সূরা ইউনুস। রুকু ৫ । পরকালীন জীবন।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


সূরা ইউনুস। রুকু ৫। 

আয়াত ৪১ - ৫৩

শিরোনাম: পরকালীন জীবন। 


পরম দয়ালু, দয়াময় আল্লাহর নামে শুরু করছি  যিনি কারো উপর জুলুম করেন না, যিনি তার বান্দাকে সতর্ক না করে শাস্তি দেন না, যিনি সতর্ককারী হিসাবে রাসুল (সঃ)কে পাঠিয়েছেন। লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিং নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর। 



রুকুতে আলোচ্য মূল বিষয়:


ক) বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের কাজের ব্যক্তিগত দায় -দায়িত্ব এবং রাসূল (সঃ) এর প্রতি সান্তনা বাণী। (৪১-৪৮)
(খ) কেয়ামত ও এসম্পর্কে কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর। (৪৯-৫৩)


ক) বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের কাজের ব্যক্তিগত দায় -দায়িত্ব এবং রাসূল (সঃ) এর প্রতি সান্তনা বাণী। (৪১-৪৮)



৪১ নং আয়াত: ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব। 
------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪১) এবং তাহারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে  তবে তুমি বলিও, 'আমার কর্মের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কর্মের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যাহা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যাহা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুশরিকদেরে সাথে অযথা তর্ক করার প্রয়োজন নাই। 

  • তাদের পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়া তোমার কাজের জন্য তুমি দায়ী হবে এবং আমার কাজের জন্য আমি দায়ী হব। 

  • কাউকে অন্যর কাজের দায়ভার নিতে হবে না। 

  • যার যার কাজের জন্য নিজেকেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। 

  • জোর জবরদস্তি নেই ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে। 

  • ব্যক্তি তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে বিশ্বাসী হবে। 


৪২, ৪৩ ও ৪৪  নং আয়াত: যারা সত্যের আহ্বান শুনেও অন্ধ ও বধির। 

---------------------------------------------------------------------------------------

(৪২) উহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমার দিকে কান পাতিয়া রাখে। তুমি কি বধিরকে শুনাইবে, তাহারা না বুঝিলেও? 

---------------------------------------------------------------------------------------

(৪৩) ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমর দিকে তাকাইয়া থাকে। তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাইবে, তাহারা না দেখিলেও ?

---------------------------------------------------------------------------------------

(৪৪) নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন জুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়া থাকে। 

---------------------------------------------------------------------------------------

তাদের বৈশিষ্ট্য ::

  • নবীজির আমলে অনেকেই প্রকাশ্যে নবীজির কথা শুনত কিন্তু এর দ্বারা প্রভাবিত হত না। 

  • তাদের তুলনা করা হয়েছে অন্ধ ও বধিরের সাথে যাদের অন্তরে সত্যের বাণী কোন প্রভাব ফেলে না।  

  • তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে চায় না ফলে সত্যের বাণী তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না। 

  • আল্লাহ মানুষকে দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি দিয়েছেন জ্ঞানার্জন ও সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য।

  • এ শ্রেণীর মানুষরা তাদের জ্ঞান ও বিবেককে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে না। 

  • তারা নিজেরাই নিজের প্রতি জুলুম করে।

  • আল্লাহ কারো প্রতি জুলুম করেন না।


৪৫ নং আয়াত: প্রতিফল দিবসে অবিশ্বাস। 

---------------------------------------------------------------------------------------

(৪৫) যেদিন তিনি উহাদেরকে একত্র করিবেন সেদিন উহাদের মনে হইবে, উহাদের অবস্থিতি দিবসের মুহূর্তকাল মাত্র ছিল, উহারা পরস্পরকে চিনিবে, আল্লাহর সাক্ষাত্‌ যাহারা অস্বীকার করিয়াছে তাহারা ক্ষতিগ্রস্থ হইয়াছে এবং তাহারা সত্‌পথপ্রাপ্ত ছিল না। 

--------------------------------------------------------------------------------------

