সূরা তাওবা । রুকু-৯। মুনাফিক
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা। রুকু-৯
আয়াত ৬৭- ৭২
মুনাফিক
আলোচ্য বিষয়::
ক. মুনাফিকদের পারস্পরিক সাদৃশ্য ও আল্লাহর শাস্তি।
খ. পূর্ববর্তী কিছু সম্প্রদায়ের ঊশৃঙ্খল জীবন ও অবাধ্যতা।
গ. মুমিন মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
৬৭ ও ৬৮ নং আয়াত : মুনাফিকদের পারস্পরিক সাদৃশ্য ও আল্লাহর শাস্তি।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৭) মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, উহারা অসৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎকর্ম নিষেধ করে, উহারা আল্লাহকে বিস্মৃত হইয়াছে, ফলে তিনিও উহাদেরকে বিস্মৃত হইয়াছেন; মুনাফিকরা তো পাপাচারী।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৮) মুনাফিক নর, মুনাফিক নারী ও কাফিরদিগকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জাহান্নামের অগ্নির, যেখানে উহারা স্থায়ী হইবে, ইহাই উহাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ উহাদেরকে লানত করিয়াছেন এবং উহাদের জন্য রহিয়াছে স্থায়ী শাস্তি।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুনাফিক নারী ও পুরুষ একই মানসিকতার অধিকারী।
মুনাফিকরা মন্দ কাজে উৎসাহিত করে এবং এবং সৎ কাজে নিরুৎসাহিত করে।
আল্লাহ যে তাদের জীবন, সম্পদের একক সত্তা তা তারা বিস্মৃত হয়েছে।
আল্লাহও তাদের বিস্মৃত হয়েছেন। আল্লাহ তাদের ঈমান ও হেদায়েত দেন না।
মুনাফিকরা পাপাচারী এবং সত্যপ্রত্যখ্যানকারী ।
মহান আল্লাহ মুনাফিক নারী-পুরুষের জন্য জাহান্নাম বরাদ্দ করেছেন।
জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা তারা।
মহান আল্লাহ তাদের লানত করেন ও তাঁর রহমত বঞ্চিত হয় তারা।
৬৯ ও ৭০ নং আয়াত: পূর্ববর্তী কিছু সম্প্রদায়ের ঊশৃঙ্খল জীবন ও অবাধ্যতা।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৬৯) তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত যাহারা শক্তিতে তোমাদের অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং যাহাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ছিল তোমাদের অপেক্ষা অধিক, এবং উহারা উহাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তাহা ভোগ করিয়াছে; তোমাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তোমরাও তাহা ভোগ করিলে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা উহাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তাহা ভোগ করিয়াছে। উহারা যেইরূপ অনর্থক আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত ছিল তোমরাও সেইরূপ আলাপ- আলোচনায় লিপ্ত রহিয়াছ। উহারাই তাহারা যাহাদের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যর্থ এবং উহারাই ক্ষতিগ্রস্থ।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭০) উহাদের পূর্ববর্তী নূহ, আদ ও সামূদের সম্প্রদায়, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদইয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসীদের সংবাদ কি উহাদের নিকট আসে নাই? উহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন সহ উহাদের রাসূলগণ আসিয়াছিল। আল্লাহ এমন নন যে, তাহাদের উপর জুলুম করেন, কিন্তু উহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পূর্ববর্তী নূহ, আদ ও সামূদের সম্প্রদায়, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদইয়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসী ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
এসব প্রত্যেক জাতির কাছে আল্লাহর রাসুল পাঠিয়েছেন স্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে যাতে তারা অবাঞ্ছিত আচরণ না করে।
কিন্তু তারা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে এবং রসুলের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র করে।
অসংযত আচরণ করে তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে।
আল্লাহ কারো উপর জুলুম করেন না।
তারা আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ভোগ করে ।
অনর্থক ও অযথার্থ আলাপ আলোচনা করে সময় কাটায়।
বি.দ্র:
হযরত নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায় প্রচন্ড প্লাবনে নিমজ্জিত হয়েছিল।
হযরত হুদ (আঃ) এর আদ সময় আদ জাতি সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে।
হযরত সালেহ (আঃ) এর সময় সামুদ জাতি প্রচন্ড ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলঅ
হযরত শুয়ায়েব (আঃ) এর সময় মাদায়েন জাতি অপকর্র জন্য প্রচন্ড জলঝড়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিল।
হযরত লুত (আঃ) এর সময় তার কওম এমনভাবে ধ্বংস হয় যে গোটা অঞ্চলটি বিধ্বস্ত নগরে পরিণথ হয়।
৭১ ও ৭২ নং আয়াত: মুমিন মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭১) মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, ইহারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকাজ নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের আনুগত্য করে; ইহাদেরকেই আল্লাহ কৃপা করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৭২) আল্লাহ মুমিন নর ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জান্নাতের-যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং স্থায়ী জান্নাতে উত্তম বাসস্থানের । আল্লাহই সন্তুষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উহাই মহাসাফল্য।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুমিন নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু।
তারা একে অপরকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে।
অসৎকাজে বিরত রাখে।
সালাত কায়েম করে,
যাকাত দেয়।
আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের আনুগত্য করে;
আল্লাহ তাদের কৃপা করবেন।
আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ মুমিনদের বেহেশতের কুঞ্জ কাননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বেহেশত একটি চিরস্থায়ী আবাসন।
মুমিনরা পৃথিবীতে যা কিছু করে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবেন তারাই বেহেশতে যেতে পারবে।
অনুধাবন:
মুনাফিক নারী ও পুরুষ সম মানসিকতা সম্পন্ন। মুমিন নর ও নারীর চিন্তা চেতনার সাথে তাদের চিন্তা চেতনার কোন সাদৃশ্য নেই। বরং বিপরীত।
আল্লাহ মুনাফিকদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং তাঁ অসীম রহমত থেকে চিরবঞ্চিত করেছেন।
পাপ ও অপকর্র শাস্তি অনেকসময় এই পৃথিবীতে নেমে আসে। শুধু পরকালেল জন্য নির্দিষ্ট নয়।
অতীত ইতিহাস তুলে ধরার কারণ হচ্ছে মানুষ যেন তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আল্লাহ এখানে উদাহরণ দিযে বুঝিয়ে দিয়েছেন আল্লাহরবিধানকে অস্বীকার করার ফলে কিভাবে আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে এবং তারা ধ্মংস হয়ে যায়।