সূরা কাহফ। রুকু ১। রাসুল (সঃ) ।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময় , পরনম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা কাহফ।
রুকু -১, আয়াত ১-৮।
রসূল পাঠানর উদ্দেশ্য এবং প্রেরিত রসূলকে সান্ত্বনা প্রদান।
বিষয়বস্তুঃ একাত্মবাদ, রেসালত, অস্থায়ী ও নিকৃষ্ট দুনিয়া। পরকাল, কিয়ামত, মৃতদের পুনরুজ্জীবন ও হিসাব-নিকাশ।
ভূমিকাএই সূরা শুরু হয়েছে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে কারণ তিনি রাসুল (সঃ) এর উপর কুরআন নাযিল করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব শুধু শুধু দুনিয়া ও আখেরাতের নিয়ামতের জন্য নয়, বরং সঠিক পথে হেদায়েতের জন্য।
পবিত্র কুরআন নাযিল করে মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানো হচ্ছে আল্লাহর এক বড় অনুগ্রহ।
১ নং আয়াত - তওহীদ।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------
১: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর নামে যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাজিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেনি।
—------------------------------------------------------------------------------------------------
- প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব কুরআন নাযিল করেছেন।
- কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোৎকৃষ্ট অনুগ্রহ ।
- কুরআন মানুষের মুক্তি ও সাফল্যের কারণ।
- এর বানীর মধ্যে শব্দগত কিংবা অর্থগত কোন জটিলতা নেই। সরল সংযত। এর মধ্যে কোন বক্রতা, অস্পষ্টতা, বা পক্ষপাতিত্ব নেই।
২ নং আয়াত - মুমিনদের সুসংবাদ।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২)একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে – যারা সৎ কর্ম সম্পাদন করে – তদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কুরআন কাফিরদেরকে কঠোর আযাবের ভয় প্রদর্শন করে ।
- যা পরকালে তাদের দেয়া হবে।
- মুমিনরা যারা নেক আমল করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।
- এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য পুরষ্কারের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সৎকর্মশীলতা ঈমানের বাস্তব প্রমাণ সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে।
৩ নং আয়াত- মুমিনদের চিরস্থায়ী আবাস।
—-------------------------------------------------------------------------------
৩ঃ তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।
—-------------------------------------------------------------------------------
- মুমিনরা জান্নাতে থাকবে।
উপরের এই ৩টি আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হল
(i) কুরআন এত মহান ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত যে, আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন এটা নাযিল করার জন্য।
(ii) রসুল (সঃ) কুরানের ভিত্তিতে সুসংবাদ দান করেন, নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলেন না। কারণ কুরআন একটি সুস্পষ্ট ও স্থায়ী গ্রন্থ।
(iii) সঠিক ঈমানের একটি দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ হল সৎকর্মশীলতা।
৪নং আয়াত - কাফিরদের সতর্কীকরণ।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------
৪: এবং সে সকল লোককে সতর্ক করার জন্য যারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------
- কাফিরদের সতর্ক করা হয়েছে।
- আল্লাহর সন্তান আছে বলে তারা মনে করে।
- তারা ভিত্তিহীন কথা মূর্খতা বশত বলে থাকে। ( সে সময় আরব দেশে এ মতবাদের লোকের সংখ্যা বেশী ছিল যার জন্য এ কথা বলা হয়েছে )
- কাফেরদের একটি ভ্রান্ত নীতি যা ছিল অনুমানের উপর ভিত্তি করে। তাদের এবং পূর্ব পুরুষদের কোন জ্ঞান না থাকা সত্বেও।
৫ নং আয়াত - কাফিরদের অজ্ঞতা।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------
৫: এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষেরো নেই। কত কঠিন তাদের মুখের কথা। তাঁরা যা বলে তা তো সবই মিথ্যা।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------
- আল্লহর সন্তান থাকার কোন প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
- তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছেও নেই।
- এটী যে একটি গুরুতর কথা সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।
