সূরা তাওবা। রুকু ১ । মুশরিকদের সাথে চুক্তি বাতিল।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা তাওবা। রুকু -১
আয়াত : ১-৬।
মুশরিকদের সাথে চুক্তি বাতিল।
১ ও ২ নং আয়াত: সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(১) আল্লাহর এবং তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের [ঘোষণা], সেই সব মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২) অতঃপর তোমরা দেশে চারি মাসকাল পরিভ্রমণ কর ও জানিয়া রাখ, তােমরা আল্লাহকে হীনবল করিতে পারিবে না এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের লাঞ্ছিত করিয়া থাকেন।
—-------------------------------------------------------------------- —--------------------------------------------------
কাফির ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা ।
এদের সাথে মুসলমানরা পারস্পরিক মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল।
এরা প্রায়ই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করত।
চুক্তি অনুযায়ী চারমাস সময় দান করে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
এটা ভাবার অবকাশ নেই মক্কা ত্যাগ করলেই তারা আল্লাহর নাগালের বাইরে চলে গেল।
আল্লাহ সত্য প্রত্যখ্যানকারীদের লাঞ্ছনা করে থাকেন।
৩ নং আয়াত: তওবা।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৩) মহান হজ্জের দিবসে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ হইতে মানুষের প্রতি ইহা এক ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ দায়মুক্ত এবং তাাঁহর রাসুলও । তোমরা যদি তওবা কর তবে তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর তোমরা যদি মুখ ফিরাও তবে জানিয়া রাখ, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করিতে পারিবে না এবং কাফিরদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান হজ্জ্বে দিবস অথ্যাৎ জিলহজ্জ্ব মাসের ৯ (আরাফাত) অথবা ১০ তারিখ (কুরবানী। মুসলমানরা সমবেত হলে তাদের সামনে পরিষ্কার করে উপস্থাপন করা যে আল্লাহ এবং রাসুল মুশরিকদের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট।
তওবা করলে তাদের তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে।
এটাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কারো যাওয়া সম্ভব নয়।
কাফিরদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
৪ নং আয়াত: মুসলিমদের সাথে চুক্তি করেছিল নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করেনি।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৪) তবে মুশরিকদের মধ্যে যাহাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যাহারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করে নাই এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাহাকেও সাহায্য করে নাই, তাহাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের পছন্দ করেন।
—--------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------
দু শ্রেণীর সাথে মেয়াদ পূর্ণ করতে হবে।
(i) যে সব মুশরিক চুক্তি ভঙ্গ করে নি।
(ii) মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করে নি।
মহান আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনকারী অর্থ্যাৎ মুত্তাকীকে পছন্দ করেন।
৫ নং আয়াত: নবী (সঃ) এর সাথে চুক্তি সই করেছিল কিন্তু তা ভঙ্গ করে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(৫) অতঃপর নিষিদ্ধ মাসসমূহ অতিবাহিত হইলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাইবে হত্যা করিবে, তাহাদেরেকে বন্দী করিবে, অবরোধ করিবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাহাদের জন্য ওঁৎ পতিয়া থাকিবে। কিন্তু যদি তাহারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (গায়ুরুর রাহীম)
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যারা প্রতিরোধ বা সংঘর্ষে লিপ্ত হবে তাদের হত্যা, বন্দী , অবরোধ করার নির্দেশ।
তাদের ধরার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন :
(i) তাওবা করে।
(ii) সালাত কায়েম করে
(iii) যাকাত দেয়।
আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (গায়ুরুর রাহীম)
৬নং আয়াত: উদারতা।
—---------------------------------------------------------------------------
(৬) মুশরিকদের মধ্যে কেহ তোমার কাছে অশ্রয় প্রার্থনা করিলে তুমি তাহাকে আশ্রয় দিবে যাহাতে সে আল্লাহর বাণী শুনিতে পায়; অতঃপর তাহাকে তাহার নিরাপদ স্থানে পৌঁছাইয়া দিবে; কারণ তাহারা অজ্ঞ লোক।
—---------------------------------------------------------------------------
মুশরিকরা আশ্রয় চাইলে আশ্রয় দিতে হবে।
তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও হেফাজতে রাখতে হবে যাতে কোন মুসলিম তাদের হত্যা করতে না পারে।
হেফাজতে থাকার অবস্থায় এমন পরিবেশ থাকবে যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পারে।
আল্লাহ চান মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করুক।
সে রকম পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
আল্লাহর বাণী শোনার পর ইসলাম গ্রহণ না করলে আশ্রয় প্রার্থীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দিতে হবে।
অনুধাবন:
- চুক্তির উপর ভিত্তি করে মুশরিকদের চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছ
- সে সব মুশরিক যাদের সাথে যুদ্ধ বিরতির চুক্তি হয়েছিল।(১)
- যে সব মুশরিকের সাথে যুদ্ধ বন্ধের কোন চুক্তি নেই।(২)
- মুসলিমদের সাথে চুক্তি করেছিল নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করেনি।(৪)
- নবী (সঃ) এর সাথে চুক্তি সই করেছিল কিন্তু তা ভঙ্গ করে। (৫)
- ১নং আয়াত থেকে বোঝা যায় ইসলাম অঙ্গীকার ভঙ্গ না করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। প্রতিপক্ষ অঙ্গীকার ভঙ্গ না করা পর্যন্ত মুসলিমদের অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
- ইসলামে রাষ্ট্রনীতি কি হবে তা জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে যাতে মুসলিম-অমুসলিম সবাই যার যার দায়িত্ব বুঝতে পারে।
- চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চুক্তি ভঙ্গ না করা তাকওয়ার লক্ষণ । সামাজিক বন্ধন বা চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আবশ্যক।
- ৪ নং আয়াতে দেখা যায় চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রতিপক্ষকে এই নির্দেশের বাইরে রাখা হয়েছে।
- এ থেকে বোঝা যায় মুসলমানরা প্রয়োজন হলে অমুসলিমদের সাথে চুক্তি করতে পারে।
- মুসলমানদের জন্য একটি বড় শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে প্রতিপক্ষকে কোন সুযোগ না দিয়ে হামলা করা উচিৎ না।
- ইসলামে রাষ্ট্রনীতি কি হবে তা সব নাগরিকের জানার অধিকার আছে। সে জন্য হজ্জ্বের সময়কে নির্ধারণ করা হয় যখন বেশীর ভাগ লোক সমবেত হয়।
- কেউ যদি আশ্রয় চায় তবে তাকে আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে। মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে ভুল পথে পরিচালিত হয়। প্রতিপক্ষকে আশ্রয় দিলে তাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছান সহজ হয়। আর যদি ইসলাম কবুল না করে তবে তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।