সেূরা কাহফ। রুকু ৮ । সাবধানবাণী অবহেলা।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়,পরম দয়ালু  মহান আল্লাহর নামে শুরু  

রুকু ৮আয়াত ৫৪-৫৯
সাবধানবাণীকে অবহেলা করা

 

৫৪ নং আয়াত- কুরআন

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

আমি মানুষের উপকারার্থে এই কুরআনে সব রকম উপমা ও উদাহরণ  বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু মানুষ সবচেয়ে বেশী তর্কপ্রিয়

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

-   আল্লাহ এই আয়াতে জানিয়েছেন তিনি কুরআনে প্রতিটি বিষয় স্পষ্ট ও বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন

-   কুরআন মানুষের উপকারের জন্য নাযিল হয়েছে

-   যাতে মানুষ হেদায়েত পায় এবং সৎপথ থেকে না হারায়

-   কুরআনের বাণী মানুষকে বুঝাবার জন্য বিভিন্ন উপমার আশ্রয় নেয়া হয়েছে

-   অধিকাংশ মানুষ তর্ক করতে পছন্দ করে

-   তাদের বোঝার ইচ্ছা নেই

-   ইচ্ছা থাকলে সন্তুষ্ট চিত্ত সে তাতে সাড়া দিত

-    

৫৫ নং আয়াত- দ্বীন গ্রহণে বাধা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৫)যখন মানুষের কাছে পথনির্দেশ আসে, তখন এই প্রতীক্ষাই তাদেরকে বিশ্বাস স্থাপন হতে ও তাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা হতে বিরত রাখে যে, তাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা তাদের নিকট উপস্থিত হবে অথবা উপস্থিত হবে (সরাসরি) বিবিধ শাস্তি

----------------------------------------------------------------------------------------------------------

-    প্রত্যেক নবী রসুলের সময় এমন লোকের সংখ্যা বেশী যারা বিশ্বাস করত কেয়ামত বলে কিছু নেইএই আয়াতে সে সব অবিশ্বাসীদের কথা বলা হয়েছে

-   তারা নিজের চোখে আযাব দেখতে চাইত

-   তাদের সামনে সবরকম দলীল প্রমাণ উপস্থিত করার পরও তারা অস্বীকার করত

-   এরা খুব একগুঁয়ে মনোভাবাপন্ন ছিল

-   এদেরকে যখন অতীত ঘটনাবলীর কাহিনী বলে উদাহরণ দেওয়া হত, তারা তার পুনরাবৃত্তি চাইত

-   তাদের একগুয়ে মনোভাবের কারণে তারা পাপচার থেকে বিরত থাকেনি

-   নিজেদের ইচ্ছায় নিজেদের উপর বিপদ ডেকে আনে

-   আল্লাহ এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন নবীদের কাজ শাস্তি দেয়া নয়

-   তাদের কাজ আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়ে সতর্ক করা

-   আল্লাহর নীতি চটজলদি শাস্তি দেয়া নয়।

-   তিনি আগে অবকাশ দেন যাতে সেই অবকাশের মধ্যে ইমান আনতে পারে

-   অবাধ্যদের শাস্তি দেবার জন্য সময় ঠিক করা থাকেসে সময় তিনি শাস্তি দেন


৫৬. রসুলদের পাঠানোর উদ্দেশ্য 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

আর আমরা শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে রাসূলদের পাঠিয়ে থাকি, কিন্তু কাফেররা বাতিল দ্বারা তর্ক করেযাতে তার মাধ্যমে সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারেআর তারা আমার নিদর্শনাবলী ও যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সে সবকে বিদ্রূপের বিষয় হিসাবে গ্রহণ করে থাকে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

-   রসুলদের সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠান

-   কাফেররা তাদের প্রচারিত আল্লাহর বাণীকে মিথ্যা জ্ঞান মনে করে

-    তাদের পাঠান হয় সত্যকে প্রচারের জন্য

[সত্যের ধারণাতে কোন বিমূর্ত বিষয় থাকতে পারে নাতা হচ্ছে স্পষট।]

-   রসূলদের প্রচারিত সত্যের বাণী পাপ ও পূণ্যকে চিনতে সাহায্য করে।

-   পূণ্য পথে চলা বা পাপের দাসত্ব থেকে মুক্তির পথ নির্দেশ দেয়

-   পাপের পরিণাম সম্বন্ধে সতর্ক করে দেন

-   সত্যের বাণী নিয়ে বৃথা বিতর্ক এবং ঠট্টা বিদ্রুপ করে বাণীর যথার্থতা বা গুরুত্ব কমানোর প্রয়াস পায়

 

