সূরা তাওবা। রুকু -১১। মুনাফিক।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন , অন্যকে বলুণ।
দয়াময়, পরম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা। রুকু -১১।
আয়াত: ৮১- ৮৯
মুনাফিক।
মূল আলোচ্য বিষয়:
ক. জিহাদের ডাকে মুনাফিকদের গড়িমসি এবং পরিণাম (৮১-৮৬) ।
খ. মুনাফিকদের জানাজা না পড়ার নির্দেশ। (৮৪) ।
গ. কাফিরদের জন্য সম্পদ ও সন্তান আযাবের উপকরণ (৮৫) ।
ঘ. জিহাদে পিছনে থাকা মুনাফিকদের চিরন্তন অভ্যাস। (৮৬ -৮৭)।
ঙ. সফলকাম যারা (৮৮-৮৯) ।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
ক. ৮১-৮৩ নং আয়াত: জিহাদের ডাকে মুনাফিকদের গড়িমসি এবং পরিণাম
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮১) যাহারা পশ্চাতে রহিয়া গেল তাহারা আল্লাহর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করিয়া বসিয়া থাকাতেই আনন্দবোধ করিল। এবং তাহাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপছন্দ করিল এবং তাহারা বলিল, ' গরমের মধ্যে অভিযানে বাহির হইও না।' বল, 'উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম' , যদি তাহারা বুঝিত।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮২) অতএব তাহারা কিঞ্চিৎ হাসিয়া লউক, তাহারা প্রচুর কাঁদিবে, তাহাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৩) আল্লাহ যদি তোমাকে উহাদের কোন দলের নিকট ফেরত আনেন এবং উাহারা অভিযানে বাহির হইবার জন্য তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে, তখন তুমি বলিবে, 'তোমরা তো আমার সঙ্গে কখনও বাহির হইবে না এবং তোমরা আমার সঙ্গী হইয়া কখনও শত্রুর সাঙ্গে যুদ্ধ করিবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসিয়া থাকাই পছন্দ করিয়াছিলে; সুতরাং যাহারা পিছনে থাকে তাহাদের সঙ্গে বসিয়াই থাক।'
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তাবুক যুদ্ধের সময়কার কথা। সে সময় ছিল গ্রীষ্মকাল। আবহাওয়া ছিল প্রচন্ড তপ্ত। বাইজেন্টাইন সম্রাট মুসলমানদের আক্রমণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন, এই গুজবের ভিত্তিতে রাসুল (সঃ) তাবুক অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু মুনাফিকরা এই জিহাদের ডাকে সাড়া দেয় নি।
মুনাফিকরা বাইরে নিজেদের ঈমানদার বলে প্রকাশ করলেও অন্তরে সত্য প্রত্যখ্যানকারী।
রাসুল (সঃ) সবাইকে যুদ্ধে যাবার নির্দেশ দেন।
মুনাফিকরা রাসুল (সঃ) এর সঙ্গ ত্যাগ করাকেই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে।
তাই তারা দাবদাহকে অজুহাত দেখিয়ে যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করে।
তাদের জীবন ও ধন-সম্পদ নিয়ে জিহাদে যাবার আমন্ত্রণে সাড়া দেয় নি।
তারা রাসুল (সঃ) এর জিহাদের আমন্ত্রণকে উপেক্ষা করে বাড়ীতে বসে থাকতেই আনন্দ লাভ করে।
তারা ভুলে গেল জাহান্নামের আগুন এর থেকে প্রচন্ডতম।
তারা বর্তমান সামায়িক সুখে হাসি-খুশী থাকবে কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের কান্নার সীমা-পরিসীমা থাকবে না।
আল্লাহ তাঁর রাসুল (সঃ)কে বলছেন, তাবুক যুদ্ধের পর কোন মুনাফিক সঙ্গী হতে চাইলে তাকে আর গ্রহণ না করতে।
কারণ তারা আসলে যুদ্ধ করবে না।
তোমরা অকর্মণ্যভাবে বসে থাকা পছন্দ কর।
যারা পিছনে বসে থাকে তাদের সাথে বসে থাক।
খ. ৮৪ নং আয়াত: মুনাফিকদের জানাজা না পড়ার নির্দেশ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৪) উহাদের মধ্যে কাহারও মৃত্যু হইলে তুমি কখনও উহার জন্য জানাযার সালাত পড়িবে না এবং উহার কবরের পাশে দাঁড়াইবে না, উহারা তো আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলকে অস্বীকার করিয়াছিলএবং পাপাচারী অবস্থায় উহাদের মৃত্যু হইয়াছে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকদের জানাজার সালাত না পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাদের কবরের পাশেও দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।
কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করে।
এবং কাফের বা সত্যত্যাগী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।
