওহী প্রেরণ করা হয়।
- আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই।
- আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে হলে তাকেই একমাত্র উপাস্য হিসাবে মেনে নিতে হবে এবং সত্কাজ করতে হবে।
আলোচিত বিষয়য়সমূহের বিবরণ:
1. আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন:
কারণ:
(i) তিনি কুরআন নাযিল করেছেন মানবজাতিকে সঠিক পথে হেদায়েতের জন্য।
২. পবিত্র কুরআন:
(i) মহান আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর নাজিল করেছেন।
(ii) কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোৎকৃষ্ট অনুগ্রহ ।
(iii) কুরআন মানুষের মুক্তি ও সাফল্যের কারণ।
(iv) এর বানীর মধ্যে শব্দগত কিংবা অর্থগত কোন জটিলতা নেই। সরল সংযত।
(v) কোন বক্রতা, অস্পষ্টতা, বা পক্ষপাতিত্ব নেই। \
(vi) কুরআন কাফিরদেরকে কঠোর আযাবের ভয় প্রদর্শন করে ।
৩ হযরত মুহাম্মদ (সঃ):
(i) আল্রাহর প্রেরিত নবী ও রাসুল।
(ii) রসুল (সঃ) কুরানের ভিত্তিতে সুসংবাদ দান করেন, নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলেন না।
(iii) তাঁর প্রধান দায়িত্ব ছিল মিথ্যা ও ভুল ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
(iv) অন্যকে ভূল পথে চলতে দেখলে তিনি মনে কষ্ট পেতেন।
৪ মুমিন ব্যক্তি।
(i) মুমিন যারা নেক আমল করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।
(ii) মুমিনরা জান্নাতে থাকবে।
৫ কাফির।
(i) কাফেররা কুরান শরীফের উপর বিশ্বাস করে না।
(ii) কাফেরদের একটি ভ্রান্ত নীতি যা ছিল অনুমানের উপর ভিত্তি করে কথা বলে।
(iii) কোন বিষয়ে তাদের এবং পূর্ব পুরুষদের কোন জ্ঞান না থাকা সত্বেও তারা কথা বলে।
(iv) তারা মুর্খতা বশত এ কথা বলত।
(v) তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।
৬ আল্লাহকে অপবাদ।
(i) আল্লাহর সাথে শরীক করা হল অন্যতম প্রধান ভ্রান্ত মতবাদ।
(ii) আল্লহর সন্তান আছে।
(iii)
৭ সৎকর্মশীলতা
যারা সৎকর্ম শীল তাদের জন্য পুরষ্কারের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে্ সৎকর্ম শীলতা ঈমানের বাস্তব প্রমাণ সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে।
৮ মানুষের পরীক্ষা।
(i) পার্থিব সৌন্দর্যের মহিমায় মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায় কিনা।
(ii) মানুষ ভোগ বিলাসের উপকরণ পেয়েও সৎ কাজ করে কিনা।
(iii) হয় কেউ কুফরির মধ্যে লিপ্ত হবে অথবা ইমান আনয়নের মর্যাদা লাভ করবে।
৯. কিয়ামত।
(i) পৃথিবীর এই রূপ-সৌন্দর্য সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী।
(ii) কিয়ামতের পর পৃথিবী এক বিরান প্রান্তরে পরিণত হবে।
১০ প্রার্থনা
হে আমাদের রব! আপনি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন। (রাব্বানা আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাও ওয়া হায়ি্লানা মিন আমরনিা রশাদা। )
শিক্ষা:
(iv) কুরআন এত মহান ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত যে, আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন এটা নাযিল করার জন্য।
(v) রসুল (সঃ) কুরানের ভিত্তিতে সুসংবাদ দান করেন, নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলেন না। কারণ কুরআন একটি সুস্পষ্ট ও স্থায়ী গ্রন্থ।
(vi) সঠিক ঈমানের একটি দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ হল সত্কর্মশীলতা।
(vii) নবী-রসুলদের একটি প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মিথ্যা ও ভুল ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
(viii) আল্লাহর সাথে শরীক করা হল অন্যতম প্রধান ভ্রান্ত মতবাদ।
(ix) সর্বোত্তম ধর্ম বিশ্বাস হল আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস করা ও তার উপর অটল থাকা।
(x) ধর্মবিশ্বাস গড়ে ওঠা উচিত জ্ঞান ও বুদ্ধির মাধ্যমে। কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে নয়।
(xi) মানুষ তার অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে তার প্রভুর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়।
(xii) মানব চরিত্রের একটি দিক-বিষণ্ণতা ও হতাশা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।
(xiii) এর ফলে মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার মানসিকতা তৈরী হয়।
(xiv) এ ব্যপারে নবী-রসুলরা সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন।
(xv) তাদের কাজ হচ্ছে তাবলীগ ও প্রচার কাজ চালান।
(xvi) ধর্মীয় নেতা ও আলেমদের উচিত মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা। যদিও এ পথটি সহজ নয়। কারণ বেশীর ভাগ লোক তা গ্রহণ করতে রাজী নয়।