সমূরা বাকারা। রুকু -৩৯। লেনদেন ও চুক্তি সংক্রান্ত বিধান।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালূ আল্রাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা। রুকু ৩৯।
আয়াত: ২৮২ - ২৮৩।
লেনদেন ও চুক্তি সংক্রান্ত বিধান।
আলোচ্য বিষয়:
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
এই আয়াতকে 'আয়াতুদ দাইন' বলা হয়। এই আয়াতটি কুরআনের সবচেয়ে লম্বা আয়াত । এ আয়াতে আল্লাহ ঋণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেছেন।
ক. ২৮২ নং আয়াত: লেনদেনের চুক্তিনামা লেখার পদ্ধতি।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৮২) হে মুমিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের কারবার কর তখন উহা লিখিয়া রাখিও; তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্যভাবে লিখিয়া দেয়; লেখক লিখিতে অস্বীকার করিবে না। যেমন আল্লাহ তাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন, সুতরাং সে যেন লিখে এবং ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয় এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে, আর উহার কিছু যেন না কমায়; কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দিতে না পারে তবে যেন তাহার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের উপর তোমরা রাযী তাহাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ সাক্ষী রাখিবে, যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক; স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে। সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে । ইহা ছোট হউক অথবা বড় হউক, মেয়াদসহ লিখিতে তোমরা কোনরূপ বিরক্ত হইও না। আল্লাহর নিকট ইহা ন্যয্যতার ও প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর তাহা তোমরা না লিখিলে কোন দোষ নাই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রাখিও, লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত কর তবে ইহা তোমাদের জন্য পাপ। তোমরা আল্লাহকে অয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে অবহিত।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুমিনদের সম্বোধন করে আয়াতটি শুরু হয়েছে।
নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ নেয়া এবং তা লিখে রাখতে হবে।
একজন লেখক তা ন্যায্যভাবে লিখে দেবে।
লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। কারণ আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়াছেন।
ঋণগ্রহীতাকে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে হবে।
আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
ঋণের পরিমান সঠিক লিখে। কম বা বেশী করবে না।
কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া বলে দিতে না পারে তবে তার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে।
সাক্ষী রাখতে হবে। দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে সাক্ষী রাখতে হবে।
স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে।
সাক্ষ্য দেবার যখন প্রয়োজন হয় তখন সাক্ষীরা অস্বীকার করবে না।
দলিল ছোট কিংবা বড় হোক না কেন মেয়াদসহ লিখতে লেখক কোনরূপ বিরক্ত প্রকাশ করবে না।
স্মৃতি দুর্বলতার কারণে মানুষ ভুলে যেতে পারে। কিন্তু ছোটবড় সব লেনদেন লেখা থাকলে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
এতে সহজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়।
নগদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে লিখিবার প্রয়োজন নাই।
বেচাকেনা করার সময় সাক্ষী রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
না দেখে সাক্ষী দেয়া বৈধ নয়।
লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর অর্থ, লেখক লিখতে অস্বীকার করে বা পরে অস্বীকার করে ক্রেতা-বিক্রেতার ক্ষতি হরতে পারে। আবার অপরদিকে ক্রেতা বা বিক্রেতা ভয়-ভীতি দেখাতে পারে।
এভাবে লেখক বা সাক্ষীেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা পাপ।
আল্লাহকে ভয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যার মধ্যে দ্বীন ও দুানয়ার কল্যাণ নিহিত আছে।
আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
খ. ২৮৩ নং আয়াত: সফরে খাকার সময় ঋণ লেনদেন।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৮৩) যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও তবে হস্তান্তরকৃত বন্ধক রাখিবে। তোমাদের একে অপরকে বিশ্বাস করিলে, যাহাকে বিশ্বাস করা হয় সে যেন আমানত প্রত্যর্পণ করে এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না, যে উহা গোপন করে অবশ্যই তাহার অন্তর পাপী। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহা সবিশেষ অবহিত।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সফরে যদি ঋণ লেনদেনের প্রয়াজন হয় এবং লেখার লোক না পাওয়া যায় তবে কোন জিনিস ঋণদাতার কাছে বন্ধক রাখবে।
জিনিসের বিনিময় ছাড়া বন্ধক রাখা যায় না।
পরস্পরকে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করে আমানত সঠিকভাবে আদায় করতে হবে।
পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করলে বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকদাতাকে ফেরত্ দিতে হবে।
আমার অনুধাবন:
এই রুকুর প্রধান উদ্দেশ্য কলহ বিবাদ থেকে দূরে থাকা এবং অন্যের হক নষ্ট না করা।
এই রুকুতে লেনদেন এবং চুক্তিসংক্রান্ত বিধিবিধানের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি বিধান সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঋণের শর্ত হবে ঋণগ্রহীতার স্বার্থে - ঋণদাতার স্বার্থে মেয়াদী ঋণ সম্পর্কে নীতিালা দিয়েছে।
ইসলামের সাক্ষ আইন।
মেয়াদী ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা।
বন্ধকী ঋণ সংক্রান্ত বিধান দেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়িক লেনদেনে মিথ্যা সর্বাবস্থায় পরিত্যজ্য।
আল্লাহ যে সব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন সে সব বিষয় আমল করতে হবে ।