সূরা কাহফ । রুকু ৬। আমলনামা ।

 

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু

সূরা কাহফ। রুকু ৬
আয়াত  ৪৫-৪৯। 

আমলনামা।






৪৫ নং আয়াত: পার্থিব জীবনের উহাহরণ। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৫) তাদের কাছে পার্থিব জীবনের এই উপমাও পেশ কর যে, তা পানির মত, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি, ফলে ভূমিজ উদ্ভিদ নিবিড় ঘন হয়ে যায়, তারপর তা এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়, যা বাতাস উড়িয়ে নিয়ে ‍যায়। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ বৃষ্টির পানির সাথে তুলনা করেছেন যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয়। 

  • এই পানি তে যমীন উদ্ভিদে  তরুতাজা হয়ে ওঠে।

  • পরবর্তীতে আবার শুকিয়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাায়।  

  • বাতাস তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। 


৪৬ নং আয়াত: সত্‌কর্ম

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৬) সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের শোভা। তবে যে সৎকর্ম স্থায়ী, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা সওয়াবের দিক থেকে উৎকৃষ্ট এবং আশা পোষণের দিক থেকেও উৎকৃষ্ট। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

  • সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের শোভা। 

  • কিন্তু তা স্থায়ী নয়। চিরকাল আপন হয়ে থাকে না। 

  • স্থায়ী হচ্ছে সত্‌কর্ম। 

  • মহান আল্লাহর কাছে উত্‌কৃষ্ট হচ্ছে সত্‌কর্ম। 

  • কারণ সত্‌কর্মে সওয়াব আছে। 


সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার শোভা এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু কোনটাই চিরকাল আপন থাকে না। একদিন না একদিন ধোঁকা দিয়ে চলে যাবেই।  সম্পদ হালাল এবং হারাম দুভাবেই কামাই করতে পারি। এ অর্থ আমরা আমাদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করি। 


৪৭ নং আয়াত: কেয়ামতের ভয়াবহতা। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৭) এবং (সেই দিনকে স্মরণ রাখ) যে দিন আমি পর্বতসমূহ সঞ্চালিত করব এবং পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত পড়ে আছে এবং আমি তাদের সকলকে একত্র করব, তাদের কাউকে ছাড়ব না। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিনকে স্মরণ করতে বলেছেন।

  • সেদিন পাহাড় পর্বত স্থানচ্যুত হয়ে যাবে। 

  • তারপর ফেটে গিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। 

  • যমীনকে একটি খোলা প্রান্তর হিসাবে দেখা যাবে। 

  • যাদের আগে মৃত্যু হয়েছে এবং বর্তমান সব মানুষকে একত্রিত করা হবে। 

  • কেউ কোথাও লুকাতে পারবে না।


৪৮ নং  আয়াত-  হাশরের ময়দানের চিত্র।

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৮) সকলকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত করা হবে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমাদেরকে আমি প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, পরিশেষে সেভাবেই তোমরা আমার কাছে চলে এসেছ। অথচ তোমাদের দাবী ছিল আমি তোমাদের জন্য  (এই) নির্ধারিত কাল কখনই উপস্থিত করব না। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------

  • সবাইকে আল্রাহর সামনে সারিবদ্ধভাবে দাড় করানো হবে। 

  • মানুষকে  প্রতশবার যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল সেভাবেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। 

  • এখানে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ কিরয়ে দিচ্ছেন মানুষ ভাবত তারা কখনোই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে না। 

  • সেদিন তারা তাদের মিথ্যা ধারণা বুঝতে পারবে। 



৪৯ নং আয়াত: আমলনামা 

—------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৯) আর ‘আমলনামা সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদের দেখবে, তাতে যা লেখা আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য! এটা কেমন কিতাব,যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্মসামনে উপস্থিত পাবে। তেকা,মার প্রতিপালক কারও প্রতি কোন জুলুম করে না। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------- 

  • তাদের আমলনামা অর্থ পৃথিবীতে বসে যে আচরণ করেছে তা আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রাখেন। 

  • সংক্ষেপে সংরক্ষিত কর্ম বিবরণী বলা যায়। 

  • যার যার আমলনামা তার তার হাতে দেয়া হবে। 

  • অপরাধীরা তাদের আমলনামা দেখে আতঙ্কিত হবে।

  • তারা অবাক হয়ে দেখবে ছোট বড় সব ধরণের কর্ম লিখে রাখা হয়েছে। 

  • পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব করা আছে। 

  • তাদের বিন্দু পরিমাণ কৃতকর্মের হিসাব বাদ পড়ে নি। 



অনুধাবন:


  • যিনি সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি ধ্বংসও করতে পারেন। আমাদের  পার্থিব  সজীবতা, প্রফুল্লতা এবং সেটা বিলীন এবং ধ্বংস হওয়াকে সবুঝ তৃণলাতার সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেভাবে তৃণলতা তরুতাজা হয়ে আবার একসময় বিলীন হয়ে যায়, তার নাম নিশানা থাকেনা। সেরকম মানব জীবন। এক সময় এর নাম নিশানা থাকবে না। তাই এই ধরণের জীবন নিয়ে অহংকার করা বা আত্মরম্ভিতা প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। 

  • মহান আল্লাহ আল্লাহ এই ধন সম্পদ এবং সন্তানাদির সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিষেধ করেন নি। তিনি এখানে একথটুকু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এগুলো নেহায়েত ক্ষণস্থায়ী। আমাদের আসল জীবন পরকালীন জীবন। দুনিয়ার ক্ষণিকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে পরকালীন জীবনকে ভুলে গেলে চলবে না। 

  • আমাদের জীবনে স্থায়ী হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগত। যা আমাদের মৃত্যুর পরেও আমাদের চেতনাকে বহন করে নিয়ে যাবে। 

  • আল্লাহ হচ্ছেন একমাত্র শক্তি এবং সর্বশক্তিমান। 

  • আল্লাহ সমাজের মঙ্গলের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সত্‌ কাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেন। 

  • সত্‌কর্ম আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার এক বড় ইবাদত। 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url