সূরা গওবা। রুকু -১৩। মুসলিম ও মুনাফিক।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে
মূল আলোচ্য বিষয়:
(ক) মুহাজের ও আনসারদের ফজিলত
(খ) অজ্ঞাত মুনাফিক সম্প্রদায়ের বর্ণনা।
(গ) দুর্বল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক।
(ঘ) অনুতাপকারীদের থেকে সাদাকা গ্রহণের আদেশ।
(ঙ) মসজিদে যিবরার নির্মাণ ও তার ধ্বংসের ঘটনা।
(চ) পবিত্র মানুষ।
(ছ) মুমিণ ও মুনাফিকদের আমলের উদাহরণ:
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
১০০ নং আয়াত: মুহাজের ও আনসারদের ফজিলত:
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০০) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যাহারা প্রথম অগ্রগামী এবং তাহারা নিষ্ঠার সাথে তাহাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাহাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে। ইহা মহাসাফল্য।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুহাজির ( সাবেক্কীন) হল তারা যারা ধর্ম রক্ষার জন্য মক্কা পরিতাগ করে মদীনায আশ্রয় নেয়। মদীনায় যারা এই সাহাবীদের আশ্রয় দেয় তাহাদের বলা হয় আনসার।
এখানে তিনটি দলের কথা বলা হয়েছে।
(i) মোহাজেরদের অগ্রগামী দল। যারা ধর্ম এবং আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ পালনের জন্য মক্কা ও অন্যান্য এলাকা থেকে মদীনায় হিজরত করেন।
(ii) আনসারদের অগ্রগামী দল। মদীনার অধিবাসী।
এরা রাসুল(সঃ)কে সবরকম সাহায্য ও নিরাপত্তা এবং মুহাজিরদের সম্মান দিয়েছিলেন।
(iii) সে সব ব্যক্তি যারা নিষ্ঠা সহকারে মোহাজের ও আনসারদের অনুসরণ করেছে।
যে সব মুহাজির ও আনসাররা ঈমান আনয়ন করার ব্যপারে উম্মতদের মধ্যে অগ্রবর্তী এবং যারা তাদের অনুগামী আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।
আল্লার এই সন্তুষ্টি ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরস্থায়ী।
তাদের ঈমান ও সৎকর্ম আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়।
আল্লাহ তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।
তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।
তাদের সফলতা এখানেই যে তারা এখানে অনন্তকাল থাকবে।
১০১ নং আয়াত: অজ্ঞাত মুনাফিক সম্প্রদায়ের বর্ণনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০১) মরুবাসীদের মধ্যে যাহারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাহাদের কেহ কেহ মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেহ কেহ, উহারা কপটতায় সিদ্ধ । তুমি উহাদেরকে জান না, আমি উহাদেরকে জানি। আমি উহাদেরকে দুইবার (মাররাতাইনি) শাস্তি দিব ও পরে উহারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশক্তির দিকে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মরুবাসী ও মদীনাবাসী মুনাফিক দলের কথা বলা হয়েছে যারা মুনাফেকীতে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে।
নবী (সঃ) তাদেরকে মুনাফিক হিসাবে চিনতেন না। কারণ নবী (সঃ) 'আ-লিমুল গায়ব' ছিলেন না।
মহান আল্লাহ তাদের পরিচয় জানতেন।
আল্লাহ তাদের দুইবার শাস্তি দিবেন। (আখিরাতের পূর্বে বা পার্থিব জীবনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এবং মৃত্যুর পর থেকে)
তারা মহাশক্তি আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
১০২ নং আয়াত: দুর্বল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০২) এবং অপর কতক লোক নিজেদের অপরাধ স্বীকার করিয়াছে, উহারা এক সৎকর্মের সঙ্গে অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করিয়াছে; আল্লাহ হয়ত উহাদেরকে ক্ষমা করিবেন;নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব লোকের মনোবল সমান নয়।
কিছু লোক আছে যারা তাদের অসত্ বা যে মন্দ কাজ করেছে তাকে স্বীকার করে নেয়।
তারা অনেক সৎ বা ভাল কাজ করে ।
কিন্তু দুর্বল চিত্তের লোক হওয়ায় তারা অনেক সময় মন্দ কাজ করে ফেলে।
এরা বিশ্বাসী। মিথ্যা অজুহাত দেখায় না। তাদের পাপবোধ তাদের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে।
আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। আশা করা যায় তিনি তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
