সূরা ইউনুস। রুকু ১০। সতর্কবাণী শ্রোতারা উপকৃত হবে।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা ইউনুস। রুকু _ ১০
আয়াত ৯৩ - ১০৩।
সতর্কবাণী শ্রোতারা উপকৃত হবে।
৯৩ নং আয়াত: বনীঈসরাঈলীদের আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত ও অকৃতজ্ঞতা।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৩) আমি তো বনী ঈসরাঈলীকে উত্কৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করাইলাম এবং আমি উহাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দিলাম, অতঃপর উহাদের নিকট জ্ঞান আসিলে উহারা বিভেদ সৃষ্টি করিল। উহারা যে বিষয়ে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছিল তোমার প্রতিপালক অবশ্যই তাহাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন উহা ফায়সালা করে দিবেন।
-------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে বনী ঈসরাঈলীদের দীর্ঘ উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটানোর কথা জানিনয়েছেন।
মহান আল্লাহ বনীঈসরাঈলীদের সম্মানিত (উত্কৃষ্ট) আবাসভূমি দিয়েছিলেন। ( সিরিয়া, বায়তুল মুকাদ্দাস , জর্দান ইত্যাদি উর্বর ভূমি।)
তাদের কৃষি কাজের জন্য উর্বর জমি দেন।
তাদের উপযোগী বস্তু হতে উত্তম জীবিকা দেয়া হয়।
বনী ঈসরাঈলীদের মধ্যে বিভেদ ঘটেনি।
'জ্ঞান' (তাওরাত) আসার পর পর বিভেদ সৃষ্টি হয়। (অর্থ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়।
তাদের এসবের জন্য আল্লহর কৃতজ্ঞতায় মগ্ন থাকার কথা ছিল । কিন্তু তা না করে আল্রাহর প্রেরিত বাণীর ব্যপারে মতভেদ ও বিতর্কে লিপ্ত হয়।
কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের মতভেদকৃত বিষয়ের ফায়সালা করে দিবেন।
শিক্ষণীয়:
যখন বনী ঈসরাঈলীদের আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কথা তখন তা না করে তারা মতভেদে লিপ্ত হয়। এই মতভেদ তাদের অজ্ঞতার কারণে নয়। বরং তারা জ্ঞানলাভ করার পর করেছিল। এতে বোঝা যায় অহংকার ও শত্রুতাবশতঃ তারা বিবাদে লিপ্ত হয়।
এই মতভেদ ও অনৈক্য ধর্মের সাথে মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি করে।
নবী রসুলগণের নির্দেশনা মাফিক জীবন পরিচালনা করলে মানুষ ইহকাল ও পরকালে অফুরন্ত কল্যাণের অধিকারী হতে পারে।
কুরআনের এ আয়াত শুধুমাত্র সে যুগের ইহুদীদের উপর প্রযোজ্য নয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে মুসলমানরে মধ্যে যে মত বিরোধ আছে সেখানেও এটা প্রযোজ্য।
৯৪ ও ৯৫ নং আয়াত::হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর নবু্যয়তের প্রমাণ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৪) আমি তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই আসিয়াছে। তুমি কখনও সন্ধিগ্ধচিত্তদের অন্তভূর্ক্ত হইও না।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৫) এবং যাহারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যখ্যান করিয়াছে তুমি কখনও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইও না- তাহা হইলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
-------------------------------------------------------------------------
সত্য ধর্ম হচ্ছে আল্লাহ এক ও অবিনশ্বর।
৯৪ নং আয়াতে নবী (সঃ)কে সম্বোধন করে উম্মতকে শিক্ষা দান করা হচ্ছে।
ওহীর ব্যপারে নবী (সঃ) এর কোন সন্দেহ ছিল না।
যারা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর প্রেরিত কিতাবকে সন্দেহ করেছে তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখা হয়েছে ।
পূর্বের ঐশী কিতাবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুয়্যত এবং তাঁর গুণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে এত অকাট্য প্রমাণ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে । যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
এ থেকে কুরআনের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
যারা নিদর্শন প্রত্যখ্যান করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
আল্লাহর নিদর্শন দুধরণের । (১) তাঁর সৃষ্টির মধ্যে। (২) রাসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত প্রত্যাদেশের মাধ্যমে।
শিক্ষণীয়:
কুরআন মজীদ অবতীর্ণ হবার পূর্বে যে আসমানী কিতাবসমূহ এসেছে তাতে তাঁর বিবরণ এবং শেষ নবীর গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
মিথ্যা জ্ঞান অর্জন করার পথ হচ্ছে ক্ষতি ও ধংসের পথ।
সন্দেহ করা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত প্রকৃতি। সন্দেহ দূর করার জন্য কিতাব পাঠ করা উচিত। কেউ যদি নিজে থেকে তার সন্দেহ দূর করার জন্য সচেষ্ট না হয় তবে সে সঠিক পথ থেকে সরে যাবে।
৯৬ থেকে ১০০ নং আয়াত: হেদায়েত করা না করা আল্লাহর ইচ্ছা ও রাসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদান।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৬) নিশ্চয়ই যাহাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে, তাহারা ঈমান আনিবে না।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৭) যদিও উহাদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন আসে যতক্ষণ না উহারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৮) তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত কোন জনপদবাসী কেন এমন হইল না যাহারা ঈমান আনিত এবং তাহাদের ঈমান তাহাদের উপকারে আসিত? তাহারা যখন ঈমান আনিল তখন আমি তাহাদের নিকট হইতে পার্থিব জীবনের হীনতাজনক শাস্তি দূর করিলাম এবং উহাদেরকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।
-------------------------------------------------------------------------
(৯৯) তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিলে পৃথিবীতে যাহারা আছে তাহারা সকলেই অবশ্য ঈমান আনিত; তবে কি তুমি মুমিন হইবার জন্য জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করিবে?
