সূরা ইউনুস । রুকু -২। প্রত্যখানের শাস্তি।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময় পরম দয়ালু সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার কর্তা ,সর্বজ্ঞ এবং শিরকের মত অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ও মহান।
লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর যিনি আমাদের আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতগুলি পাঠ করে শোনান, যিনি আমাদের মহাদিনের এবং সীমালংঘনের শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেন।
সূরা ইউনূস। রুকু - ২
আয়াত ১১ - ২০।
প্রত্যখানের শাস্তি।
১১ নং আয়াত: মানুষের অপরিণামদর্শীতা ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------(১১) আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরাণ্বিত করিতেন, যেভাবে তাহারা তাহাদের কল্যাণ ত্বরাণ্বিত করিতে চায়, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যু ঘটিত। সুতরাং যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহাদেরকে আমি তাহাদের অবাধ্যতার উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দেই।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক সময় দ্রত অকল্যাণ কামনা করে।
শুধু তা নয় আবার সে কামনা করে তার দোয়ার ফল তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।
মহান আল্লাহ যদি বদ দোয়া কবুল করে নিতেন তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
যারা আল্লাহর সাথে সাথে সাক্ষাত হবে বলে বিশ্বাস করে না অর্থ্যাৎ সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে সুযোগ দেন।
যাতে তাদের পাপ আরো বৃদ্ধি পায়।
আয়াত ১২: দুর্বল ঈমানের মানুষ ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১২) আর মানুষকে যখন দৃঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুইয়া, বসিয়া অথবা দাঁড়াইয়া আমাকে ডাকিয়া থাকে। অতঃপর আমি যখন তাহার দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাহাকে যে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করিয়াছিল তাহার জন্য সে আমাকে ডাকেই নাই। যাহারা সীমালংঘন করে তাহাদের কর্ম তাহাদের নিকট এইভাবে শোভনীয় করে দেয়া হইয়াছে।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য (আদদুরক) স্পর্শ করে তখন সে একান্ত অনুগত ও আন্তরিকতা সহকারে মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে।
কিন্তু যখন সে বিপদ অতিক্রান্ত হয়ে যায় তখন আল্লাহর করুণার কথা ভুলে যায়।
এমন ভাব নেয় যেন সে কখনো বিপদমুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে নি।
এই সীমালংঘনকারীদেরকে তাদের প্রবৃত্তির ইচ্ছাকে শোভনীয় করে দেয়া হয়। ফলে তারা অন্যায় আচরণ করতেই থাকে।
১৩ ও ১৪ নং আয়াত: আল্লাহকে প্রত্যখ্যানের শাস্তি ও কাফিরদের ভয় প্রদর্শন।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৩) তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি তো ধ্বংস করিয়াছি যখন তাহারা সীমা অতিক্রম করিয়াছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাহাদের নিকট তাদের রাসুলগণ আসিয়াছিল, কিন্তু তাহারা ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এইভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৪) অতঃপর আমি উহাদের পর পৃথিবীতে তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি তোমরা কিরূপ কর্ম কর তাহা দেখিবার জন্য।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ তৎকালীন মক্কাবাসীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাদের আগে আল্লাহর সীমা অতিক্রমকারী অনেক মানবগোষ্ঠিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন।
তাদের কাছে নবীগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছেন কিন্তু তারা ইমান আনে নি।
যারা আল্লাহর প্রদর্শিত ন্যায় ও সৎ পথে চলে তাদের ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির স্থলভিষিক্ত করেন।
পূর্ববর্তী মানব গোষ্ঠকে ধ্বংস করার পর যে মানব গোষ্ঠী বর্তমানে আছে তাদের পরীক্ষা করার জন্য তারা আল্লাহর রাসুলের অনুসরণ করে কিনা?
