সূরা ইউনুস। রুকু ১১। মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা ইউনূস: রুকু - ১১
আয়াত ১০৪-১
মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য
১০৪ নং আয়াত:: মুমিন ব্যক্তিদের কর্তব্য।
-------------------------------------------------------------------------
(১০৪) বল, 'হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দ্বীনের প্রতি সংশয়যুক্ত হও তবে জানিয়া রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাহাদের 'ইবাদত কর আমি উহাদের ইবাদত করি না। পরন্তু আমি ইবাদত করি আল্লাহর যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং আমি মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত হইবার জন্য আদিষ্ট হইয়াছি।
--------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে আদেশ করছেন সব মানুষকে জানিয়ে দিতে যে তাঁর তরীকা এবং মুশরিকদের তরীকা এক নয়।
একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হচ্ছে সত্য দ্বীন।
কারণ তিনি সর্বশক্তিমান, স্বাধীন উপাস্য, সত্য ও ইবাদতের উপযোগী।
যারা সত্য দ্বীন সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে তারা সৃষ্টির ইবাদত করে। যা ইবাদত যোগ্য নয়।
জীবন মৃত্যু তাঁরই হাতে। আল্লাহ যখন ইচ্ছা তখন তোমাদেরকে ধ্বং স করে দিতে পারেন। কারণ মানুষের প্রাণ তাঁরই হাতে আছে।
আল্লাহ মানুষকে আদেশ দান করেছেন বিশ্বাসীদের দলভুক্ত হবার জন্য।
অনুধাবন :
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। সন্দেহাতীত ভাবে তাঁর ইবাদত করতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবন ও মৃত্যু তারই হাতে। প্রতিদিন পূত পবিত্র জীবন যাপনের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছাকে পূরণ করা একজন মোমেনের কর্তব্য।
১০৫ নং আয়াত: একনিষ্ঠভাবে ধর্ম পালন।
--------------------------------------------------------------------------------
(১০৫) আর উহাও এই যে, 'তুমি একনিষ্ঠভাবে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত হও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হইও না।
-------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ এ আদেশ করেন যে, সব ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম অবলম্বন কর।
ইসলাম ধর্ম একনিষ্ঠ ভাবে পালন করতে হবে।
অনুধাবন:
প্রকৃত ভক্তির সাথে আল্লঅহর এবাদত করতে হবে। অবিশ্বাসী হওয়া চলবে না।
১০৬ নং আয়াত::আল্লাহ এক ও একক।
-------------------------------------------------------------------------
(১০৬) 'এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে না, যাহা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না, কারণ ইহা করিলে তখন তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হইবে।
-------------------------------------------------------------------------
একমাত্র উপাস্য আল্লাহ।
একমাত্র তাঁকে ডাকতে হবে।
আল্লাহ ব্যাতীত এমন উপাস্য যারা উপকার বা অপকার কোনটি করতে পারে না তাদের উপাসনা করা যাবে না।
যদি কেউ তা করে তবে সে জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (কোন বস্তুকে তার নিজ স্থান থেকে সরিয়ে দেয়া অন্য স্থানে রাখা জুলুম। যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র সেই উপাসনার যোগ্য। তার স্থান থেকে সরিয়ে অন্য কারো উপাসনা করা অর্থ জুলুম করা। এই জন্য শির্ককে বড় জুলুম বলা হয়। )
অনুধাবন:
কোন সৃষ্টিকে উপাসনা করা যাবে না। কারণ তাদের উপকার বা অপকার করার কোন ক্ষমতা নেই। সৃষ্টিকে স্রষ্টার স্থনে বসিয়ে উপসনা করা হচ্ছে স্রষ্টার হক নষ্ট করা। যা করলে একজন জালিম হয়ে যাবে ।
