সূরা তাওবা। রুকু ১২। মরুবাসী বেদুঈন মুনাফিক।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালূ আল্লাহর নামে
আয়াত ৯০- ৯৯
শিরোনাম : মরুবাসী বেদুইন মুনাফিক।
প্রধান আলোচ্য বিষয়:
ক. মরুবাসী মুনাফিক ।
খ. সঠিক অজুহাত হলে ক্ষমা ।
গ. কার অজুহাত গৃহীত হবে না।
ঘ. মুমিনরা জিহাদ থেকে ফিরে আসার পর মুনাফিকদের ওজর দেবার অগ্রিীম সংবাদ প্রদান।
ঙ. মরুবাসী মুনাফিকদের চরিত্র ও মুমিনদের প্রশংসা।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
৯০ নং আয়াত: মরুবাসী মুনাফিক ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯০) মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক অজুহাত প্রকাশ করিতে আসিল যেন ইহাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং যাহারা বসিয়া রহিল তাহারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে মিথ্যা বলিয়াছিল, উহাদের মধ্যে যারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের মর্মন্তুদ শাস্তি হইবেই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে মরুবাসী বেদুইনের দুই দল লোকের কথা বলা হয়েছে।
প্রথম দল : তারা এসে অজুহাত দিয়ে যুদ্ধের সময় ঘরে বসে থাকার অনুমতি চায়।
দ্বিতীয় দল : তারা এসে অজুহাত দেবার প্রয়োজন মনে করেনি।
(i) বিনা কারণে ঘরে বসে থাকে।
(ii) আল্লাহ ও রাসুলের সাথে মিথ্যা বলে।
(iii) তারা সত্য প্রত্যাখ্যান (কুফরী) করে।
(iv) তাদের মর্মন্তুদ শাস্তি হবে।
এরা আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর কাছে মিথ্যা বলার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে।
৯১ ও ৯২ নং আয়াত: সঠিক অজুহাত হলে ক্ষমা ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯১) যাহারা দুর্বল, যাহারা পীড়িত এবং যাহারা অর্থ সাহাযে্য অসমর্থ, তাহাদের কোন অপরাধ নাই , যদি আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি তাহাদের অবিমিশ্র অনুরাগ থাকে। যাহারা সত্কর্মপরায়ণ তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন হেতু নাই; আল্লাহ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯২) উহাদেরও কোন অপরাধ নাই যাহারা তোমার কাছে বাহনের জন্য আসিলে তুমি বলিয়াছিলে, 'তোমাদের জন্য কোন বাহন আমি পাইতেছিনা ; উহারা অর্থব্যয়ে অসামর্থ্যজনিত দুঃখে অশ্রুবিগলিত নেত্রে ফিরিয়া গেল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যুদ্বে না যাবার অনুমতি কারা পাবে?
প্রথম শর্ত হল আল্লাহ ও রাসুল (আঃ) এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকবে এবং সে সাথে নিম্নলিখিত অজুহাতের যে কোনটি থাকলে:
আরবী শব্দ 'দ্বয়াফয়ি' অর্থ্যাত্ বিকলাঙ্গ, বৃদ্ধ, অক্ষম , দুর্বল।
'মারদ্বা' অর্থ্যাত্ অন্ধ এবং এ ধরণের পীড়িত বা অসুস্থ ব্যক্তি।
'ইয়্যাজিদুনা' অর্থ্যাত্ যাদের কোন সম্বল নেই।
যাদের কাছে বাহন ছিল না।
আর্থিক অসমর্থতা হেতু তারা বাহন পায় নি।
সে সব আন্তরিকতাপূর্ণ খাঁটি মুসলিম যাদের সত্যি জিহাদে না যাওয়ার অজুহাত ছিল এবং যারা জিহাদে না যেতে পেরে মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে।
৯৩ নং আয়াত: কার অজুহাত গৃহীত হবে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৩ ) যাহারা অভাবমুক্ত হইয়াও অব্যাহতি প্রার্থনা করিয়াছে, অবশ্যই উহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের হেতু আছে। উহারা অন্তঃপুরবাসিনীদের সঙ্গে থাকাই পছন্দ করিয়াছিল; আল্লাহ উহাদের অন্তরে মোহর মারিয়া দিয়াছেন, ফলে উহারা বুঝিতে পারে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নিম্নের লোকদের অজুহাত গৃহীত হবে না।
