বার্ধক্য ভাবনা
বার্ধক্য ভাবনা।
FB খুললেই যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় , কি ভাবছেন? এই ভাবনার কি শেষ আছে? আর সে সাথে যদি সার্বক্ষণিক সাথী হয় আরেক বৃদ্ধ। তাহলেতো সোনায় সোহাগা! দুনিয়ার ভাবনা। যার কোন আদি-অন্ত নেই। নেই কোন যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক কারণ। ভাসুন দুশ্চিন্তার সাগরে।
ভাবতে শুরু করেছি জ্ঞান হবার পর থেকে এ পর্যন্ত কি করেছি এবং কি খুঁজেছি । উত্তরও কিছু পেয়েছি।
যেমন - প্রথম যে জিনিসটা খুঁজেছি তা আর কিছু নয় - 'পর মুখিপেক্ষিহীনতা'। যে জিনিসটা মাতা-পিতা ছোট বেলায মনের মধ্যে এমনভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যা আমার সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে চলে এসেছিল ।
জীবনের শুরুতে অধ্যাপনার সাথে সাথে সব সময় আরেকটি কাজও করতে বাধ্য হয়েছি সম্পদের খোঁজে।কারণ এটা শুধু আমাদের দুজনের সংসার ছিলনা। আমার সহধর্মীর অনেক পারিবারিক দায়িত্ব ছিল। মনে করেছিলাম আমাদের সম্পদ আমাকে সুখ দিবে। নিজের ছোট বাচ্চাদের বঞ্চিত করে সব সময় কাজ করতে হয়েছে ।
কিন্তু অবশেষে ফলাফল কি? সম্পদ কি আমাকে সুখ দিতে পেরেছে । পারেনি । যাদের জন্য করেেছি তাদেরও দিতে পারিনি । আমার ভুল ছিল অর্থের মধ্যে 'পরমুখাপেক্ষীহীনতা' খুঁজতে গিয়েছি যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। ভেবেছিলাম এতেই আমার শান্তি।
না ভাই, মোটেই শান্তি পাইনি। জীবনের পদে পদে প্রাইই অশান্তির সম্মুখীন হয়েেছি।
আমাদের জীবনের চাওয়াটা একটি চেইন। একটি আরেকটির সাথে জড়িত। আমি আরেকটি জীবনে ভুল চিন্তা করেছি ও খুঁজেছি। তা হল - 'সম্মান ও মর্যাদা'। ভেবেছিলাম আল্লাহর সৃষ্টি সেরা জীব মানুষ।
এই মানুষের মধ্যে বিশেষ করে নিজেদের পরিবারের মানুষের মধ্যে খুঁজেছি সম্মান ও মর্যাদা। পেয়েছি কি? পাইনি। পেয়েছি তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা । এক কাপ চা। ভাবছেন - এটা আবার কি ?
প্রথম শ্রেণীর অতিথির জন্য হল ফান্টা, কেক, বিস্কিট। দ্বিতীয় শ্রেণী হল এক কাপ চা আর বিস্কিট। আর তৃতীয় শ্রেণী ? এক কাপ চা। মারাত্মক ভুল কাজ করেছি । ভুল জায়গায় খূঁজতে গিয়েছি।
আমার উচিত ছিল সম্মান ও মর্যাদা না খুঁজে শুধু দায়িত্ব পালন করে ক্ষান্ত থাকা। এই প্রচন্ড চপেটাঘাতের পর অবশ্যই আমার চিন্তা ধারা বদলিয়েছে। আপন জনের কাছে আর খুঁজতে যাইনি। নিজ দায়িত্বের মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছি।
তৃতীয় আরেকটি জিনিস খুঁজেছি ভুল জায়গায়। তা হল -নেয়ামত। খুঁজেছি খাদ্য ও পরিধেয় বস্তুর মধ্যে। এক সময় অনুভব করলাম এতেও কোন তৃপ্তি নাই।
চাহিদার কোন শেষ নেই। আমার চিন্তার মধ্যে দুনিয়ার চিন্তাই প্রবল। যে চিন্তার কোন শেষ নেই । অত এব, ব্যস্ততারও শেষ নেই। অভাব-অনটনের শেষ নেই।
