সূরা ইউনুস। রুকু ৪, মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী খন্ডন

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি আমাদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন, আকাশ ও পৃথিবী থেকে আমাদের রিযিক দিয়েছেন, আমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির উপর কর্তৃত্ব রাখেন যিনি আমাদের প্রকৃত রব। দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্ম (সঃ) মহান আল্লাহ আমাদের হেদায়েতের জন্য কুরআনসহ  পাঠিয়েছেন এবং আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। 

সূরা ইউনুস । রুকু -৪
আয়াত ৩১-৪০

মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী  খন্ডন  


৩১, ৩২, ৩৩ নং আয়াত:মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী খন্ডন ও তওহীদ প্রমাণ।  

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩১) বল, 'কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হইতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কাহার কর্তৃত্বাধীন জীবিতদের মৃত হইতে কে বাহির করে এবং মৃতকে জীবিত হইতে কে বাহির করে এবং সকল বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তাহারা বলবে, 'আল্লাহ' বল, "তবুও কি তোমরা সাবধান হইবে না? 

--------------------------------------------------------------------------------------- -------------------------------------

(৩২) তিনিই আল্লাহ, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করিবার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী থাকে? সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হইতেছ? 

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৩) এইভাবে সত্যত্যাগীদের সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের এই বাণী সত্য প্রতিপন্ন হইয়াছে যে, তাহারা তো ঈমান আনিবে না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


  • আল্লাহ নবী(সঃ)কে  মুশরিকদের বলতে বলেছেন, তারা জানে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ।তারা এটাও জানে জীবন ও জীবিকা তার হাতে। তারা  জেনেও বিশ্বজগত পরিচালনায় আল্লাহর সাথে  অন্য কিছুকে শরীক করছে। 

  • আমরা যদি প্রকৃতি অর্থ্যাৎ আকাশ, পৃথিবী অথবা মানুষের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির প্রতি লক্ষ্য করি তবে দেখা যায় সব কিছু একই নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। এর পরিচালক হচ্ছেন বিশ্ব জগতের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ  

  • ৩২ নং আয়াতে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে "আল্লাহ হচ্ছেন সত্য প্রতিপালক।" 

  • এই সত্যকে অস্বীকার করার অর্থ বিভ্রান্ত হওয়া । সেটা অমার্জনীয় পাপ। 

  • আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য - যারা এই সত্য ত্যাগ করবে তাদের আর ঈমান আনবে না।  

  • যারা গোয়র্তুমি করে সত্যকে প্রত্যখ্যান করে তারা আসলে সৎপথে ফিরে আসার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। 


৩৪ ও ৩৫ নং আয়াত: শিরক খন্ডন। 

--------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৪) বল, 'তোমরা বাতাসের শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করে ও পরে উহার পুনরাবর্তন ঘটান,' সুতরাং তোমরা কেমন করিয়া সত্য-বিচ্যুত হইতেছ?  
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৫)  বল, 'তোমরা যাহাদেরকে শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সত্যের পথ নির্দেশ করে? বল, 'আল্লহই সত্যের পথ নির্দেশ করেন। যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, না যাহাতে পথ না দেখাইলে পথ পায় না সে? তোমাদের কী হইয়াছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত করিয়া থাক? 
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • বিশ্ব প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে জানান হয়েছে। 

  • যেমন মুশরিকরা বাতাসকে শরীক করে । 

  • তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যারা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনতে পারে। 

  • না তারা পৃথিবীতে বিদ্যমান উপাদান দিয়ে কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। 

  • বিশ্বজগতের সৃষ্টি এবং পুনরাবর্তনের শক্তি ও সামর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। 

  • মুশরিকরা সাধারণত জড় পদার্থকে শরীক করে। (৩৫) 

  • এদের নিজেদের চলার ক্ষমতা নেই। তাদের চালাতে হয়। এরা কিভাবে মানুষকে সত্‌ পথ দেখাবে? 

