সূরা ইউনুস। রুকু ৯। হযরত মূসা (আঃ)এর বিরোধিতার অবসান।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সূরা ইউনূস: রুকু ৯
আয়াত ৮৩ -৯২।
হযরত মূসা (আঃ) বিরোধিতার অবসান।
৮৮ ও ৮৯ নং আয়াত::হযরত মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া।
-------------------------------------------------------------------------
(৮৮) মূসা বলিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো ফিরআউন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ যদ্বারা, হে আমাদের প্রতিপালক! উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, উহারা তো মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।'
-------------------------------------------------------------------------
(৮৯) তিনি বলিলেন, 'তোমাদের দুইজনের দু'আ কবুল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করিও না।"
-------------------------------------------------------------------------
মূসা (আঃ) বহুদিন ধরে ফেরাউনকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয়া সত্বেও তারা তা গ্রহণতো করেইনি উপরন্ত অত্যাচার ও উত্পীড়নের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।
মূসা (আঃ) অনুভব করেন ফিরআউন ও তার দলবলের মধ্যে কল্যাণের কোন লেশ নেই।
তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করতে করতে নিরাশ হয়ে যান।
তাই তিনি তাদের কুফরের কারণে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করেন।
তিনি আল্লাহর কাছে চান যে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ তাদেরকে দেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে নিতে।
কারণ পার্থিব সম্পদ ও ভোগ বিলাস মানুষকে পথভ্রষ্ট করে দেয়।
কারণ তারা মনে করে তাদের সম্পদ তাদের শক্তির উৎস।
গুনাহগারদের পার্থিব আড়ম্বর সাধারণ মানুষকে বিপথে চালিত করে।
মহান আল্লাহ মূসা ও হারূনের দোয়া কবুল করেন।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করার দোয়া কুফর নয়।
আল্লাহর পথে স্থির থাকতে বলেন এবং নির্বোধের পথ অনুসরণ করতে নিষেধ করেন।
এখান থেকে শিক্ষণীয় একমাত্র ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে আল্লাহর অনুগ্রহভাজন ঠিক করা যায় না। আল্লাহর অবাধ্য এবং সত্য বিমুখ অনেক লোককে আল্লাহ অনেক জাগতিক সম্পদ দান করেন।
দ্বিতীয়ত হল যারা যারা সমাজের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার ও উত্পীড়ন করে, তাদের সতর্ক করার পরও যদি তারা সংশোধিত না হয় ঈমানদাররা তাদের হাত থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করতে পারে। ঈমানদাররা তাদের দোয়ায় দৃঢ় ও অবিচল থাকলে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।
৯০ - ৯২ নং আয়াত: মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া বাস্তবায়ন।
-------------------------------------------------------------------------
(৯০) আমি বনী ঈসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফিরআউন ও তাঁহার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত সহকারে সীমালংঘন করিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল তখন বলিল, ;আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ঈসরাঈল যাহাতে বিশ্বাস করে।নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভূক্ত' ।
-------------------------------------------------------------------------
(৯১) এখনো! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করিয়াছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তভূর্ক্ত ছিলে।
-------------------------------------------------------------------------
(৯২) 'আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হইয়া থাক। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল।
-------------------------------------------------------------------------
ফিরাউন ও তার দলবল মূসা (আঃ) ও তার অনুসারীদের হত্যার জন্য অনুসরণ করে।
মহান আল্লাহ নীল নদের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দেন।
মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হয়ে যায় ।
ফিরাউন ও তার দলবল পার হতে গেলে চারিদিক থেকে পানি এসে নিমজ্জিত করে ফেলে এবং তাদের মৃত্যু হয়।
ডুবে যাবার সময় ফিরাউন ঈমান আনে কিন্তু আল্লাহ তা গ্রহণ করেন নি।
মহান আল্লাহ ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ ফেরআউনের দেহ সংরক্ষণ করেন।
এখানে শিক্ষণীয় হচ্ছে জেনুইন বদদোয়া আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়।
ন্যায়ের সীমালংঘন মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না।
অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত।
মৃত্যুর ফেরেশতা হাজির হবার পর তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করেরন না।
আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দকে কখনো নিঃসাড় অবস্থায় ছেড়ে দেন না।