সূরা ইউনুস। রুকু ৯। হযরত মূসা (আঃ)এর বিরোধিতার অবসান।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 
সূরা ইউনূস: রুকু ৯ 
আয়াত ৮৩ -৯২। 
হযরত মূসা (আঃ) বিরোধিতার অবসান। 

৮৩ নং আয়াত: হযরত মূসা (আঃ) এর উপর যে অল্প সংখ্যক লোক ইমান এনেছিল তাদের বর্ণনা।
 --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৩) ফিরআউন ও তাহার পারিষদবর্গ নির্যাতন করিবে  এই আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের একদল ব্যতীত আর কেহ তাহার প্রতি ঈমান আনে নাই। বস্তুত ফিরআউন ছিল দেশে পরাক্রমশালী এবং সে সীমালংঘনকারীদের অন্তভূ‍র্ক্ত। 
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৪) মূসা বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহতে ঈমান আনিয়া থাক, যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও তবে তোমরা তাঁহারই উপর নির্ভর কর।' 
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৫) অতঃপর তাহারা বলিল, 'আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করিলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করিও না ,  
------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------
(৮৬) 'এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হইতে রক্ষা কর।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অল্প সংখ্যক লোক মূসা (আঃ) এর দ্বীনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল।
বনী ঈসরাঈলীদের সব শ্রেণীর মানুষ এতে একাত্মতা ঘোষণা করেন নি। 
ফেরাউনের ভয়ে তারা মূসা (আঃ) এর আনুগত্য করে নি। 
তারা ভয় পেত ফেরাউন তাদের উপর নির্যাতন করবে। 
ফেরাউনকে ভয় পাবার কারণ ছিল একদিকে সে কর্তৃত্বের অধিকারী। দ্বিতীয়ত সে ছিল অত্যন্ত জালেম ও অত্যাচারী। 
খুব সহজেই সে অত্যারী কঠোর কাজ করতে পারে । তার বিবেক বলতে কিছু ছিল না। 
মূসা (আঃ) ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে আল্লাহর উপর ভরসা করতে আহ্বান জানান। 
কারণ আল্লাহর উপর ভরসা সত্যিকারের ঈমানের পরিচয়। 
ফিরআউনকে তাদের উপর বিজয়ী না করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের জুলুম অত্যাচার হতে রক্ষা পাবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। 
এর আগের উম্মতদের তাদের উপাসনালয়ে নামাজ আদায় করতে হত। 
ফিরআউন তা ধ্বংস করে দেয়।  
 আল্লাহ বনী ঈসরাঈলীদের ঘরের মধ্যে মসজিদ নির্মাণের আদেশ বাড়ীতে নামাজ পড়ত বলেন। 
ফিরআউনের উদ্দেশ্য ছিল যাতে তারা নিজ ধর্মানুযায়ী নামাজ পড়তে না পারে।   
মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 
শিক্ষণীয়: মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলীদের ফেরাউনের কবল মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেন।অল্প সংখ্যক বনীঈসরাঈলী মূসা (আঃ) এর আনুগত্য স্বীকার করে।
ফেরাউনের অত্যাচার এবং উত্‌পীড়ন যখন অসহনীয় ওঠে তখন তিনি তাদের আল্লাহর উপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন।  আর মূসার ঈমানদার অনুসারীরা বিনা প্রশ্নে আল্লাহর উপর নির্ভর করে এবং বিশ্বাস করে যে একমাত্র আল্লাহই তাদের আ্শ্রয়। তারা এও বিশ্বাস করে যে আল্লাহই আমাদের এই অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করবে।
এখান থেকে আমার অনুধাবন কঠিন ও দুঃসময়ে ঈমানদার ব্যক্তিদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছে আল্লাহ। যারা আল্লাহকে ডাকে তাদের ডাকে আল্লাহ সাড়া দেন।যতই বিপদ আসুক না কেন বিচলিত না হয়ে আল্লাহকে ডাকা উচিত।  
৮৭ নং আয়াত: বনী ঈসরাঈলীদের বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ। 
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৭) আমি মূসা ও তাহার ভ্রাতাকে প্রত্যাদেশ করিলাম, 'মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন কর এবং তোমাদের গৃহগুলিকে 'ইবাদতগৃহ কর, সালাত কায়েম কর এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও।' 
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মূসা (আঃ) ও তার ভাইকে বনীঈসরাঈলীদের পুনর্বাসনের জন্য মিশরে তাদের জন্য গৃহ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। 
ঐক্যবদ্ধ সামাজিক জীবন যাপনের জন্য একই অঞ্চলে পাশাপাশি এবং সামনা সামনি করে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। 
তাদের কিবলামুখী হতে বলা হয়।
তাদের নিজেদের গৃহে সালাত প্রতিষ্ঠা  করতে বলা হয়। 
তাদের বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণের জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়। 