গ. ৮৫ নং আয়াত:কাফিরদের জন্য সম্পদ ও সন্তান আযাবের উপকরণ ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৫) সুতরাং উহাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাকে যেন বিমুগ্ধ না করে; আল্লাহ তো উহাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান; উহারা থাকা অবস্থায় উহাদের আত্মা দেহত্যাগ করিবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেখে মুমিনদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়।
এগুলো হলো মুনাফিকদের পার্থিব জীবনে শাস্তি দেবার উপকরণ।
ধন-সম্পদ এবং সন্তানসন্ততি দিয়ে তারা পার্থিবতায় নিমগ্ন থাকবে।
এটাই তাদের পার্থিব জীবনের শাস্তি।
ঘ. ৮৬ নং আয়াত:জিহাদে পিছনে থাকা মুনাফিকদের চিরন্তন অভ্যাস।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৬) 'আল্লাহর উপর ঈমান আন এবং রাসুলের সঙ্গী হইয়া জিহাদ কর' - এই মর্মে যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন উহাদের মধ্যে যাহাদের শক্তি-সামর্থ্য আছে তাহারা তোমার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, 'আমাদেরকে রেহাই দাও, যাহারা বসিয়া থাকে আমরা তাহাদের সঙ্গেই থাকিব।'
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৭) উহারা অন্তঃপুরবাসিনীদের সঙ্গে অবস্থান করাই পছন্দ করিয়াছে এবং উহাদের অন্তর মোহর করা হইয়াছে; ফলে উহারা বুঝিতে পারে না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর উপর ঈমান আনতে এবং রাসুলের সঙ্গী হয়ে জিহাদ করার নির্দেশ আসলে শক্তি-সামর্থবান মুনাফিকরা ::
(ক) যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি চায়।
(খ) ঘরে যারা বসে থাকে অর্থ্যাৎ অন্তঃপুরবাসিনীদের মত বসে থাকতে চায়।
(গ) তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়।
(ঘ) তাই তারা বোঝে না যে আল্লাহর ও রাসুল (সঃ) কে অনুসরণের মধ্যে আছে প্রকৃত
সৌভাগ্য।
ঙ. ৮৮ ও ৮৯ নং আয়াত: সফলকাম যারা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৮) কিন্তু রাসুল এবং যাহারা তাহার সঙ্গে ঈমান আনিয়াছিল তাহারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করিয়াছে; উহাদের জন্যই কল্যাল আছে এবং উহারাই সফলকাম।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮৯) আল্লাহ উহার জন্য প্রস্তুত করে রাখিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, ইহাই মহাসাফল্য।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সঃ) এর উপর যারা ঈমান এনেছে।
নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে।
যাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন।
তাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান হবে সেই জান্নাত যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত।
অনুধাবন:
যে কাজ করা এখন খুবই কষ্টদায়ক কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য যা মঙ্গলজনক সে কাজ করা হতে পিছ পা ওয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কষ্ট সাময়িক কিন্তু আখেরাতের কষ্ট চিরস্থায়ী।
ক্ষণস্থায়ী সুখে কিছুকাল হাসিখুশী থাকা যায় কিন্তু অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য পরবর্তী কালে তাদের কান্নার সীমা পরিসীমা থাকবে না।
মুনাফিকদের হৃদয় আল্লাহ মোহরাঙ্কিত করে দেন বলে তারা অকর্মণ্য লোকদের সাথে থাকতে পছন্দ করে।
যে সব ব্যক্তি জিহাদের ডাক পাওয়া সত্বেও জিহাদে না গিয়ে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ নিয়ে ব্যস্ত থাকে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর আহ্বানকে অবজ্ঞা করে সেসব মানুষকে সম্মান করা যাবে না। তাদের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা যাবে না।
মুনাফিকদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান -সন্ততির কোন মূল্যই আল্লাহর কাছে নেই। মুমিনরা যেন তাদের প্রাচুর্য দেখে না ভাবে তারা বেশী সম্মানিত।
আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী সব বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত।