সূরা ইউনুস। রুকু - ৬ । শাস্তির চেয়ে করুণার প্রাধান্য।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন। 

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 



দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি  যিনি তাঁর বান্দারা নিজেদের উপর অত্যাচার করা সত্বেও ন্যয়সঙ্গতভাবে বিচার করেন, তাদের উপর জুলুম করেন না , যিনি আসমান ও জমীনের মালিক, যার প্রতিশ্রুতি সত্য, যিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, যার কাছে সবাইকে প্রত্যাবর্তন করবে, যিনি মুমিনদের অন্তরের রোগমুক্তি এবং হেদায়েত ও রহমতের জন্য কুরআনকে দিয়েছেন, যিনি মানুষের উপর অনুগ্রহশীল। লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম রাসুল (সঃ) এর উপর যিনি কুরআনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। 

৫৪ নং আয়াত::শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৪) প্রত্যেক সীমালংঘনকারীই পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা যদি তাহার হইত তবে সে মুক্তির বিনিময়ে টাকা দিয়া দিত; এবং যখন উহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে তখন মনস্তাপ গোপন করিবে। উহাদের মীমাংসা ন্যায়বিচারের সঙ্গে করা হইবে এবং উহাদের প্রতি জুলুম করা হইবে না। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

  • প্রতিফল দিবসে যখন শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করবে তখন অনুতপ্ত হবে।

  • তাদের সর্বস্ব দিয়ে তারা মুক্তি চাইবে।

  • তাদের পাপ বা ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। 

  • শাস্তি প্রত্যক্ষ করে তাদের পাপ কাজ করার গ্লানি এবং অনুতাপকে গোপন রাখবে। 

  • তাদের প্রতি ন্যয়বিচার করা হবে। 

  • প্রত্যেক লোককে যার যার ভাল ও মন্দ কাজ অনুযায়ী প্রতিফল দেয়া হবে। 

  • কারো প্রতি অত্যাচার করা হবে না। 


৫৫ নং আয়াত: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সতর্ক করা। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৫) সাবধান! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা আল্লাহরই। সাবধান! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই অবগত নয়।

------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহর পূর্ণ মালিকাধীন। 

  • আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। 

  • বেশীর ভাগ মানুষ তা জানে না। 


৫৬ নং আয়াত: আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৬) তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মহান আল্লাহ জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান।

  • সব মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রত্যবর্তন করতে হবে।  


৫৭ নং আয়াত::কুরআন সম্পর্কে সচেতন করা ।

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৭) হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আসিয়াছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। 

--------------------------------------------------------------------------------------- --------

  • মানুষের প্রতিপালক অর্থ্যাত্‌ মহান আল্লাহ কুরআন পাঠিয়েছেন। 

  • কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করতে পারে।

  • কুরআন মুমিনদের জন্য আল্লাহর হিদায়াত ও রহমত। 

  • মানুষের অন্তরে যে ব্যাধি আছে তা দূর করে কুরআন। 

  • যেমন তওহীদ ও রিসালত সম্পর্কে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তা দূর করে। 

  • কুরআনের উপদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ।  


৫৮ নং আয়াত:: আল্লাহর অনুগ্রহ, দয়া এবং হেদায়েত। 

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৮) বল, 'ইহা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁহার দয়ায়; সুতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক।' উহারা যাহা পুঞ্জীভূত করে তাহা অপেক্ষা  ইহা শ্রেয়। 

----------------------------------------------------------------------------------------------

  • কুরআন আল্লাহর হেদায়েত, রহমত ও ক্ষমার পথ নিয়ে এসেছে। 

  • মানুষের উচিত তা পেয়ে আনন্দিত হওয়া। 

  • পৃথিবীতে বসে তারা যে কাজ করছে তার থেকে অনেক উত্তম হচ্ছে কুরআন থেকে জ্ঞন সংগ্রহ ও বাস্তবে প্রয়োগ করা। 

৫৯ আয়াত::হালাল ও হারাম  রিযক।

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৯) বল, 'তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়াছেন তোমরা যে তাহার কিছু হালালও কিছু হারাম করিয়াছ? বল, 'আল্লাহ কি তোমাদেরকে ইহা অনুমতি দিয়াছেন, না তোমারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিতেছে? 

------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ মানুষকে হালাল ও হারাম রিযিক দিয়াছেন। 

  • মুশরিকরা আল্লাহর দেয়া হালাল রিযিককে হারাম করে নিত।

  • আল্লাহ মানুষকে নিজ নিজ খেয়াল খুশীমত হালাল বা হারাম নির্ধারণ করার এখতিয়ার দেন নি।

  • আল্লাহর নামে বা ধর্মের নামে স্থায়ীভাবে হারাম বা হালাল বলা অন্যায়। 


"রিযক' শব্দটি এখানে আক্ষরিক এবং রূপক উভয় অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। 

আক্ষরিক অর্থে "রিযক" অর্থ সেই বস্তু জলে, স্থলে, আকাশে সব জায়গায় আল্লাহ মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন। 

