সূরা বাকারা। রুকু ৩০। তালাক।
কুরআন পড়ুন, বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা । রুকু : ৩০।
আয়াত: ২৩২ -২৩৫।
তালাক।
------------------------------------------------------------------------------
(২৩২) যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তাহারা ইদ্দতকাল পূর্ণ করে , তাহারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে বিবাহ করিতে চাহিলে তোমরা তাহাদেরকে বাধা দিও না। । ইহা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেহ আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তাহাকে উপদেশ দেওয়া হয় । ইহা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ জানেন। তোমরা জান না।
------------------------------------------------------------------------------
যে সব স্ত্রীদের তালাক দেয়ার পর তারা তাদের ইদ্দত অতিবাহিত করে, যাদেরকে তারা আপন বিবাহের জন্য সাব্যস্ত করেছে- চাই তারা নতুন বা পুরোন হোক কিংবা তালাক দাতাগণ অথবা এদের পূর্বে যারা তালাক দিয়েছিল। তাদের পছন্দমতো স্বামীদের সংগে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করলে তাদের বাধা দেয়া যাবে না।
আপন সম পর্যায়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য । এখানে মহর -ই মিসল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
মহর-ই মিসল হচ্ছে নিজ সমপর্যায়ের স্ত্রীলোকদেরকে প্রদত্ত মহর। ধর্ম, সৌন্দর্য, সম্পদ, বয়স ও বংশ এতে বিবেচ্য ।
আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস থাকলে তাদের এ উপদেশ আর সাবধান বাণী তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে।
ইদ্দত শেষ হলে নারীদের বিয়ে বসতে বাধা দেয়া যাবে না।
২৩৩ নং আয়াত: তালাকের পর দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধপান সম্পর্কে নির্দেশ।
------------------------------------------------------------------------------
(২৩৩) যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করিতে চাহে তাহার জন্য জননীগণ তাহাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বত্সর স্তন্যপান করাইবে । জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাহাদের ভরণ-পোষণ করা। কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত কার্যভার দেয়া হয় না। কোন জননীকে তাহার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হইবে না। এবং উত্তরাধিকারীরও অনুরূপ কর্তব্য। কিন্তু যদি তাহারা পরস্পরের সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্যপান বন্ধ রাখিতে চায় তবে তাহাদের কারও অপরাধ নেই। তোমরা যাহা বিধিমত দিতে চাহিয়ােছিলে , তাহা যদি অর্পণ কর তবে ধাত্রী দ্বারা তোমাদের সন্তানকে স্তন্যপান করাতে চাইলে তোমাদের গুনাহ নাই। আল্লাহকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ উহার সম্যক দ্রষ্টা।
------------------------------------------------------------------------------
সন্তানবতী নারী যদি চায় তবে তাদের সন্তানকে পূর্ণ ২ বৎসর দুধ পান করাবে।
পিতার কর্তব্য হচ্ছে নিয়ম অনুযায়ী সে সব নারীর খোরপোষের দায়িত্ব বহন করা।
তবে কাউকে তার সামর্থের অতিরিক্ত চাপ দেয়া যাবে না।
সন্তানের কারণে জননীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
আবার সন্তানের কারণে পিতাকেও ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে ন
পিতামাতা পারস্পরিক সম্মতি ক্রমে দুধ ছাড়াতে পারে। কিংবা যথাযথ বিনিময় প্রদানের মাধ্যমে ধাত্রীকে দিয়ে দুধ পান করাে পারে।
পিতা না থাকলে সন্তানের অভিভাবক দায়িত্ব নিবেন।
আয়াতের শেষে এই ব্যাপারটিকে 'তাকওয়া'র সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়েছে যাতে মানুষ এর গুরুত্ব বুঝতে পারে।
২৩৪ নং আয়াত: বিধবা নারীর জন্য ইসলামের বিধান।
------------------------------------------------------------------------------
(২৩৪) তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশদিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করিবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই।তোমরা যাহা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
------------------------------------------------------------------------------
স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ইদ্দত পূর্ণ হবার পর বিয়ে করা যাবে এবং কোন পাপ হবে না।
আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন মানুষের মনে যা আছে আল্লাহ সব জানেন।
সুতরাং আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
২৩৫ নং আয়াত: বিধবা নারীকে বিয়ের প্রস্কাব।
------------------------------------------------------------------------------
(২৩৫) স্ত্রীলোকদের নিকট তোমরা ইংগিতে বিবাহ প্রস্তব করিলে অথবা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখিলে তোমাদের কোন পাপ নাই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাহাদের সম্পর্কে অবশ্যই আলোচনা করিবে; কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ব্যতীত গোপনে তাহাদের নিকট কোন অংগীকার করিও না; নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহকার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করিও না। এবং জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল।
------------------------------------------------------------------------------
নারীর মন মানসিকতার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর মন স্বভাবতই দুর্বল থাকে। মৃত স্বামীর পরিবারের অনুভূতি তার মধ্যে জাগ্রত থাকে।
তাই ইদ্দতকালীন সময়ে আকার ইংগিতে বিয়ের প্রস্তাব দিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এতে কোন পাপ নেই।
আল্লাহ জানেন যে ব্যক্তি বিয়ে করতে চায় সে অবশ্যই নারীর সাথে কথা বলবে।
তাদের সাথে বিধিমত কথাবার্তা বলতে হবে।
সংগোপনে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না।
নারীর ইদ্দতকাল শেষ না হওয়া পর্ন্ত বিয়ে করার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করবে না। অর্থ্যাৎ আগ বাড়িয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
আয়াতের শেষে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন আল্লাহ ক্ষমাপরায়ল এবং সহনশীল।
অনুধাবন::
আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান থাকলে আল্লাহর নির্দেশ ও উপদেশ সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করতে পারে। কারণ ব্যক্তির একটিি উদ্দেশ্য থাকে সব সময় যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে।
আল্লাহর শান এই যে, তিনি মোমিনকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেবার জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেন।
ইসলাম যদিও বিবাহ বিচ্ছেদ অনুমোদন করেছে তবে তা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ হিসাবে বিবেচিত। কিন্তু যে বিবাহিত জুটির মধ্যে স্নেহ, ভালবাসা থাকে না, পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকে না , নিত্য ঝগড়া হয় সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ অনুমোদিত।
তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী পুনঃর্বিবাহ করতে পারে।
ইদ্দত শেষ হলে নারীদের বিয়ে করতে বাধা দেয়া যাবে না।
ইদ্দত পূর্ণ হবার পর স্ত্রী নিজের ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
স্বামী-স্ত্রী বিরেোধের কারণে দুগ্ধপোষ্য শিশু যাতে শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় আল্লাহ তার ব্যবস্থা করেছেন।
মহান আল্লাহ সন্তানের মাতার উপর শিশুকে দুধ পান করান ফরয করেছেন। কারণ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুই বৎসর পর্যন্ত দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ দুই বছর।
মায়েরাও নিজের প্রকৃতি ও প্রবৃত্তির কারণে এ দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারে না।
পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী বিনিময় দিয়ে অপর মহিলার মাধ্যমে দুধ পান করানো যায়।
স্ত্রী তালাক প্রাপ্ত হলেও সন্তানের খরচ স্বামী বহন করবে।
বিধবা নারীর প্রতি ইসলাম উদারতার নীতি অবলম্বন করে। সে আবার বিয়ে করতে পারে। তাকে মৃত স্বামীর পরিবারে থেকে লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হয় না।
সে যুগে নারী গর্ভবতী কিনা বোঝা যেত না। সন্তান গর্ভে থাকলে সন্তান জন্ম হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত কাল থাকবে।
ইদ্দত চলাকালীন সময়ে বিয়ের কল্পনা করা যায়। তবে বিধবাদের ইদ্দত পালন করা অবস্থায় বিবাহ নিষেধ করা হয়েছে। এমন কি এ ব্যাপারে কোন অঙ্গীকার করা জায়েয নয়।
কারণ ঐ শোকাবহ অবস্থায় বিধবা নারীর মন-মানসিকতা ঠিক থাকার কথা নয়।