সূরা বাকারা । রুকু ৩৮। সুদ ।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন
আয়াত: ২৭৪ - ২৮১।
সুদকে হারাম ঘোষণা।
২৭৪ নং আয়াত: দানের উপকার।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৭৪) যাহারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য রাত্রে ও দিবসে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাহাদের পূণ্য ফল তাহাদের প্রতিপালকের নিকট রহিয়াছে, তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিত হইবে না।
------------------------------------------------------------------------
সর্বাবস্থায় দান করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
নিঃস্বার্থভাবে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে হবে।
তারা অনেক পূণ্য লাভ করে।
মহান আল্লাহ তাদের পুরস্কার ও আত্মিক প্রতিদান দিবেন।
তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা কখনো দুঃখিত হবে না।
২৭৫ ও ২৭৬ নং আয়াত: সুদ হারাম হওয়া এবং তার নিন্দাবাদ ।
------------------------------------------------------------------------
(২৭৫) যাহারা সুদ খায় তাহারা সেই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াইবে যাহাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। ইহা এইজন্য যে, তাহারা বলে, 'ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতই।' অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করিয়াছেন। যাহার নিকট তাহার প্রতিপালকের উপদেশ আসিয়াছে এবং সে বিরত হইয়াছে, তবে অতীতে যাহা হইয়াছে তাহা তাহারই; এবং তাহার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যাহারা পুনরায় আরম্ভ করিবে তাহারাই দোজখবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৭৬) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বধির্ত করেন। আল্লহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।
-----------------------------------------------------------------------------কোন ঋণের উপর যে অতিরিক্ত অর্থ ধার্য করা হয় তাকে 'রিবা' বা সুদ বলে ।
সুদখোররা কিয়ামতের দিন পাগল অবস্থায় ওঠবে।
সুদের মাধ্যমে মূলত সম্পদ বৃদ্ধি পায় না।
মানুষ যুক্তি দেখিয়ে সুদ খায়।
সুদখোর ব্যক্তি যুক্তি দেখায় 'ক্রয়-বিক্রয়' করে যে মুনাফা অর্জিত হয় তার সাথে সুদের কোন পার্থক্য নেই।
মানুষ আগে সুদ খেয়ে থাকলে এবং যদি বর্তমানে বিরত হয় তবে তার ফায়সালা আল্লাহ করবেন।
সুদ গ্রহীতারা জাহান্নামবাসী হবে।
২৭৭ নং আয়াত : নেককার মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৭৭) নিশ্চয়ই যাহারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়. তাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------
তারা সৎকাজ করে।
সালাত কায়েম করে।
যাকাত দেয়।
আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করেন।
তাদের কোন ভয় নাই ।
তারা কখনো দুঃখিত হবে না।
২৭৮ ও ২৭৯ নং আয়াত: বকেয়া সুদ উসুল করতে নিষেধাজ্ঞা।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৭৮) হে মুমিণগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের বকেয়া যাহা আছে তাহা ছাড়িয়া দাও যদি তোমরা মুমিন হও।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৭৯) যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। ইহাতে তোমরা অত্যাচারিত হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ মুমিনদের সুদ না খাবার জন্য আহ্বান করেছেন।
সুদ মাফ করতে বলেছেন।
ঋণগ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে সচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত আসল টাকা শোধ করতে সময় দিতে বলেছেন।
সুদ মাফ না করাকে আল্লাহ ও তাঁল রাসুলের সাথে যুদ্ধ করার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
তাওবা করলে সুদখোর তার মুনাফা ফেরৎ আনতে পারবে।
২৮০ নং আয়াত: অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দেয়া ওয়াজিব।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৮০) যদি খাতক অভাবগ্রস্ত হয় তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাহাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছাড়িয়া দাও তবে উহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানিতে।
-----------------------------------------------------------------------------
(২৮১) তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যে দিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যানীত হইবে। অথঃপর প্রত্যেককে তাহার কর্মের ফল পুরাপুরি প্রদান করা হইবে, আর তাহাদের প্রতি কোনরূপ অন্যায় করা হইবে না।
-----------------------------------------------------------------------------
ঋণগ্রহীতা গরীব হলে তার স্বচ্ছলতা আশা পর্যন্ত সময় দিতে হবে।
দরিদ্র ঋণগ্রহীতাকে ক্ষমা করে দেয়া উত্তম।
মানুষকে বুঝতে হবে ঋণ মাফ করে দেয়া তাদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর।
আমার অনুধাবন। :
মহান আল্লাহ সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় সুদে সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দানে সম্পদ কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার ঠিক বিপরীত ঘটনা হয়। প্রাকৃতিক নিয়ম হল দানে সম্পদ বৃদ্ধি পায় আর সুদে সম্পদ কমে যায়।
সুদখোর মানুষ যুক্তি দেখিয়ে সুদ খায়।
সুদখোর লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় এবং সুদকে একই মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মানুষ সময়, মেধা, শ্রম ও অর্থ সবই বিনিয়োগ করে। এখানে লাভ ও লোকসানের দুটোই ঘটতে পারে। কিন্তু সুদে মানুষ শুধু অর্থ খাটায় এবং শুধু লাভ গণনা করে। সুদ না দিতে পারলে জবরদস্তি করে হলেও সে তার মুনাফা হাসিল করে। লোকসানের কোন ঝুঁকি গ্রহণ করে না।
সৎ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প-কারখানার প্রসারের ফলে মানুষের ব্যক্তিগত এবং জাতিগত উন্নতি হয়। এর ফলে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মহাজনী সুদ প্রথায় মহাজন টাকার লালসায় কোন অভাবগ্রস্তর প্রতি কোন রকম দয়া দেখায় না। তাকে সর্বস্বান্ত করে দেয়।
ঋণ গ্রহীতা গরীব হলে তাকে সময় দিতে হবে।
বর্তমানে যদি সুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকে তবে সে আগে যা খেয়েছে তার ফায়সালা আল্লাহ করবেন।