সূরা কাহফ। রুকু ১০। খিযির (আঃ) এর কাহিনী।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময় , পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা কাহফ। রুকু - ১০
আয়াত - ৮৩ - ১০১।
৭১ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল, পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল তখন সে তা ছিদ্র করে দিল, সে (মূসা) বললো, আপনি কি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য ছিদ্র করলেন? নিশ্চয়ই আপনি গুরুতর কিছু করলেন।
- ঘটনার হেকমত একমাত্র আল্লাহ জানেন।
—------------------------------------------------------------------------------------------------
৭২ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
সে বললো, আমি কি বলিনি যে আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরতে পারবেন না?
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৭৩ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
সে (মূসা) বললো, আমার ভুলের জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অতটা কড়াকড়ি করবেন না।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৭৪ নং আয়াত:
—------------------------------------------------------------------------------------------------
অতঃপর ভয়ে চলতে লাগল যতক্ষণ না তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাত হলো, অতঃপর সে তাকে হত্যা করল; তখন র্ূসা বলল, আপনি কি হত্যার অপরাধ ছাড়াই এক নিষ্পাপ ব্যক্তিকে হত্যা করলেন? আপনি নিঃসন্দেহে এক ঘৃণ্য কিছু করলেন।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
৭৫ নং আয়াত:
—------------------------------------------------------------------------------------------------
সে (মূসা) বললো, আমি কি আপনাকে বলিনি যে আপনি আমার সংগে কিছুতেই ধৈর্য দারণ করতে পারবেন না?
—------------------------------------------------------------------------------------------------
৭৬ নং আয়াত:
—-----------------------------------------------------------------------------------------------
সে (মূসা) বললো, এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তবে আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; এখন তো আপনি আমার পক্ষ থেকে (আমাকে সঙ্গে না রাখার বষয়ে ) ওজর পেলেন।
—----------------------------------------------------------------------------------------------
৭৭. নং আয়াত-
—------------------------------------------------------------------------------------------------
অতঃপর উভয়ে চলতে রাগলো, চলতে চরতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইল কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল, অতঃপর সেখানে তারা এক পতনোম্মুখ প্রাচীর (দেখতে) পেল এবং সে তা খাড়া করে দিল; সে (মূসা) বলল, আপনি উচ্ছা করলে অবশ্য এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৭৮ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
সে বললো, এখানেই আপনার এবং আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হল; শীঢ়্রই যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেন নি আমি তার তাত্পর্য আপনার কাছে ব্যখ্যা করব।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৭৯ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
নৌকাটির ব্যাপার-এটি ছিল কতিপয় রিদ্র ব্যক্তির তারা সমুদ্রের জীবিকা অন্বেষণ করতো, আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ত্রটিযুক্ত করতে কারণ তাদের পিছনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে প্রতিটি (ভাল) নৌকা ছিনিয়ে নিত।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৮০ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
এরপর বালকটির কথা- তার পিতামাতা মুমিন, আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর মাধ্যমে তাদেরকে কষ্ট দিবে।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৮১ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
সুতরাং আমি চাইলাম যে, ততাদের প্রতিপালক যেন তাদেরকে এর পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন যে হবে তার চেয়ে অধিকতর পবিত্র ও সম্পর্কের দিক থেকে অধিকতর ঘনিষ্ঠ।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