- তাঁরা মিথ্যা বলছে।
- তাদের মুর্খতা বশত এ কথা বলত।
৪ ও ৫ নং আয়াতে আল্লাহ সম্পর্কে কাফিররা যে মিথ্যা অপবাদ দিত, সে সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এই দুই আয়াতে কাফেররা কি ধরণের অপবাদ দিত তা তুলে ধরা হয়েছে। যেমন তারা মনে করত আল্লাহর সন্তান আছে। আল্লাহকে এ ধরণের অপবাদ দেবার মধ্যে ইহুদী, খ্রীষ্টান ও মুশরিক সবাই আছে। মুশরিকরা ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা ভাবত। খ্রীষ্টানরা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র মনে করে। ইহুদীরা হযরত ওযাইরকে আল্লাহর সন্তান মনে করে। অথচ কুরআন অনুযায়ী এটা অবাস্তব দাবী।
এখান থেকে শিক্ষণীয় হচ্ছে।
(i) নবী-রসুলদের একটি প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মিথ্যা ও ভুল ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
(ii) আল্লাহর সাথে শরীক করা হল অন্যতম প্রধান ভ্রান্ত মতবাদ।
(iii) সর্বোত্তম ধর্ম বিশ্বাস হল আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস করা ও তার উপর অটল থাকা।
(iv) ধর্মবিশ্বাস গড়ে ওঠা উচিত জ্ঞান ও বুদ্ধির মাধ্যমে। কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে নয়।
(v) মানুষ তার অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে তার প্রভুর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়।
৬ নং আয়াত- কারো জন্য বিষন্ন এবং হতাশ না হওয়া।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------
৬: যদি তাঁরা এ বিষয়বস্তুর উপর বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবত আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------
- কাফেররা কুরান শরীফের উপর বিশ্বাস করে না।
- এখানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে এ বলে যে আপনর দুঃখ পাবার বা বিষণ্ণ হবার কোন কারণ নেই। আপনি আপনার পবিত্র প্রাণকে দুঃখ ও বেদনা দিয়ে ধ্বংস করবেন না। (এখানে মানব চরিত্রের একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে যে বিষণ্ণতা ও হতাশা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। )
উপরের আয়াতে মানুষের প্রতি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর যে নিঃস্বার্থ ভালবাসা ছিল তার কথা বলা হয়েছে। তিনি দেখেন তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তারা যে কঠিন পরিণতির দিকে যাচ্ছে তাতে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। তিনি এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন নি। তিনি যখন দেখেন লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করছেন না তিনি ব্যথিত হন এবং মনে খুব কষ্ট পান। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পরেন বিষন্নতা আর হতাশায় যে তার জীবনের শংকা দেখা দেয়। তিনি শুধু দায়িত্ব পালনের জন্য ইসলাম প্রচার করতেন না। তিনি মনে প্রাণে চাইতেন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করুক। তিনি যখন দেখলেন তার চারপাশের মানুষ ইমান না আনার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন তিনি ভীষণ দুঃখ পান।
শিক্ষণীয়:
(i) অন্যকে ভূল পথে চলতে দেখলে মনে কষ্ট পাওয়া একটি ভাল কাজ।এর ফলে মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার মানসিকতা তৈরী হয়।
(iii) এ ব্যপারে নবী-রসুলরা সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন।
(iv) তাদের কাজ হচ্ছে তাবলীগ ও প্রচার কাজ চালান।
(v) ধর্মীয় নেতা ও আলেমদের উচিত মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা। যদিও এ পথটি সহজ নয়। কারণ বেশীর ভাগ লোক তা গ্রহণ করতে রাজী নয়।
মুশরিকদের বৈরী আচরণে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) খুব কষ্ট পেতেন দেখে আল্লাহ ৭ নং আয়াতে বলেন।
৭ নং আয়াত- আল্লাহর পরীক্ষা ।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------
৭: আমি পৃথিবীর সব কিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------
- চাই তা প্রাণী, কিংবা উদ্ভিদ, খনি, মণিমুক্তা কিংবা নদী নালা যাই হোক না কেন সব কিছুর কথা বলা হয়েছে।
- এগুলো সব কিছু করা হয়েছে পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। যে গুলো মানুষ তাঁর ভোগবিলাসের জন্য ব্যবহার করে।
- এগুলো মানুষকে এজন্য দেয়া হয়েছে মানুষ এগুলো পেয়ে আল্লাহকে ভুলে থাকে কিনা। (এখানে পার্থিব সৌন্দর্যের মহিমায় মানুষ আল্লাহকে ভুলে থাকে কিনা।)
- হয় কেউ কুফরির মধ্যে লিপ্ত হবে অথবা ইমান আনয়নের মর্যাদা লাভ করবে।
- কে ভাল কাজ করে তা দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন আল্লাহ। অর্থাৎ মহান আল্লাহ এ পৃথিবীকে পরীক্ষার স্থান করেছেন।
তাহলে দেখতে পাচ্ছেন উপরের আয়াতটি নাযিল হয় হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সান্তনা দেবার জন্য। আল্লাহ তাকে বলেন এ দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য্ আল্লাহ লক্ষ্য করেন কে দুনিয়ার সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়ে আল্লাহকে ভুলে যায় আর কে আল্লাহর হুকুমমত চলে আখেরাতের পুঁজি সঞ্চয় করে। এই পরীক্ষা কেন্দ্রে দুধরণের লোকই পাওয়া যায়। একদল কৃতকার্য আরেক দল অকৃতকার্য। যারা কুফর ও শিরকে লিপ্ত তারা অকৃতকার্য।
[সমাজ, সম্পদ, জ্ঞান ও ক্ষমতা – এ ৪টি জিনিস আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য যেমন নিয়ামত তেমনি পরীক্ষা ও ফিতনাও বটে। তাই এই ঘটনাগুলো বর্ণনা করার পূর্বেই আল্লাহতায়ালা বলে দিচ্ছেন যে, এগুলো পৃথিবীর শোভা এবং আমাদেরকে পরীক্ষা করার উপায়।
আসহাবে কাহফের ঘটনা বর্ণনা শুরু য়েছে ৯ নং আয়াত থেকে। শেষ হয়েছে ২৬ নং আয়াতে। ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নং এ ৪টি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে সমাজের বিভিন্ন ফিতনা থেকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। ]
৮ নং আয়াত - আল্লাহ কিয়ামত ঘটাবেন।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮) আর আমি পৃথিবীর সমুদয় বস্তুকে একটি পরিষ্কার ময়দানে পরিণত করেছেন।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কিয়ামতের কথা বলা হচ্ছে।
- পৃথিবীর এই রূপ-সৌন্দর্য সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী।
- কিয়ামতের পর পৃথিবী এক বিরান প্রান্তরে পরিণত হবে।
৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন যে সব বস্তুর কারণে পৃথিবীকে এমন আকর্ষণীয় দেখায় – যেমন- ঘর-বাড়ী, বাগান, পাহাড়=পর্বত, বৃক্ষরাজি, প্রভৃতি কিছুই থাকবে না। এগুলো ভেঙ্গেচুরে সমতল ময়দানে রূপান্তর করা হবে। তখন একথা প্রমাণিত হয়ে যাবে এই পৃথিবী বড়ই ক্ষণস্থায়ী।
গুহাবাসীদের ঘটনার বিবরণ -
—----------------------------------------------------------------------------- --------------------------
(৯) আপনি কি মনে করেন যে, গুহা এবং রাকীমবাসীরা আমার বিস্ময়কর নিদর্শন সমূহ হইতে কোন আশ্চর্য বিষয় ছিল?
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাহফের অলৌকিক ঘটনা-
একদল ইমানদার তরুণের প্রশংসা করা হয়েছিল। এরা বাতিলের কাছে মাথা নত করে না। [ সমাজ আবার অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছে। ৩ বৎসরের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন;;; আমজাহেলই যুগ বলে যাদের গালিগালাজ কর্মই তারা এতটা জাহিল ছিল না। বর্তমানে আছে। ]
{ একটি সমাজে কিছু তরুণ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করত। কিন্তু তারা তাদের সমাজের অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন এবং ধর্মহীন মানুষদের দেখে দেখে একবারেই হতাশ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করল “হে আমাদের প্রতিপালক!তুমি নিজ হাতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর। আমাদেরকে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা কর:১০“ ]
কুরআন মজীদ অনুযায়ী বর্ণনা সংক্ষিপ্ত:
[ঘটনা: হযরত ঈসা (আঃ) পর ‘ইনজিীল অনুসারীদের অবস্থা অনেএরকমই একজন মুশরিক রাজার আমলে জনাকয়েক যুবক যারা তাওহীদে ক খারাপ হয়ে পড়ে। তারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হযে পড়ল এবং অন্যদেরকেও মূর্তিপূজা করতে বাধ্য করল।
বিশ্বাসী ছিল। স্বভাবতই রাজার রোষদৃষ্টি তাদের উপর পড়ে। সেজন্য যুবকেরা পালিয়ে একটি গুহায় আত্মগোপন করে। সেখানে আল্লাহ তাদের গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন মস,,,নসহি সালামতে থাকে।
৩০৯ বছর পরে যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গল তারা ক্ষুধা অনুভব করল। তারা তাদের একজনকে বাজারে পাঠাল খাবার কেনার জন্য। তাকে সতর্ক করে দিল যাতে রাজার লোকে জানতে পারে। তাদের কোন ধারণাই ছিলনা যে এর মধ্যে কয়েকশ বছর পার হয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় সে জালেম রাজার মৃত্যু হয়েছিল এবং সে সময় যে রাজা ছিলেন তিনি বিশুদ্ধ আকীদায় বিশ্বাসী একজন ভাল লোক ছিলেন।
