সূরা বাকারা । রুকু ৩৩। সত্যের পক্ষে লড়াই।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা । রুকু - ৩৩
আয়াত : ২৪৯– ২৫৩
সত্যের পক্ষে লড়াই
২৪৯ নং আয়াত: তালুতের বাহিনীকে রাস্তায় পিপাসা দিয়ে পরীক্ষা এবং অনেকে সাহস হারিয়ে ফেললেও আল্লাহ প্রেমীদের অগ্রসর হওয়া।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৪৯) অতঃপর তালূত যখন সৈনৗবাহিনী সহ বাহির হইল সে তখন বলিল, 'আল্লাহ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করিবেন। যে কেহ উহা হইতে পান করিবে সে আমার দলভুক্ত নহে; আর যে কেহ উহার স্বাদ গ্রহণ করিবে না সে আমার দলভুক্ত; ইহা ছাড়া যে কেহ তাহার হস্তে এক কোষ পানি গ্রহণ করিবে সেও। অতঃপর অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাহারা উহা হইতে পান করিল।সে এবং তাহার সঙ্গী ঈমানদারগণ যখন উহা অতিক্রম করিল তখন তাহারা বলিল, 'জালুত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নাই।' কিন্তু যাহাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাহাদের সাক্ষাৎ ঘটিবে তাহারা বলিল, ' আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করিয়াছে।' আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২৫০ ও ২৫১ নং আয়াত: তারা আক্রমণ চালাল এবং বিজয়ী হল।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫০) তাহারা যখন যুদ্ধার্থে জালূত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হইল তখন তাহারা বলিল,'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য্য দান কর, আমাদের পা অবিচিলত রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান কর।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫১) সুতরাং তাহারা আল্লাহর হুকুমে উহাদের পরাভূত করিল;দাউদ জালুতকে সংহার করিল, আল্লাহ তাহাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করিলেন এবং যাহা তিনি ইচ্ছা করিলেন তাহা তাহাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হইয়া যাইত।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তালুত ও জালুতের কাহিনীর অবশিষ্টাংশ::
তাবুত সৈন্য সহ যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হলেন। কথিত আছে পথে জর্ডান নদী পড়ে। তালুত তার সৈন্যদের ঐ নদীর পানি খেতে নিষেধ করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সৈন্যদের আনুগত্য পরীক্ষা করা। কারণ সৈন্যদের আনুগত্য না থাকলে যুদ্ধে জয় করা যায় না। যে পানি পান করবে সে আনুগত্যশীল নয় । আর যে পানি পান করবে না সে সেই আনুগত্যশীল এবং তালুতের লোক। যখন তালুত তার সৈন্যসহ নদীর ওপারে পৌঁছালেন তখন যারা তালুতের আদেশ মানে নি তারা বলল, জালুতের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। তারা পিছপা দিল। কিন্তু যারা তালুতের আদেশ মান্য করেছিল এবং বিশ্বাস করেছিল আল্লাহর সাথে মিলিত হবে , তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে আমরা বড় দলের উপর অবশ্যই জয়যুক্ত হব। আর যারা সবর করে তাদের সাথে আল্লাহ সব সময় আছেন।
তারা যখন জালুতের মুখোমুখি হল তখন তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল ''হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান কর, আমাদের পা অবিচিলত রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান কর।' মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন।