-------------------------------------------------------------------------
(১০০) আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত ঈমান অন্য কাহারও সাধ্য নয় এবং যাহারা অনুধাবন করে না আল্লাহ তাহাদেরকে কলুষলিপ্ত করেন।
-------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ যাদের সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে সাব্যস্ত করেছেন তারা ঈমান আনবে না।
তারা কুফরও আল্লাহর অবাধ্য আচরণে এমনভাবে নিমজ্জিত থাকে যে তাদেরকে যতই সদুপদেশ বা সতর্ক করা হোক না কেন তারা ঈমান আনবে না।
পাপাচারণ করতে করতে তাদের সত্য গ্রহণের ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে।
তাদের শাস্তি যখন তাদের সামনে এসে হাজির হয় তখন সে বুঝতে পারে কিন্ত তখন আর সংশোধনের সময় থাকে না।
শেষ মুহূর্তে ঈমান এনে লাভ নেই।
ঐ জনপদের মধ্যে যেগুলোকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন তারা ঈমান আনেনি।
ইউনুস (আঃ) এর সম্প্রদায় ঈমান আনায় মহান আল্লাহ তাদের শাস্তি রহিত করে দেন।
কুরআন পার্থিব আযাব রহিত করার ব্যাপারে বর্ণনা করেছে। এখানে আখিরাতের কথা বলে নি।
ঈমান আনা অনন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। ঈমান তারাই আনবে যাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য সহায়ক হবে।
রসুল (সঃ) কে সান্তনা দিয়ে আল্লাহ বলছেন, আপনি চান সবাই ঈমান আনুক ও সঠিক পথ অবলম্বন করুক। যারা ঈমান আনে না তাদের জন্য আপনার দুঃখ হয়। কিন্তু এর জন্য আপনার দুঃখ হবার কিছু নাই। কারণ যে ব্যক্তি আনবেনা সে প্রথম থেকেই হতভাগ্য।
ঈমানের ক্ষেত্রে কোন জোর জবরদস্তি হতে পারে না। ঈমান গঠিত হয় অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস ও মুখের স্বীকারোক্তি দ্বারা।
আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সবাইকে মুমিন বানাতে পারতেন। কিন্তু দুনিয়াটা যেহেতু পরীক্ষার স্থান আর আল্লাহ মানুষকে নিজ ইচ্ছাধীন করে দিয়েছে তাই আল্লাহ চান মানুষ স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগাক এবং ঈমান আনুক।
আল্লাহ ইমান আনার তওফীক তাকেই দেন যে ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে ঈমান আনার চেষ্টা করে। আর বুদ্ধি বিবেচনাকে কাজে না লাগালে সে কুফরের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মুসলিম বানানো আল্লাহতায়ালার রীতি নয় এবং অন্য কোন মানুষের জন্য এটা জায়েয নয়।
ইউনুস (আঃ) সম্প্রদায়ের কাহিনী:
তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা কুফর ও শিরকে লিপ্ত ছিল। আল্লাহতায়ালা হযরত ইউনুস (আঃ)কে তাদের মধ্যে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর জাতিকে মূর্তিপূজা পরিহার করে এক আল্লাহতায়ালার এবাদত করতে আহ্বান করেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তিনি তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হবার সংবাদ দিলেন। তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল তিনি তো কখনো ভুল বলেন না। রাতে যদি তিনি থাকেন তবে বুঝতে হবে আযাবের আশাংকা নেই। কিন্তু যদি চলে যান তাহলে বুঝতে হবে তার কথাই সত্যি।
রাতে ইউনূস (আঃ) সে স্থান ত্যাগ করেন। ভোরে আকাশে কালো মেঘ মালা দেখা গেল। তা দেখে ইউনূস (আঃ) এর সম্প্রদায়ের লোকেরা বুঝতে পারল শাস্তি আসবেই। তারা তখন ইমান আনায় তাদের শাস্তি মওকুফ করে দেয়া হয়।
শিক্ষণীয়::
পৃথিবীর সব মানুষই যে সত্যকে গ্রহণ করবে সেটা আশা করা ঠিক নয়। কারণ অন্যায়, অত্যাচার ও পাপের কারণে অনেকে সত্য গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মহান আল্লাহ প্রাকৃতিক নিয়ম করে দিয়েছেন য়খন সে তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং যে অন্যায় সে করেছে তার জন্য প্রত্যেকটি মানুষকে এই নশ্বর জীবনে সুযোগ দিয়ে থাকেন। মৃত্যুর শাস্তি যখন নেমে আসে তখন আতংক গ্রস্ত হয়ে ঈমান আনলে তিনি আর গ্রহণ করেন না।