১০৭ নং আয়াত:: আল্লাহর অনুগ্রহ।
-------------------------------------------------------------------------
(১০৭) এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত ইহা মোচনকারী আর কেহ নাই তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ যদি কাউকে দুঃখ কষ্ট দেন তবে সে ব্যতীত আর কেউ নেই যে সেটা মোচন করবে।
আর যদি কাউকে অনুগ্রহ করতে চান তবে তিনি ব্যতীত আর কেউ নেই তা প্রতিহত করে।
তিনি উপকার ও অপকারের মালিক। সমস্ত সৃষ্টি তাঁরই মুখাপেক্ষী।
তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান।
তিনি স্বীয় বান্দাদের সাথে ভাল ব্যবহ্র করেন যদিও আমলের দিক থেকে তার বান্দা তার অধিকারী নয়।
মানুষের আমল না দেখে তার উপর রহম ও দয়া করে থাকেন।
আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাযল) অপরিসীম।
বান্দাদের উচিত তাঁরই প্রতি আগ্রহ রাখা , তাঁকেই ভয় করা এবং তাঁরই উপর ভরসা ও নির্ভর করা ।
অনুধাবন:
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মানুষ যখন দুঃখ, বিপদ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তা আল্লাহর তরফ থেকে পতিত হয়। তিনি ব্যতীত তা দূর করার ক্ষমতা নেই। আবার আল্লাহর করুণা ও রহমত যার জন্য প্রবাহিত হয় তাতে কেউ বাঁধা দিতে পারে না।
১০৮ নং আয়াত: নৈতিক নীতিমালা।
-------------------------------------------------------------------------
(১০৮) বল, 'হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট সত্য আসিয়াছে। সুতরাং যাহারা সত্পথ অবলম্বন করিবে তাহারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সত্পথ অবলম্বন করিবে এবং যাহারা পথভ্রষ্ট হইবে তাহারা তো পথভ্রষ্ট হইবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নই।"
-------------------------------------------------------------------------
'সত্য' বা (ফুরকান) বলতে এখানে কুরআন অথবা দ্বীন ইসলামকে বোঝাচ্ছে।
আরবীতে ফুরকান শব্দের অর্থ সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের সীমানা নির্ধারণ করা। সংথক্ষপে বলা যায় আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত পথ নির্দেশ বা নৈতিক নীতিমালা
এর মধ্যে আল্লাহর একত্ব এবং শেষ নবীর রিসালতও অন্তর্ভূক্ত।
যারা সত্পথ অবলম্বন করবে তারা তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।
আর যারা সে পথে চলবে না অর্থ্যাত্ পথভ্রষ্ট হবে তারা শাস্তি পাবে।
আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নই - এ কশা বলার উদ্দেশ্য হল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী, দ্বী প্রচারক ও শিক্ষক এবং আহ্বায়ক হিসাবে আল্লাহ পাঠিয়েছেন।
তার কাজ হচ্ছে মুমিনদের সুসংবাদ দেয়া এবং ও অবাধ্যদের আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা।
রসুল (সঃ) এর আহ্বান কেউ মেনে নিলে ভাল । কিন্তু কাউকে জোর জবরদস্তি করে মুসলিম বানানো তাঁর কাজ নয়।
অনুধাবন::
আল্লাহ 'ফুরকান' বা সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের সীমানা নির্ধারণকারী অপরিবর্তনীয় নৈতিক নীতিমালা পাঠিয়েছেন। যে আল্লাহর প্রদর্শিত সত্পথ অনুসরণ করবে তার কল্যাণ হবে। আর যে অস্বীকার করবে সে নিজেই নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এই অস্বীকার করার দায়িত্ব কোন নবী রাসুলের নয়। ব্যক্তিকে শেষ বিচারের দিন জবাবদিহি করতে হবে।
১০৯ নং আয়াত:: ধৈর্য ।
-------------------------------------------------------------------------
(১০৯) তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হইয়াছে তুমি তাহার অনুসরণ কর এবং তুমি ধৈর্য ধারণ কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফায়সালা করেন এবং আল্লাহই সর্বোত্তম বিধানকর্তা ।