১৫ নং আয়াত: কাফেরদের অবাস্তব অভিযোগ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৫) যখন আমার আয়াত, যাহা সুস্পষ্ট , তাহাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহারা বলে, 'অন্য এক কুরআন আন ইহা ছাড়া, অথবা ইহাকে বদলাও।' বল, 'নিজ হইতে ইহা বদলান আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যাহা ওহী হয়, আমি কেবল তাহারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করিলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি যারা বিশ্বাস করে না তারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় না।
তারা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী বিকল্প কুরআন কিংবা অংশ বিশেষ পরিবর্তন করতে চায়।
এই আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ নবী (সঃ)কে বলতে বলেছেন, আমি আল্লাহর বাণীর বাহক হওয়া সত্বেও তা পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা নেই।
পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুনাহর কাজ এবং এর জন্য মহাদিবসে রয়েছে শাস্তি।
১৬ ও ১৭ নং আয়াত: নবীর দায়িত্ব।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৬) বল, 'আল্লাহ যদি চাহিতেন আমিও তোমাদের নিকট ইহা তেলওয়াত করিতাম না এবং তিনিও তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করিতেন না। আমি তো ইহার পূর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করিয়াছি; তবুও কি তোমরা বুঝিতে পার না?
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭) যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করে তাহার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে? নিশ্চয়ই অপরাধীগণ সফলকাম হয় না।
---------------------------------------------------------------------------------------
ওহী আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।
আল্লাহর বাণীর বাহক হওয়া সত্বেও তা পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা নেই।
আল্লাহ নবী (সঃ)কে মুশরিকদের মাঝে কুরআন প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুশরিকেদের স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছেন যে, নবী হবার আগে তাদের মাঝে জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছে্
আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করা নবী (সঃ) এর পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী সীমালংঘনের অপরাধে অপরাধী।
অপরাধী কখনো সফলকাম হতে পারে না।
১৮ ও ১৯ নং আয়াত: কাফেরদের অবাস্তব দাবী ও শিরক মতবাদ খন্ডন।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৮) উহারা আল্লাহ ব্যতীত যাহার 'ইবাদত করে তাহা উহাদের ক্ষতি ও করিতে পারে না, উপকারও করিতে পারে না। উহারা বলে, 'এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।' বল, 'তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যাহা তিনি জানেন না। তিনি মহান, পবিত্র এবং তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি উর্ধে ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৯) মানুষ ছিল একই উম্মত, পরে উহারা মতভেদ সৃষ্টি করে। তোমার প্রতিপালকের পূর্ব ঘোষনা না থাকিলে তাহারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তাহার মীমাংসা তো হইয়াই যাইত।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ একমাত্র উপাস্য। কাফেররা যাদের ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতি কিংবা উপকার কোনটিই করতে পারে না।
মুশরিকরা মনে করে তারা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে।
নবী (সঃ)কে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন, আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সব কিছু সম্পর্কে অবহিত।
তিনি মহান ও পবিত্র । তাঁর কোন শরীক নেই।
মানুষ একই জাতি । পরে তারা ভিন্ন ভিন্ন মতের অনুসারী হয়েছে।
আল্লাহ তাদের একটি নির্দির্ষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিতে চেয়েছেন।
২০ নং আয়াত: কাফিরদের আরেকটি অবস্তব দাবী।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২০) উহারা বলে, 'তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? বল, 'অদৃশ্যের জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষা করিতেছি।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ জানেন।
