সূরা কাহফ। রুকু -৯। খিযির (আঃ) এর সাথে মূসা (আঃ) এর ঘটনা।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
কাহিনী সংক্ষেপ:
একবার মূসা (আঃ)কে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম কে? যেহেতু নবীগণ সমকালীন বিশ্বে সবচেয়ে বড় আলেম হয়ে থাকেন, সে ধারণা থেকে তিনি জবাব দিলেন – আমি।
মহান আল্লাহতায়ালার এ উত্তর পছন্দ হয় নি।
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মূসা (আঃ)কে জানান হয় যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল- আল্লাহ জানেন সবচেয়ে বড় আলেম কে।
মহান আল্লাহ মূসা (আঃ) এর সামনে জ্ঞানের এমন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে চাইলেন , যে সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। দৃশ্যমান ঘটনার বাইরে আরো অনেক কিছু থাকে যা সেই বোঝে যাকে আল্রাহ সেই জ্ঞান দান করেন। তাঁকে হুকুম দেয়া হল তিনি যেন খিজির (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
কোথায় তাঁর সাথে সাক্ষাত করবেন তার জন্য পথ নির্দেশনা দেয়া হল, যেখানে দুটি সাগর মিলিত হয়েছে সেটাই তার খিযির (আঃ) এর সাথে দেখা করবার স্থল। আর সেখানে এমন একটি জায়গা আসবে যেখানে এসে তাদের খাবার জন্য যে মাছ থাকবে তা হারিয়ে যাবে। এখানেই খিজির (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ হবে। এরপর তিনি তার শিষ্য ইউশা (আঃ)কে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে মূসা (আঃ)এর এই সফর সাধারণ কোন ভ্রমণের সাথে তুলনা করা যাবে না। এই সফরে আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল মূসা (আঃ)কে শিক্ষা দেয়া ।যে নিজেকে সবচেয়ে বড় আলেম ভাবলো। যা তাঁর পক্ষে শোভা পায় না। জ্ঞানের সমুদ্র অথৈ। কূল কিনারাহীন। এই জ্ঞানের কোন এক দিক সম্পর্কে কে বেশী জানে তা জানা সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহর ২য় উদ্দেশ্য ছিল মহান আল্লাহ যে নিজ হিকমত ও জ্ঞান দ্বারা এই বিশ্বকে কিভাবে চালাচ্ছেন?
আমাদের চারিদিকে বিভিন্ন সমযে বিভিন্ন রকম ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় আমরা এসব ঘটনার কোন ব্যখ্যা খুঁজে পাই না। অথচ প্রতিটি ঘটনার পিছনে আল্লাহর কোন হিকমত নিহিত আছ। মানব দৃষ্টির সীমাবদ্ধতার কারণে সে কিছু বুঝতে পারে না।
৬০ নং আয়াত:
------------------------------------------------------------------------------------------------------
আর যখন মূসা তার দুই খাদেমকে বলেছিল দুই সমুদ্র সংযোগস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি বহু যুগ ধরে চলতে থাকব।
------------------------------------------------------------------------------------------------------
- হযরত মূসা(আঃ) এর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা এখানে প্রকাশ করছে।
- জ্ঞান সংগ্রহের জন্য জ্ঞানী সাধু পুরুষের সন্ধানে মূসা (আঃ) সফরে বের হন।
৬১ নং আয়াত:
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
তারা উভয়ে যখন দুটির সংযোগস্থলে পৌঁছাল তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেল, অতঃপর উহা (মাছ) ফাঁক দিয়ে বের হয়ে সমুদে্র তারা পথ করে নিল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
- মাছটি চলে যাওয়া দিয়ে এখানে বোঝানো হচ্ছে আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন।
৬২ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
অতঃপর যখন আরো অগ্রসর হলো সে (মূসা) তার খাদেমকে বললো, আমাদের সকালের নাস্তা আনো; অবশ্যই আমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
- সুনির্দিষট জাযগার বেশী চলে যাওয়ায় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
৬৩ নং আয়াত:
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
সে (খাদেম) বললো, আমরা যখন পাথরের উপর বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন (কি ঘটেছিল তা) আপনি লক্ষ্য করেছেন? মাছের প্রতি আমার লক্ষ্য ছিল না এবং শয়তানই তার কথা আপনাকে বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; আর উহা (মাছটি) আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে তার পথ করে নিয়েছিল।
---------------------------------------------------------------------------------------------------
- শয়তান সব সময় সচেষ্ট থাকে মানুষকে ভলো কাজ করা হতে বিরত রাখতে।
-
৬৪ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
মূসা বললো, আমরা সেই স্থানটির অনুসরণ করছিলাম; অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললো।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
৬৫ নং আয়াত:
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের সাক্ষাৎ পেল যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার নিকট হতে এক (বিশেষ) জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলাম।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আল্লাহ যাকে খুশী অনুগ্রহ দান করেন এবং কোন বিশেষ জ্ঞান শিক্ষা দেন।
- এই সাধু ব্যক্তির যে জ্ঞান ছিল তা তাঁর নিজস্ব নয় মহান আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
- তাঁকে যে বিশেষ জ্ঞান দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা এই জগতের গুপ্ত রহস্য সংক্রান্ত জ্ঞান।
-
৬৬ নং আয়াত:
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
মূসা তাকে বললো, আমি কি আপনাকে অনুসরণ করবো এই শর্তে যে, যে সঠিক বিচার-বিবেচনা আপনাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন?
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
- শিক্ষণীয় মূসা (আঃ) কি আদবের সাথে পবিত্র ব্যক্তির কাছে জ্ঞান শিখার আবেদন করেছে।
- এই জ্ঞান তার নিজস্ব জ্ঞান নয়। তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
-
৬৭ নং আযাত:
------------------------------------------------------------------------------------------------------
আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবেন না।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
- জ্ঞানার্জনে ধৈর্য থাকা জরুরী।
৬৮ নং আয়াত:
------------------------------------------------------------------------------------------------------
আর যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কিভাবে?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
— সাধারণত মানুষ যে বিষয়ে জানে না সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানার্জন করবার কোন আগ্রহ নেই।
— আগ্রহ না থাকাতে তার জ্ঞানের কথা শোনার ধৈর্য থাকে না।
৬৯ নং আয়াত:
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
মূসা বললো আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
- ধৈর্য রক্ষার্থে আল্লাহর সাহায্য কামনা করলেন।
- কথা দিলেন ওই সাধু ব্যক্তির কথা অমান্য করবেন না।
-
৭০ নং আয়াত:
---------------------------------------------------------------------------------------------------------
সে বললো, আচ্ছা আপনি যদি আমার অনুসরণ করেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
- জ্ঞান চর্চার সময় অহেতুক প্রশ্ন করাই ভাল।
-