সৃষ্টিকর্তার অনুভূতি ।
আল্লাহ সম্পর্কে আমার চেতনা।
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। সে হিসাবে ইসলাম আল্লাহর যে পরিচয় দিয়েছে তা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত। তারা নিশ্চয়ই জানে আল্লাহর ইলম বা জ্ঞান আসমান ও জমীনের সবকিছু পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। এই জ্ঞান নিয়ে একজন মুমিন নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়। আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করে এবং মুর্হুমুহু শংকিত হয়। আল্লাহ ভীতি তার মধ্যে কাজ করে।
সূরা ইউনূসের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, তিনিই আল্লাহ,
তোমাদের সত্য প্রতিপালক, সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কি থাকে সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হচ্ছ ?
সূরা ইউনূসের ৬১ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “(হে নবী) তুমি যে কাজেই থাকো না কেন এবং সে (কাজ) সম্পর্কে কুরআন থেকে যা কিছু তেলওয়াত করো না কেন (তা আমি জানি, হে মানুষেরা), তোমরা যে কোন কাজ করো, কোন কাজে তোমরা যখন প্রবৃত্ত হও, আমি তার ব্যাপারে তোমাদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকি, তোমার মালিকের (দৃষ্টি) থেকে একটি অণু পরিমাণ জিনিস ও গোপন থাকে না, আসমান ও জমীনে এর চাইতে ছোট কিংবা এর চাইতে বড় কোন কিছুই নেই যা এই সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই।"
৬১ নং আয়াতের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে চেতনা সৃষ্টি এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপস্থিতির কথা জ্ঞাত করা।
এই আয়াতে আল্লাহর অসীম জ্ঞানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সে সাথে তিনি যে মানুষের সব অবস্থা ও কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবহিত তা এরশাদ করা হযেছে।
এই পৃথিবীর যাবতীয় অণু পরমাণু এমনকি তার থেকেও ক্ষুদ্রতর জিনিস তার দৃষ্টিসীমার আওতাভূক্ত।
এখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয়:
আমাদের কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, চিন্তা চেতনা কোন কিছুই আল্লাহর অগোচরে নয়। আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সব জানেন এবং আমাদের কোন কিছুই তাদের কাছে গোপনীয় নয়।
আল্লাহর কাছে আকাশ-জমিন, ক্ষুদ্র বৃহত্ এসবের কোন পার্থক্য নেই। তার অস্তিত্ব সর্বত্র এবং সব কিছুই তার জ্ঞানের পরিধির আওতায়।
শুধু সাধারণ মানুষ নয় নবী রাসুলগণের উপরও আল্লাহ নজর রেখেছেন এবং তাদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন।
গোটা বিশ্ব আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। আমাদের কাজের জন্য তৎক্ষণাত শাস্তি না পাওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি আমাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে অবহিত নন। তিনি উদাসীন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে আল্লাহ আছেন তা অনুধাবন করলে কি হয়? আল্লাহ আছেন। এটা বুঝতে পারলে মানুষের মন যেমন একদিকে নিশ্চিত হয় আবার অপরদিকে ভীত হয়।আল্লাহর সাথে একদিকে যেমন মহব্বত সৃষ্টি হয় আবার আরেকদিকে তাঁকে ভয় করতে শিখি।
কল্পনা করুন: আপনি জানেন ও বিশ্বাস করেন আল্লাহ আছে। তাহলে আপনার মন-মানসিকতা এবং আচরণ কেমন হবে? - আল্লাহর সামনে আপনি হাজির আছেন। - আপনার কোন ক্ষমতা নেই। সার্বভৌম ক্ষমতা ও শক্তি একমাত্র আল্লাহর।- আল্লাহ গোটা সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্তা । আমি সেখানে একটি কণা মাত্র। - আল্লাহ ছোট বড় সবাইকে নিরাপত্তা দেন। - আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা জমিনে ও আসমানে যত অণু পরমাণু আছে তাকে ঘিরে আছে।- আল্লাহর অগোচরে কিছুই ঘটে না।
মানুষ যদি আল্লাহর এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, আল্লাহর মর্যাদার কথা বুঝতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস
রাখে তবে মানুষের মধ্যে আল্লাহ ভীতি আসতে বাধ্য। যখন তাদের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে ঈমান আসে, আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করতে
পারে তখন তার হৃদয়ে প্রশান্তি নেমে আসে। আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আল্লাহর দেয়া বিধি বিধানকে
অনুসরণ করে। তবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।