একমাত্র আল্লাহ জানেন কখন তিনি আয়াত অবতীর্ণ করবেন।
আল্লাহ সত্য প্রত্যাখান কারীদের কর্মফলের জন্য প্রতীক্ষা কর।
আল্লাহও কর্মফল দেবার জন্য প্রতীক্ষা করবেন।
সংক্ষিপ্ত
সূরা ইউনূস। রুকু - ২
আয়াত ১১ - ২০।
শিরোনাম : প্রত্যখানের শাস্তি।
মূল আলোচ্য বিষয়:
(ক) মানুষের অপরিণামদর্শীতা (১১)
(খ) দুর্বল ঈমানের মানুষ (১২)
(গ) আল্লাহকে প্রত্যখ্যানের শাস্তি ও কাফিরদের ভয় প্রদর্শন। (১৩, ১৪)
(ঘ) কাফেরদের অবাস্তব অভিযোগ ও দাবী (১৫ - ২০)
(ঙ) নবীর দায়িত্ব।(১৬)
(ক) মানুষের অপরিণামদর্শীতা (১১)
মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক সময় দ্রত অকল্যাণ কামনা করে।
সে সাথে আরো কামনা করে তার দোয়ার ফল তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।
পরিণাম নিয়ে চিন্তা করে না।
মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন যদি অকল্যাণের দোয়া কবুল করে নেন তবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
যারা আল্লাহর সাথে সাথে সাক্ষাত হবে বলে বিশ্বাস করে না অর্থ্যাৎ সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে সুযোগ দেন।
যাতে তাদের পাপ আরো বৃদ্ধি পায়।
(খ) দুর্বল ঈমানের মানুষ ও অকৃতজ্ঞতা (১২)
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য (আদদুরক) স্পর্শ করে তখন সে একান্ত অনুগত ও আন্তরিকতা সহকারে মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে।
কিন্তু যখন সে বিপদ অতিক্রান্ত হয়ে যায় তখন আল্লাহর করুণার কথা ভুলে যায়।
এমন ভাব নেয় যেন সে কখনো বিপদমুক্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে নি।
এই সীমালংঘনকারীদেরকে তাদের প্রবৃত্তির ইচ্ছাকে শোভনীয় করে দেয়া হয়। ফলে তারা অন্যায় আচরণ করতেই থাকে।
(গ) আল্লাহকে প্রত্যখ্যানের শাস্তি ও কাফিরদের ভয় প্রদর্শন। (১৩)
মহান আল্লাহ তৎকালীন মক্কাবাসীদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাদের আগে আল্লাহর সীমা অতিক্রমকারী অনেক মানবগোষ্ঠিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন।
তাদের কাছে নবীগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছেন কিন্তু তারা ইমান আনে নি।
যারা আল্লাহর প্রদর্শিত ন্যায় ও সৎ পথে চলে তাদের ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির স্থলভিষিক্ত করেন।
পূর্ববর্তী মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার পর যে মানব গোষ্ঠী বর্তমানে আছে তাদের পরীক্ষা করার জন্য তারা আল্লাহর রাসুলের অনুসরণ করে কিনা?
(ঘ) কাফেরদের অবাস্তব অভিযোগ (১৫, ১৭, ১৮, ২০)
কাফেরদের স্বার্থ অনুযায়ী বিকল্প কুরআন আনয়ন অথবা অংশ বিশেষের পরিবর্তন। (১৫)
কুরআন ওহী নয় । নবী (সঃ) এর রচনা।
আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে এবং আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা মনে করে। (১৭)
কাফিররা যাদের উপাসনা করে তারা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। (১৮)
তওহীদ অর্থ্যাত্ আল্লাহ এক এবং অদ্বীতিয় - তা অস্বীকার করা।
নবী (সঃ) এর কাছে স্পষ্ট নিদর্শন দাবী করা।
(ঙ) নবীর দায়িত্ব ও শিরকের খন্ডন(১৬)
আল্লাহ একমাত্র উপাস্য। কাফেররা যাদের ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতি কিংবা উপকার কোনটিই করতে পারে না।
মুশরিকরা মনে করে তারা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। এই ভুল ধারণার অপনোদন করা।
নবী (সঃ)কে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন, আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সব কিছু সম্পর্কে অবহিত।
আল্লাহ মহান ও পবিত্র । তাঁর কোন শরীক নেই।
আল্লাহর বাণী কে (ওহী) মুশরিকদের মাঝে প্রচার করা।
আল্লাহর বাণীর বাহক হওয়া সত্বেও তা পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা নবী (সঃ) এর নেই।
মুশরিকেদের স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছেন যে, নবী হবার আগে তিনি তাদের মাঝে জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছেন এবং তারা ভাল করে চিনে।
আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করা নবী (সঃ) এর কাজ নয়।
মানুষ একই জাতি । পরে তারা ভিন্ন ভিন্ন মতের অনুসারী হয়েছে।
নবী (সঃ) সতর্ক করে দিচ্ছেন যে আল্লাহ তাদের একটি নির্দির্ষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন এবং পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারীকে সীমালংঘনের অপরাধে অপরাধী ধরবেন।
অপরাধী কখনো সফলকাম হতে পারে না।