  • আল্লাহ মানুষকে সত্‌ পথ দেখান। 

  • যিনি সত পথ দেখান তিনি হলেন আনুগত্যের হকদার। 

  • আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব জগতের সব কিছু সৃষ্টি করে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তার সৃষ্টিকে তার পরিপূর্ণতার রাস্তা প্রদর্শন করেছেন। 

  • আল্লাহ জানতে চেয়েছেন মুশরিকরা কিভাবে তারা সত্যের বিরুদ্ধে এবং মিথ্যার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিল।


৩৬ নং আয়: মুশরিকদের অনুমান নির্ভর জ্ঞান। 

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৬) উহাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কেন কাজে আসে না, উহারা যাহা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • অংশীবাদীদের মতাদর্শ অনুমান নির্ভর। তারা নিজেরা অনুমান করে নেয়। 

  • তাদের আপন স্রষ্টা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। 

  • থাকলে স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক ভাবতে পারত না। 

  • তাদের অনুমানের সাথে প্রকৃত সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। 

  • তারা যা করে আল্লাহ তা সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। 

  • কুফর ও শিরকের কোন জ্ঞানগত ভিত্তি নেই। 

  • যারা কল্পনা ও অনুমানের অনুসারক আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন।  


৩৭ ও ৩৮ নং আয়াত:  কুরআনের চ্যালেঞ্জ

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৭) এই কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও রচনা নয়। পক্ষান্তরে, ইহার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে ইহা তাহার সমর্থন এবং ইহা বিধানসমূহের বিশদ ব্যখ্যা। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে, ইহা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৮) তাহারা কি বলে, 'সে ইহা রচনা করিয়াছে? বল, 'তবে তোমরা ইহার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ণ কর এবং আল্লাহ ব্যতীত অপর যাহাকে পার আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
  • পবিত্র কুরআন এই চ্যালেঞ্জ করেছে যে কারো পক্ষে কুরআনের অনুরূপ গ্রন্থ লেখা সম্ভব নয়। 

  • এর রচয়িতা আর কেউ নয়-স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর  কাছ থেকে নাযিল হয়েছে। 

  • রসুল (সঃ) বা অন্য কেউ এর রচয়িতা নয়।  

  • কুরআন পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবসমূহকে সত্যায়ন করে। 

  • পবিত্র কুরআনে বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর  বিধানসমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। 

  • কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। 


৩৯ ও ৪০ নং আয়াত : ঐশী গ্রন্থ কুরআন। 

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৩৯) পরন্তু উহারা যে বিষয়ে জ্ঞান আরণ করে নাই তাহা অস্বীকার করে এবং এখনও ইহার পরিণাম উহাদের নিকট উপস্থিত হয় নাই। এইভাবে উহাদের পূর্ববর্তীগণও মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল, সুতরাং দেখ, জালিমের পরিণামে কি হইয়াছে। 

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪০) উহাদের মধ্যে কেহ ইহাতে বিষ্বাস করে  এবং কেহ ইহাতে বিশ্বাস করে না এবং তোমার প্রতিপালক অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। 

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুশরিকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলছেন ঐশী গ্রন্থ কুরআন আল্লাহর বাণী। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। 

  • তারা যুক্তি প্রমাণ ছাড়া তাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করছে। 

  • তারা কুরআনের বাণী  বোধগম্য না হওয়ায় তারা বুঝতে পারে নি।

  • এদের মধ্যে যারা সত্যকে বুঝতে পেরেছে তারা গ্রহণ করেছে। 

  • আবার অনেকেই এই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে নি।   

  • অজ্ঞতা ও সত্য বিমুখতা হচ্ছে মুশরিকদের শিরকের প্রধান কারণ। 

  • কুরআনের প্রকতটি আয়াতের গভীর তাত্‌পর্য, ভাষার অলংকরণ এবং সুমধুর ধ্বনি কুরআনকে অনন্য সাধারণ ঐশী গ্রন্থের  মর্যাদায় ভূষিত করেছে। 





সংক্ষিপ্ত


মূল আলোচ্য বিষয়: 

(ক) মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী খন্ডন। (৩১,৩২,৩৩) 

(খ) শিরক খন্ডন।(৩৪, ৩৫)  

(গ) মুশরিকদের অনুমান নির্ভর জ্ঞান। (৩৬)

(ঘ) কুরআনের চ্যালেঞ্জ (৩৭,৩৮) 

(ঙ) ঐশী গ্রন্থ কুরআন। (৩৯,৪০)  


বিস্তারিত আলোচন: 

(ক) মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী খন্ডন।(২১,৩২,৩৩)

আল্লাহ নবী (সঃ)কে মুশরিকদের নীচের কয়টি প্রশ্ন করতে বলে আল্লাহর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে বলেছেন।  প্রশ্নগুলো হলো : 

  • কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? 

  • এই শুনার ও দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে??

  • কে প্রাণহীন মৃত থেকে সজীব এবং সজীব থেকে প্রাণহীনকে বের করেন? 

  • কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা?  

মুশরিকরা  উত্তর আল্লাহ বলা সত্বেও  তারা সত্যর বিরোধী পথে চলতে সতর্ক হয় না।

তারা গোমরাহী ও বিভ্রান্ত পথে চলে। 

যারা যুক্তি বাদ দিয়ে গোয়ার্তুমি করে 'আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য' - এই সত্য প্রত্যাখ্যান করবে তারা ঈমান আনার যোগ্যতা হারাবে। 


(খ) শিরক খন্ডন। (৩৪,৩৫)  


আগের আয়াতে মুশরিকদের দৃষ্টি খন্ডনের পর মহান আল্লাহ মুশরিকদের কাছে প্রশ্ন করতে বলেছেন:

তাদের তৈরী করা শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কিনা যারা সৃষ্টির সূচনা এবং সত্যের দিকে পথ নির্দেশ করতে পারে? 

দ্বিতীয় প্রশ্ন: কে আনুগত্য লাভের বেশী হকদার? -যিনি সত্যের দিকে পথ নির্দেশ করতে পারেন, না যে পারে না ?

মুশরিকরা জানে তারা যাদেরকে দিয়ে শরীক করে তারা কল্যাণ ও অকল্যাণে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না।যা আল্লাহ করতে পারেন।  মহান আল্লাহ সব কিছুকে সৃষ্টি করে প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা তাদের পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।  


(গ) মুশরিকদের অনুমান নির্ভর জ্ঞান।(৩৬) 

  • অংশীবাদীদের মতাদর্শ অনুমান নির্ভর যার সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। 

  • তাদের আপন স্রষ্টা সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই।তাই তারা  স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক ভাবে।

  • তাদের সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। 

  • যারা কল্পনা ও অনুমানের অনুসারক আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন।  


(ঘ) কুরআনের চ্যালেঞ্জ (৩৭,৩৮)

  • পবিত্র কুরআন এই চ্যালেঞ্জ করেছে যে কারো পক্ষে কুরআনের অনুরূপ গ্রন্থ লেখা সম্ভব নয়। 

  • এর রচয়িতা আর কেউ নয়-স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর  কাছ থেকে নাযিল হয়েছে। 

  • কুরআন পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবসমূহকে সত্যায়ন করে। 

  • পবিত্র কুরআনে বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর  বিধানসমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। 

  • কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। 


(ঙ) ঐশী গ্রন্থ কুরআন। (৩৯,৪০) 

  • মুশরিকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলছেন ঐশী গ্রন্থ কুরআন আল্লাহর বাণী। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। 

  • তারা যুক্তি প্রমাণ ছাড়া তাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করছে। 

  • তারা কুরআনের বাণী  বোধগম্য না হওয়ায় বুঝতে পারে নি।

  • এদের মধ্যে যারা সত্যকে বুঝতে পেরেছে তারা গ্রহণ করেছে। 

  • আবার অনেকেই এই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে নি।   

  • অজ্ঞতা ও সত্য বিমুখতা হচ্ছে মুশরিকদের শিরকের প্রধান কারণ। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url