সূরা বাকারা । রুকু -৩৭। সত্যর জন্য ব্যয়।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময় , পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা। রুকু ৩৭।
আয়াত: ২৬৭- ২৭৩
সত্যের জন্য ব্যয় করা।
(২৬৭) হে মুমিণগণ! তোমরা যাহা উপার্জন কর এবং আমি যাহা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করিয়া দেই তম্মধ্যে যাহা উৎকৃষ্ট তাহা ব্যয় কর এবং উহার নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করিও না, অথচ তোমরা উহা গ্রহণ করিবার নও, যদি না তোমরা চক্ষু বন্ধ করিয়া থাক। এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
-ৃ—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ মুমিনদের দান করতে আহ্বান করেছেন।
হালাল উপায়ে উপার্জিত সম্পদ থেকে দান করতে হবে।
উত্তম ও পবিত্র জিনিস দান করতে হবে। নিকৃষ্ট বা বাতিল জিনিস এবং অবৈধ পথে আয় করা সম্পদ হতে দান করলে হবে না।
চক্ষু বন্ধ করে দান করা বলতে বোঝাচ্ছে সব নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কাজ করা। অর্থ্যাৎ বিবেককে বাদ দিয়ে কাজ করা। এভাবে দান করতে নিষেধ করা হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে আল্লাহ অভাব মুক্ত।
২৬৮ নং আয়াত - শয়তান দারিদ্রের ভয় দেখিয়ে দান করার হতে বিরত রাখে।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬৮) শয়তান তোমাদের দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁহার ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্ময়, সর্বজ্ঞ।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মানুষ যখনই কোন সৎ কাজের সিদ্ধান্ত নেয় তখনই শয়তান দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
তাদের মনে এ প্রত্যয়ের জন্ম দেয় যদি দান করা হয় তবে তবে দরিদ্র হয়ে যাবে।
তাদের উচ্চ জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ও ভোগ-বিলাসে উৎসাহিত করে। ফলে তারা সৎকাজে ব্যয় করতে নিবৃত্ত হয়।
শয়তান লজ্জাকর কাজের জন্য উৎসাহিত করে।
আল্লাহ আমাদের সব সময় ভালোর দিকে টানেন।
তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করেন।
তিনি সর্বজ্ঞ এবং প্রত্যেক মানুষকে তার নিয়ত অনুযায়ী ফল দান করেন।
২৬৯ আয়াত : হিকমা প্রদান।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬৯) তিনি যাহাকে ইচ্ছা হিকমত প্রদান করেন এবং যাহাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাহাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়, এবং বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শুধু শিক্ষা গ্রহণ করে।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে হিকমা বা বিশুদ্ধ জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দান করেন।
কাউকে হিকমা দেবার অর্থ তার প্রভূত কল্যাণ দান করা।
বোধশক্তিসম্পন্ন বা জ্ঞানবান ব্যক্তি তারাই যারা আল্লাহর আয়াত থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। অর্থ্যাৎ তারা আল্লাহর কাছ থেকে হিকমা পেয়েছে।
২৭০ নং আয়াত - দানের শর্তসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখার তাগিদ ।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৭০) যাহা কিছু তোমরা ব্যয় কর অথবা যাহা কিছু তোমরা মানত কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাহা জানেন। আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মানুষ গোপনে বা প্রকাশ্যে যা কিছু ব্যয় করে তা আল্লাহ সব জানেন।
মহান আল্লাহ যা কিছু মানত করে তাও জানেন।
প্রত্যেক ব্যক্তির মহান আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ এবং বান্দার হক পালন করা উচিত। তা যদি না করে তবে সে জুলুমকারী।
যারা না আল্লাহর হক আদায় করে বা না শোকরগোজারী করে তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
'মানত' করা বলতে বোঝায় মানুষ অনেক সময় এই নিয়ত করে যে, আমার অমুক কাজটি যদি সম্পন্ন হয় অথবা অমুক বিপদ থেকে আমি উদ্ধার পাই তবে আমি আল্লাহর পথে অমুক পরিমাণ সদাকা করব। ভাল কাজে এই মানত পূরণ করা আবশ্যক। কিন্তু অবৈধ কাজে মানত থাকলে তা পূরণ করা উচিত নয়। আল্লাহ ব্যতীত আর কারো উদ্দেশ্যে মানত করা যাবে না। যেমন আজকাল অনেকে প্রসিদ্ধ মাজারে যায় ও নযরানা দিয়ে আসে। এটা পুরোপুরি শির্ক।