সেই ব্যক্তি দোকানে গিয়ে যখন ৩০০ বছর আগের মুদ্রা দিল, দোকানী বুঝতে পারল। এবং আস্তে আস্তে সব প্রকাশ হয়ে পড়ল। তারা যে ৩০৯ বছর ঘুমিযে ছিল তারা বুঝতে পারল। নতুন রাজা তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিয়ে ডেকে নেন।
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে এ ঘটনা Seven Sleeper’s নামে প্রসিদ্ধ। বিখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গীবন ‘রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন’ নামক গ্রন্থে লিখেন, সেই রাজার নাম ছিল ‘ডোসিস’। সে হযরত ঈসা (আঃ) এর অনুসারীদের উপর কঠিন অত্যাচার চালাত। এ ঘটনাটি ঘটেছিল তুরস্কের ‘আফসুস’ নামক শহরে। যে ন্যায়পরায়ণ রাজার আমলে তাদের ঘুম ভেঙ্গেছিল তার নাম থিওডোসিস’। মুসলিম ঐতিহাসিকরা এ ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তা গীবনের বর্ণনার কাছাকাছি। তারা জালেম রাজার নাম উল্লেখ করেছেন ‘দিকয়ানুস’ বলে।
পবিত্র কুরআনের রীতি হল কোন ঘটনার শিক্ষণীয় অংশটুকু বর্ণনা করা। বাকী খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে সে কিছু বলে না। তাই আমাদেরও মনে রাখতে হবে এসব খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কুরআনে যতটুকু বলেছে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে তাদের গুহার সাথে সাথে রাকীমবাসী বলা হল কেন? এটা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলছেন রাকীম হচ্ছে গুহা যে উপত্যাকায় আছে তার নাম। আবার কেউ বলছেন ‘রাকীম’ হচ্ছে ফলকলিপি। যুবকরা মারা যাবার পর তাদের নাম ও পরিচয় তাতে লিখে রাখা হয়েছিল। তাই তাদের ‘আসহাবুর রাকীম’ ও বলা হয়। আবার কেউ মনে করেন যুবকরা যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল সে গুহার নাম রাকীম। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহতায়ালা ভাল জানেন।
৯ নং আয়াতে মহানবী (সঃ)কে যারা যুবকদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল তারা এ কথাও বলেছিল ঘটনাটি আশ্চর্যজনক। এ আয়াতে আল্লাহ সে কথারই পুনরাবৃত্তি করে বলছেন আল্লাহ অসীম কুদরত ও ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর কুদরতের কাছে এ ঘটনা অতি বিষ্ময়কর কিছু নয়। তার কুদরত অগণিত।
আসহাবে কাহাফের ৩টি কারামত:
1. খাবার ছাড়াই দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকা।
2. তারা ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু তাদের দেখে মনে হত তারা জেগে আছে।
3. সৎসংসর্গের বরকতে কুকুরের সম্মান বৃদ্ধি করা।
১০ নং আয়াত - প্রার্থনা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------
১০ নং আয়াত: যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, হে আমাদের রব! আপনি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন। (রাব্বানা আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাও ওয়া হায়ি্লানা মিন আমরনিা রশাদা। )
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
- পথ প্রদর্শন ও সাহায্য।
- রিযিক ও মাগফিরাত।
- শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা
১১ নং আয়াত- গুহাবাসীদের কাহিনীর সূচনা।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------
১১নং আয়াত: অতঃপর আমরা তাদেরকে গুহায় কত বছর তাদের কানে ঘুমের পর্দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় রালাম।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------
- কর্ণকুহর বন্ধ করা। সাধারণত অচেতন নিদ্রায় এটা ব্যবহার হয়। সাধারণত দেখা যায় ঘুম আসলে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গভীর ঘুম আসলে অচেতন নিদ্রা কানকেও বন্ধ করে দেয়। যখন জাগরণ ঘটে তখন আগে কান সক্রিয় হয়।
- কানে চাপড় মারা’ এটা একটি আরবী প্রবচন। এর অর্থ গভীর নিদ্রা চাপিয়ে দেয়া।
- তাদের এমনভাবে ঘুম পাড়ানো হয় যে কোন শব্দই জাগরিত করতে পারে নি।
১২ নং আয়াত-
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------
১২ নং আয়াত: পরে আমি তাদেরকে জাগরিত করলাম এই জানাবার জন্য যে, দুই দলের মধ্যে কোনটি তাদের অবস্থানকাল সঠিকভাবে নিণয় করতে পারে।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------
- এখানে তারা কত বছর ঘুমিয়ে ছিল তা নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়।
- আবার কেউ মনে করেন রসুল (সঃ) আমলে মুমিন ও কাফেরদের মাঝে এ নিয়ে তর্ক হচ্ছিল।