৮২ নং আয়াত:
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
আর ঐ প্রাচীরটি – এটি ছিল নহরের দুই এতিম বালকের, এর নীচে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সত্কর্মপরায়ণ; সুতরাং আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করলেন যে, তারা শক্তি-সামর্থ (বয়ঃপ্রাপ্ত০ হোক এবং তারা তাদের ধনভান্ডার ইদ্ধার করুক – (এটা ছিল) আপনার প্রতিপালকের পক্ষেে দয়া স্বরূপ, আর আমি নিজ থেকে কিছু করিনি, আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যদারণে অপরাগ হয়েছলিনে এটাই তার ব্যখ্যা।
—------------------------------------------------------------------------------------------------
শিক্ষা:
- প্রতিটি কাজের মূল্যায়ন ঘটে তার পরিণাম দিয়ে, শেষ যোগফল দিয়ে।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর।
খিযির (আঃ) যে সব কাজ করেছিলেন তা শরীয়তের দৃষ্টি দিয়ে যদি আমরা দেখি তা অন্যায়। তবু কেন আল্লাহ তাকে দিয়ে নৌকা ফুটো করে দেয়া, বালককে হত্য করার মত কাজগুলো করা হল।
উত্তর:
ইসলামী শরিয়তে মালিকের অনুমতি না নিয়ে তার বিষয় সম্পত্তিতে হাত দেয়া অন্যায়। আবার তা যদি হয় তার সম্পদের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে তা আরো অন্যায়। মালিকের উপাকারের উদ্দেশ্যেও করা হলেও অন্যায়। খিজির(আঃ) নৌকার তক্তা খুলে ফেলেন।
নিরপরাধ লোককে হত্যা করা পাপ। আর শিশু হত্যা যুদ্ধাবস্থায়ও জায়েয নয়। শিশুটা কবে বড় হয়ে অন্যায় করবে সে অবস্থায় শিশুকে হত্যা করা কোন অবস্থায় জায়েয নয়। এজন্য মূসা (আঃ) চুপ থাকতে পারেন নি।
আবার সাধারণ মানবিক গুণ হচ্ছে যে আমার ক্ষতি করবে এবং বিপদে আমাকে কোন সাহায্য করবে না তাকে আমরা সাধারণত কোনভাবে সাহায্য করতে চাই না। এক্ষেত্রে খিযির (আঃ) করেছিলেন। কেন তিনি তা করলেন তা জানার আগ্রহে মূসা (আঃ) প্রশ্ন করেন।
আসলে পৃথিবীতে যত ঘটনা ঘটে তা ভাল কিংবা মন্দ যাই হোক না তার একটি সম্পর্ক আছে অদৃশ্য জগতের সাথে। এটি এমন একটি জগত যা আমাদের চোখের আড়াল। আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। একে বলা “তাকবীনী জগত” । এই জগত নিয়ন্ত্রিত হয় আল্লাহর সৃষ্টি ও বিনাশ সংক্রান্ত বিধানাবলী দিয়ে। আল্লাহ স্বয়ং এ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন।
কখন মানুষের জন্ম/মৃত্যু হবে, সুস্থ/অসুস্থ, ন্যয়/ অন্যায় কাজ প্রভৃতি সব কিছু পরিচালিত হয় এই জগত দ্বারা। আল্লাহ স্বয়ং নিজে নির্ধারণ করেন কি ঘটবে। এবং ‘তাকবীনী হুকুম’ দ্বারা তিনি তা কার্যকরী করেন। তাকবীনী হুকুম কার্যকরী করার জন্য আমাদের অগোচরে আল্লাহর এক বিশেষ কর্মীবাহিনী ফেরেশতারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ ন্যায়-নিষ্ঠতা সহকারে ফেরেশতারা মৃত্যু বা অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাধারণত ফেরেশেতারা করলেও এখানে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)কে শিক্ষা দেবার জন্য খিজির (আঃ)কে বিশেষ ক্ষমতা দেন। ফলে তিনি এই মাঝি এবং বালকের জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে তা বুঝতে পারেন।
এখানে মনে রাখতে হবে মানব জাতি আল্লাহর শরীয়তী বিধানের অধীন। তাকবীনী জগতের কোন জ্ঞানও আমাদের দেয়া হয় নি আবার সে জগতের কোন কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয় নি। আমরা একটি দৃশ্যমান, বাস্তব জগতে বাস করি। আমরা নিজের চোখে যা দেখতে পাই তা নিয়ে আমাদের জীবন।
হযরত মূসা (আঃ) এই চাক্ষুষ জগতের নবী ছিলেন। তাই তিনি খিযির (আঃ) এর কর্মকান্ড দেখে চুপ থাকতে পারেন নি।
এখানে দেখানো হয়েছে বিশ্বজগতে যা কিছু ঘটছে তাতে আল্লাহর অপার হেকমত আছে।
কোন ঘটনার রহস্য বা তাৎপর্য যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তবে তার ভিত্তিতে আল্লাহতায়ালার ফায়সালা সম্পর্কে আপত্তি তোলার সুযোগ আমাদের নেই।
দৈনন্দিন জীবনে অনেক ঘটনা আছে যা আমাকে ব্যথিত করে। আমরা অনেক সময় নিরীহ ব্যক্তিদের নিগৃহীত হতে দেখি। এতে আমাদের মনে অনেক সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ সন্দেহ দূর করা অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহতায়ালা খিযির (আঃ) এর মাধ্যসে এই রহস্যময় জগতের পর্দা আমাদের কাছে উন্মোচন করলেন।