  • অবিশ্বাসীরা প্রতিফল দিবসে বিশ্বাস করে না। 

  • দুনিয়ার জীবন তাদের এত কাছের মনে হয় যে, তারা পরস্পরকে চিনতে কষ্ট হবে না। 

  • আল্লাহ প্রতিফল দিবসের দিন সব মানুষকে একত্রিত করবেনই।

  • তাদের ইহকাল ও কবরের জীবনকে এক মুহূর্ত বলে মনে হবে। 

  • এখন যারা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে। 

  • তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে কারণ তারা তাদের ইহকালের ক্ষণস্থায়ী জীবনে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে নি । 



৪৬ নং আয়াত: নবী ও বিশ্বাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৬) আমি উহাদিগকে যে ভীতি প্রদর্শন করিয়াছিতাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাইয়া দেই অথবা তোমার কাল পূর্ণ করিয়াই দেই, উহাদের প্রত্যবর্তন তো আমারই নিকট; এবং উহারা যাহা করে আল্লাহ তাহার সাক্ষী।  

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • অবিশ্বাসী ও জালেম সম্প্রদায়ের শাস্তি বিলম্বিত হলে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয় । 

  • অনেকসময় অবিশ্বাসীরা তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল এই জগতে পায়না। 

  • মহান আল্লাহ তা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে পূর্ণ করে দিবেন। 

  • মৃত্যুর পর  আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতেই হবে। 

  • আল্লাহ মানুষের সব কাজকর্মের সাক্ষী হয়ে আছেন। 

  • ভালো কাজের পরিণাম ভালো এবং মন্দ কাজের পরিণাম মন্দ - এটাই চিরন্তন সত্য। 


৪৭ ও ৪৮  নং আয়াত: রাসূল প্রেরণ।

----------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৭) প্রত্যেক জাতির জন্য আছে একজন রাসূল এবং যখন উহাদের রাসূল আসিয়াছে তখন ন্যায়বিচারের সঙ্গে উহাদের মীমাংসা হইয়াছে এবং উহাদের প্রতি জুলুম করা হয় নাই। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৮) উহারা বলে, 'যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে 'বল এই প্রতিশ্রুতি কবে ফলিবে? 

---------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য রাসূল পাঠিয়েছেন সত্য পথ প্রদর্শক হিসাবে।  

  • তাঁদের একটি দায়িত্ব ছিল জুলুস অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। 

  • তাঁরা ন্যায়বিচারের সাথে তা মীমাংসা করেছেন। 

  • তাঁরা কখনো কারো উপর জুলুম করেন নি। 


(খ) ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২ ও ৫৩ নং আয়াত: কেয়ামত ও এসম্পর্কে কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর। 

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪৯) বল, 'আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের আমলের উপর আমার কোন অধিকার নেই।' প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাহাদের সময় আসিবে তখন তাহারা মুহূর্তকাল বিলম্ব বা ত্বরা করিতে পারিবে না। 

--------------------------------------------------------------------------------------------(৫০) বল, "তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, যে তাঁহার শাস্তি তোমাদের উপর রজনীতে অথবা দিবসে আসিয়া পড়ে তবে অপরাধীরা উহার কী ত্বরান্বিত করিতে চায়? 

-----------------------------------------------------------------------------------------------

(৫১) তোমরা কি ইহা ঘটিবার পর ইহা বিশ্বাস করিবে? এখন? তোমরা তো ইহাই ত্বরান্বিত করিতে চাহিয়াছিলে! 

------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫২) পরে জালিমদেরকে বলা হইবে, 'স্থায়ী আস্বাদন কর; তোমরা যাহা করিতে, তোমাদেরকে তাহারই প্রতিফল দেওয়া হইতেছে।'’

-------------------------------------------------------------------------------------------------

(৫৩) উহারা তোমার নিকট জানিতে চায়, 'ইহা কি সত্য? বল, "হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ! ইহা অবশ্যই সত্য। এবং তোমরা ইহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না। 

----------------------------------------------------------------------------------------------- 

  • অবিশ্বাসীরা কিয়ামতকে অস্বীকার করায় নানা অপ্রাসংগিক প্রশ্ন করত।

  • তাদের একটা সাধারণ প্রশ্ন ছিল কেয়ামত সত্যি হলে তা কখন ঘটবে।  

  • রাসূলরা আল্লাহর প্রত্যাদেশের বাণী অনুযায়ী কথা বলেন। 

  • আল্লাহ তাদের অবহিত করেছেন কেয়ামতের মাধ্যমে এই পৃথিবীর অবসান হবে। 

  • 'ইল্লা মাশাল্লাহ' অর্থ্যাত্‌ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। আল্লাহর ইচ্ছাতেই সব কিছু ঘটবে। 

  • অবিশ্বাসীদের কাছে জানতে বলেছেন দিনে বা রাতে যখনই শাস্তি নেমে আসবে , তা কি আস্বাদন করার বস্তু? 