ইউনুস (আঃ) এর সম্প্রদায় আল্লাহর শাস্তির আলামত দেখে ঈমান আনে এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। অতীত কালে একমাত্র হযরত ইউনুস (আঃ) এর সম্প্রদায় শাস্তি আসার পূর্ব মুহূর্তে সত্য ধর্ম গ্রহণ করে।
মানুষের ভাগ্য মানুষের নিজের হাতে। মানুষ তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া করে বিপদ আপদ প্রতিহত করতে পারে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে।
জোর জবরদস্তি করে ঈমান আনা যায়না। মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সে তার চিন্তা ও বুদ্ধি দিয়ে বিশ্বাস গ্রহণ করবে সে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন এই বিশ্ব প্রকৃতি এবং এর নিয়ম কানুন নিয়ে চিন্তা করলেই আল্লাহকে উপলব্ধি করা যায়।
হেদায়েত ও সত্যপথ লাভ করা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তাকে ঈমান ও অনুগ্রহ দান করেন যে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়। যারা কুপ্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেয় তাদের আল্লাহ করুণা করেন না।
১০১ থেকে ১০৩ নং আয়াত : মানুষের সৃষ্টি রহস্য ওবিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে চিন্তা করা।
-------------------------------------------------------------------------
(১০১) বল, 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহার প্রতি লক্ষ্য কর।' নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপকারে আনে না।
-------------------------------------------------------------------------
(১০২) ইহারা কি ইহাদের পূর্বে যাহা ঘটিয়াছে উহার অনুরূপ ঘটনাই প্রতীক্ষা করিতেছি?
-------------------------------------------------------------------------
(১০৩) পরিশেষে আমি আমার রাসূলগণকে এবং মুমিনগণকে উদ্ধার করি। এইভাবে আমার দায়িত্ব মুমিণগণকে উদ্ধার করা।
-------------------------------------------------------------------------
এর আগের আয়াতে বলা হয়েছে যদি সৃষ্টি জগতের প্রকৃতি ও এর সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা চিন্তা করি তবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা অনেক সহজ হয়।
এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টি রহস্য ও বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনার জন্য উত্সাহিত করা হয়েছে।
কিতাব পাঠ এবং সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা আল্লাহকে জানার এক সহজ পথ।
যে সব ব্যক্তি আধ্যাত্মিকভাবে মৃত তারা আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে পারে না।
যেহেতু তারা এ নিয়ে ভাবতে চায়না তাই সেদিনের জন্য অপেক্ষা করা উচিত যেদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।
সত্যের বাণী শুধু শুনে গেলে হবে না তাকে গ্রহণ করার মনোবৃত্তি থাকতে হবে।
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে যে, কোন সমাজের ভাগ্য নির্ধারিত হয় সে্ই সমাজের বেশীরভাগ মানুষের আচার -আচরণের উপর।
সমাজের অধিকাংশ লোক সত্ ও ন্যায়বান হলে সে সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ হবে। আর যদি অসত্ হয় তবে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যায় না।
প্রকৃতিতে বেঁধে দেয়া সৃষ্টিকর্তার নিয়ম সর্বকালের জন্য সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। অতীত ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেয়া উচিত।
মহান সৃষ্টিকর্তা ন্যায়পরায়ণ।
অনচারী সম্প্রদায়ের উপর যখন শাস্তি নেমে আসে তখন প্রককৃত পাপী এবং পাপ ও অনাচারের ব্যাপারে যারা উদাসীন ছিল তারা বিপর্যস্ত হবে।
আল্লাহতায়ালা সব সময় ঐশী শাস্তি থেকে প্রকৃত ঈমানদারদের হেফাজত করেন। তারা সব সময় আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হয়।
