সূরা ইউনুস: রুকু অনুযায়ী মূল বিষয়।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা ইউনূস (সংক্ষেপ)
প্রাচীনকালে নবী-রাসুলদের মিথ্যা জ্ঞান করে বিভিন্ জাতি আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হয়েছিল। এই সূরাতে সে সব জাতির কথা বলা হয়েছে যাদের আর অস্তিত্ব নেই। তারা ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়ে আছে।
১ম রুকুর শুরু হয়েছে কুরআন ও নবীর সত্যতা প্রতিপাদন দিয়ে। তা করতে গিয়ে কুরআন ও নবী প্রেরণের সত্যতা, আল্লাহর গুণাবলী, পরলোকের সত্যতা, মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন, পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
২য় রুকুতে মূল বিষয় ছিল আল্লাহকে প্রত্যখানের শাস্তি। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মানুষের অপরিণামদর্শীতা , দুর্বল ঈমানের মানুষ, শাস্তি ও কাফিরদের ভয় প্রদর্শন,কাফেরদের অবাস্তব দাবী ও অভিযোগ, নবীর দায়িত্ব এবং শিরক মতবাদ খন্ডন করা হয়েছে।
৩য় রুকুর আলোচনার বিষয় “করুণাময় লেনদেন”। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, তওহীদের বর্ণনা ও কাফিরদের ভয় প্রদর্শন , ফসলের ক্ষেতের সাথে মানুষের জীবনের তুলনা, জান্নাত ও জাহান্নাম বাসীদের বৈশিষ এবং হাশর দিবস সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৪র্থ রুকুতে বিষয়স্তু মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী ও শিরক খন্ডন ,মুশরিকদের অনুমান নির্ভর জ্ঞান, কুরআনের চ্যালেঞ্জ এবংঐশী গ্রন্থ কুরআনের বৈশিষ্ট্যর উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
৫ম রুকুতে প্রধানত দুটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম ভাগে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের কাজের ব্যক্তিগত দায় -দায়িত্ব এবং রাসূল (সঃ) এর প্রতি সান্তনা বাণী। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যারা সত্যের আহ্বান শুনেও অন্ধ ও বধির, প্রতিফল দিবসে অবিশ্বাসীদের উল্লেখ করা হয়েছ। এ ছাািও নবী ও বিশ্বাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন, রাসূল প্রেরণ।
দ্বিতীয় ভাগে কেয়ামত ও এ সম্পর্কে কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।
৬ষ্ঠ রুকুতে মূল আলোচ্য বিষয় কুরআন, সত্যবিমুখ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আল্লাহর শাস্তির চেয়ে করুণার প্রাধান্য বেশী।
৭ম রুকুতে আল্লাহর জ্ঞান বা ইলম আকাশ ও পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা সম্পর্কে নখদর্পণে আছে উল্লেখ করে আল্লাহ সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপস্থিতি, প্রকৃত ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের অবস্থা ও আল্লাহর অনুগ্রহ, পূণ্যাত্মাদের সাথে আল্লাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, শরীক করা বস্তুর মালিক আল্লাহ এবং বিশ্ব পরিচালনা ও প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৮ম রুকুর বিষয়বস্তু নূহ (আঃ) ও তাঁর সম্পদায়, সত্য ও কল্যাণের পথ প্রদর্শনের জন্য নবী-রাসুল প্রেরণ, মূসা (আঃ),হারুন, ফেরাউন ও জাদুকর এবং অল্প কিছু যুবক যারা মূসা (আঃ) কে বিশ্বাস করেছিল।
৯ রুকু হযরত মূসা (আঃ) বিরোধিতার অবসান।বনী ঈসরাঈল সম্প্রদায়কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করার মূসা (আঃ) এর প্রচেষ্টা, বনী ঈসরাঈলীদের বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ, মূসা (আঃ) এর বদ দোয়া, ফেরাউনের সলিল সমাধি ও লাশ সংরক্ষণ।
১০ নং রুকুতে বনী ঈসরাঈলিদের আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত এবং তাদের অকৃতজ্ঞতা,হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর ধর্মের সত্যতা প্রতিপাদন, হেদায়েত করা না করা আল্লাহর ইচ্ছা ও রাসুল (সঃ)কে সান্তনা প্রদান এবং হিংসুকদের অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
রুকু ১১ এর প্রধান বিষয় মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য। তাঁকে একনিষ্ঠভাবে ধর্ম পালন। কোন সৃষ্টির উপাসনা করবে না। আল্লাহ প্রদত্ত নৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করবে এবং মহৎ কাজে ধৈর্য ধরে আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করবে।
মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে দুঃখ কষ্টের সময় আল্লাহর সাহায্য কামনা করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা। কারণ বান্দার কল্যাণের জন্য আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাড়া দেন।
উপসংহারে বলা যায় সূরাটির মূল বক্তব্য হচ্ছে ’মানুষের উপর আল্লাহর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করা।