  • আল্লাহ যে কোন সময় আযাব দিতে পারেন। 

  • এখানে আবার জানতে বলেছেন, তাদের এই ত্বরাপ্রবণতার হেতু কি? 

  • দিন বা রাত যখনই আযাব আসবে অবিশ্বাসীরা পাপিষ্ঠ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। 

  • এর পরে আবার তাদের প্রশ্ন করা হয়েছে তোমরা কি এটা ঘটবার পর বিশ্বাস করবে? 

  • এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য এই যে, অবিশ্বাসীরা আযাবের সত্যতাকে যাচাই করার জন্য জিদ ধরেছিল। 

  • তারা কিয়ামত দর্শন করে ঈমান আনবে কিন্তু তখন ঈমান আনার কোন প্রয়োজন নেই। 

  • সীমালংঘনকারীকে স্থায়ী শাস্তি দেয়া হবে।

  • অবিশ্বাসীরা রাসূল (সঃ) এর কাছে ঈমান আনার বিষয়ে জানতে চায় তা সত্য কিনা? 

  • রাসূল (সঃ)কে তাঁর প্রতিপালকের শপথ করে  ।  



আমার অনুধাবন:

আগের রুকুতে কুরআনের  চ্যলেঞ্জ দেবার পর এই রুকুতে কুরআন এবং ইমানের সাথে সম্পর্কিত বিষয় যেমন- কেয়ামত, গুনাহ ও তার শাস্তি প্রভৃতি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা নিয়ে বলা হয়েছে। যদিও মুশরিকদের কাছে তাদের ধারণা প্রমাণ করার মত যুক্তি নেই। 


রুকুতে দুটি মূল আলোচ্য বিষয়:


(ক)  রাসূল (সঃ) এর প্রতি সান্তনা বাণী। (৪১ - ৪৮) 
(খ): কেয়ামত ও এসম্পর্কে কাফেরদের প্রশ্ন ও  উত্তর। (৪৯-৫৩)



(ক)  রাসূল (সঃ) এর প্রতি সান্তনা বাণী। (৪১ - ৪৮) 


রাসুল (সঃ) কে সান্তনা দিতে গিয়ে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেকের কাজের দায়-দায়িত্ব তার নিজের।

যারা সত্যের আহ্বান শুনেও অন্ধ ও বধির এবং তারা নিজের উপর জুলুমকারী । এরা প্রকাশ্যে নবীজির কথা শুনে কিন্তু  সত্যর বাণী তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করত না। 

প্রতিফল দিবসে সব মানুষকে একত্রিত করে বিচার করা হবে তা অবিশ্বাস করে।

নবী ও বিশ্বাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে গিয়ে মৃত্যুর পর  আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতেই হবে। তখন ন্যয় বিচার করেই অবিশ্বাসী ও জালিম সম্প্রদায়কে শাস্তি দিবেন।

আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য রাসূল পাঠিয়েছেন সত্য পথ প্রদর্শন এবং জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও ন্যায়বিচার করতে।


(খ)  পরকালীন জীবন ও কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর। (৪৯ - ৫৩)

অবিশ্বাসীরা কিয়ামতকে অস্বীকার করায় নানা অপ্রাসংগিক প্রশ্ন করত।তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অবহিত করেছেন কেয়ামতের মাধ্যমে এই পৃথিবীর অবসান হবে। 
দিন বা রাতের যে কোন সময় আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটবে এবং অবিশ্বাসীরা পাপিষ্ঠ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। 
অবিশ্বাসীদের আযাবের সত্যতাকে যাচাই করার কোন সুযোগ নাই।  
কিয়ামত দর্শন করে ঈমান আনার সুযোগ নেই।
সীমালংঘনকারীকে স্থায়ী শাস্তি দেয়া হবে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url