সক্ষম ধনী ব্যক্তিরা য়দি জেহাদে অংশগ্রহণ গ্রহণ না করার অনুমতি চায়।
যারা অন্তঃপুরবাসিনী অর্থ্যাত্ মহিলা, শিশু কিংবা প্রকৃত অক্ষমদের পিছনে থাকে।
আল্লাহ তাদের শাস্তি হিসাবে হৃদয়ে মোহর (বিবেক ও অন্তরে) মেরে দিয়েছেন।
ফলে তারা অপমানজনক নিরাপত্তা এবং ঘৃণ্য বিলাসিতাকে পছন্দ করে।
৯৪-৯৬ নং আয়াত: মুমিনরা জিহাদ থেকে ফিরে আসার পর মুনাফিকদের ওজর দেবার অগ্রিীম সংবাদ প্রদান।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৪) তোমরা উহাদের নিকট ফিরিয়া আসিলে উহারা তোমাদের নিকট অজুহাত পেশ করিবে। বলিও, 'অজুহাত পেশ করিও না, আমরা তোমাদের কখনও বিশ্বাস করিব না; আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানাইয়া দিয়াছেন এবং আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করিবেন এবং তাঁহার রাসুলও। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা তাঁহার নিকট তোমাদেরকে প্রত্যবর্তিত করা হইবে এবং তিনি তোমরা যাহা করিতে, তাহা তোমাদেরকে জানাইয়া দিবেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে মুনাফিকদের অগ্রীম কথা জানিয়ে দিচ্ছেন।
মুনাফিকরা সাহাবীদের যুদ্ধের মাঠ থেকে ফিরে আসার পর মিথ্যা কসম খেয়ে নবী (সঃ) ও মুসলমানদের আশ্বস্ত করতে চাইবে।
মহান আল্লাহ তাদের কথায় বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি তাদেরকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে বলেছেন তারা যে মিথ্যা অজুহাত পেশ করছে তা মুমিনরা জানেন ।
তাদেরকে আরো জানাতে বলেছেন এ খবর আল্লাহর কাছ থেকে শোনা।
আরো বলতে বলেছেন আমরা তোমাদের কথায় আমরা আশ্বস্ত হব না এবং বিশ্বাসও করব না।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মুনাফিকদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।
আল্লাহ দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা।
আল্লহ কাছে সবাইকে প্রত্যবর্তন করতে হবে।
আল্লাহ সেদিন সব কিছু অবহিত করবেন।
৯৫ নং আয়াত : মুমিনদের প্রতি নির্দেশনা।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৫) তোমরা উহাদের নিকট ফিরিয়া আসিলে অচিরেই উহারা শপথ করিবে যাহাতে তোমরা উহাদের উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা উহাদেরকে উপেক্ষা করিবে; উহারা অপবিত্র এবং উহাদের কৃতকমেংর ফলস্বরূপ জাহান্নাম উহাদের আবাসস্থল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৬) উহারা তোমাদের নিকট শপথ করিবে যাহাতে তোমরা উহাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা উাহাদের প্রতি তুষ্ট হইলেও আল্রাহ তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------তাদের মিথ্যা অজুহাত দেযার উদ্দেশ্য হল অপরাপর মুসলমানরা যেন তাদের যুদ্ধে অনুপস্থিতিকে উপেক্ষা করে।
- আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদেরকে উপেক্ষা করতে বলেছেন।
- তাদের ঘৃণ্য কাজকর্মের জন্য তাদের পাকড়াও করে শাস্তি দিতে নিষেধ করেছেন।
- তাদের মুনাফেকীর কারণে তারা অপবিত্র।
- তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য আবাসস্থল হিসাবে জাহান্নামকে পাবে।
- মুনাফিকরা মুসলমানদের কাছে থেকে আশা করে তাদের ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।
- কিন্তু আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন রাসুল (সঃ) তাদের ক্ষমা করলেও মহান আল্লাহ তাতে খুশী হবেন না।
- মুনাফেকদের বেলায আল্রাহর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
( জিহাদে না গিয়ে গৃহে অবস্থান করার অর্থ আল্রাহর দীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া। আল্লাহ এই ফাসেক ও না ফরমান লোকদের প্রতি কখনই সন্তুষ্ট হন না। )
৯৭ - ৯৯ নং আয়ত: মরুবাসী মুনাফিকদের চরিত্র বিশ্লেষণ ও মুমিনদের প্রশংসা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৭) কুফরী ও কপটতায় মরুবাসীরা কঠোরতর; এবং আল্লাহ তাঁহার রাসুলের প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, তাঁহার সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার যোগ্যতা ইহাদের অধিক। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৮) মরুবাসীদের কেহ কেহ, যাহা তাহারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাহা অর্থদন্ড বলিয়া মনে করে এবং তোমাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে। মন্দ ভাগ্যচক্র উহাদেরই হউক। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৯৯) মরুবাসীদের কেহ কেহ আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে এবং যাহা ব্যয় করে তাহাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসুলের দু'আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই উহা তাহাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়; আল্লাহ তাহাদের নিজ রহমতে দাখিল করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তিন ধরণের বেদুইন মরুবাসীদের চরিত্র:
কে) এক ধরণের মরুবাসী আছে যারা কুফর ও কপটতায়
কঠোর।
তারা বহু যুগ ধরে নবী-রাসুলদের সংস্পর্শে আসেনি।
(খ) আরেক ধরণের মরুবাসী যারা আল্লাহর নামে অর্থ ব্যয় করাকে জরিমানা বলে মনে করে এবং মুসলমানদের জন্য মুসিবত কামনা করে।
(গ) আবার বিশ্বাসী মরুবাসী আছে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি প্রতি ঈমান আনে এবং আল্লাহর নামে তারা ব্যয় করে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর নৈকট্য লাভের জন্য।
আল্লাহর নৈকর্ট এবং রাসুলের দোয়া: পাবার উপায়।
আল্লাহ রাহমানুর রাহীম। তাঁর রহমত সমগ্র বিশ্বব্যপী সবার জন্য ছড়িয়ে আছে। যারা আল্লাহর রহমত পাবে সে আল্লাহর রহমতে অবগাহন করতে পারবে।
এখন প্রশ্ন হল কিভাবে করব?
আমরা পারব। এর জন্য প্রয়োজন আত্মিক শুদ্ধি, আত্মিক পবিত্রতা প্রয়োজনীয় গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি।
আমরা যদি নিজেদের এভাবে তৈরী করতে পারি তবে আমরা আল্লাহর রহমত বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।
আর রাসুলের দোয়া পাওয়া অর্থ হল ‘তিনি আমার উপর সন্তুষ্ট। ’ রাসুল (সঃ) আমার উপর সন্তুষ্ট থাকলে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
এখানে উদাহরণ হিসাবে আল্লাহর পথে দান-সদকাকে বলা হয়েছে। হাদীসে আছে হযরত আবদুল্লাহ বিন আউফা বর্ণনা করেছেন, আমি যখন রসুল (সঃ) এর নিকট আমি আমার যাকাতের মাল অর্পণ করলাম, তখন তিনি দোয়া করলেন। আল্লাহ তাঁর ও তাঁর সন্তানদের প্রতি রহমত অবতীর্ণ করেন।
আমার অনুধাবন।
মুনাফিকরা সত্য প্রত্যখ্যানকারী এবং কপটতায় অনড়।
আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর আদেশ শোনার পর তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
কোন কাজ করতে না চাইলে তাতে মিথ্যা অজুহাত দেয়া উচিত নয়। যারা করে তাদেরকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন।
কেউ গুনাহ করলে হতাশ হবার কিছুই নেই। সে যদি লজ্জা ও অনুশোচনা প্রকাশ করে এবং মনোযোগ দিয়ে তওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেন।
আল্লাহর পথে বাধ্যতামূলক ব্যয়কে অনর্থক বলে মনে করা উচিত নয়।