সূরা বাকারা । রুকু -৩৬। দানের নিয়ম।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা। রুকু ৩৬।
আয়াত: ২৬১ - ২৬৬।
দান খয়রাতের নিয়ম-কানুন।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬১) যাহারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাহাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যাহা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীর্ষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করিয়া দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর পথে ব্যয় অর্থ্যাৎ জেহাদ অথবা সব ধরণের কল্যাণকর কাজে ব্যয়।
মহান আল্লাহ এর উপমা দিয়েছেন শস্যবীজের সাথে।
আল্লাহ একটি শস্যদানাকে যেমন বহুগুণে বৃদ্ধি করেন তেমনি দান মানুষের বরকত বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়।
মহান আল্লাহ একটি শস্যদানা দেখে ৭টি শীষ উৎপাদন করেন। আবার এই একেকটি শষ হতে আরো ১০০টি শীষ উৎপাদন করেন। তেমনি দান-খয়রাত সাতশগুণ হয়ে ফিরে আসবে।
আল্লাহ প্রাচুর্ময়। তিনি মুক্ত হম্তের অধিকারী।
আল্লাহগ সর্বজ্ঞ । তিনি কোন কিছু সম্পর্কে বেখবর নন।
২৬২, ২৬৩ ও ২৬৪ নং আয়াত: দানের মানদন্ড।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬২) যাহারা আল্লাহর পথে ধনৈশ্বর্য ব্যয় করে অতঃপর অতঃপর যাহা ব্যয় করে তাহার কথা বলিয়া বেড়ায় না এবং ক্লেশও দেয় না, তাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং দুঃখিতও হইবে না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬৩) যে দানের পর কষ্ট দেওয়া হয় তাহা অপেক্ষা ভাল কথা ও ক্ষমা শ্রেয়। আর্রাহ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬৪) হে মুমিণগণ ! দানের কথা বলিয় বেড়াইয়া এবং কষ্ট দিয়া তোমরা তোমাদেরদানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করিও না, যে নিজের ধনসম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করিয়া থাকেএবং আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। তাহার উপমা একটি মসৃণ পাথর -যাহার উপর কিছু মাটি থাকে; অতঃপর উহার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত উহাকে পরিষ্কার করিয়া রাখিয়া দেয়। যাহা তাহারা উপার্জন করিয়াছে।তাহার কিছুই তাহারা তাহাদের কাজে লাগাইতেসক্ষম হইবে না । আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কেসত্পথে পরিচালিত করেন না।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দান করে দানের জাগতিক প্রতিদান প্রত্যাশ্যা করা উচিত নয়।
লোক দেখানো দান করা উচিৎ নয়।
মনে রাখতে হবে দানের বিনিময় দাতা আল্লাহ।
দান করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
দান অহংকার ও দম্ভ মুক্ত হয়ে বিনয়ের সাথে করতে হবে। নাম যশঃ খ্যাতি অর্জনের জন্য নয়।।
দান গ্রহীতাকে দানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানসিক কষ্ট কিংবা লোকের চোখে হেয় করা যাবে না।
যাকে দান করা হবে তার সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না যাতে সে হীনমন্যতায় কষ্ট পায়।
দান করে খোঁটা দেবার চাইতে ভাল কথা বলা এবং ক্ষমা করা উত্তম।
মনে রাখতে হবে আল্লাহ সর্বজ্ঞ। আমাদের মনের কথা তিনি সব জানেন।
২৬৫ নং আয়াত: দানের প্রকৃতি।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৬৫) আর যাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করণার্থে ধনৈশ্বর্য ব্যয়করে তাহাদের উপমা কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাহাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তাহার ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয় তবে লঘু বৃষ্টির জন্য যথেষ্ট তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দানকে উচ্চ ভূমির সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এখানে মহান আল্লাহ দানকে উচ্চ ভূমির সাথে তুলনা করেছেন। যে ভূমিতে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়না। বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবেশ করে তাকে আরো উর্বর করে তোলে। ফসল দ্বিগুণ বেশী উৎপাদিত হয়। ঐ উচ্চ ভূমিতে মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয় সেই উর্বর মাটি শিশির কণা ও বৃষ্টির পানি ধারণ করে ফসলের উৎপাদন করতে পারে। তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে দান করে সেই প্রকৃত দান করে।
২৬৬ নং আয়াত : আরেকটি উপমা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তোমাদের কেহ কি চায় য়ে, তাহার খেজুর ও আঙুরের একটি বাগান থাকে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাহাতে সর্বপ্রকার ফলমূল আছে , যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তাহার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, অতঃপর উহার উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও উহা জ্বলিয়া যায়? এইভাবে আল্লাহ তাঁহার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাহাতে তোমরা অনুধাবন করিতে পার।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দান-খয়রাতের প্রকৃতরূপ বলতে গিয়ে মহান আল্লাহ মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে আরেকটি উপমা দিয়েছেন।
উপমাটি হচ্ছে আপনি বৃদ্ধ হয়েছেন। আপনার সন্তানরা এখনো ছোট। আয় করার মত উপযুক্ত হয় নি। আপনার একটি খুব সুন্দর আঙ্গুর ও খেজুরের বাগান আছে । এই বাগানের পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরণের ফলমূল উৎপাদিত হয়। কিন্তু হঠাৎ তাপদাহ সহ ঘূর্ণিঝড় এসে বাগানটি লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল ফলে আপনার পরিশ্রম লব্ধ বাগানটি যা আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের আশ্রয়স্থল ছিল তা ধ্বংস হয়ে গেল। এখন আপনি বৃদ্ধ হওয়ায় রোজগারে অক্ষম আবার অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ে সব তছনছ হয়ে গেছে - এ অবস্থার সাথে তুলনা করা হয়েছে আপনি যদি লোক দেখান দান করেন কিংবা দান গ্রহীতার সাথে খারাপ আচরণ করেন তার সাথে। এর ফলে কোন পূণ্য তিনি পাবেন না।
আমার অনুধাবন
দান করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাস্তায় অর্থ্যাৎ আল্লাহর সৃষ্ট জীবের সেবায়।
দান গ্রহীতার কাছে দানের বিনিময়ে প্রতিদান চাওয়া যাবেনা। প্রতিদান চাওয়া যেতে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কাছে যার সন্তুষ্টির জন্য দান করা হয়েছে।
দান গ্রহীতার সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না যাতে সে নিজেকে ঘৃণিত ও হেয় মনে করে। খোঁটা দেয়া যাবে না।
দান করে উপহাস করার চাইতে তার সাথে ভালভাবে কথা বলা ও ক্ষমা করা অনেক ভাল।
লোক দেখানো সৎকাজে কোন সওয়াব নেই।
সংক্ষেপে ব্যর্থ ও অগ্র্রহণীয় সদকা :
- ‘মনে কষ্ট রেখে দান করা।
- লোক দেখান বা রিয়াকারীর দান।
- মুনাফিকের দান।
- প্রতিদান পাবার আশা।
- দান করে গ্রহীতাকে খোঁটা দেয়া ।
- পাপ কাজ করা।