সূরা কাহাফ। রুকু ১১। যুলকারনাইন।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
রুকু ১১। আয়াত ৮৩ -১০১।
শিরোনাম: যুলকারনাইন।
৮৩ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
আর তারা তোমাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বল, শীঘ্রই আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
- ইহুদীরা নবীজীর কাছে যুলকারনাইন সম্পর্কে জানতে চায়।
৮৪ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
- আল্লাহ তাঁকে অসম্ভব ক্ষমতাশালী বানিয়েছিলেন।
- মহান আল্লাহ তাঁকে সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করেন যাতে সে সুষ্ঠভাবে শাসন কাজ পরিচালনা করতে পারে।
- মহান আল্লাহ তাঁকে দিয়েছিলেন সুবিশাল সাম্রাজ্য, প্রচুর ধন-সম্পদ।
৮৫ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৫) অতঃপর সে একটি পথ অনুসরণ করল।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
- যুলকারনাইন সফরে বের হন।
এই ৩টি আয়াতে যুলকারনাইন সম্পর্কে আল্লাহ বর্ণনা দিচ্ছেন – যাকে মহান আল্লাহ সব ধরণের নেয়ামত এবং বহু জ্ঞানের অধিকারী বানিয়েছিলেন।
[যুলকারনাইন সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন কথা এসেছে। কেউ বলছে তার মাথার টুপিতে দুটি শিং আছে আবার কেউ বলেন কারনাইন বলতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে বোঝানো হচ্ছে। তিনি প্রকৃতিকে ব্যবহার করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সফর করে বেড়াতেন। ]
এই ৩টি আযাতের শিক্ষা এই যে,:
- প্রাকৃতিক উপকরণকে মানুষের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার দক্ষতা আল্লাহর এক নিয়ামত। যা আল্লাহ সুনির্দিষ্ট কিছু বান্দাকে দান করেন।
- ঐতিহাসিক ঘটনা ও ইাতহাস সৃষ্টিকারী মানুষের জীবন থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে। ভবিষ্যত জীবন পরিচালনার এক দিক নির্দেশনা পায়।
৮৬ নং আয়াত: প্রথম সফর ।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অবশেষে সে যখন সূর্যাস্থের স্থানে (পশ্চিম দিকের শেষ সীমা) পৌঁছাল তখন সে এটিকে (সূর্যকে) এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে একটি সম্প্রদায়কে দেখতে পেল; আমি বললাম হে জুলকারনাইন! তুমি তাদের শাস্তি দিতে পার অথবা তাদের প্রতি সদয়ও হতে পার।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- পশ্চিম দিকে মানব বসতি যতটা বিস্তার লাভ করেছে তার শেষ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন।
- কোন লোকালয় ছিলনা।
- কালো পঙ্কময় এক বিশাল সাগর ছিল।
- সূর্যাস্তের সময় মনে হত সূর্য কোন পঙ্কময় জলাধারে ডুকে যাচ্ছে।
- এলাকার লোকেরা কাফের ছিল।
- যুলকারনাইন সেখানে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার পর তাকে দুটো ব্যবস্থা নেবার অপশন দেন। হয় তাদের শাস্তি দিতে পারেন অথবা ইচ্ছা করলে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেন।
- আল্লাহ এখানে ইশারা করছেন এই ২য় পন্থাটি শ্রেয়।
৮৭ নং আয়াত: সীমালঙ্ঘনকারীর শাস্তি।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সে (জুলকারনাইন) বলল যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে অচিরেই আমি তাকে শাস্তি দেব, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং যিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- তিনি সীমা অতিক্রমকারী ও অত্যাচারীদের পার্থিব জীবনে শাস্তি এবং পরকালে তার কঠিন পরিণতির জন্য তৈরী থাকতে হবে।
