সূরা বাকারা। রুকু -৩৪। আল্লাহর পরিচয় এবং বৈষয়িক কিছু বিধি ও রীতিনীতি।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
সূরা বাকারা । রুকু - ৩৪
আয়াত: ২৫৪-২৫৭
আল্লাহর পরিচয় এবং বৈষয়িক কিছু বিধি ও রীতিনীতি।
২৫৪ নং আয়াত: আল্লাহর পথে ব্যয় ও দানের গুরুত্ব।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫৪) হে মুমিনগণ! আমি যাহা তোমাদেরকে দিয়াছি তাহা হইতে তোমরা ব্যয় কর সেই দিন আসিবার পূর্ব, যেই দিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকিবে না এবং কাফিররাই জালিম।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ মুমিণদের তাদের যে সম্পদ আল্লাহ দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করতে নির্দশ দিয়েছেন।
এখানে কিয়ামতের দিনকে বোঝান হয়েছে।
এদিন কোন সুপারিশ ও দান গ্রহণ হবে না।
২৫৫ নং আয়াত: আয়তাল কুরসী।
আল্লাহর একত্বের পরিচয় ও তাঁর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা।
—------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫৫) আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্ব সত্তার ধারক । তাঁহাকে তন্দ্রা কিংবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্ত তাঁহারই। কে সে, যে তাহার অনুমতি ব্যতীত তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত।যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁহা জ্ঞানের কিছুই তাহারা আয়ত্ত করিতে পারে না। তাঁহার কুরসী আকাশ ও পৃথিবীতে পরিব্যপ্ত। ইহাদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁহাকে ক্লান্ত করে না; তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই আয়াতটি মহান আল্লাহতায়ালার গৌরবময় গুণাবলী, তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা , পরাক্রমশীলতা ও মহানুভবতা সম্বলিত আয়াত।
আল্লাহর একত্বে ও অস্তিত্বে ঈমান আনতে বাধ্য হবে।
সব কিছুর উপর তাঁর কর্তৃত্ব বিরাজমান।
প্রতিটি সৃষ্টির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তিনি জানেন।
তাঁর সর্বব্যপী জ্ঞন সবকিছুর উপর ছড়িয়ে আছে।
সবকিছু তদারক করার ক্ষমতা আছে।
সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ তিনি করেন।
আল্লাহ যদি কাউকে শাফায়েত করার অনুমতি দেন তবে তিনিই শাফায়েত করতে পরবেন।
তাঁর প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া আর কারো জ্ঞান নেই।
২৫৬ নং আয়াত: ধর্শ গ্রহণে কোন জবরদস্তি নাই।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫৬) দীন গ্রহণে কোন জোর-জবরদস্তি নাই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হইতে সুস্পষ্ট হইয়াছে। যে তাগূতকে অস্বীকার করিবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনিবে সে এমন এক মযবুত হাতল ধরিবে যাহা কখনও ভাঙ্গিবে না। আল্লাহ.সর্বশ্রোতা ও প্রজ্ঞাময়।
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২৫৭ নং আয়াত: ঈমানের দৃঢ়তা।
—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ তাহাদের অভিভাবক, তিনি তাহগাদেরকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোকে লইয়া যান। আর যাহারা কুফরী করে তাগূত তাহাদের অভিভাবক; উহারা তাহাদেরকে আলো হইতে অনধকারে লইয়া যায়। উহারাই অগ্নি অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হবে।
—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যারা ঈমানকে দৃঢ়ভাবে ধরে তাদের আল্লাহ রক্ষা করেন।
আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক আর কুফরকারীদের অভিভাবক শয়তান।
আল্লাহ তাঁর দলকে অন্যায় ও অসত্যের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন।
শয়তান তার দলকে সত্যরে আলো থেকে জাহেলিয়াতের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।
আমার অনুধাবন:
২৫৪ আয়াত হতে আল্লাহ পরিষ্কার করে জানিয়ে দিচ্ছেন যে কিয়ামতের দিন কারো শফায়াত বা সুপারিশ কাজে আসবে না। বর্তমানে আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা বিশ্বাস করেন পীর-বুযুর্গ ব্যক্তিরা শাফায়াত করলে তারা গুনাহ থেকে মাফ পেয়ে যাবেন। এখানে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে আল্লাহর নিকট এ রকম কোন সুপারিশের অস্তিত্ব নেই।
মহান আল্লাহ অনন্ত ও অসীমকাল পর্যন্ত অস্তিত্ববান, চিরঞ্জীব, সব কিছু দেখেন এবং শোনেন। সমগ্র বিশ্ব ব্রম্মান্ডের স্রষ্টা ও উদ্ভাবক, যাবতীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রভাব মুক্ত। যেমন তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। তিনি সমগ্র বিশ্ব ব্রম্মান্ডের এক ছত্র অধিপতি। আর কোন দ্বিতীয় সত্তার অংশীদারত্ব নেই। কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক করে মাবুদ বানানো যাবে না। এমন শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের অধিকারী যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে কেউ কথা বলতে পারে না। তিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার রক্ষনাবেক্ষণ এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোন রকম ক্লান্তি ও পরিশ্রান্ত অনুভব করেন না। তিনি সর্ব ব্যপী জ্ঞানের অধিকারী। তাঁর জ্ঞান থেকে প্রাকাশ্য বা গোপন বস্তু, কোন অনু-পরমাণু এমন কি বিন্দু- বিসর্গ পর্যন্ত বাদ পড়ে না।