সূরা কাহফ । ভূমিকা
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু
সূরা কাহফ।
কাহফ হচ্ছে গর্ত বা গুহা। এই সূরা মানব জীবনের অনেক গর্ত সম্পর্কে কিছু তথ্য দিবে। এই সূরাতে গর্তবাসীদের কথা বলা হয়েছে কিন্তু আমাদের জীবনে অনেক গর্ত আছে। যে গর্তগুলির কথা এই সূরাতে মহান আল্লাহ ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমাদের তা জানা দরকার যাতে আমরা সে সব গর্তে না পড়ি।
এই সূরায় গর্তে আশ্রয় নিয়ে একদল বেঁচেছেন। আমরা একদিকে গর্তে আশ্রয় নিয়ে যেমন বাঁচতে পারি তেমনি আবার আরেক দিকে ধ্বংস হয়ে যেতে পারি।
এই সূরার একটি সমীকরণ আছে।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন যখন দজ্জাল আসবে তখন তারাই বাঁচতে পারবে যারা এই গুহাবাসীদের মতন জীবন যাপন করেছেন। দজ্জালের ফেতনা হতে নিজেদের রক্ষা করে চলা।
এই একটি মাত্র সূরা যাকে রসুল (সঃ) শেষ জামানার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।
এই দজ্জালের ফিতনা কি?
দজ্জাল আমাদের চারভাবে ফিতনায় ফেলবে।
সমাজের ফিতনা যেখানে ধর্মবিশ্বাস টিকিয়ে রাখা যায় না। এমন এমন জিনিস ঘটাবে যে মানুষ ইমান হারাবে।
সম্পদের ফিতনা, যা দিয়ে মানুষ নিজেকে সর্বাধিকারী মনে করে। তার এত সম্পদ থাকবে যে সম্পদ দিয়ে সে যা খুশী তাই করতে পারবে। তা দিয়ে এমন কোন কাজ নেই যে সে মানুষকে দিয়ে করাতে পারবে না।
জ্ঞানের ফিতনা, যা দিয়ে মানুষ অহংকার করে।সে সব জান্তা হবে। তার জ্ঞান দেখে মানুষ ফেতনায় পড়ে যাবে। ক্ষমতার ফিতনা যা দিয়ে মানুষ অন্যের উপর যুলুম করে।
ক্ষমতার ফিতনা যা দিয়ে মানুষ অন্যের উপর যুলুম করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহফে চারটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দজ্জাল কিভাবে আমাদের ফিতনায় ফেলবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সূরাটি পড়ে এর প্রজ্ঞা ও শিক্ষা নিয়ে আমাদের ফিতনা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।
শানে নজুল:
কাফুর শব্দ অর্থ গুহা, গর্ত। ইমান রক্ষা করার জন্য কতিপয় যুবক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কুরান মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে আসহাবে কাহফ বা গুহাবাসী তরুণ বলা হয়। নবী (সঃ) যখন মক্কায় দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তাঁর দাওয়াতে বিঘ্নটা শুরু করার জন্য মক্কার কাফেররা এহেন কোন প্রচেষ্টা ছিল না যা তারা করেন নি। সমস্ত প্রচেষ্টাতে তারা ব্যর্থ হয়ে সর্ব শেষে মক্কার বড় বড় নেতারা যেমন আবু জেহেল, উতবা, ওয়আলিদ ইবনে মুগীরা, এরকম নামকরা কাফের নেতারা একসাথে মিটিংয়ে বসল, মোহাম্মদ সত্যকারের নবী কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। রসুলে করিমের নবুয়্যতকে যাচাই এবং বাছাইয়ের জন্য পরামর্শ সভায় বসল। তারা বলল মুহাম্মদ (সঃ)যা বলছেন তা আমরা বিশ্বাস করিনা। কিন্তু তিনি সত্যকার অর্থে নবী কিনা তা প্রমাণের জন্য ৩টি প্রশ্ন করা হোক। যদি তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তবে বোঝা যাবে তিনি সত্যিকার নবী।
প্রথম প্রশ্ন: কোন এক কালে একদল যুবক শির্ক থেকে মুক্তি লাভের লক্ষ্যে জন্মভূমি ত্যাগ করে একটি পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করে তাদের ঘটনা বলুন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: সে ব্যক্তির ঘটনা যে উদয়াচল থেকে অস্তাচল পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিল।
তৃতীয় প্রশ্ন: রূহের স্বরূপ কি? [ এ প্রশ্নের উত্তর সূরা বনী ঈসরাঈলের ৮৫ নং আয়াতে দেয়া হয়েছে। উত্তরে ততটুকুই বলা হয়েছে যতটুকু মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব। রূহ সরাসরি আল্লাহর আদেশ দ্বারা সৃষ্ট। মানুষের দেহ ও অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর বেলায় তা লক্ষ্য করা যায়। তাদের সৃষ্টিতে বাহ্যিক আসবাব উপকরণের ভূমিকা আছে। যেমন – নর ও নারীর মিলনে বাচ্চা জন্ম নেয়। কিন্তু রূহের সৃষ্টিতে কোন কিছুর ভূমিকা মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। এটা সরাসরি আল্লাহর হুকুমে অস্তিত্ব লাভ করে। রুহ সম্পর্কে এর চাইতে বেশী মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। ]
