সূরা তাওবা। রুকু-৬। যুদ্ধের ডাকে আলসেমী নয়।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন

নিজে জানুন, অন্যকে বলুন। 



দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। 


সূরা তাওবা। রুকু ৬   । 
আয়াাত : ৩৮ - ৪২। 
যুদ্ধের ডাকে আলসেমী নয়।
                                                                          


৩৮ ও ৩৯ নং আয়াত: অলসতার প্রতি তিরস্কার এবং  যুদ্ধ না করলে শাস্তির ভয় প্রদর্শন। 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৮) হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হইল যে, তোমাদেরকে যখন আল্লাহর পথে অভিযানে বাহির হইতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হইয়া ভূতলে ঝুঁকিয়া পড়? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হইয়াছ? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অকিঞ্চিৎকর!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৯) যদি তোমরা অভিযানে বাহির না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করিবেন এবং তোমরা তাঁহার কোনই ক্ষতি করিতে পারিবে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। 
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এখানে আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন কেন তারা আল্লাহর পথে অভিযানে অনীহা প্রকাশ করে?
প্রশ্নাকারে তিনি নিজেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছেন তারা পার্থিব মোহজালে পড়ে এই অনীহা প্রকাশ করে। 
তারা আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনকে বেশী গুরুত্ব দেয় এবং এতই তারা পরিতুষ্ট। 
অলসতার দ্বারা আক্রান্ত। 
আল্লাহ তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।
যুদ্ধবিমুখতার জন্য অন্য জনগোষ্ঠীকে  তাদের স্থলাভিষিক্ত করে দেবেন। 
কর্মবিমুখ জাতি আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।  
আল্লাহতাযালা সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। 

৪০ নং আয়াত: আল্লাহর পথে থাকলে সাহায্য আসবেই। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪০) যদি তোমরা তাহাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তো তাহাকে সাহায্য করিয়াছিলেন যখন কাফিররা তাহাকে বহিষ্কার করিয়াছিল এবং সে ছিল দুইজনের দ্বিতীয়জন, যখন তাহারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাহার সঙ্গীকে বলিয়াছিল, 'বিষন্ন হইও না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।' অতঃপর আল্লাহ তাঁহার উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাহাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্য বাহিনী দ্বারা যাহা তোমরা দেখ নাই; এবং তিনি কাফিরদের কথা হেয় করেন। আল্লাহর কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন প্রধান্য ও মর্যাদা পেতে হলে নিজের চেষ্টা ও আল্লাহর সাহায্য - দুটোই প্রয়োজন।

  • উদাহরণ হিসাবে হিজরতের সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর একমাত্র সফর সঙ্গী হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

  • রাসুল (সঃ) আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন এবং মহান আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেন।  

  • আল্লাহ এখানে ইরশাদ করেছেন  নবী (সঃ) এর জন্য এক আল্লাহতায়ালাই যথেষ্ট।

  • এভাবে কাফেরদের নাজেহাল করা এবং আল্লাহর রাসুলকে রক্ষার মধ্যে আছে আল্লাহর পরাক্রম এবং প্রজ্ঞার নিদর্শন। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আযীযুন গাফুর। ) 


মক্কার মুশরিক কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তিনি তখন মদীনাতে হিযরতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কুরাইশদের বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি তাঁর বিছানায় হযরত আলী (রাঃ)কে শুইয়ে রেখে একদিন রাতে সবার অলক্ষ্যে মদীনায় রওয়ানা হন। প্রথমে তারা বিছানায় হযরত আলী (রাঃ) অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে নি। যখন বুঝতে পারে ততক্ষণ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অনেক দূরে চলে গিয়েছেন। তিনি তিন দিন পর্যন্ত ছাওর পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করেছিলেন। কারণ মক্কার কাফেররা যখন জানতে পারেন তিনি আর মক্কায় নাই তাঁর  খোঁজে চারিদিকে লোক পাঠান। ঘোষণা করা হয়েছিল যে ব্যক্তি তাঁর খোঁজ দিতে পারবে তাকে একশ উট পুরষ্কার দেয়া হবে। এরা অনুসন্ধান করতে করতে ছাওরপাহাড়ের গুহা পর্যন্ত এসে গিয়েছিলেন।মহান আল্লাহ গুহার মুখে মাকড়সা জাল বুনে দেয়।  হযরত আবুবকর (রাঃ) গুহার মুখে তাদের পর্যন্ত দেখতে পান। তিনি খুব উদ্বিগ্ন  হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁকে সাস্ত্বনা দিতে গিয়ে রাসুল (সঃ) বলেন,'দুঃখ করো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।' কাফেররা গুহা মুখে মাকড়সার জাল দেখে গুহার মধ্যে নাই মনে করে চলে যায়। 


৪১ নং আয়াত: যুদ্ধের আদেশ এবং উৎসাহ প্রদান। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪১) অভিযানে বাহির হইয়া পড়, হালকা অবস্থায় হউক অথবা ভারি অবস্থায়, এবং সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীব দ্বারা। উহাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানিতে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • 'হালকা (খিলফান)  অবস্থায় হউক অথবা ভারি ( ছিক্বালান) অবস্থা' বলতে এখানে লঘু এবং গুরু রণসম্ভারকে বোঝান হয়েছে। এ কথাটি রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। 

  • যার যার যা অর্থ সম্পদ এবং  হালকা কিংবা ভারী যুদ্ধাস্ত্র আছে তা নিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবার আহ্বান জানান হয়েছে।

  • মুমিনদের জন্য এটাই সর্বত্তোম কাজ।



৪২ নং আয়াত: যুদ্ধ বিমুখ মুনাফিকদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য । 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৪২) আশু সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকিলে ও সফর সহজ হইলে উহারা নিশ্চয়ই তোমার অনুসরণ করিত; কিন্তু উহাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হইল। উহারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিবে, 'পারিলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সঙ্গে বাহির হইতাম।' উহারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করে। আল্লাহ জানেন উহারা অবশ্যই মিথ্যাচারী। 

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যারা যুদ্ধে যাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে তাদের কপটতা সম্পর্কে বলা হয়। 

  • এরা সুযোগ সন্ধানী। যদি এখনই সম্পদ পাওয়া যাবার আশা থাকত কিংবা যুদ্ধের যাত্রাপথ সুদীর্ঘ না হত তাহলে তারা অংশ নিত।

  • আল্লাহ সতর্ক করছেন যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলে পর তারা শপথ করে যুদ্ধে না যাবার কারণ হিসাবে বিভিন্ন ওজর পেশ করবে । তা যেন গ্রাহ্য না করে। 

  • কিন্ত আসলে তারা শ্রমসাধ্য সফর এবং গণিমতের মালের অনিশ্চয়তার জন্য যুদ্ধে যায় নি। 

  • আল্লাহ জানেন তারা মিথ্যাচারী। 

  • তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করছে।   



অনুধাবন::

  •  আল্রার পথে যুদ্ধ করার জন্য সর্বক্ষণ সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। 

  • আল্লাহর পথে যে দায়িত্ব দেয়া আছে তা পালন করতে না পারলে পরিণামে শাস্তি ভোগ করতে হবে। 

  •  যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ যাওয়া থেকে বিরত থাকবে তারা অশেষ যন্ত্রণা ও অপমান ভোগ করবে। 

  • আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। কোন জাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজে না অগ্রসর হলে আল্লাহ অন্য জনগোষ্ঠীকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করে দেবেন।

  •  আল্লাহর পথে নিবেদিত থাকলে দুনিয়া ও আখেরাতে মান-সম্ভ্রম পাওয়া যায়।  

  •  আল্লাহর সাহায্য অনেক সময় চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না। কিন্তু তাঁর শক্তি অনুভব করা যায়। তাই অবশ্যই আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। 

  •  যুদ্ধে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য সহযোগীতা করবে।

  • ব্যক্তিগত লাভ ব্যতীত মুনাফেকরা যত ভাল কাজই হোক না কেন তাতে অংশগ্রহণ করে না।  

  • মুনাফেকদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না। 






Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url