৮৮ ও ৮৯ নং আয়াত::হযরত মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া। 

-------------------------------------------------------------------------

(৮৮) মূসা বলিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো ফিরআউন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ যদ্বারা, হে আমাদের প্রতিপালক! উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, উহারা তো মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।' 

-------------------------------------------------------------------------

(৮৯) তিনি বলিলেন, 'তোমাদের দুইজনের দু'আ কবুল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ  অনুসরণ করিও না।" 

-------------------------------------------------------------------------

  • মূসা (আঃ) বহুদিন ধরে ফেরাউনকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয়া সত্বেও তারা তা গ্রহণতো করেইনি উপরন্ত অত্যাচার ও উত্‌পীড়নের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। 

  • মূসা (আঃ) অনুভব করেন ফিরআউন ও তার দলবলের মধ্যে কল্যাণের কোন লেশ নেই। 

  • তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করতে করতে নিরাশ হয়ে যান।  

  • তাই তিনি তাদের কুফরের কারণে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করেন। 

  • তিনি আল্লাহর কাছে চান যে পার্থিব জীবনের শোভা ও সম্পদ তাদেরকে দেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে নিতে। 

  • কারণ পার্থিব সম্পদ ও ভোগ বিলাস মানুষকে  পথভ্রষ্ট করে দেয়। 

  • কারণ তারা মনে করে তাদের সম্পদ তাদের শক্তির উৎস। 

  • গুনাহগারদের পার্থিব আড়ম্বর সাধারণ মানুষকে বিপথে চালিত করে। 

  • মহান আল্লাহ মূসা ও হারূনের দোয়া কবুল করেন।

  • এই আয়াত থেকে বোঝা যায় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করার দোয়া কুফর নয়। 

  • আল্লাহর পথে স্থির থাকতে বলেন এবং নির্বোধের পথ অনুসরণ করতে নিষেধ করেন।  


এখান থেকে শিক্ষণীয় একমাত্র ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে আল্লাহর অনুগ্রহভাজন ঠিক করা যায় না। আল্লাহর অবাধ্য এবং সত্য বিমুখ অনেক লোককে আল্লাহ অনেক জাগতিক সম্পদ দান করেন।  

দ্বিতীয়ত হল যারা যারা সমাজের সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার ও উত্‌পীড়ন করে, তাদের সতর্ক করার পরও যদি তারা সংশোধিত না হয় ঈমানদাররা তাদের হাত থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করতে পারে। ঈমানদাররা তাদের দোয়ায় দৃঢ় ও অবিচল থাকলে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।  


৯০ - ৯২ নং আয়াত: মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া বাস্তবায়ন। 

-------------------------------------------------------------------------

(৯০) আমি বনী ঈসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফিরআউন ও তাঁহার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত সহকারে সীমালংঘন করিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল তখন বলিল, ;আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ঈসরাঈল যাহাতে বিশ্বাস করে।নিশ্চয়ই তিনি  ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভূক্ত' ।

-------------------------------------------------------------------------

(৯১) এখনো! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করিয়াছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তভূ‍র্ক্ত ছিলে। 

-------------------------------------------------------------------------

(৯২) 'আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হইয়া থাক।  অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল।

-------------------------------------------------------------------------

  • ফিরাউন ও তার দলবল মূসা (আঃ) ও তার অনুসারীদের হত্যার জন্য অনুসরণ করে। 

  • মহান আল্লাহ নীল নদের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দেন। 

  • মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হয়ে যায় । 

  • ফিরাউন ও তার দলবল পার হতে গেলে চারিদিক থেকে পানি এসে নিমজ্জিত করে ফেলে এবং তাদের মৃত্যু হয়।  

  • ডুবে যাবার সময় ফিরাউন ঈমান আনে কিন্তু আল্লাহ তা গ্রহণ করেন নি। 

  • মহান আল্লাহ ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ ফেরআউনের দেহ সংরক্ষণ করেন।

এখানে শিক্ষণীয় হচ্ছে জেনুইন বদদোয়া আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়।  

ন্যায়ের সীমালংঘন মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। 

অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত। 

মৃত্যুর ফেরেশতা হাজির হবার পর তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করেরন না। 

আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দকে কখনো নিঃসাড়  অবস্থায় ছেড়ে দেন না। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url