সূরা টি শূরু হয়েছে। “ ১ম আয়াত: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর নামে যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাজিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেনি।
২য় : একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে – যারা সৎ কর্ম সম্পাদন করে – তদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে।”
আল্লাহ রসুলের মধ্যে সম্পর্ক একজন হচ্ছে রব আরেকজন আবদ । আল্লাহ স্রষ্টা আর মুহাম্মদ (সঃ) সৃষ্টি। একজন মনিব আরেকজন তার গোলাম। আল্লাহ তায়ালা প্রথম আযাতে এই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। এই সূরাটি শেষও হয়েছে : শেষ আয়াত এরশাদ করেছেন:
“ হে নবী আপনি বলে দিন আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ, তবে আমার উপর ওহী নাযিল হয়, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব তোমাদের মাঝে যদি কেউ মালিকের সাক্ষাত্ কামনা করে , সে যেন হামেশা নেক আমল করে , সে যেন কখনো তার মালিকের এবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।”
আল্লাহ নবীকে আদেশ করলেন, বলে দিন আমি তোমাদের মত রক্ত মাংসের মানুষ। সাধারণ মানুষের সাথে একটি পার্থক্য যে ওহী আমাদের কাছে আসে, এটা পাঠান আমাদের সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’।
এখানে নির্দেশ করছে আল্লাহ সুবহানুতায়ালার সাথে মানুষের সম্পর্ক কি? রসুলের সাথে সম্পর্ক কি?
রসুলের সাথে যেমন রব ও বান্দার আমাদের সাথেও একই সম্পর্ক।
এর আগের সূরা হচ্ছে “বনী ইসরাইল” ।
সূরাটি শুরু হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মহাবিশ্ব সফরে তাঁকে নিয়ে যান। আকাশ ভ্রমণে এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আল্লাহ নিয়ে গেলেন। আল্লাহ বলছেন তাঁর বান্দাকে, তার দাসকে তিনি নিয়ে গেলেন সাক্ষাতে। কিভাবে নিয়েছেন তার বর্ণনা আল্লাহ দিলেন। এখানেও রসুল (সঃ) ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বলা হয়েছে। এই সূরাও শেষ হয়েছে নবী আপনি বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি। তার রাজত্বে কোন শরীক নেই, অংশী নেই। তিনি একাই রাজত্ব করেন। তিনি একক। তিনিই মালিক এবং সবকিছু তাঁর সৃষ্টি। সবকিছু তার অনুগত। সবকিছুর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক মালিকের এবং গোলামের।
সূরাটি শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে একই বিষয় দিয়ে।
এর পরের সূরা মরিয়ম। মরিয়ম (আঃ) কে নিয়ে এই সূরা। খ্রীষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ)কে আল্লাহর পুত্র মনে করল। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে এক বায়োলজিক্যাল সম্পর্ক বানিয়ে ফেলল। অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা পরপর তিনটি সূরায় আল্লাহ পরিষ্কার বলে দিলেন আল্লাহর সাথে সবকিছু কিভাবে সম্পর্কিত। স্রষ্টা ও সৃষ্টির। মনিব ও গোলাম। রব এবং আবদের।
সূরা কাহফের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আল্লাহ এক। তার এবাদত করতে হবে । তার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। আপনার যত কিছুই থাকুক না কেন আপনি আল্লাহ সুবহানাতায়ালার একজন দাস ছাড়া আর কেউ নয়। আপনি একজন সাধারণ গোলাম। গোটা সূরাতে একই কথা বা হয়েছে।
এই সূরাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে গুহাবাসীদের বর্ণনা করা আছে। এটাই হচ্ছে এই সূরার ফোকাল পয়েণ্ট। সে জন্য এ সূরার নাম সূরাতুল আল কাহফ।
নবম আয়াত থেকে শুরু করে ২৬ আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মোট ১৮টি আয়াত।
তাদের নাম, বয়স ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করে লাভ নেই। তারা কিভাবে তাদের ঈমান রক্ষা করেছে সেটাই হল মূল বিষয়বস্তু। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। যা আল্লাহ কুরাআনে সংরক্ষণ করেছেন। আপনাদের জীবনে কিন্তু একই ঘটনা ঘটতে পারে। আপনাকে নিজেকে ঐ ঈমানদার বান্দাদের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
ফজিলত:
এই সূরার ফজিলত সম্পর্কে বলা আছে কেউ যদি কাহফের ১ম ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্থ করে তবে দজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে।
দজ্জাল আর শয়তান কোথায়? এটাকেই আমাদের পিন পয়েণ্ট করতে হবে। রসুল (সঃ) এর আমলেতো আসেনি। এখনো আমাদের সামনে আসে নি। আমাদের এই কাহফ থেকে জানতে হবে যাতে আমরা এই ফেতনা হতে রক্ষা পেতে পারি।
প্রতি শুক্রবার পড়লে ৩টি ঘটনা ঘটবে। ৩টি ঘটনা এই সূরা থেকে প্রমাণিত।
- যে শুক্রবার পড়লেন সে সময় থেকে পরের জুমা পর্যন্ত তাকে আল্লাহ আলোকিত হরে দিবেন।
- বিচারের দিন তিনি যেখানে অবস্থান করবেন সেখান থেকে মক্কার বায়তুল্লাহ পর্যস্ত আলোকিত করে দিবেন। আপনি অন্ধকার দেখবেন না।
- কেয়ামত যেহেতু দজ্জালকে কেন্দ্র করে হবে আল্লাহ আপনার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা ঠিক করে রাখবেন।
- যে পড়বে তার থেকে আসমান পর্যন্ত আলোকিত করে দিবেন।
অর্থ্যত্ সূরা কাহাফ আমাদের জন্য আলোক বর্তিকা নিয়ে আসে। আমাদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে।
এ সম্পর্কিত হাদিীস:
বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন একটি লোক সূরা কাহফ পাঠ করছিল। হঠাৎ সে দেখতে পেল তার ঘোড়াটি লাফাচ্ছে । আর আকাশে দেখতে পেল মেঘমালার এক টুকরা।
সে আল্লাহর রসুলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে রসুল (সঃ) বললেন এটা হল বিশেষ প্রশান্তি যা কুরআনের সাথে নাযিল হয়েছে। চারিদিকে প্রাণের সঞ্চার হয় যখন কুরআন পড়া হয়।
যার মধ্যে কুরআন নেই সে মৃত আর যার মাঝে কুরআন আছে সে জীবিত।
এই সূরাটি মক্কী সূরা। আয়াত ১১০টি এবং রুকু ১২ টি।
৫ টি অধ্যায় ভাগ করা যায়।
১ম অধ্যায়ঃ গুহাবাসী যুবক বা আসহাবে কাহফের কাহিনী।
আল্লাহর প্রশংসা, মুমিনদের সুসংবাদ দান, আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উক্তিকারিদেরকে ভীতি প্রদর্শন, পৃথিবীর সাজসজ্জার সামগ্রীকে মানুষের পরীক্ষার সরঞ্জাম, শেষ পরিণতি অর্থাৎ কেয়ামতের ধ্বংস, আসহাবে কাহফের অর্থাৎ গুহাবাসী যুবকদের ঘটনার বিবরণ। এই কাহিনীর মাধ্যমে পার্থিব জাঁকজমক ও ভোগ বিলাসের উপর ইমানের গুরুত্ব দেয়ার ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
প্রথম ঘটনায় আল্লাহ বুঝিযে দিচ্ছেন যে ইমান রক্ষার জন্য দোয়া করতে হবে।প্রয়োজন যদি হয় তবে সব ছেঁড়ে ছুড়ে দূরে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে সবচেযে আগে ইমান।এই ইমান রক্ষা করতে গেলে সঙ্গী-সাথীর গুরুত্ব অপরিসীম।তারা যদি একই মতাবলম্বি হয় তারা যেমন নিজে সচেতন তেমনি সাথীদের সাহায্য করে।একা একা থেকে ইমানের যুদ্ধে পরাজিত না হয়ে এভাবে সাথীদের সাথে থেকে অশুভ শক্তির সাথে যুদ্ধ করে নিজের বিশ্বাস ও কর্মের সংরক্ষণ করা উচিত
আসহাবে কাহফ:
এমন যুবকদের কাহিনী যারা আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ইমান এবং আত্মসমর্পণ করেছিল।শিরক করা থেকে তারা বিরত ছিল।যে রাজ্যে তার বাস করত তার অধিবাসী এবং বাদশাহ মূর্তিপূজা করত এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করত।তাঁরা আল্লাহর তাওহীদে আস্থা রেখে সে দেশ থকে পলায়ন করে এবং গুহাতে আশ্রয় নেয়।আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেন এবং সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করেন।৩০৯ বছর পরে তারা ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং সে দেশের অধিবাসীকে ইমানদার হিসাবে পান।