২৭১ নং আয়াত - দান করলে আল্লাহ গোনাহ ক্ষমা করেন।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৭১) তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে উহা ভাল, আর যদি তাহা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দান কর তাহা তোমাদের জন্য আরও ভাল, এবং তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করিবেন, তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহা সম্যক অবহিত।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ গোপন দানকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলছেন।
প্রকাশ্য দান করাও ভাল। তবে এই সাদাক্বা করা হয় মানুষকে উৎসাহ দেয়ার জন্য। লোক দেখানোর জন্য নয়।
অভাবগ্রস্তদের নিঃস্বার্থভাবে দান করা উচিত।
আল্লাহ দানের নিয়্যতের উপর ভিত্তি করে পাপ মোচন করবেন।
মহান আল্লাহ প্রকাশ্য - অপ্রকাশ্য সব বিষয় সম্পর্কে অবহিত। তাঁর কাছে কিছু লুক্কায়িত থাকে না।
২৭২ নং আয়াত - দানের সওয়াব বিফলে যাবে না।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৭২) তাহাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব তোমার নহে, বরং আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তাহা তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে ব্যয় করিয়া থাক। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তাহার পুরষ্কার তোমাদেরকে পুরাপুরিভাবে প্রদান করা হইবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হইবে না।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন মানুষকে সৎপথে আনার দায়িত্ব তার নয়।
হিদায়েতের পথে আনা একমাত্র আল্লাহর এখতিয়ারাধীন।
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যা ব্যয় করা হয় তার পুরোপুরি প্রতিদান সে পাবে।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে দান কারীদের উপর কোন অত্যাচার করা হবে না।
২৭৩ নং আয়াত: যারা দ্বীনি কাজে ব্যস্ত থাকে এবং উপার্জনের সময় পায় না।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৭৩) ইহা প্রাপ্য অভাবগ্রস্ত লোকদের, যাহারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘোরাফেরা করিতে পারে না, যাচ্ঞা না করার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাহাদেরকে অভাবমুক্ত বলিয়া মনে করে, তুমি তাহাদের লক্ষণ দেখিয়া চিনিতে পারিবে। তাহারা মানুষের নিকট নাছোড় হইয়া যাচ্ঞা করে না। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর আল্লাহ তো তাহা সবিশেষ অবহিত।
—----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যারা আল্লাহর পথে এসে প্রত্যেক জিনিস থেকে বঞ্চিত হয়।
রসুল (সঃ) এর সময় মুহাজিরদের এরকম অবস্থা হয়।
বর্তমান কালে দ্বীনি জ্ঞান আন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী ও আলেমদের ধরা যেতে পারে।
এদের একটি গুণ হচ্ছে অভাব অনটনে পড়লেও তারা কারো কাছে ভিক্ষা করে না। ভিক্ষুকদের মত নছোড়বান্দা হয়ে সাহায্য চায় না।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস তারা লোকের কাছে প্রার্থনা করে না।
আমার অনুধাবন-
মহান আল্লাহ দানের মূল নীতি বর্ণনা করেছেন। দান করতে হবে বৈধ ভাবে অর্জিত সম্পদ এবং কৃষিকাজে যে ফসল উৎপাদিত হয় তা থেকে।
হালাল রুজীর সম্পদ না হলে তা থেকে দান করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
উপার্জিত অর্থের প্রতিটি পাই পয়সা হালাল হতে হবে। হারাম সম্পদ থেকে ব্যয় করাতে কোন বরকত নাই।
দান করে তারা অসৎ পথে অর্জিত পাপকে মুছতে পারবে না। কারণ অসৎপথে উপার্জিত সম্পদের কোন পূণ্য নেই।
অসৎপথে উপার্জিত অর্থ দান করা আল্লাহকে অসম্মান করা।
আমাদের আত্মার উন্নতির জন্য প্রয়োজন নিঃস্বার্থ দানের নিয়ত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।
প্রকাশ্যে দান করার চাইতে গোপনে দান করা উত্তম।
যাকে তাকে দান করলে হবে না। সত্যিকারের অভাবী ব্যক্তিকে দান করতে হবে।
আমরা নিজের জন্য যেমন নষ্ট বা খারাপ হওয়া জিনিস যেমন পছন্দ করি না। তেমনি আল্লাহর পথে খারাপ ছাড়া খারাপ জিনিস ব্যয় করা যাবে না।
শয়তান আমাদের মনের মধ্যে দান করতে নিরুৎসাহিত করে। সে মন্দ ও অশ্লীল কাজগুলিকে আমাদের সামনে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দেখায় আবার অপরদিকে সৎ পথে উপার্জনকে একদিকে যেমন নিরুৎসাহিত করে আবার অপরদিকে দান করলে নিঃস্ব ও কাঙ্গাল হয়ে যাবার ভয় দেখায়।
পেশাদার ভিক্ষুকের পরিবর্তে মুহাজির, দ্বীনী জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী, উলামা এবং চাইতে পারে না এমন ব্যক্তিদের দান করতে হবে।
গুপ্ত অভাবীদের খুঁজে বের করে সাহায়্য করা উচিত।