- পুরস্কার ও শাস্তির দুটি পথ নির্ধারণ করেন।
-
শিক্ষা:
- একজন মোমেনের উচিত দুনিয়াতে যেন সে মান-সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে তার জন্য চেষ্টা করা
৮৮ নং আয়াত:
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তবে যে ইমান আনে ও সৎকাজ করে তার জন্য রয়েছে উত্তম পুরষ্কার; আর শঘ্রই আমার বিধান তাকে সহজ করে বলব।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৮৬-৮৮ নং আয়াত অনুযায়ী যুলকারনাইন সফর করতে করতে এমন এক জায়গায় এস পৌঁছান যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি মনোরম সূর্যাস্ত দেখতে পান। মনে হয় যেন পানির মধ্যে সূর্যটি ডুবে যাচ্ছে। ওই এরাকায পূণ্যবান ও পাপী দুধরণের লোক বাস করত। মহান আল্লাহ তাঁকে পূণ্যবানদের রক্ষা করার দায়িত্ব দেন্।
শিক্ষা:
- আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের বিশেষ কিছু ক্ষমতা দেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তা কখনো অপব্যবহার করে না।
- শাসকদের উচিত সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা। আর সে সাথে অন্যায়কারীকে শাস্তি দেয়া কর্তব্য।
৮৯ নং আয়াত:
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৯)অতঃপর সে (অন্য) একটি পথ অনুসরণ করল।
৯০ নং আয়াত: দ্বিতীয় সফর।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯০) অবশেষে যখন সে সূর্যোদয়ের স্থানে (পূর্ব দিকের শেষ সীমা) পৌঁছাল তখন সে দেখতে পেল এটি (সূর্য) এ,মন এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হচ্ছে যাদের জন্য তা থেকে (সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য) কোন আড়াল (ঘরবাড়ি বা পোষাক পরিচ্ছদ) আমি সৃষ্টি করিনি।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
- পৃথিবীর পূর্ব দিকের শেষ সীমায় পৌঁছে যান।
- এমন একটি অনুন্নত জাতি এখানে বাস করত যারা সভ্যতার আলো পায় নি।
- হয়তো তারা ঘরবাড়ি কিছুই বানাতে জানত না।
- সূর্যের তাপ সরাসরি তাদের উপর পড়ত।
৯১. নং আযাত
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এরকমই (ছিল যুলকারনাইনের ঘটনা); আর তার সব খবর আমি অবগত আছি।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
৯২ নং আয়াত
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
এরপর সে একটি পথ অনুসরণ করল।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৯৩ নং আয়াত: তৃতীয সফর।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
অবশেষে যখন সে দুই প্রাচীরের মধ্যখানে এসে পৌঁছাল তখন সেখানে সে তাদেরকে ছাড়াও এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল যারা কোন কথা বুঝতে পারত না।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
- এখানে কোন দিকের কথা বরা হয় নি।
- দুই পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল।
- তাদের ভাষা খুব সম্ভব অন্য রকম ছিল যা জুলকারনাইন বুঝতে পারেন নি।
৯৪ নং আযাত: স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার ও স্বেচ্ছাশ্রম ।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
তারা বলল হে জুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাই আমরা কি আপনাকে খরচ দিব যে আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাাচীর নির্মাণ করে দিবেন?
—----------------------------------------------------------------------------------------------
- ইযাজুজ ও মাজুজ দুটি অসভ্য মানব জাতির নাম।
- তারা পাহাড়ের অপর দিকে বাস করত।
- সম্ভবত গিরিপথ দিয়ে এ প্রান্তে এসে লুটতরাজ বা হত্যাকান্ড করে চলে যেত।
- তাদের কারণে এ পাশের জনগণের দুঃখের সীমা ছিল না।
- এ পাশের জনগণ জুলকারনাইনের মত শক্তিশালী সম্রাটকে পেয়ে অনুরোধ করে গিরিপথে প্রাচীর নির্মাণ করে দেবার জন্য।
৯৫ নং আযাত
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
সে বললো, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে তা উত্কৃষ্ট, সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রচীর নির্মাণ করে দিব।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
- প্রথমে তিনি আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন।
- জুলকারনাইন তাদের কাজ থেকে অর্থ না নিয়ে তাদের শ্রম দিতে বলেন।
- তার পর প্রাচীর নির্মাণ করবেন।
৯৬ নং আযাত:
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তোমরা আমার কাছে লৌহপিন্ডনমূহ নিযে এসো; যখন (লৌহপিন্ড) দুই পর্বতের মধ্যস্থান পূর্ণ হয়ে (দুই পাহাড়ের) সমান হল তখন সে বলল, তোমরা (হাপরে) ফুঁ দিতে থাক; যখন তা আগুনের মতো হয়ে গেল তকন সে বললো, তোমরা গলিত তামা আমার নিকট নিয়ে এসো আমি এর উপর ঢেলে দেই।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- বড় বড় লোহার পিন্ড ফেললেন।
- যখন দুই পর্বতের সমান উঁচু হল তখণ তাতে আগুন দিয়ে উত্তপ্ত করা হল।
- এর উপর গলিত তামা ঢেলে দিলেন যাতে তা লৌহ পিন্ডের ফাঁক ফোকরে ঢুকে তা বন্ধ করে দেয়।
৯৭ নং আয়াত:
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এরপর তারা (ইয়াজুজ ও মাজুজ) তা অতিক্রম করতে পারলনা এবং তা ভেদও করতে পারল না।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- ইয়াজুজ ও মাজুজ আর আসতে পারে নি।
৯৮ নং আয়াত: কিয়ামতের চিত্র - ১
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সে (জুলকারনাইন) বলরো, এটি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যখন আমার প্রতিপালক প্রতিশ্রুত সময (কিয়ামত) আসবে তখন তিনি তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন; আর তোমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- তিনি মনে করেন এ কাজ তার সম্পাদিত নয়।
- তার উপর আল্লাহর রহমত যে আল্লাহ তাকে তাওফীক দিয়েছেন এ কাজ সম্পাদনের জন্য।
- এখানে তিনি স্পষ্ট করে দেন ইয়াজুজ-মাজুজের পক্ষে এটা ভাঙ্গ সম্ভব নয়।
- কিন্তু আল্রাহতায়ালার পক্ষে এটা ভেঙ্গে ফেলা এমন কিছু নয়।
- আল্লাহ যখন এটা বিনাশ করতে চাইবেন তখন এটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যাবে।
- এর অর্থ হতে পারে এই প্রাচীর স্থায়ী কিছু নয় কিয়ামতের আগেও এটা বিনাশ হতে পারে।
- কিয়ামতের দিন এটা অবশ্যই বিনাশ হবে।
- তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই হবে।
৯৯ নং আয়াত: কিয়ামতের চিত্র – ২।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আর সেদিন (কিযামতের দিন) আমি (তাদেরকে ছেড়ে দেব এমন অবস্থায় যে) একদল আরেক দলের উপর সমুদে্রর ঢেউয়ের মত এসে পড়বে; আর শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে, অতঃপর আমি তাদের সকলকেই (হাশরের ময়দানে) একত্র করব।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কিয়ামতের দিনের কথা বলা হচ্ছে।
- সে সময় তাদের অবস্থা এমন হবে যে তারা ডেউয়ের মত এক অন্যের উপর ঢলে পড়বে।
- অর্থাত্ তারা একবারে বিশৃংখল হয়ে যাবে।
- কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা দেখে মানুষ এতই ভীতি-বিহ্বল হয়ে যাবে যে একজন আরেকজনের উপর আছড়ে পড়বে।
১০০. কিয়ামতের চিত্র -৩।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আর সেদি আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষ করার জন্য কাফিরদের নিকট উপস্থিত করব।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কাফিররা সেদিন জাহান্নামকে দেখতে পাবে।
১০১ নং আয়াত: কিয়ামতের চিত্র – ৪।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যাদের চোখ ছিল আমার যিকির (কুরআন) থেকে আবরণে ঢাকা এবং যারা শুনতেও সক্ষম ছিল না।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- হঠাৎ করেই তাদের চোখের থেকে পর্দা তুলে নেয়া হবে এবং তারা তাদের কৃতকর্মের যথোপযুক্ত শাস্তি দেখতে পাবে।