১০৩ ও ১০৪ নং আয়াত: অনুতাপকারীদের থেকে সাদাকা গ্রহণের আদেশ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৩) উহাদের সম্পদ হইতে 'সাদাকা' গ্রহণ করিবে। ইহার দ্বারা তুমি উহাদেরকে পবিত্র করিবে এবং পরিশোধিত করিবে। তুমি উহাদেরকে দু'আ করিবে। তোমর দু'আতো উহাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর।আল্লাহ সর্ব শ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৪) উহারা কি জানেনা যে , আল্লাহ তো তাঁহার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং 'সাদাকা' গ্রহণ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ 'সাদাকা' গ্রহণ করে মুমিনদের পবিত্র করতে আদেশ দিয়েছেন।
রাসুল (সঃ)কে সাদাকা প্রদানকারীর জন্য দোয়া করতে বলেছেন।
তাঁর দোয়ার ফলে তাদের অন্তর যে পাপবোধের তমসায় আচ্ছন্ন ছিল তা হতে মুক্ত হবে।
রসুল (সঃ) এর দোয়া সাদাকা প্রদান কারীর চিত্ত সুখকর। (সাকানুন)
আল্লাহ অনুতপ্ত বিশ্বাসীদের ক্ষমা প্রার্থনার কথা ভালভাবেই শোনেন এবং জানেন।
কারণ তিনি সর্বজ্ঞ।
অনুতাপকারী তার চরিত্র সংশোধিত করে নেয়।
আল্লাহ তাদের অতীতের দোষ-ত্রুটি মাফ করে দিবেন।
আয়াত নং ১০৫ ও ১০৬ : মুমিণদের প্রতি নির্দেশ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৫) এবং বল , 'তোমরা কর্ম করিতে থাক; আল্লাহ তো তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করিবেন এবং তাঁহার রাসুল ও মুমিনগণও করিবে এবং অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে অদৃশ্য ও দৃশ্যে পরিজ্ঞতার নিকট, অতঃপর তিনি তোমরা যাহা করিতে তাহা তোমাদের জানাইয়া দিবেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৬) এবং আল্লাহর আদেশের প্রতীক্ষায় অপর কতকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রহিল তিনি উহাদেরকে শাস্তি দিবেন, না ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ রাসুল (সঃ)কে সবাইকে জানিয়ে দিতে বলেছেন এই যে,
তোমরা তোমাদের ইচ্ছেমত ভাল বা মন্দ যা ইচ্ছা তা কর।
আল্লাহ প্রতিটি মানুষের কার্যকলাপে লক্ষ্য রাখেন এবং কোন কাজই তাঁর কাছে গোপন নয়।
মহান আল্লাহ প্রত্যাদেশের মাধ্যমে রাসুল (সঃ)কে জানিয়ে দিবেন।
তাঁর অনুসারীরাও জানবে।
তোমরা তাঁর কাছেই প্রত্যবর্তন করবে।
তখন তোমাদের কৃতকর্মের সংবাদ তোমাদের জানিয়ে দেয়া হবে।
তাবুক যুদ্ধে যারা যায় নি তাদের কারো কারো তাওবা মহান আল্লাহ কবুল করেন ।
যারা তওবা করেনি তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকে।
আল্লাহ তাদের ক্ষমা করতে পারেন অথবা শাস্তি দিতে পারেন।
আল্লাহ সবার আদ্যঅন্তরের সব কিছু জানেন ।
তাই আল্লাহকে সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় বলা হয়েছে।
১০৭ নং আয়াত: মসজিদে যি্বরার নির্মাণ ও তার ধ্বংসের ঘটনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৭) এবং যাহারা মসজিদ নির্মাণ করিয়াছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি সংগ্রাম করিয়াছে তাহার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, তাহারা অবশ্যই শপথ করিবে, ' আমরা সদুদ্দেশ্যেই উহা করিয়াছি; আল্লাহ সাক্ষী, তাহারাতো মিথ্যাবাদী ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মসজিদে যি্বরার তাবুক যুদ্ধের সময় একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। মুনাফিকরা আলাাভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। এর মূল উদ্যেক্তা ছিলেন মদীনা বাসী 'আবু আমের ' নামে একব্যক্তি। যদিও তার ছেলে ছিলেন বিখ্যাত সাাবী হানযলা (রাঃ) যার লাশকে ফেরেশতাঘণ গোসল করিয়েছিলেন। কিন্তু আবু আমের নিজের গোমরাহী আর নাসারাদের দ্বীনের উপরই ছিলেন। রাসুল (সঃ) হিজরত করেমদীনায় আসলে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক নালিশ করেন। রসুল (সঃ) তার জবাব দেন। তাতেও তার শান্তি হয় ন। হুনাউন যুদ্ধ পর্যন্ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে তিনি সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে বারবার পরাজিত হয়ে একসময়ে নিরাশ হয়ে সিরিয়া চলে যান। সেখানে গিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তিনি মদীনায় মুনাফিকদের একটি সম্মিলিত গড়ে তুলতে বলেন আরেক দিকে তিনি চেষ্টা করতে থাকেন রোম সম্রাটের সাহায্য নেবার জন্য। তিনি মদীনার মুনাফিকদের পরামর্শ দেন একটি মসজিদ নির্মাণ করতে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মদীনার কুবা মহল্লায় যেখানে রাসুল (সঃ) হিজরত করে অবস্থান গ্রহণ করেছলেন সেখানে মসজিদে নির্মাণ করে। মুসলিমদের প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তারা সিদ্ধান্ত নেয় রাসুল (সঃ)কে দিয়ে তারা একওয়াক্ত নামাজ পড়াবে। সে মত তারা রাসুল (সঃ) এর কাছে আর্জি জানায় নামাজ পড়ার জন্য। অজুহাত দেখায় দুর্বল লোকের সুবিধার জন্য তারা এটা করেছে।
