সূরা তাওবা। রুকু-৫। ইসলামের জয়।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা । রুকু ৫।
আয়াত - ৩০-৩৭।
ইসলামের জয়।
৩০ -৩৩ নং আয়াত: আহলে কিতাবীদের কুফরী উক্তি ।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩০) ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিষ্টানরা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ উহা তাহাদের মুখের কথা। পূর্বে যাহারা কুফরী করিয়াছিল উহারা তাহাদের মত কথা বলে। আল্লাহ উহাদেরকে ধ্বংস করুন। আর কোন দিকে তাহাদের ফিরাইয়া দেয়া হয়েছে ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতগুলিতে আল্লাহ নিজের এবং সব নবী/রাসুলদের অবস্থান বর্ণনা করেছেন।
ইহুদীরা উযায়েরকে আল্লাহর পুত্র মনে করত।
খ্রীষ্টানরা যীশুখ্রীষ্টকে আল্লাহর পুত্র মনে করে।
আল্লাহ বলছেন, এটি তাদের মৌখিক কথ। অর্থ্যাৎ এটি তাদের অপবিশ্বাস যা ভিত্তিহীন এবং অর্থহীন।
এই বিশ্বাসকে যারা কুফরকারী অর্থ্যাৎ সত্য প্রত্যখ্যানকারীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত করেন।
তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
৩১-৩৩ আয়াত : আহলে কিতাবীদের কুফরী কার্যকলাপ।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩১) তাহারা আল্লাহ ব্যতীত তাহাদের পন্ডিতগণকে ও সংসার-বিরাগীগণকে তাহাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করিয়াছে এবং মারইয়াম -তনয় মসীহকেও। কিন্তু উহারা এক ইলাহের ‘ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হইয়াছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি কত পবিত্র।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩২) তাহারা তাহাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করিতে চায়। কাফিররা অপ্রীতিকর মনে করিলেও আল্লাহ তাঁহার জ্যোতির পূর্ণ উদ্ভাসন ব্যতীত অন্য কিছু চান না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৩) মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁহার রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিত, সংসার বিরাগী এবং মরিয়ম তনয় মসীহ অর্থ্যাৎ যীশু খ্রীষ্টকে প্রতিপালক হিসাবে গ্রহণ করে।
একমাত্র আল্লাহর উপাসনা, প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে হবে।
বিশ্বাস করতে হবে তাঁর কোন শরীক নেই।
মুশরিকরা আল্লাহর বাণীর যে আলো তা নিভিয়ে দিতে চায়।
আল্লাহর বাণীকে অবিশ্বাসীরা অপ্রীতিকর মনে করে।
কিন্তু আল্লাহ তাঁর জ্যোতিকে নির্বপিত হতে দেন না। তিনি তার
পূর্ণ উদ্ভাসন চান।
আল্লাহ মুসলিমদের পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীন দিয়েছেন। তাঁর এই পথ নির্দেশ হচ্ছে আল-কুরআন। এজন্য রাসুল প্রেরণ করেছেন।
কাফির ও মুশরিকরা অপছন্দ করলেও আল্লাহ চান তাঁর পথ নির্দেশ অর্থ্যাৎ কুরআনের বাণী সমূহের এবং রসুল (সঃ)এর রেসালতের নূরের পূর্ণ উদ্ভাসন।
’আহবার’ শব্দটি বহুবচন। এ শব্দটির অর্থ আলেম, পন্ডিত, আইন বিশেষজ্ঞ, পুরোহিত, বিদ্বান ব্যক্তিগণ।
রুহবান শব্দটি বহুবচন।যার অর্থ সংসারবিরাগী, ভিক্ষু, কঠোর তপস্বী, সন্ন্যাসী।
’মুখের ফুৎকার’ -কথাটির দুধরণের অর্থ হতে পারে । এক হল অপপ্রচার বা মিথ্যা প্রচার। আরেক হতে পারে আগের দিনে প্রদীপ বা বর্তমানকালে মোমবতি ’ফুঁ’ দিয়ে নিভান হয়। তেমনি ফু দিয়ে নিভিয়ে ফেলা। অর্থ্যাৎ পাত্তানো দেয়া।
৩৪-৩৫ নং আয়াত: আহবার (পন্ডিত) ও রুহবানগণের(সংসার বিরাগী) লোভ-লালসা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৪) হে মুমিনগণ! পন্ডিত এবং সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করিয়া থাকে এবং লোককে আল্লাহর পথ হইতে নিবৃত্ত করে। আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না উহাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৫) যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হইবে এবং উহা দ্বারা তাহাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে সেদিন বলা হইবে, ‘ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করিতে। সুতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে তাহা আস্বাদন কর।’
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
লোভ-লালসা পূর্ণ পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদরে কথা বলা হচ্ছে।
পার্থিব ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। যদিও তারা পৃথিবীর সম্পদ থেকে বিরত থাকবে বলে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ ছিল।
তাদের দুটো বিশেষ বৈশিষ্ট: প্রথমত তারা লোকের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে ও তা ভোগ করে। । দ্বিতীয়ত: তারা মানুষকে ইসলামের পথ থেকে নিবৃত্ত করে।
আরেক শ্রেণী লোকের কথা বলা হয়েছে। যাদের বৈশিষ্ট্য তারা কৃপণ এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য (অর্থ-সম্পদ) জমা করে রাখে। তারা আল্লাহর রাস্তায় অর্থ্যাৎ ভালো কাজে ব্যয় করে না।
তাদের অর্থ সম্পদ তাদের ধ্বংসের কারণ হবে।
মৃত্যুর পর জাহান্নামের আগুনে এই অর্থ সম্পদ গরম করে তাদের ললাট, পৃষ্ঠদেশ এবং পার্শ্বদেশে ছেঁকা দেয়া হবে।
৩৬ -৩৭ নং আয়াত: মুশরিকদের কতিপয় কুফরমূলক মূর্খতাসুলভ আচরণের পুনরুল্লেখ।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৬) নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হইতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটি; তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং ইহার মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করিও না এবং তোমরা মুশরিকদের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করিবে, যেমন তাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করিয়া থাকে। এবং জানিয়া রাখ, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩৭) এই যে মাসকে পিছাইয়া দেওয়া কেবল কুফরী বৃদ্ধি করা, যাহা দ্বারা কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়। তাহারা উহাকে কোন বৎসর বৈধ করে এবং কোন বৎসর অবৈধ করে যাহাতে তাহারা আল্লাহ যেইগুলিকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন, সেইগুলির গণনা পূর্ণ করিতে পারে; অনন্তর আল্লাহ যাহা হারাম করিয়াছেন তাহা হালাল করিতে পারে। তাহাদের মন্দ কাজগুলি তাহাদের জন্য শোভনীয় করা হইয়াছে। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই মাসের সংখ্যা বারটি নির্ধারণ করেন।
এর মধ্যে চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। এ চার মাস ছিণ- জ্বিলহক্কদ, জিলহজ্জ, মুহররম ও রজব। এটাই ছির আল্লাহর নিয়ম।
এ সময় যুদ্ধ করা অর্থ পাপ করা। অর্থ্যাৎ নিজের আত্মাকে কষ্ট দেয়া।
তবে মুশরিকরা যদি নিষিদ্ধ মাসে আক্রমণ করে তবে আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করা বৈধ।
যারা আইন ভঙ্গকারী তাদের মন্দ কাজগুলি তাদের চোখে শোভন করে দেয়া হয়েছে। তারা তা নিয়ে গর্ববোধ করে। মনে করে এটা তাদের বাহাদুরী।
মহান আল্লাহ তাদের হেদায়েত করবেন না।
অনুধাবন:
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়েও ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা তাদের পূর্ব পুরুষদের মত অপ বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল।
অপবিশ্বাসে বিশ্বাসীদের মহান আল্লাহ অভিসম্পাত এবং ধ্বংস করেন।
অতএব এসব অপবিশ্বাস থেকে দূরে থাকতে হবে।
মানুষকে দেবতার পর্যায়ে নেয়া এবং আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা যাবে না।
আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে হবে। তাঁর সাথে সরাসরি প্রার্থনা করতে হবে। এর জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন নাই। আমাদের দেশে যেমন অনেকে মাজারে বা পীরের দরবারে যাতায়াত করে এবং মানত করে তা সঠিক নয়।
আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে অভিভাবক হিসাবে কল্পনা করা যাবে না।
আল্লাহর ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ হচ্ছে ইসলাম।
পূর্বের সব ধর্মের উপরে সর্বশেষ ধর্ম ইসলামের বিজয় প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ রাসুল (সঃ) কে প্রেরণ করেছেন।
পন্ডিত ও সংসারবিরাগী কিছু ব্যক্তি যারা পার্থিব সম্পদ থেকে বিরত থাকবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েও তারা ধর্মের নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। তিনটি কারণে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রথমত: তারা এই সম্পদ অন্যায়ভাবে অর্জন ও ভোগ করত । দ্বিতীয়ত: অর্থ-সম্পদ খরচ না করে স্বর্ণ ও রৌপ্যে রাপান্তরিত করে জমা করে রাখত। তৃতীয়ত:অর্থ-সম্পদ আল্লাহর কাজে ব্যয় করে না।
অর্থ-সম্পদের অপব্যবহার করা অর্থ জাহান্নামের শাস্তি বৃদ্ধি পাওয়া।
আত্মসংযম সবচেয়ে ভাল পথ। মহান আল্লাহ যদিও নিষেধ করেছেন এই চার মাস যুদ্ধ করতে কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করা বৈধ।
সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা সহজ সরল মানুষের আন্তরিকতার সুযোগ নিয়ে থাকে। এই রুকুতে তাদের সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। তারা তাদের মনগড়া মতবাদ তাদের সুবিধামত প্রচার করে মানুষকে ধোঁকায় ফেলে দেয়। ফলে সমাজ জীবনে বিভ্রান্তি ও বিশৃংখলা নেমে আসে।
মন্দ লোকের মন্দ কাজগুলিকে আল্লাহ তাদের চোখে এত শোভনীয় করে দেন যে, সে আর সৎ পথ দেখতে পায় না।