সূরা বাকারা । রুকু -২৮। বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধকরণ।
কুরআন পড়ুন , বুঝে পড়ুন
নিজে জানুন, অন্যকে বলুন।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
সূরা বাকারা। রুকু ২৮
আয়াত : ২২২- ২২৮
বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধকরণ।
আয়াত অনুযায়ী আলোচ্য বিষয়:
২২২ নং আয়াত: রজঃশীলা নারীর সাথে সহবাসের অবৈধতা এবং পবিত্র হবার পর অনুমতির শর্তসমূহ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২২২) লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে । বল, 'উহা অশুচি।'
সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করিবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সংগম করিবে না। অতঃপর তাহারা যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হইবে তখন তাহাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন করিবে যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়াছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যাহারা পবিত্র থাকে তাহাদেরকেও ভালবাসেন।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আয়াতের শুরুতে আল্লাহ রজঃস্রাব সম্পর্কে নিজেই প্রশ্ন করেছেন।
আল্লাহ নিজেই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
রজঃস্রাব মেয়েদের জন্য কষ্টকর এবং অপবিত্র। (আরবীতে 'আজান' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। )
মহান আল্লাহ রজঃস্রাবের সময় স্ত্রী-সংগম নিষিদ্ধ করেছেন।
রজঃস্রাব থেকে পবিত্র হবার পর স্ত্রীর কাছে যাওয়া যাবে।
'আল্লাহ যে পথে নির্দেশ দিয়েছেন' অর্থ্যাত্ শুধু যোনি পথে।
মেয়েদের রজঃস্রাব সম্পর্কে আল্লাহর বিধান পুরুষদের মেনে চলতে হবে।
আল্লাহ তওবাকারীকে ভালবাসেন।
আল্লাহ পবিত্রতা ভালবাসেন।
২২৩ নং আয়াত: স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
(২২৩) তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে
যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার। তোমরা তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করিও এবং আল্লাহকেও ভয় করিও । আর জানিয়া রাখিও যে, তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হইতে যাইতেছ এবং মুমিণগণকে সুসংবাদ দাও।
------------------------------------------------------------------------------
তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। অর্থ্যাত্ স্ত্রীকে সন্তান উত্পাদনের ক্ষেত্র হিসাবে ধরা হয়েছে।
শস্যক্ষেত্রের উদ্দেশ্য হল শস্য উত্পাদন করা । স্ত্রীর কাছে যাওয়া হচ্ছে বাচ্চার জন্ম দেয়া ।
(পবিত্র কুরআনে মানুষকে বোঝানোর জন্য অনেক উপমা ব্যবহার করা হয়েছে। এই উপমা সাধারণত দেয়া হয়েছে যা মানুষের কাছে অনুভূত, মানুষের অভিজ্ঞতা আছে সে সব বস্তুর উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ প্রকাশ করেন। যাতে মানুষ সহজে বুঝতে পারে। এই উপমার আরবী অর্থ 'মেছাল'। বহুবচন 'আমছাল'।
নারীবাদীরা এই আয়াতটিকে অপব্যখ্যা করেন যে, ইসলামে নারীকে মর্যাদা দেয়া হয় না।
এই আয়াতে স্ত্রীকে জমি এবং স্বামীকে কৃষকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কৃষক তার জমিকে ভাল ফসল পাবার জন্য অনেক যত্ন করে। আগাছা বাছে, চাষ করে , উর্বরতা বাড়াতে সার দেয়। তার জমির যেন কেউ ক্ষতি না করতে পারে তার জন্য ব্যস্ত থাকে। তেমনি একজন স্বামীর চিন্তা ও পরিকল্পনা থাকে তার স্ত্রীকে নিয়ে। সে তার ভবিষ্যতের জন্য সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তান জন্মের পর স্ত্রী ও স্বামী দুজনেই খুশী এবং আনন্দিত )
'যেভাবে তোমরা চাও' - পুরুষদের যাওয়ার বৈধ জায়গা হচ্ছে স্ত্রী যেখানে গেলে বাচ্চা হয়।
'নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর।' আগামীর কোন সম্ভাবনা নেই সে পথে আল্লাহ যেতে বলেননি।
অবৈধ যৌন চিন্তা থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে।
কারণ প্রত্যেক মানুষকে একদিন আল্লাহর সম্মুখীন হতে হবে।অর্থ্যাত্ শেষ বিচারের দিনের কথা বলা হয়েছে।
২২৪ নং আয়াত: নেককাজ ত্যাগ করার শপথ নিষিদ্ধ হওয়া ।
------------------------------------------------------------------------------
(২২৪) তোমরা সত্কাজ, আত্মসংযম ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন হইতে বিরত রহিবে -এই শপথের জন্য আল্লাহর নামকে তোমরা অজুহাত করিও না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর নামে নিয়ে সত্কর্ম, আত্মসংযম ও মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপন করব না - এ ধরণের শপথ করা যাবে না।
আল্লাহর নাম নিয়ে শপথ করে ভূল কাজে ব্যবহার।
এই আয়াতে আল্লাহকে সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ বলা হয়েছে কারণ তিনি সবকিছু শোনেন এবং জানেন।