৫৭ নং আয়াত- আত্মার উপর পাপ কাজের প্রভাব

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৭) সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়া হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়  এবং নিজ কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? বস্তুত আমি (তাদের কৃতকর্মের কারণে) তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিযে দিয়েছি যেন তারা এ কুরআন বুঝতে পারে না এবং তাদের কানে ছিপি এঁটে দিয়েছিসুতরাং তুমি তাদের হিদায়েতের দিকে ডাকলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

-   যারা কুরআনের উপদেশে বিশ্বাস করে না তারা বড় জালেম

-   তারা নিজেরোই নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে

-   তাদের আত্মা পাপের অন্ধকারে আবৃত্ত হবার ফলে আল্লাহর বাণী শুনতে পায় না

-   আল্লাহর সতর্কবাণী শুনতে পায়না এবং আল্লাহর মঙ্গল ইচ্ছাকে অনুভব করতে পারে না

-   তাদের বুঝার শক্তি নিশ্চিহ্ণ হয়ে গিয়েছে

-   এই অবস্থায় কান থাকতেও তারা সত্যের আহ্বানকে সনাক্ত করতে পারে না

-   এরা কখনোই সৎপথে আসবে না



৫৮. নং আয়াত- আল্লাহ ক্ষমাশীল

-------------------------------------------------------------------------------------------------------

( হে নবী) তোমার মালিক বড়ই ক্ষমাশীল এবং দয়াবান; তিনি যদি তাদের সবাইকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিতে চাইতেন, তাহলে তিনি (সহজেই) শাস্তি ত্বরান্বিত করতে পারতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট সময়কাল, যার পরে তারা আর কোন আশ্রয়স্থল পাবে না

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------


-   আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়াবান

-   আল্লাহ ইচ্ছা করলে এই পৃথিবীতে তাদের শাস্তি দিতে পারতেন।

-   কিন্তু তাঁর দয়া এই যে তিনি তাদের দয়া করেছেন এবং শাস্তি দেয়া ত্বরান্বিত করেন নি।

-   রোজ কিয়ামত বা হিসাব নিকাশের দিন তারা কোন আশ্রয় স্থল পাবে না

-   পাপীদের এই পৃথিবীতে শাস্তি দেয়া এবং বাঁচিয়ে রাখা আল্লাহর হেকমত যার তাৎপর্য একমাত্র আল্লাহ জানেন


৫৯ নং আয়াত - আল্লাহর শাস্তি।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৯.) ওইসব জনপদ তো (তোমাদের সামনে) রয়েছেতারা যখন জুলুমের নীতি অবলম্বন করল, তখন আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলামতাদের ধ্বংসের জন্য আমি সময় নির্ধারণ করেছিলাম

---------------------------------------------------------------------------------------------------------

-   প্রত্যেক জাতির ধ্বংসের জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন

-   পৃথিবীতে যত জনপদ ধ্বংস হয়েছে তা আল্লাহর এই আইনে

-   আল্লাহ প্রত্যেক জাতিকে প্রচুর অবকাশ দেন যেন তারা অনুতপ্ত হযে পাপের পথ পরিত্যাগ করে

-   কিন্তু তারা আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা লাভের সুযোগ গ্রহণ না করে সীমালংঘন করে

 


অনুধাবন

  • কুরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বিভিন্ন উপমা বা দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যাতে মানুষ তার অহংকারকে দমন এবং আত্মরম্ভিতাকে প্রশমিত করতে পারে।  মানুষ আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির মতই নশ্বর সৃষ্টি। কিছু মানুষ আছে যারা তর্ক প্রিয়। সে নশ্বর জেনেও অহেতুক তর্ক করে যায়। 
  • দ্বীনের পথে প্রধান বাধা মানুষের একরোখা ও একগুঁয়ে মানসিকতা। আল্লাহর পয়গম্বররা হেদায়েতের পথের বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে বুঝে অনুসরণ করতে হবে। 
  • আল্লাহর পয়গম্বররা সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী। তারা সত্যকে প্রচার করেন। সত্যর ধারণাতে কোনও বিমূর্ত ধারণাকে স্থান দেয়া হয় নি। 
  • মানুষ যখন সৎ পথ ত্যাগ করে পাপের পথ অবলম্বন করে, সে তার আত্মার উপর অত্যাচার করে। তার আত্মা পাপের অন্ধকারে যখন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে  তখন সে আর আল্লাহর মঙ্গল ইচ্ছাকে  শুনতে পায় না। আর কখনো সে সৎ পথে আসতে পারে না। 
  • যারা সীমালংঘন করে তাদের ধ্বংসের জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট ক্ষণ স্থির করেন। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url