শিক্ষা: ঈমান ও বিশ্বাসের পরীক্ষা।
শিক্ষা:
· নিজ বিম্বাস-কর্মের সংরক্ষণে সদা তত্পর থাকা এবং সে সাথে আল্লাহর রহমত ও আশ্রয় প্রার্থনা করা
· পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হোক না কেন, যারা নেক কাজ করেন আল্লাহ তাদের রক্ষা করে থাকেন।
· আল্লাহতায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের সব সময় হেফাজত করে।
· তরুণদের ইবাদত আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণীয়। এখানে তরুণদের ‘ফিতইয়াহ’বা তরুণ বালক বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই শব্দটি “ফিতইয়াহ” ২ বার ব্যবহার করা হয়েছে।
· অন্ধের মতো গতানুগতিক ধারা অনুসরণ না তারা।
· প্রত্যেক সংস্কৃতিতে ও সমাজে প্রচলিত কতগুলি মূল্যবোধ, আচরণ বিধি থাকে। এই গুহাবাসী যুবকেরা
· আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাথে সদয় আচরণ করেন।
দ্বীতিয় অধ্যায়ঃ বাগানের মালিক বা দুটি বাগানের কাহিনী।
নবী সঃ) কে মহান আল্লাহ ধৈর্য সহকারে মুমিনদের সাথে অবস্থান করতে বলেছেন। এছাড়া মুমিনদের মধ্যে ইমানের গৌরববোধ কত জোড়াল ছিল এবং তাঁর মুকাবিলায় দুনিয়ার সম্পদ কত মূল্যহীন ছিল তা দুই বাগান মালিকের উদাহরণ দিয়ে বোঝান হয়েছে। আসল ও চিরস্থায়ী মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
দুই বাগানের মালিকের সম্পদের গল্প:
গল্পটি এমন ব্যক্তির যার দুটি সুন্দর বাগান ছিল, যাতে প্রচুর ফল উত্পাদিত যা বিক্রয় করে সে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়।এ কারণে তার মধ্যে অহংকার ও দাম্ভিকতা এসে যায় এবং তার বন্ধুকে বলে , “আমি তোমার থেকে উত্তম কারণ তোমার থেকে আমার বেশী সম্পদ, কর্মচারী ও সন্তান রয়েছে। (১৮:৩৪)
লোকটি অহংকারবশত আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়।আল্লাহ তার বাগানগুলোকে ধ্বংস করে দেন।
বাগান ওয়ালার ঘটনা:
আল্লাহ এক লোককে অনুগ্রহ করে প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ দুটি ফলের বাগান দান করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আল্লাহর নেয়ামত সে ভুলে গিয়ে অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ল।
এমনকি আখেরাত সম্পর্কে সে সন্দিহান হয়ে যায়। আল্লাহ তার বাগান ধ্বংস করে দেন। সে তওবা করেছিল পরবর্তীতে কিন্তু মহান আল্লাহ তা আর গ্রহণ করেন নি।
শিক্ষাণীয়: সম্পদ দানের মাধ্যমে পরীক্ষা।
যারা দুনিযা ও তার চাকচিক্যের মোহে পড়ে আল্লহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায় তাদের মনে রাখা উচিত আল্লাহ ইচ্ছা করলে সব কিছু কেড়ে নিতে পারেন
· অহংকার পতনের মূল কারণ।
· আমাদের যা আছে তা সবই আল্লাহর ক্ষমা ও পুরষ্কারের ফসল।
· দুঃখ দুর্দশায় লুকিয়ে থাকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ রহমতসমূহ।
আবার অনেক আলেম মনে করেন যে সম্ভবত আরাম আয়েশ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন; কারণ এটা জানার জন্য মানুষ আরাম আয়েশে থেকে আল্লাহকে ভুলে যায় কিনা
তৃতীয় অধ্যায় : ইবলিস ও আদমের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
কেয়ামতের কিছু দৃশ্য, আদম ও ইবলিসের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, জালেমদের ধ্বংস করার জন্য আল্লাহর অনুসৃত নীতি এবং সে সাথে এটাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে আল্লাহ পাপীদের উপর যথেষ্ট দয়ালুতাদের সংশোধিত হবার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেন।
সূরা কাহফের মাঝামাঝি এসে আল্লাহ আদম (আঃ) ও ইবলিশের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।আমাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন এই বলে ইবলীস অহংকার করাতে তার পতন এবং মানুষের শত্রুতে পরিণত হয়
এখন পশ্ন হতে পারে সূরা কাহফ আর দজ্জালের সাথে সম্পর্কটা কোথায়?
কিয়ামত সংগঠিত হবার আগে দজ্জাল ৪টি পরীক্ষা ও ৪টি কথা নিয়ে হাজির হবে।
৪টি পরীক্ষা হচ্ছে:
৪টি কাহিনী থেকে যে শিক্ষা আমরা পেলাম তা হচ্ছে আমাদের নিম্নলিখিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
· দীন ও ধর্ম বিষয়ক পরীক্ষা।
· সম্পদের উপর পরীক্ষা।
· জ্ঞানের উপর পরীক্ষা।
· ক্ষমতার উপর পরীক্ষা।
সূরা কাহাফ ও দজ্জালের সাথে কি সম্পর্ক:
· সে মানুষকে আদেশ করবে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করতে।আল্লাহকে রেখে দজ্জালের উপাসনা করতে- এটা ঈমানের উপর পরীক্ষা।
তাকে বৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে মানুষকে সম্পদ দিয়ে লোভ দেখাবে।
অর্থ্যাত্ দজ্জালকে বৃষ্টি বর্ষণ করার ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে তার সম্পদ দ্বারা মানুষকে লোভ দেখাবেএটা সম্পদের পরীক্ষা।
· সে মানুষকে তার জ্ঞানের বিশালতা দেখাবে । দজ্জাল আশ্চর্য সব খবর দিবে এবং জ্ঞানের কথা বলব এটা জ্ঞানের পরীক্ষা
· সে পৃথিবীর এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে দজ্জাল পৃথিবীর অনেক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ক্ষমতার দাপট দেখাবে। এটা ক্ষমতার পরীক্ষা।
দজ্জালের এই কঠিন পরীক্ষা হতে উত্তীর্ণ হতে এবং যে সকল উপায় উপকরণের প্রয়োজন তা সূরা কাহফে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন
এই ৪টি পরীক্ষা থেকে বাঁচার উপায়
১ম পরীক্ষা :
সৎ সঙ্গী (২৮)। দীন বিষয়ক ফেতনা থেকে বাঁচারউপায় হল নেককারদের সান্নিধ্য ও আখেরাতের স্মরণ।
২য়:পরীক্বষা
দুনিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা।(৪০)
দুনিয়ার হকিকত উপলব্ধি করা ও আখেরাতের স্মরণ।
৩য়: পরীক্ষা
আল্লাহর অনুগত (৬৯)
জ্ঞান বিষয়ক ফিতনা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হলো বিনয় ও ইলমের ব্যাপারে অহংকার না থাকা।
৪র্থ পরীক্ষা
ইবাদতে আন্তরিক। (১১০)
ক্ষমতা বিষয়ক ফেতনা হতে রক্ষা পাবার উপায় হলো , একমাত্র আল্লাহর জন্য আমল করা ও আখেরাতকে স্মরণ করা
চতুর্থ অধ্যায়: হযরত মুসার (আঃ)ও জনৈক সৎ ব্যক্তি ঘটনা।
মূলত: নবী মুসা (আঃ) এর ভ্রমণ সংক্রান্ত শিক্ষা সমূহ।
· শিক্ষা গ্রহণে নম্রতা কাম্য
· ধার্মিক ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকা।
· আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশ এমনভাবে বাস্তবায়িত হয় যে তা মানুষের বোধগম্য নয়।
হাদীস:
রসুল (সঃ) বলেছেন: একদিন মূসা (আঃ) বনী ঈসরাঈলীদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিল। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে? তিনি জবাব দিলেন : আমি।
মহান আল্লাহ এ কথাটি পছন্দ হয় নি। তিনি মূসা (আঃ)কে জানিয়ে দিলেন তিনি তাকে সব জ্ঞানের অধিকারী বানান নি। “দুই সাগরের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা আছে সে তোমার চাইতে বেশী জ্ঞানী।“
খিজির অর্থ চিরসবুজ।
মূসা (আঃ) তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বুঝতে পারেন আল্রাহ যাকে খুশী তাকে জ্ঞান দান করেন।
শিক্ষা:
· যেহেতু সকল জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তাই কারো জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়।
· খিজির (আঃ) বলেছেন, “আমি আমার ইচ্ছায কিছু করিনি।“ (১৮:৮২)
পঞ্চম অধ্যায় : জুলকারনাইনের ন্যায়পরায়ণতা ও খোদাভীরুতা।
ন্যায়পরায়ণ বাদশা জুলকারনাইনের গল্প:
তিনি পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সফর করেন।তাঁর শেষ সফরে তিনি দুই পাহাড়ের মাঝে এক জনবসতি খুঁজে পেলেন যাদের উপর ইয়াজুজ ও মাজুজ নামে দুইজন অত্যাচার করত।তিনি একটি প্রাচীর তৈরি করে দিয়ে জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করেন।
· জুলকারনাইন তাঁর কাজ নিয়ে গর্ব করেন নি। পবিত্র কুরানে কার ভাষণ “সে বলল:, এগুলো আমার মালিকের অনুগ্রহ কিন্তু যখন আমার মালিকের নির্ধারিত সময় আসবে তিনি এগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ করে মাটিতে মিশিয়ে দিবেন, আর আমার প্রভুর ওয়াদাই চূড়ান্ত সত্য। (১৮:৯৮)
· মানুষকে মাছ ধরা শিখিয়ে দাও, তাকে মাছ দিও না।
· কখনো আল্লাহকে ভুলোনা।
· সত্ কাজ সম্পাদন করা হতে বিরত না থাকা।
· আরাম আয়েশে না থেকে যতটা সম্ভব ভাল কাজে ব্যস্ত থাকা।
উপসংহারঃ
মোমেনদের সুসংবাদ দান, কাফেরদেরকে ভীতি প্রদর্শন, অহির সত্যতা প্রতিপাদন এবং আল্লাহকে শেরেক থেকে পবিত্র ঘোষণা।
‘ইনশাল্লাহ’: এ শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত। আমারা মনের অজান্তে অনেক সময় এ কথাটি বলি। এর মাধ্যমে আমাদের যে কত সওয়াব হয় তা আমরা জানি না। এর অর্থ হচ্ছে “আল্লাহ যদি চান”।।আমরা চাইলেই হবে না। কারণ বান্দা হিসাবে আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা আল্লাহর।প্রতিটি মুসলমানকে এই বোধ থাকতে হবে আল্লাহ সর্বশক্তিমান। পরাক্রমশালী।তিনি না চাইলে কিছু হবে না।এই বোধ থেকেই একজন মুসলমান যখন যখন কোন কাজের কথা বলে অথবা ভবিষ্যতবাণী করে তখন এর সাথে আল্লাহর চাওয়াকে যুক্ত করে দেয়তার বিশ্বাস আল্লাহ তা বাস্তবায়নে সাহায্য করবেন।সে সাথে সে আরো বিশ্বাস করে যদি এর মধ্যে বান্দার মংগল না থাকে তবে আল্লাহ তা বাস্তবায়ন নাও করতে পারেতবে কাজ হোক না হোক ইনশাল্লাহ বলার দরুণ সওয়াবের ভাগীদার অবশ্যই হবে।
ইনশাল্লাহ বলার শিক্ষা মহান আল্রাহ পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন।
সূরা তাকভীরে আল্লাহ এরশাদ করেছেন” তোমরা ইচ্ছা করবে না (তোমাদের ইচ্ছা বাস্তবে রূপ নিবে না) যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক”।
এটা একটা জিকিরও বটে। আল্লাহকে স্মরণ করা হচ্ছে এর ফলে আল্লাহ খুশী হন।