২২৫ নং আয়াত: অর্থহীন শপথ সম্পর্কে।
------------------------------------------------------------------------------
(২২৫) তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করিবেন না। কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করিবেন। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল।
----------------------------------------------------------------------------
অনিচ্ছা সত্বেও রাগ, অভিমান বা আবেগে মিথ্যা শপথ করে থাকলে পাপ হবে না।
এই শপথের কাফফারা দিতে হবে না।
পরকালেএর কোন হিসাব দিতে হবে না।
২২৬ ও ২২৭ নং আয়াত: ঈলা সম্পর্কে ।
------------------------------------------------------------------------------
(২২৬) যাহারা স্ত্রীর সাথে সংগত না হওয়ার শপথ করে তাহারা চার মাস অপেক্ষা করিবে। অতঃপর যদি তাহারা প্রত্যাগত হয় তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
------------------------------------------------------------------------------
(২২৭) তালাকপ্রপ্তা স্ত্রী তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকিবে। তাহারা আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাসী হইবে
------------------------------------------------------------------------------
২২৮ নং আয়াত: তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ইদ্দত ও পুনঃগ্রহণ।
------------------------------------------------------------------------------
(২২৮) তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকিবে। তাহারা আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাসী হইলে তাহাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহা গোপন রাখা তাহাদের পক্ষে বৈধ নহে। যদি তাহারা আপোস-নিস্পত্তি করিতে চায় তবে উহাতে তাহাদের পুনঃ গ্রহণে তাহাদের স্বামীগণ অধিক হকদার। নারীদৈর তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাহাদের উপর পুরুষদের; কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
------------------------------------------------------------------------------
তালাক প্রাপ্ত নারীগণ তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে। ( এখানে যে নারীর কথা বলা হয়েছে সে গর্ভবতী নয়)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক হবার আগে যে মহিলার তালাক হয়েছে তার বেলায়ও প্রযোজ্য।
এ ধরণের নারীরা তিন মাসিকবস্থা অতিবাহিত হবার পর বিবাহ করতে পারবে।
গর্ভবতী নারীর ইদ্দত প্রসব হওয়া পর্যন্ত।
তালাকের পর মাসিক নিয়ে মিথ্যা কথা বলা অন্যায়। (যেমন কারো যদি ফিরে যাবার উদ্দেশ্য থাকে তবে মিথ্যা বলতে পারে আমার একবার বা দুইবার মাসিক হয়েছে। আবার ফিরে যাবার ইচ্ছে না থাকলে বলে আমার তিনবার হয়ে গেছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয় নি। )
গর্ভ গোপন করা বৈধ নয়।
নারী ও পুরুষের উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার আছে।
নারী ও পুরুষ প্রকৃতিগত আলাদা বৈশিষ্ট আছে তাই তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা আছে।
আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাসয়- এ কথা বলে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পারস্পরিক হক বিনষ্টকারীকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন
অনুধাবন:
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেথানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারা সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। ব্যক্তি কিভাবে তার পরিবার গঠন করবে এবং সন্তানের অধিকারী হবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে।
পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। বিশৃঙ্খল সমাজে নারী-পুরুষ উভয়েরই মানসিক শান্তি বিনষ্ট হয়। ইসলাম নিষেধাজ্ঞা জারী করে পারিবারিক জীবনকে সুসংহত করেছে।
এই আয়াতে নারীকে শস্যক্ষেত্রের তুলনা দিয়ে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেতে বলেছেন ।শস্যভূমিতে যেমন বীজ বপন করা হয় তেমনি নারীর জরায়ুতে বপন করা বীর্য। ভূমিতে যেমন উত্পন্ন হয় ফসল, তেমনি নারীগর্ভে আবির্ভূত হয় মানব শিশু।
স্বামী-স্ত্রী মিলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব বংশ বিস্তার।
রজঃস্রাব ব্যাপারটি মেয়েদের দিক থেকে যে কষ্টদায়ক সেটা যাতে তার পুরুষ সঙ্গী মনে রাখেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পবিত্রতা ভালবাসেন। এই পবিত্রতা হতে হবে শারিরীক, খাদ্য, মানসিক এবং আত্মিক।
আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য পরকালে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ।