সূরা তাওবা। রুকু-৩ । কতিপয় আমলের শ্রেষ্ঠত।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা । রুকু ৩
আয়াত: ১৭ - ২৪
কতিপয় আমলের শ্রেষ্ঠত্ব।
১৭ নং আয়াত: কাবাশরীফ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার অধিকার নেককার মুমিণদের।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৭) মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরী স্বীকার করে তখন তাহারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিব- এমন হইতে পারে না। উহারা এমন, যাহাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হইয়াছে এবং উহারা দোজখেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করিবে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৮) তাহারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিবে, যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখিরাতে এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়
এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যয়ি, তাহারা হইবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা মুশরিকদের হাতে ছিল।
- মসজিদ হচ্ছে বিশ্বাসীদের ইবাদতের স্থান।
- সুতরাং যারা অংশীবাদী তাদের রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার নেই।
- মসজিদের দায়িত্ব এমন ব্যক্তিদের হাতে হতে হবে যারা সত্যের অনুসারী ও কলুষতা মুক্ত।
- এরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে।
- যথাযথভাবে নামাজ পড়ে।
- যাকাত দেয় অর্থ্যাৎ সমাজের দরিদ্র ও অসহায় লোকদের সাহায্য করে।
- একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে। একমাত্র তারাই হবে সত্যপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।
১. প্রকৃত আল্লাহ প্রেমিকদের বৈশিষ্ট্য:
আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী।
পরকালে ইহকালের কাজের জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী।
যথাযথভাবে নামাজ পড়ে।
যাকাত দেয় অর্থ্যাৎ সমাজের দরিদ্র ও অসহায় লোকদের সাহায্য করে।
একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে।
আল্লাহর সন্তষ্টি অজনে সদা সচেষ্ট।
একমাত্র তারাই হবে সত্যপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।
১৯ নং আয়াত:হজ্জ্ব তীর্থযাত্রীদের সেবা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১৯) হাজীদের জন্য পানি সরবরাহএবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাহাদের পূণ্যের সমজ্ঞান কর, যাহারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? আল্লাহর নিকট উহারা সমতুল্য নয় । আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাবা শরীফে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনায় মুশরিকদের কোন অধিকার নেই।
হাজীদেরকে পানি সরবরাহ এবং কাবা শরীফে চাবি রাখার দায়িত্ব পালনে যে সম্মান ও মর্যাদা আছে তা মুজাহিদরা পেতে পারে।
আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ দেখান না।
২ তীর্থযাত্রীদের সেবা করার অধিকার প্রাপ্তরা হল
যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান আনে।
আল্লাহর রাস্তায় সর্বশক্তি দিয়ে সংগ্রাম করে।
এরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে। তাই আল্লাহ এদের সৎপথ প্রদর্শন করেন।
তাদের কাজ হল।
হাজীদেরকে পানি সরবরাহ।
মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ।
২০,২১, ও ২২ নং আয়াত: জিহাদ ও হিজরতের প্রয়োজনীয়তা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২০) যারা ইমান আনে, ধর্মের জন্য হিজরত করে, জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে-’তারা আল্লাহর কাছে মর্দায় শ্রেষ্ঠ এবং এরাই তো সফলকাম।”
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২১) তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজ দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যেখানে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি রয়েছে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২২) সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরষ্কার।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াত গুলিতে মুমিন মুজাহিদের উচ্চ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
কে সফলকাম হবে?
ইমান এনেছে।
তাদের একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি।
আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করতে কুণ্ঠিত নয়।
ধর্মের জন্য প্রয়োজনে তারা হিজরত করতে দ্বিধা করেন না।
তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার জান্নাত।
এ ছাড়াও তারা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবেন।
২৩ নং আয়াত: পিতা-মাতা অমুসলিম হলে করণীয়।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৩) হে মুমিণগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ইমানের মুকাবিলায় কুফরীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে উহাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করিও না। তোমাদের মধ্যে যাহারা উহাদেরকে অ্ন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তাহারাই জালিম।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পিতা-মাতা অমুসলিম হলেও তাদের কারণে আল্লাহর ধর্ম ত্যাগ করা যাবে না।
পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে আল্লাহ-রাসুলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা যাবে না।
তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে আল্লাহর কাছে জালিম রুপে প্রতিষ্ঠিত হবে।
২৪ নং আয়াত: ইমানের পরীক্ষা
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৪) বল, ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাাঁহার রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য - যাহার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসন্থান- যাহা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর নির্দশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এখানে আল্লাহ জানতে চাইছেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বেশী প্রিয় না পরিবারিক সম্পর্ক, সম্পদ , ব্যবসা-বাণিজ্য, বাসস্থান বেশী প্রিয়।
ধর্মের উপর পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিলে তবে তাদের জন্য পরকালে খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ তাদের সৎপথ হতে বঞ্চিত করবেন।
এখানে আল্লাহ জানতে চাইছেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বেশী প্রিয় না পরিবারিক সম্পর্ক, সম্পদ , ব্যবসা-বাণিজ্য, বাসস্থান বেশী প্রিয় অর্থ্যাৎ
ইহকাল ও অনন্ত পরকাল- কোনটি মানুষ বেছে নিবে?
অনন্ত পরকাল অর্থ্যাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে করণীয়:
পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন অমুসলিম হলেও তাদের কারণে আল্লাহর ধর্ম ত্যাগ করা যাবে না।
পারিবারিক সম্পর্কের চেয়ে আল্লাহ-রাসুলের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে বেশী।
ধর্মের উপর পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিলে তবে তাদের জন্য পরকালে খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ তাদের সৎপথ হতে বঞ্চিত করবেন।
অনুধাবন:
আল্লাহর মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদতের স্থান। এখানে অন্য কোন আচার-অনুষ্ঠান ও আয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মানুষ মসজিদে আগমন করে তার আত্মিক উন্নতির জন্য। পার্থিব লাভ কেরার জন্য নয়।
এই আয়াতটি যদিও কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে কিন্তু এই ঐশী নির্দেশ সব মসজিদের জন্য প্রযোজ্য।
যে কোন ধর্মীয় ও পবিত্র কাজ হালালভাবে উপার্জিত অর্থ ও সৎলোকদের মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়া উচিত।
ধর্মীয় কাজে যে কোন লোককে দায়িত্ব দেয়ার আগে তার নিয়্যতটি জানা খুব জরুরী। বাহ্যিক ভালো কাজ দেখেই দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত নয়।বিবেচনা করতে হবে যে ব্যক্তি মসজিদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে তার কর্ম নিঃস্বার্থ ও খাঁটি কিনা।
ইসলামে ঈমান এবং ধর্ম প্রচার ও প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বড় বড় জাকজমকপূর্ণ মসজিদ বানানোতে তত মূল্য নেই যত মূল্য একজন ঈমানদার মুমিন মুসলিম তৈরী করাতে।
আল্লাহর রাস্তায় যারা জীবন দেয় অর্থ্যাৎ যারা মুজাহিদ এবং যারা সম্পদ ব্যয় করে তারা সমান নয়। মুজাহিদের সম্মান অনেক বেশী।
মহান আল্লাহর কাছে বর্ণ বা গোত্রের থেকে ইমান, হিজরত এবং জিহাদ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।
তাই আমাদের আল্লাহর চিরন্তন কল্যাণ পেতে হলে এই পার্থিব জগতের বস্তুগত সুযোগ সুবিধা দূর করতে হবে।
ধর্ম রক্ষার জন্য অনেক সময় পারিবারিক সম্পর্ক ত্যাগ করতে হয়।