রাসুল (সঃ) তখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি ফিরে নামাজ পড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পষে তিনি এক জায়গায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন মসজিদে দ্বিরা সম্পর্কিত আয়াতগুলো নাযিল হয়
মুনাফিকরা চারটি উদ্দেশ্য মুনাফিকরা মসজিদটি নির্মাণ করে
যাতে মুসলমানদের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
তাদের মধে কুফরী কাজের প্রসার ঘটাতে পারে।
মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শত্রুদের জন্য আশ্রয়স্থল বানানো।
মুনাফিকরা মিথ্যা শপথ করে নবী (সঃ) কে প্রতারিত করতে চায়।
মহান আল্লাহ মুসলমানদের তাদের চক্রান্ত এবং প্রতারণা থেকে রক্ষা করেন।
আল্রাহ জানিয়ে দেন যে মুনাফিকদের উদ্দেশ্য সত্ নয়।
তারা যা প্রকাশ করছে তা মিথ্যা।
মহান আল্লাহ রাসুল (সঃ)কে সেই মসজিদে সালাত পড়তে নিষেধ করেছেন।
১০৮ নং আয়াত: পবিত্র মানুষ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৮) তুমি ইহাতে কখনো দাঁড়াইও না। যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হইতেই স্থাপিত হইয়াছে তাকওয়ার উপর, উহাই তোমার সালাতের জন্য অধিক যোগ্য।সেখানে এমন লোক আছে যাহারা পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মদীনার উপকণ্ঠে কুবা নামক স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রথম এই মসজিদটি স্থাপন করেন।
এই মসজিদে রয়েছে এমন লোক যারা পবিত্রতা ভালবাসে।
ক্বুবাবাসীরা পবিত্রতার জন্য পানি ব্যবহার করত, তাই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।
আল্লাহ পবিত্র লোকজনদের ভালবাসেন।
১০৯ ও ১১০ নং আয়াত: মুমিণ ও মুনাফিকদের আমলের উদাহরণ:
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১০৯) যে ব্যক্তি তাহার গৃহের ভিত্তি আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর স্থাপন করে সে উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তাহার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করে এক খাদের ধংসমুখ কিনারায় , ফলে, যাহা উহাকে সহ জাহান্নামের অগ্নিতে পতিত হয়? আল্রাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১১০) ইহাদের গৃহ যাহা উহারা নির্মাণ করিয়াছে তাহা উহাদের অন্তরে সন্দেহের কারণ হইয়া থাকিবে। যে পর্যন্ত না উহাদের অন্তর ছিন্ন-বিছিন্ন হইয়া যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ , প্রজ্ঞাময়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সালাত পড়তে বলেছেন যে মসজিদের ভিত্তি আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে স্থাপিত হয়েছে।
এই মসজিদ প্রথম থেকেই ধর্মানুষ্ঠানের জন্যই নির্মিত হয়।
উত্তম গৃহ হচ্ছে সেই গৃহ যা আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর স্থাপিত হয়।
মুনাফিকদের গৃহের তুলনা করা হয়েছে ভূমির সেই অংশের সাথে যার তলদেশে পানি প্রবাহিত হয় এবং তলদেশে ফাঁকা হয়ে যায়। যার পরিণামে ভেঙ্গে পড়ে।
অপবিশ্বাস ও অপবিত্রতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত গৃহ উত্তম নয়।
আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।
মুমিণদের আমল আল্লাহ ভীতির ভিত্তিতে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়ে থাকে।
মুনাফিকদের আমল লোক দেখানো বা রিয়ার উপর ভিত্তি করে করে।
তাে;র অন্তর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়. - এর অর্থ হল, মারা যায়।
অনুধাবন:
সফলতা সেই লাভ করে যাকে আল্লাহ স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে জান্নাত দান করেন। জান্নাত পেতে হলে আল্লাহর একনিষ্ঠ প্রেমিক ও অনুসারী হতে হয়।
সাদাকার দুটি বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম। প্রথম হল সদাকা মানুষের জন্য মন্দ চরিত্র ও পাপাচার থেকে পবিত্রতা অর্জনের সহায়ক এবং দ্বিতীয়ত: সদাকা দ্বারা মানুষের সৎকর্মে বরকত ও উন্নতি লাভ হয়।
যদি কোন ব্যক্তি কারো কাছ থেকে কোন দান গ্রহণ করে তবে তার জন্য দাতাকে দোয়া করা বাধ্যতামূলক।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সদাকা গ্রহণ করেন।
মহান আল্লাহতায়ালা সব ধরণের বাধ্যতা ও আবশ্যকতা থেকে মুক্ত। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি আর যাকে ইচ্ছা মুক্ত করতে পারেন। তাই আমাদের সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
মুনাফিকরা চিরকাল ইসলামের ক্ষতিসাধন, সত্যপ্রত্যাখ্যান ও বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করে। তারা দেখায় যে তাদের উদ্দেশ্য সত্।তাদের এই মিথ্যা অভিনয় বিশ্বাসীদের বুঝতে হবে।
এখানে তিন শ্রেণীর মুনাফিকদের কথা বলা হয়েছে। প্রথম শ্রেণী হচ্ছে সর্বান্তকরণে মুনাফিক। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে তারা খুব সহজে কুপ্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়। তৃতীয় শ্রেণীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে। এরা অনুতাপ করলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন ।
(ক) মুসলিম
(খ) মুনাফিক
(ক) মুসলিম:
মোহাজির ও আনসারদের অগ্রগামী দল এবং সে সব ব্যক্তি যারা নিষ্ঠা সহকারে মোহাজের ও আনসারদের অনুসরণ করেছে। (১০০)
তাদের বৈশিষ্ট্য :
মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।
তাদের ঈমান ও সৎকর্ম আল্লাহ গৃহণ করেছেন।
আল্লাহ পুরস্কার স্বরূপ এমন জান্নাত দিবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।
তাদের সফলতা তারা অনন্তকাল জান্নাতে থাকবে ববেং আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
দুর্বল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক। (১০২, ১০৪, ১০৫))
সমাজে সব লোকের মনোবল সমান নয়। এদের বৈশিষ্ট্য :
এরা মুসলিম। কিন্তু বিনা অজুহাতে তাবুক যুদ্ধে অংশ নেয় নি।
এরা যে অসৎ বা মন্দ কাজ করেছে তা তারা স্বীকার করে নেয়।
তাদের অনেক সৎ বা ভাল কাজ আছে।
কিন্তু দুর্বল চিত্তের লোক হওয়ায় পরিবেশের চাপে অনেক সময় মন্দ কাজ করে ফেলে।
তাদের পাপবোধ তাদের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে।
আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
অনুতাপকারী মুসলিমদের কাছ থেকে ‘সাদাকা’ গ্রহণ এবং দোয়া করে তাদের অন্তর যে পাপবোধের তমসায় আচ্ছন্ন ছিল তা হতে মুক্ত হতে বলেছেন।
আল্লাহ অনুতপ্ত বিশ্বাসীদের ক্ষমা প্রার্থনার কথা ভালভাবেই শোনেন এবং জানেন।
কিছু লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে।(১০৬)
এদের বৈশিষ্ট্য:
এরা তাদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে।
তারা তাদের অপরাধের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
তাদের বড় অপরাধ তাবুক যুদ্ধে যোগ না দিয়ে বিনা ওজরে বাড়ীতে বসে থাকে।
তারা আল্লাহর আদেশের প্রতীক্ষায় ছিলেন আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন না ক্ষমা করবেন (ইম্মা) ।
(খ) মুনাফিক:
মদিনা ও মরুবাসী মোনাফিকের দল যারা কপটতায় পাকাপোক্ত হয়েছিল । (১০১)
তাদের বৈশিষ্ট্য :
নবী (সঃ) তাদের কে চিনতেন না এবং তাদের সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণা ছিল না।
মহান আল্লাহ তাদের পরিচয় জানতেন।
তারা তাদের মুনাফেকীতে অটল ও অনড় ছিল।
মহান আল্লাহ তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিবেন।
তারা পরকালে মহা শাস্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
তারা আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করে । (১০৭)
তারা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, ক্ষতিসাধন এবং কুফরী কাজ প্রসারের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে।
তাদের আমল লোক দেখানোর উপর ভিত্তি করে করে।
মুনাফিকদের মসজিদ অপবিশ্বাস ও অপবিত্রতার উপর নির্মিত।
মহান আল্লাহ তাদের গৃহের তুলনা করেছেন খাদের সাথে যার তলদেশে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে তলদেশ ফাঁকা হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। (১০৯,১১০)