জালুত ছিলেন বিশালাকার পালোয়ান। বাইবেলে বর্ণিত আছে যে সে যুদ্ধ ক্ষেত্রে বারবার চ্যলেঞ্জ দিতে থাকে 'কে আছে যে সে তার সাথে লড়াই করতে পারে?' কেউ সাহস করতে পারছিলনা তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য । এসময় দাউদ (আঃ) তিনি তখনও নবী হন নি তিনি এগিয়ে আসেন। তিনি তালুতের কাছে অনুমতি চান জালুতের মোকাবিলা করার জন্য। কথিত আছে তার তিন ভাই যুদ্ধে আসে। তিনি ছোট ছিলেন বিধায় তাকে বৃদ্ধ বাবার দেখাশুনার জন্য যেতে দেয়া হয় নি। সে এসেছিল ভাইদের খবর নেয়ার জন্য। জালুত যখন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিল তখন কেউ এগিয়ে আসছিলনা। তিনি তালুতের কাছে অনুমতি চাইলেন জালুতের সাথে যুদ্ধ করতে। তালুত তাঁর বয়সের স্বল্পতা দেখে চিন্তা করছিল। কিন্তু তাঁর জোরাজুরিতে অনুমতি দেন।আল্লাহর হুকুমে দাউদ (আঃ) জালুতকে হত্যা করল এবং তাঁর দলকে ছত্রভঙ্গ করে দিল।
মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা। সে সাথে দাউদ যা শিখতে চান তাঁর শিক্ষা দিলেন।
২৫২ নং আয়াত: আল্লাহর বাণী।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫২) এই সকল আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার নিকট উহা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করিতেছি, আর নিশ্চয়ই তুমি রাসুলগণের অন্তর্ভূক্ত।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২৫৩ নং আয়াত : কতিপয় পয়গম্বরের আলোচনা।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২৫৩) এই রাসুলগণ, তাহাদের মধ্যে কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি। তাহাদের মধ্যে এমন কেহ রহিয়াছে যাহার সঙ্গে আল্লাহ কথা বলিয়াছেন,আবার কাহাকেও উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছেন । মারইয়্যাম-তনয় 'ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করিয়াছি ও পবিত্র আত্মা দ্বারা তাহাকে শক্তিশালী করিয়াছি। আল্লাহ ইচ্ছা করিলে তাহাদের পরবর্তীরা তাহাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ সমাগত হওয়ার পরও পারস্পরিক যুদ্ধ - বিগ্রহে লিপ্ত হইত না; কিন্তু তাহাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিল। ফলে তাহাদের কিছুসংখ্যক ঈমান আনিল এবং কিছুসংখ্যক কুফরী করিল তাহারা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হইত না; কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করিলে তাহারা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হইত া; কিন্তু আল্লাহ যাহা ইচ্ছা তাহা করেন।
----------------------------------------------------------------------- ---------------------------------------------------
মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।
বিভিন্ন নবীকে বিভিন্ন নেয়ামতে ভূষিত করেছেন।
হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন।
হযরত ঈসা (আঃ) কে পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিশালি করেন।
আমার অনুধাবন:
তালুত ও জালুতের কাহিনী থেকে অনুধাবন হচ্ছে মানুষকে তার জাতীয় অস্তিত্ব, স্বাধীনতা এবং সংহতি রক্ষা করতে সাহস ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। আমরা পারব না বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে বা আরেকজন এসে তাদের মুক্তি দিবে ভাবলে কোন দিন স্বাধীনতা লাভ করা যায় না।
যুদ্ধক্ষেত্রে সমরাস্ত্র বা সৈন্য সংখ্যা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে তাদের নৈতিক মনোবল, বিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং আল্লাহর উপর আস্থা। বিচক্ষণতার সাথে পরিকল্পনা করা। যেরকম করেছিলেন দাউদ (আঃ)
দাউদ (আঃ) যুদ্ধ করতে গিয়ে তার চারপাশে যে নুড়ি পাথর পেয়েছিলেন তাই দিয়ে যুদ্ধ করেন। এখান থেকে অনুধাবন যুদ্ধক্ষেত্রে যা সহজলভ্য এবং আওতাধীন সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর রহমত থাকলে সহজেই জয় লাভ করা যায়।
নেতার জ্ঞান, ক্ষমতা ও চারিত্রিক গুণাবলী এবং তার উপর তার অনুসারীদের আস্থা এবং অনুসারীরা নেতার নির্দেশ মত চললে বিজয় আসবেই।
আল্লাহর কাছ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার হচ্ছে চারিত্রিক গুণাবলী।