-------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ রাসুল (সঃ) কে ওহী প্রচারের সময় ধৈর্য্য ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আর সে সাথে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁকে যে ওহী দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী চলতে।
ওহী অনুযায়ী চলতে গেলে বিরোধীদের পক্ষ হতে বাধা আসবে। কিন্ত তবুও ওহী অনুযায়ী প্রদর্শিত পথে চলতে হবে । শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।
অনুধাবন:
নবী (সঃ) এর একান্ত চেষ্টা করেও যখন লোক দের ইসলাম গ্রহণ করলনা এবং তাঁর উপর নানাভাবে অন্যায় - অত্যাচার করা হচ্ছিল তখন তাঁকৈ ধৈর্য্য ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এখান থেকে শিক্ষা এই যে মহত্ কাজে ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করতে হয়।
উপসংহার: এই সূরাতে সে সব জাতির কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহর আয়াত ও পয়গম্বরকে মিথ্যা জ্ঞান করে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হয়েছিল। এ সব জাতির আর অস্তিত্ব নেই। তারা ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়ে আছে।
রুকু - ১১ (সংক্ষিপ্ত)
আয়াত ১০৪-১০৯
শিরোনাম: মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য
১. মুমিন ব্যক্তিদের কর্তব্য। (১০৪)
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। সন্দেহাতীত ভাবে তাঁর ইবাদত করতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবন ও মৃত্যু তারই হাতে। প্রতিদিন পূত পবিত্র জীবন যাপনের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছাকে পূরণ করা একজন মোমেনের কর্তব্য।
২. একনিষ্ঠভাবে ধর্ম পালন। (১০৫)
প্রকৃত ভক্তির সাথে আল্লাহর এবাদত করতে হবে। অবিশ্বাসী হওয়া চলবে না।
৩. কোন সৃষ্টির উপাসনা নয়। (১০৬)
মুমিন কোন সৃষ্টিকে উপাসনা করে না।সৃষ্টিকে স্রষ্টার স্থনে বসিয়ে উপসনা করা হচ্ছে স্রষ্টার হক নষ্ট করা ও শির্ক করা। যা করলে একজন জালিম হয়ে যাবে ।
৪. আল্লাহর অনুগ্রহ (১০৭) :
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মানুষ যখন দুঃখ, বিপদ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তা আল্লাহর তরফ থেকে পতিত হয়। তিনি ব্যতীত তা দূর করার ক্ষমতা নেই। আবার আল্লাহর করুণা ও রহমত যার জন্য প্রবাহিত হয় তাতে কেউ বাঁধা দিতে পারে না। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে দুঃখ কষ্টের সময় আল্লাহর সাহায্য কামনা করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা। কারণ বান্দার কল্যাণের জন্য আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাড়া দেন।
৫. আল্লাহ প্রদত্ত নৈতিক নীতিমালা অনুসরণ (১০৮)
আল্লাহ 'ফুরকান' বা সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় ও অন্যায়ের সীমানা নির্ধারণকারী অপরিবর্তনীয় নৈতিক নীতিমালা পাঠিয়েছেন। যে আল্লাহর প্রদর্শিত সত্পথ অনুসরণ করবে তার কল্যাণ হবে। আর যে অস্বীকার করবে সে নিজেই নিজের ক্ষতি সাধন করবে। এই অস্বীকার করার দায়িত্ব কোন নবী রাসুলের নয়। ব্যক্তিকে শেষ বিচারের দিন জবাবদিহি করতে হবে।
১০৯ নং আয়াত:: ধৈর্য (১০৯)
নবী (সঃ) এর একান্ত চেষ্টা করেও যখন লোক দের ইসলাম গ্রহণ করলনা এবং তাঁর উপর নানাভাবে অন্যায় - অত্যাচার করা হচ্ছিল তখন তাঁক ধৈর্য ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মুমিনের কর্তব্য মহত্ কাজে ধৈর্য ধরে আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করা।