হযরত নূহ (আঃ) ও হুদ (আঃ) এর জাতির ইতিহাস থেকে উপলব্ধি করা যায় আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাদের মতই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
(ক) বনী ঈসরাঈলিদের আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত এবং অকৃতজ্ঞতা।
(খ) হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর ধর্মের সত্যতা প্রতিপাদন।
(গ) হেদায়েত করা না করা আল্লাহর ইচ্ছা ও রাসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদান।
(ঘ) হিংসুকদের অপরাধ ও শাস্তি।
সূরা ইউনুস। রুকু - ১০ (সংক্ষেপে)
আয়াত ৯৩ - ১০৩।
(ক) বনী ঈসরাঈলিদের আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত এবং অকৃতজ্ঞতা।(৯৩)
অনুধাবন
যখন বনী ঈসরাঈলীদের আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কথা তখন তা না করে তারা মতভেদে লিপ্ত হয়। এই মতভেদ তারা জ্ঞানলাভ করার পর করেছিল। অহংকার ও শত্রুতাবশতঃ তারা বিবাদে লিপ্ত হয়।
মতভেদ ও অনৈক্য ধর্মের সাথে মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি করে।
নবী রসুলগণের নির্দেশনা মাফিক জীবন পরিচালনা করলে মানুষ ইহকাল ও পরকালে অফুরন্ত কল্যাণের অধিকারী হতে পারে।
(খ) হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর ধর্মের সত্যতা প্রতিপাদন। (৯৪,৯৫)
অনুধাবন
কুরআন মজীদ অবতীর্ণ হবার পূর্বে যে আসমানী কিতাবসমূহ এসেছে তাতে শেষ নবীর বিবরণ এবং তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
মিথ্যা জ্ঞান অর্জন করার পথ হচ্ছে ক্ষতি ও ধংসের পথ।
সন্দেহ করা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত প্রকৃতি। কিতাব পাঠে সন্দেহ দূর হয়। কেউ যদি নিজে থেকে তার সন্দেহ দূর করার জন্য সচেষ্ট না হয় তবে সে সঠিক পথ থেকে সরে যাবে।
(গ) হেদায়েত করা না করা আল্লাহর ইচ্ছা ও রাসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদান। (৯৬-১০০)
অনুধাবন- পৃথিবীর সব মানুষই যে সত্যকে গ্রহণ করবে সেটা আশা করা ঠিক নয়। কারণ অন্যায়, অত্যাচার ও পাপের কারণে অনেকে সত্য গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মহান আল্লাহ প্রাকৃতিক নিয়ম করে দিয়েছেন যখন সে তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া। অন্যায়কারী এই নশ্বর জীবনে তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। মৃত্যুর শাস্তি যখন নেমে আসে তখন আতংকগ্রস্ত হয়ে তওবা করলে গৃহীত হয় না।
জোর জবরদস্তি করে ঈমান আনা যায়না।মানুষকে তার চিন্তা ও বুদ্ধি দিয়ে বিশ্বাস গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন এই বিশ্ব প্রকৃতি এবং এর নিয়ম কানুন নিয়ে চিন্তা করলেই আল্লাহকে উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহ তাকে ঈমান ও অনুগ্রহ দান করেন যে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়। যারা কুপ্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেয় তাদের আল্লাহ করুণা করেন না।
(ঘ) নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শনে অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসী হয় না। (১০১-১০৩)
অনুধাবন :
কিতাব পাঠ এবং সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা আল্লাহকে জানার এক সহজ পথ।
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে যে, কোন সমাজের ভাগ্য নির্ধারিত হয় সেই সমাজের বেশীরভাগ মানুষের আচার -আচরণের উপর।
সমাজের অধিকাংশ লোক সৎ ও ন্যায়বান হলে সে সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণ হবে। আর যদি অসৎ হয় তবে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যায় না।
অনচারী সম্প্রদায়ের উপর যখন শাস্তি নেমে আসে তখন প্রকৃত পাপী এবং পাপ ও অনাচারের ব্যাপারে যারা উদাসীন ছিল তারা বিপর্যস্ত হবে।
উপসংহারে বলব প্রকৃতিতে বেঁধে দেয়া সৃষ্টিকর্তার নিয়ম সর্বকালের জন্য সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। অতীত ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেয়া উচিত।