সূরা বাকারা । রুকু - ৩১। তালাক প্রাপ্ত নারী ও বিধবাদের জন্য বিধান।

কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 


দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।

সূরা বাকারা । রুকু : ৩১।

আয়াত: ২৩৬- ২৪২।

তালাক প্রাপ্ত নারী ও বিধবাদের জন্য বিধান। 


২৩৬ ও ২৩৭ নং আয়াত: স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পূর্বে তালাক দিলে মোহর সম্পর্কে বিধান। 

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৩৬) যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করিয়াছ এবং তাহাদের জন্য মোহর ধার্য করিয়াছ তাহাদেরকে তালাক দিলে তোমাদের কোন পাপ নেই। তোমরা তাহাদের সংস্থানের ব্যবস্থা করিও - স্বচ্ছল তাহার সাধ্যমত এবং অসচ্ছল তাহার সামর্থানুযায়ী বিধিমত খরচপত্রের ব্যবস্থা করিবে, ইহা নেককার লোকদের কর্তব্য। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৩৭) তোমরা যদি তাহাদেরকে স্পর্শ করিবার পূকর্ব তালাক দাও, অথচ মোহর ধার্য করিয়াছ তার অর্ধেক, যদি না স্ত্রী অথবা যাহার হাতে বিবাহ-বন্ধন রহিয়াছে সে মাফ করিয়া দেয়; এবং মাফ করিয়া দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতর। তোমরা নিজেদের মধ্যে সদাশয়তার কথা বিস্মৃত হইও না। তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পূর্বে তালাক দুই প্রকার হয়। এক হতে পারে বিবাহের সময় মোহর নিধারিত নি। আরেক হতে পারে নির্ধারিত হয়েছে। 

  • ২৩৬ নং আয়াতে সেই বিবাহের কথা বলা হয়েছে, যে বিবাহের সময় মোহর নির্ধারিত হয় নি। 

  • যদি মোহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দেয়, তবে যা মোহর হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে স্ত্রী তার অর্ধেক পাবে। 

  • সামর্থবান ব্যক্তি তার সামর্থ অনুযায়ী এবং দরিদ্র ব্যক্তি তার সামর্থ অনুযায়ী দিবে। 

  • নারীপক্ষ যদি মোহর ক্ষমা করে দেয়, সেটাই তাদের জন্য উত্তম। 

  • এ ক্ষেত্রে ক্ষমা করে দেয়াকে তাক্বওয়াহর নিকটবর্তী হওয়া বলা হয়েছে। 

  • মহান আল্লাহ পরস্পরকে যে উপকার করা হয়েছে তা ভুলতে নিষেধ করেছেন। 

  • কারণ আল্লাহ মানুষের সব কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। 


২৩৮ ও ২৩৯ নং আয়াত: সালাতের প্রতি যত্নবান হবার নির্দেশ। 

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৩৮) তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হইবে, বিশেষত  মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাকে দাঁড়াইবে। 

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৩৯) যদি তোমরা আশংকা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করিবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর  তখন আল্লাহকে স্মরণ করিবে, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যাহা তোমরা জানিতে না।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • প্রতি ওয়াক্তের সালাত বিশেষ করে মধ্যবর্তী অর্থ্যাৎ আসরের সালাতের প্রাত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

  • বিনয়ের সাথে সালাতে দন্ডায়মান হওয়া ফরজ। 

  • পদচারী বা আরোহী যে অবস্থায় থাকুক না কেন সালাত আদায় করতে হবে।

  • নিরাপদ অবস্থায় থাকলেও আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে।  

  • আল্লাহ যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে সালাত আদায় করতে হবে। 

  • সালাতের আরাকান ঠিকমত আদায় করতে হবে। 

  • আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা না দিলে তারা কিছুই জানত না। 

  • একমাত্র আল্লাহর এবাদত করতে হবে।


২৪০, ২৪১ নং আয়াত: বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারীর অধিকার সংরক্ষণ। 

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৪০) তোমাদের মধ্যে যাহাদের মৃত্যু আসন্ন এবং স্ত্রী রাখিয়া যায় তাহারা যেন তাহাদের স্ত্রীদের গৃহ হইতে বহিষ্কার না করিয়া তাহাদের এক বৎসরের ভরণ-পোষণের ওসিয়ত করে। কিন্তু যদি তাহারা বাহির হইয়া যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের গুনাহ নাই। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

২৪১) তালাকপ্রাপ্ত নারীদেরকে যথারীতি ভরণ-পোষণ করা মুত্তাকীদের কর্তব্য। 

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(২৪২) এইভাবে আল্লাহ তাঁহার বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাহাতে তোমরা বুঝিতে পার।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • বিধবা স্ত্রীদের এক বৎসরের জন্য খোরপোষ ও বসবাসের স্থানের জন্য ওসিয়ত করে যাওয়া স্বামীর কর্তব্য। 

  • তালাকপ্রাপ্ত নারীকে কিছু দিয়ে বিদায় দেয়া উচিত্‌। 

  • স্ত্রীরা যদি নিজ থেকে চলে যায় তবে স্বামীর কোন পাপ হবে না। 

  • আল্লাহ পরাক্রমালী ও প্রজ্ঞাময়। 

  • তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ভরণ-পোষণ দেয়া মুত্তাকীদের কর্তব্য। 

  • এই রুকুর উপসংহারে আল্লাহ এরশাদ করছেন আল্লাহ তোমাদের বোঝার জন্য তাঁর বিধানসমূহ বর্ণনা করেন। 

  • এমনভাবে বর্ণনা করেন যাতে তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। 



অনুধাবন::

  •  মোহরের কথা উল্লেখ করা ছাড়াও বিবাহ দুরস্ত হয়। 

  • মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার ও উন্নত চরিত্র অবলম্বনের জন্য আল্লাহ উৎসাহ দান করেছেন। 

  • এই রুকুতে সালাতের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

  • সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সমীপে বিনয়াবত হয়ে এবং নিবিষ্ট চিত্তে দাঁড়াতে হবে। 

  •  যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে তার অধিকার নির্ণয় করা হয়েছে।

  • স্বামীর কর্তব্য  হচ্ছে স্ত্রীর জন্য ওসিয়ত করে যাওয়া যাতে সে সুখে শান্তিতে স্বামীর গৃহে বাস করতে পারে।  

  •  তালাক প্রাপ্তা নারীদের ভরণ-পোষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যার অর্থ অনেক ব্যপক। এরমধ্যে আছে ইদ্দতকালীন খোরপোষ, মেহরানা পরিশোধ, উপঢৌকন ইত্যাদি। এসব বিধান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তালাক ভাল কাজ নয়। যখন আর কোন উপায় থাকে না তখন তালাকের কথা চিন্তা করা যায়। দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান যেন ভদ্রোচিত ও শান্ত পরিবেশে হয় সে চেষ্টা করা উচিত।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url