"রিযকের" রূপকার্থ হল আত্মিক। মানুষ একমাত্র প্রাণী যার দৈহিক দিকের সাথে সাথে আত্মার দিক আছে । মানুষের আত্মিক দিকের উন্নতি প্রয়োজন। আমাদের এই পার্থিব ও আত্মিক কল্যাণ একমাত্র আল্লাহ জানেন। 


৬০ নং আয়াত::কিয়ামত দিবসে মুশরিকদের সাথে  আল্লাহর আচরণ। 

----------------------------------------------------------------------------------------------

(৬০) যাহারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, কিয়ামত দিবস সম্ভন্ধে তাহাদের কী ধারণা? নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। 

-------------------------------------------------------------------------------------------- 

  • যে সব বিধি-বিধান আল্লাহ দেন নি তা চালু করতে চায়। 

  • তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল শেষ বিচার দিবস সম্পর্কে তাদের ধারণ কি?  

  • মানুষ যতই আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা করুক না কেন তিনি মানুষের সাথে অনুগ্রহশীল।

  • বেশীরভাগ মানুষই অকৃতজ্ঞ। 

  • আল্লাহ পরম করুণাময় ও অনুগ্রহশীল। 

  • পৃথিবীতে মানুষকে তার কাজের জন্য সত্বর পাকড়াও করেন না।

  • তিনি প্রতিফল দিবস নির্ধারণ করে রেখেছেন। 



আমার অনুধাবন:


এই রুকুর মূল আলোচ্য বিষয় চারটি। 

১. আল্লাহর গুণাবলী ।

২.    কুরআন।

৩.    সত্যবিমুখ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। 

৪. আল্লাহর শাস্তির চেয়ে করুণার প্রাধান্য বেশী। 


১.  আল্লাহর গুণাবলী :

  • বান্দারা নিজেদের উপর অত্যাচার করা সত্বেও তাদের বিচার ন্যয়সঙ্গতভাবে করেন।
  • তাদের উপর জুলুম করেন না ,
  • তিনি আসমান ও জমীনের মালিক,
  • তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য,
  • তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন,
  • তাঁর কাছে সবাইকে প্রত্যাবর্তন করবে,
  • যিনি মুমিনদের অন্তরের রোগমুক্তি এবং হেদায়েত ও রহমতের জন্য কুরআনকে দিয়েছেন,
  • যিনি মানুষের উপর অনুগ্রহশীল।


.কুরআনের ৪টি বৈশিষ্ট্যর কথা বলা হয়েছে:

  • কুরআন পার্থিব জীবনাচরণের সাথে সাথে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। 

  • মানিুষের দৈহিক এবং আত্মিক রোগের ঔষধ। 

  • কুরআন মানুষকে হেদায়েত বা পথ প্রদর্শন করে। 

  • মুমিনদের জন্য রহমত । 


 সত্যবিমুখ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-

  • এই পৃথিবীতে এক ধরেণের মানুষ আছে যারা অন্যায় করছে জেনেও আল্লাহর আদেশের সীমালংঘন করে। 

  •  খারাপ কাজের জন্য মনস্তাপ হলেও তা মুখে প্রকাশ করে না।

  •  যখন শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করে তখন সর্বস্ব দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। 

  • আল্লাহর প্রতিশ্রুতি যে সত্য তা তারা বিশ্বাস করে না এবং বুঝতেও পারে না। 

  •  তাদের অন্তরে ব্যধি অর্থ্যাৎ অন্যায় ও পাপ কাজে পরিপূর্ণ এবং সত্যবিমুখ ।

  • কুরআনের উপদেশ এবং কুরআনের নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করে না।

  • তারা নিজের খুশীমত কিংবা ধর্মের নামে হারাম ও হালাল  নির্ধারণ করে এবং বিভেদ সৃষ্টি করে। 

  • ধর্মের নামে বা আল্লাহর নামে মিথ্যা বিধি বিধান চালু করে। 

  • তারা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ।  


৪. আল্লাহর শাস্তির চেয়ে করুণার প্রাধান্য:

  • তারা এত  অন্যায় কাজ  করে যার  জন্য তার সর্বস্ব মুক্তিপণ দিয়ে শাস্তি হতে মুক্তি পেতে চায়। 

  • তারা দুঃখিত হয় যে রাসুল (সঃ)  তাদেরকে এই শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তারা  তাঁকে অস্বীকার করেছিল। 

  • আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তারা এখান থেকে হেদায়েত ও অনুগ্রহ পেতে পারে। সেজন্য তাদের সতর্ক করেন। কিন্তু তারপরেও তারা সত্য বিমুখ থাকে। তারা অকৃতজ্ঞ  হওয়া সত্বেও মহান আল্লাহ তাদের প্রতি পরম করুণাময় ও  অনুগ্রহশীল। 

  • তারা এত বড় অন্যায় ও সত্যবিমুখ হওয়া সত্বেও তাদের বিচার ন্যায়নিষ্ঠার সাথে করা হবে। তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url