সূরা তাওবা। রুকু-২। কুরাইশ কাফের।

 কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন 
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন


দয়াময়, পরম দয়ালু ্বাল্লাহর নামে শুরু। 

সূরা তাওবা। রুকু ২। 
আয়াত ৭ - ১৬। 
কুরাইশ কাফের।



মূল আলোচ্য বিষয়: কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে মুসলমানরা কুরাইশ কাফেরদের সাথে চুক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে। 

আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়: 


৭ নং আয়াত: মুসলিমরা কখন চুক্তি ভঙ্গ করতে পারবে।

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৭) আল্লাহ ও তাাঁহার রাসুলের নিকট মুশরিকদের চুক্তি কি করিয়া বলবৎ থাকিবে? তবে যাহাদের সঙ্গে মসজিদুল হারামের সন্নিকটে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছিলে, যাবৎ তাহারার তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে তোমরাও তাহাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • মুশরিকরা যদি চুক্তির প্রতি শ্রদ্বাশীল না হয় তবে একতরফাভাবে মুসলমানরা  তা মেনে চলতে বাধ্য নয়। 

  • কোন কোন ক্ষেত্রে চুক্তি ভঙ্গ হবে না। 

  1. মসজিদুল হারামের কাছে  পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল ও তা মেনে চলছে।  

  2. যারা মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে নাই। 

  • মুসলমানরা মুশরিকদের  সাথে আচরণের ব্যাপারে আল্লাহ ভীতি বা তাকওয়াকে বিবেচনায় রাখবে। অথ্যাৎ ন্যায়ের সাথে কাজ করবে। 


৮ নং আয়াত: প্রশ্ন করা হচ্ছে চুক্তিভঙ্গকারী মুশরিকদের  সাথে কেমন করে চুক্তি থাকবে? 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৮) কেমন করিয়া থাকিবে? তাহারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তাহারা তোমাদের আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের কোন মর্যাদা দিবে না; তাহারা মুখে তোমাদেরেকে সন্তুষ্ট রাখে; কিন্তু তাহাদের হৃদয় উহা অস্বীকার করে; তাহাদের অধিকাংশ সত্যত্যাগী। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • যদি মুশরিকরা  যুদ্ধে জয় লাভ করে  তাহলে তারা:

  1. আত্মীয়তা এবং অঙ্গীকারের মর্যাদা দিবে না। 

  2. বিশ্বাসঘাতকতা করবে। 

  3. তারা মুখে মিষ্টি কিন্তু অন্তর তিক্ততায় ভরা।  

  4. তাদের  আসল প্রকৃতি বোঝা যায় না।  

  5. এরা বেশীরভাই সত্য প্রত্যাখানকারী । 

  6. সহজেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে। 



৯ ও ১০  নং আয়াত : ইসলামের শত্রুদের বৈশিষ্ট্য। 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(৯) তাহারা আল্লাহর আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে এবং তাহারা লোকদেরকে তাঁহার পথ হইতে নিবৃত্ত করে; নিশ্চয়ই তাহারা যাহা করিয়া থাকে তাহা অতি নিকৃষ্ট। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১০) তাহারা কোন মুমিনের সঙ্গে আত্মীয়তার ও অঙ্গীকারের মর্য়াদা রক্ষা করে না, তাহারাই সীমালংনকারী। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহর আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে সত্য গোপনের চেষ্টা করে। 

  • আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে চেষ্ট করে। 

  • তাদের কাজ হচ্ছে অত্যন্ত মন্দ এবং অনিষ্টকর। 

  • মুমিনদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রাখে না। 

  • অঙ্গীকারকে লংঘন করে। 

  • তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারী। 



১১ নং আয়াত: দ্বীনি ভাই। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১১) অতঃপর তাহারা যদি তাওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তাহারা তোমাদের দ্বীনি ভাই; জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শন স্পষ্টরূপে বিবৃত করি। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

দ্বীনি ভাইদের বৈশিষ্ট্য: 

  • খাঁটি মনে তাওবা করে। 

  • সালাত কায়েম করে। 

  • যাকাত দান করে।

  • সালাত ও  যাকাত ধর্মীয় বন্ধনের ভিত্তি।  



১২ নং আয়াত: প্রতিপক্ষর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের লক্ষ্য করা। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১২) তাহাদের চুক্তির পর তাহারা যদি তাহাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে তবে কাফিরদের প্রধানদের সঙ্গে যুদ্ধ কর; ইহারা এমন লোক যাহাদের কোন প্রতিশ্রুতি রহিল না; যেন তাঁহারা নিবৃত্ত হয়। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • চুক্তি করার পর ভঙ্গ করলে। 

  • অপকর্ম ত্যাগ না করলে । 

  • ধর্ম সম্পর্কে বিদ্রূপাত্মক কথা বললে।

  • চুপ করে থাকা সমীচীন নয়।  

  • কাফির প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। 

  • যাতে তারা কুফর ও জুলুম ত্যাগ করে। 


১৩ নং আয়াত:আল্লাহ প্রশ্ন রেখেছেন যুদ্ধ করবে কিনা? 

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৩) তোমরা কি সেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করিবে না, যাহারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছে ও রাসুলকে বহিষ্কারের জন্য সংকল্প করিয়াছে? উহারাই প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচারণ করিয়াছে। তোমরা কি তাহাদেরকে ভয় কর? আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের পক্ষে অধিক সমীচীন, যদি তোমরা মুমিন হও। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। 

  • নবী (সঃ)এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বের করে দেয়া 

  • তারাই প্রথমে মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। 

  • তাদেরকে ভয় না করে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। 


১৪ ও ১৫ নং আয়াত:  আল্লাহদ্রোহী কাফেরদের সাথে যুদ্ধের নির্দেশ। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৪) তোমরা তাহাদের সাথে যুদ্ধ করিবে। তোমমাদের হাতে আল্লাহ উহাদেরকে শাস্তি দিবেন, উহাদেরকে লাঞ্ছিত করিবেন, উহাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করিবেন ও মুমিনদের চিত্ত প্রশান্ত করিবেন। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৫) এবং তিনি উহাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করিবেন। আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা তাহার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আলীমুল হাকিীম)

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • আল্লাহ মুসলমানদের হাত দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ কারীদের শাস্তি দিবেন। 

  • তাদের লাঞ্ছিত করবেন

  • মুসলমানদের বিজয়ী হতে সাহায্য করবেন। 

  • মুমিনদের চিত্তকে প্রশান্ত করবেন। 

  • মুসলমানদের মনে যে ক্ষোভ জমে আছে তা দূর করবেন। 

  • আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন। 

  • আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। 


১৬ নং আয়াত: জিহাদে অনুৎসাহী ব্যক্তিদের সতর্কীকরণ। 

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

(১৬)  তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদেরকে এমনি ছাড়িয়া দেওয়া হইবে যখন পর্যন্ত আল্লাহ না প্রকাশ করেন তোমাদের মধ্যে কাহারা মুজাহিদ এবং কাহারা আল্লাহ, তাঁহার রাসূল ও মুমিনগণ ব্যতীত অন্য কাহাকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নাই? তোমরা যাহা কর, সে সম্বনেধ আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। 

—------------------------------------------------------------------------------------------------- ------------------------

  • একজন মুমিনকে মুজাহিদ হতে হবে। 

  • তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বা আত্মীয়তার কারণে সম্পর্কচ্ছেদ করতে ইতস্তত করা ঠিক নয়। 

  • সত্যিকার মুসলিম আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিণগণ ব্যতীত আর কেউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বানায় ন। 


অনুধাবন : 

  •  এই রুকু থেকে আমার প্রথম অনুধাবন চুক্তির উপর অটল থাকা ঈমান ও তাকওয়া অর্জনের জন্য জরুরী। 

  • চুক্তি মানা না মানা নির্ভর করে প্রতিপক্ষর উপর। প্রতিপক্ষ চুক্তি মেনে চললে মুসলমানরাও চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য। 

  • শত্রুর মিষ্টি কথায় ভোলা যাবে না। কে শত্রু তা বুঝতে হবে। 

  • বৈষয়িক স্বার্থে আল্লাহর আয়াত সমূহ অনুসরণ করার পরিবর্তে পার্থিব জীবনকে গুরুত্ব দেয়। 

  • ইসলামে জিহাদ আত্মরক্ষামূলক। বৈষয়িক স্বার্থের কারণে যুদ্ধ করা জিহাদ নয়। ন্যায় ও ধর্ম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা হচ্ছে জিহাদ। 

  • সাধারণত নেতা একটি দলকে পরিচালিত করেন। যুদ্ধের সময় নেতাকে লক্ষ্য পরিণত করতে হবে । কারণ নেতাই দলকে ভুল পথে পরিচালিত করে।

  •  আল্লাহর রাস্তায় যারা সংগ্রাম করে তাদের জীবনে ঐশী সাহায্য আসে। 

  •  জিহাদ আল্লাহর পরীক্ষা। জিহাদ থেকে পালিয়ে সারা রাত সিজদায় পড়ে থাকলেও মুমিন হওয়া যাবে না। 

  • আল্লাহর কাছে শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানের চাইতে চারিত্রিক দৃঢ়তার মূল্য অনেক বেশী। আল্লাহর দরবারে যে বিষয়ের মূল্য বেশী. তা শিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান নয়, বরং কার্যগত ও চরিত্রগত শ্রেষ্ঠত্ব।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url