সূরা তাওবা । রুকু -১০।মুনাফিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামেম শুরূ।
সূরা তাওবা।
রুকু ১০। আয়াত ৭৩-৮০
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ।
আলোচ্য বিষয়:
ক. কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ। (৭৩)
খ. আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ ।(৭৪)
গ. সম্পদের মোহ মানুষকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করে দেয়। (৭৫-৭৮)
ঘ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দাতা। (৭৯)
ঙ. কঠোর ভায়ায় কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সাবধান বাণী। (৮০)
আয়াত অনুযায়ীআলোচিত বিষয়:
৭৩ নং আয়াত: কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৩) হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও উহাদের প্রতি কঠোর হও; উহাদের আবাসন্থল জাহান্নাম, উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল। !
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতে আল্লাহ নবী (সঃ) কে কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আদেশ দেন।
তাদের প্রতি কঠোর হবার আহ্বান জানান।
কাফির ও মুশরিকরা প্রত্যাবর্ন করবে জাহন্নামে।
যা হচ্ছে হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম বাসস্থান।
৭৪ নং আয়াত: আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৪) উহারা আল্লাহর শপথ করে যে, উহারা কিছু বলে নাই; কিন্তু ইহারা তো কুফরীর কথা বলিয়াছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর উহারা কাফির হইয়াছে; উহারা যাহা সংকল্প করিয়াছিল তাহা পায় নাই। আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল নিজ কৃপায় উহাদেরকে অভাবমুক্ত করিয়াছিলেন বলিয়াই উহারা বিরোধিতা করিয়াছিল। উহারা তওবা করিলে উহাদের জন্য ভাল হইবে, কিন্তু উহারা মুখ ফিরাইয়া লইলে আল্লাহ দুনিয়ায় ও আখিরাতে উহাদের মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন; পৃথিবীতে উহাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকদের স্বভাব হল নিজেদের মধ্যে বৈঠকে তারা অবিশ্বাসীসুলভ কথাবার্তা বলত।
তারা ইসলাম গ্রহণের পরও সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা আল্লাহর শপথ করে তা বলেনি বলে অস্বীকার করত।
আসলে তারা আন্তরিকভাবে কখনো ইসলাম গ্রহণ করে নি। মুখেই শুধু ইসলামের কথা বলত।
তারা কোন গুপ্ত ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু তারা সফল হতে পারে নি।
মদীনাতে রাসুল (সঃ) এর শুভাগমনের বরকতে মদীনাবাসীদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভাল হয়ে যায়।
কিন্তু তার প্রতিদানে মুনাফিকরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে একটির পর একটি ষড়যন্ত্র করতে থাকে।উপকারীর সর্বনাশ করাই তাদের বৈশিষ্ট্য।
তবে যারা বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থী হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।
কিন্তু যারা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবেনা তাদের ক্ষমা করা হবে না।
মুনাফিকদের এই দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে।
পার্থিব সম্পদের মোহ তাদের অন্ধ করে দেয়।
এই পৃথিবীতে তাদের কোন অভিভাবক ও সহায়ক নেই।
৭৫ থেকে ৭৮ নং আয়াত : সম্পদের মোহ মানুষকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করে দেয়।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৫) উহাদের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করিয়াছিল, 'আল্লাহ নিজ কৃপায় আমাদেরকে দান করিলে আমরা নিশ্চয়ই সাদাকা
দিব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হইব।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৬) অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় উহাদেরকে দান করিলেন, তখন উহারা এই বিষয়ে কার্পণ্য করিল এবং বিরুদ্ধাভাবাপন্ন হইয়া মুখ ফিরাইল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৭) পরিণামে তিনি উহাদের অন্তরে কপটতা স্থিত করিলেন, আল্লাহর সঙ্গে উহাদের সাক্ষাত্ দিবস পর্যন্ত, কারণ উহারা আল্লাহর নিকট যে অঙ্গীকার করিয়াছিল উহা ভঙ্গ করিয়াছিল; কারণ উহারা ছিল মিথ্যাচারী।
------------------------------------------------------------------------------
(৭৮) উহারা কি জানিত না যে, উহাদের অন্তরের গোপন কথা ও উহাদের গোপন পরামর্শ আল্লাহ অবশ্যই জানেন এবং যাহা অদৃশ্য তাহাও তিনি বিশেষভাবে জানেন?
------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিকরা অঙ্গীকার করে সেই অঙ্গীকারের কথা আবার ভুলে যায়। তারা অঙ্গীকার ভঙ্গের সাথে সাথে বিশ্বাস ও নষ্ট করে।
তাদের রয়েছে তিনটি বৈশিষ্ট্য - অঙ্গীকার ভঙ্গকারী, বিশ্বাসভঙ্গকারী এবং মিথ্যাচারী।
যেমন সে অঙ্গীকার করল আল্লাহ যদি তাকে নিজ করুণায় দান করেন তবে সে সাদাকা দিবে ।
সৎকর্মশীলদের অন্তর্গত হবে।
কিন্তু আল্লাহ নিজ দয়া ও মহানুভবতা দ্বারা ধনবান করে দেবার পর সে প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়।
সে সাদাকা দিতে কার্পণ্য ও বিরোধিতা করে।
দান করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ফলে তাদের মিথ্যাচারের দরুন শাস্তি হিসাবে বিচারের দিন পর্যন্ত তার অন্তরে কপটতা স্থির করে দিলেন।
মহান আ্ল্লাহর কাছে তকারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী এবং মিথ্যাচারী।
মুনাফিকরা জানেনা মহান আল্লাহ তাদের অন্তরের গোপন অভিপ্রায় সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
তাদের গোপন পরামর্শ সম্পর্কে আল্লাহ জানেন।
যা কিছু অদৃশ্য সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালভাবেই জানেন।
৭৯ নং আয়াত: স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দাতা। ( মুত্তাওবিয়িনা)
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭৯) মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদকা দেয় এবং যাহারা নিজ শ্রম ব্যাতিরেকে কিছুই পায় না, তাহাদেরকে যাহারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ উহাদেরকে বিদ্রূপ করেন, উহাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আযাতের উদ্দেশ্য স্বতঃস্ফূর্ত দান খয়ারাতে অনুপ্রাণিত করা।
মুনাফেকরা বিদ্রূপ করে :
(i) মুমিনদের মধ্যে যারা ন্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করে।
(ii) যারা তাদের শ্রমের বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করে না।
মহান আল্লাহ এ ধরণের বিদ্রুপ ও দোষারোপকারী লোকদের বিদ্রুপ করেন।
তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
৮০ নং আয়াত: কঠোর ভায়ায় কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সাবধান বাণী।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৮০) তুমি উহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা উহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা; তুমি সত্তর বার উহাদের জন্য জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিলেও আল্লাহ উহাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। ইহা এইজন্য যে, উহারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে কুফরী করিয়াছে। আল্লাহ পাপচারী সম্প্রদায়কে সত্পথ প্রদর্শন করেন না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর স্বভাব অনুযায়ী সবার জন্য মঙ্গল কামনা করতেন। মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবন উবাউ ইবনে সালুল এর মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার জানাজার নামাজ পড়ান এবং দোয়া করেন। এই আয়াতে রাসুল (সঃ) এর প্রার্থনার জবাবে তা নাকচ করে দেন।
মুনাফিকদের জন্য নবীর প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন নি।
তিনি পুনঃ পুনঃ সত্তর বার দোয়া করলেও আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করবেন না।
কারণ ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব হচ্ছে মূল কথা।
যে পাপাচারী এবং আল্লাহ ও রাসুলের সাথে কুফরী করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত অর্থ্যাত্ সৎ পথ প্রদর্শন করবেন না।
অনুধাবন:
মহান আল্লাহ মুনাফিকদের সাথে কঠোর আচরণের নির্দেশ দিয়ে তাদের সাথে নম্র-ভদ্র ব্যবহার এবং ক্ষমা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ তাদের সাথে যতই ভাল ব্যবহার করা হোক মুনাফেকী আচরণ তারা করতেই থাকবে।
সাধারণত মানুষের উপকার করলে তাদের কাছ থেকে কৃতজ্ঞ ব্যবহার আশা করা হয়। কিন্তু মুনাফিকরা তাদের প্রতি যে সৌজন্যবোধ ও ইহসান করা হয় তার বদলে তারা একটির পর একটি চক্রান্ত করতে থাকে। তাদের ক্ষমা করে লাভ হয় না। কারণ তাদের অন্তরের কোন পরিবর্তন হয় না।
প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারী, বিশ্বাস ভঙ্গকারী ও মিথ্যাচারী মুনাফিক মানুষদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
আল্লাহ আমাদের অন্তরের সব চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবহিত। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন করার সুযোগ নেই।
সত্যত্যাগীদের আল্লাহ কখনোই পথ প্রদর্শন করেন না। যারা সত্যানুসন্ধান করে তাদের পথ প্রদর্শন করেন।