সূরা তাওবা। রুকু -৮ । মুনাফিক
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়,পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা ।
রুকু ৮ : আয়াত ৬০ - ৬৬
মুনাফিক।
আলোচ্য বিষয়:
ক. সাদাকাত বা বাধ্যতামূলক দান পাবার যোগ্য লোকদের পরিচয়। (৬০)
খ. নবী (সাঃ) এর সাথে মোনাফেকদের বেয়াদবী ও আল্লাহর উত্তর। (৬১)
গ. অসৎ উদ্দেশ্যে মুনাফিকদের মিথ্যা শপধ। (৬২, ৬৩)
ঘ. মুনাফিকদের আচরণের পর্যালোচনা। (৬৪-৬৬)
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
ক. ৬০ নং আয়াত: সাদাকাত বা বাধ্যতামূলক দান পাবার যোগ্য লোকদের পরিচয়।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬০) সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদিগের জন্য, যাহাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাহাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। ইহা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাত :
অভাব গ্রস্থ।।
নিঃস্ব।
যাকাত বিভাগীয় কর্মচারীদের বেতন বাবদ দেয়।
যারা সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেছে অর্থ্যাৎ নও মুসলিম।
বন্দী মুক্তি।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্ত করার জন্য দান।
আল্লাহর দ্বীনকে যমীনের বুকে কায়েম রাখার জন্য সংগ্রামকারী
মুসাফির। যারা সফরে এসে সম্পদ শূণ্য হয়ে যায়।
এই বিধান আল্লাহর নির্ধারিত ফরয বিধান।
মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাময়।
৬১ নং আয়াত: নবী (সাঃ) এর সাথে মোনাফেকদের বেয়াদবী ও আল্লাহর উত্তর।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬১) তাদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে যারা আল্লাহর নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে তো কর্ণপাতকারী ’। বল , তোমাদের পক্ষে যা মঙ্গলজনক তাহাই শুনে। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদের কথা বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছ , তাদের জন্য সে রহমত। যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয় , তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকদের কুৎসা রটনা করা ।
(i) নবী (সাঃ) এর চরিত্রে দোষারোপ করেন।
(ii) তিনি কান কথা শোনেন।
নবী (সাঃ) কে অপবাদের উত্তরে আল্লাহ এরশাদ করেন।
(i) নবী (সঃ) কান পেতে যে কথা শোনেন, তা আল্লাহর ওহী। তা সকলের কল্যাণের জন্য নাযিল হয়
(ii) তিনি মুমিনদের কথা শুনে বিশ্বাস করেন। কারণ তিনি জানেন মুমিনরা মিথ্যা বলেন না।
(iii) তিনি সবার সাথে দয়ার আচরণ করেন। তাই মুনাফিকদের কথাও শোনেন ।
( iv) মুনাফিকদের কথা সরাসরি প্রত্যখ্যান না করে নীরবতা অবলম্বন করেন।
(v) আল্লাহতায়ালা তাঁকে রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন।
নবী (সঃ)কে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছে।
৬২ ও ৬৩ নং আয়াত: অসৎ উদ্দেশ্যে মুনাফিকদের মিথ্যা শপধ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬২) উহারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য তোমাদের নিকট আল্লাহর শপথ করে। আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল ইহারই অধিক হকদার যে, উহারা তাদেরকেই সন্তুষ্ট করে, যদি উহারা মুমিন হয়।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৩) উহারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের বিরোধিতা করে তাহার জন্য তো আছে জাহান্নামের অগ্নি, যেখানে সে স্থায়ী হইবে? ইহাই চরম লাঞ্ছনা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকরা আল্লাহর শপথ করে রাসুল (সঃ)কে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করত।
কিন্তু আল্লাহর নামে শপথ করলেও তারা আল্লাহকে পরিতুষ্ট করতে পারবে না। যদি তারা বিশুদ্ধ চিত্ত বিশ্বাসী হত তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সন্তুষ্ট করতে পারত।
জিহাদে অংশগ্রহণ না করে যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধিতা করবে তাদের জন্য শাস্তি হল জাহান্নামের আগুন।
সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
মুনাফিকদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম লাঞ্ছনা।
৬৪ হতে ৬৬ নং আয়াত : মুনাফিকদের আচরণের পর্যালোচনা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৪) মুনাফিকেরা ভয় করে, তাহাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না অবতীর্ণ হয়, যাহা উহাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দিবে। বল, 'বিদ্রূপ করিতে থাক; তোমরা যাহা ভয় কর আল্লাহ তাহা প্রকাশ করে দিবেন।'
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৫) এবং তুমি উহাদেরকে প্রশ্ন করিলে উহারা নিশ্চয়ই বলিবে, 'আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া -কৌতুক করিতে ছিলাম। বল, 'তোমরা কি আল্লাহ, তাঁহার নিদর্শন ও তাঁহার রাসূলকে বিদ্রূপ করিতেছিলে?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৬) "তোমরা দোষ স্খালনের চেষ্টা করিও না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করিয়াছ। তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব কারণ তাহারা অপরাধী।
------------------------------------------------------------------------------ -------------------------------------------------
মুনাফিকরা সব সময় আতংকিত থাকত :
মুনাফিকদের উপহাস মূলক কথাবার্তা আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন।
তাদের বিদ্রূপ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অস্বীকার করত।
তারা বলত তারা ঐ সব কথা ফূর্তি করার জন্য বলেছে। মন থেকে বলেনি।
আল্লাহ তাদের মিথ্যা অজুহাত দিতে নিষেধ করছেন।
আল্লাহ জানেন, তারা ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
যারা তাওবা করবে তাদের ক্ষমা করবেন।
যারা অপরাধী আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন।
অনুধাবন:
দারিদ্র বিমোচন এবং ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণে সাদাকাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
আল্লাহর সৃষ্ট জীবকে উপেক্ষা করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করা যায় না।
স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আল্লাহর নির্দেশমত সাদাকা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা আল্লাহর নির্দেশমত ফরয বণ্টন ব্যবস্থা।
যাকাত ব্যবস্থা কারো ইচ্ছাধীন নয়। ইচ্ছা হলে দিলাম অথবা ইচ্ছা হল না তাই দিলাম না - এ অধিকার কারো নেই।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে কটাক্ষ ও অপবাদ দেয়া যাবে না। যারা করে তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি দেয়ার জায়গা জাহান্নাম অপেক্ষা করছে।
তাঁর আচরণ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত কিভাবে তিনি মানুষের কথা শোনেন এবং তাদের মর্যাদা দেন। মানুষের সাথে কত বিনয় ও নম্রতার সাথে ব্যবহার করেন।
মুনাফিক ব্যক্তি সবসময় ভয় ও সংশয় চিত্তে থাকে। তাদের ভয় কখন মহান আল্লাহ মুনাফিকদের মনের খবর প্রকাশ করে দেন। তখন তারা সমাজে চরম বেইজ্জতীর সম্মুখীন হবেন।
কিছু মুনাফিক আছে যারা মুসলমানদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করে কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য থাকে তাদের মধ্যে অপপ্রচার করে তাদের মনোবল নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় তারা জিহাদের মাঝখানে সরে গিয়ে বিপদে ফেলে দেয়। এ ধরণের মুনাফিক সম্পর্কে সতর্ক থাকা।