আমার বাবা একটি উপদেশ দিতেন । তা হল 'অল্পে তুষ্ট থাক' । একটা গল্প বলতেন। মসনবী রুমীর ঝিনুকের গল্প। যখন বৃষ্টি পড়ে তখন নদীর তলদেশ থেকে যত ঝিনুক আছে তারা বৃষ্টির পানি খাবার জন্য নদীর উপরে চলে আসে।
যে ঝিনুক এক ফোঁটা খেয়ে নদীর তলদেশে চলে যায় তার পেটেই উজ্জল বড় মুক্তার জন্ম নেয়। যার দাম অনেক বেশী। আর যে ঝিনুক লোভের বশবর্তী হয়ে কয়েক ফোঁটা খায় তার আকার হয় খুবই ছোট এবং কম দাম।
'পরমুখাপেক্ষিহীনতা' এবং মানুষের মাঝে 'সম্মান ও মর্যাদা' খুঁজতে গিয়ে হয়েছি পরমুখাপেক্ষী ও উপাধি পেয়েছি 'নাম কেনার কাঙ্গাল'। আর ভুল জিনিসে নেয়ামত খুঁজতে গিয়ে পেয়েছি অশান্তি।
আবার ভেবে বসেন না আমি আমার জীবনের গল্প করছি। এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প। আমি ঢাকা শহরের বৃদ্ধা মহিলার উপর এক গবেষণায় অংশ নিয়েছিলাম ।
গবেষণাটি ইন্ডিয়ার ভেদাস পাবলিশার্স প্রকাশ করে এবং আমাজন ডট কমে পাওয়া যায়। সেখান থেকেই শিক্ষা পেয়েছি আমি । ভুল জিনিস আর না খুঁজে আসল জিনিস খুঁজে পেয়েছি।
পরমুখাপেক্ষিহীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছি 'অল্পে তুষ্টির' মাধ্যমে। আর সে সাথে পেয়েছি সম্মান ও মর্যাদা তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ্যাত্ আল্লাহর উপর নির্ভরতার মাধ্যমে। কুরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, "আল্লাহর উপর যে নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।
তাওয়াক্কুলের জন্য সংযম জরুরী। যে নেয়ামত খুঁজছিলাম খাদ্য ও পরিধেয় বস্তুর মধ্যে তা বর্জন করে সংযমী হতে পেরেছি। দুনিয়ার ধন-সম্পদ হারিয়ে মোটেই দুঃখ করিনি। বরং ভেবেছি আল্লাহর নেয়ামত আল্লাহই নিয়ে গেছেন। কিন্তু তার চেয়ে বড় নেয়ামত যেটা দিয়েছেন সেটা হল 'ইলম,' বা জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা।
পেয়েছি এবং জেনেছি ইসলামকে। পেয়েছি আত্মার খোরাক। 'ইসলাম'কে। একটি কঠিন কাজ সহজাত প্রবৃত্তি এবং দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণের বশেই করতাম। সেটা হল ভাই বোনদের বিপদে-আপদে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সহানুভূতি দেখান। বিনা প্রশ্নে , সম্পূর্ণ স্ব উদ্যোগে। আর দুটো কঠিন বিষয় কখনো গুরুত্ব দেইনি, একটি হল নিজের সাথে ইনসাফ এবং আল্লাহর যিকির বা আল্লাহকে সব সময় স্মরণ। আর সে সাথে দুনিয়ার নেয়ামতের ধোঁকা থেকে উত্তরণ।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অফুরন্ত অবসরে মনের গতিকে লাগাম দেয়া মুশকিল। জীবেনে ভুলের হিসাব -নিকাশ করতে গিয়ে বার্ধক্যের রোগকে ডেকে আনা। ডিমেনশিয়া, হতাশা , অবসন্নতা, একাকীত্ব বোধ।
সবশেষে হযরত লোকমান (আঃ) এর তার ছেলেকে দেয়া উপদেশ দিয়ে শেষ করছি করছি। তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন: বাবা! দুনিয়াটা হল এক গভীর সমুদ্র। অনেক মানুষ এতে ডুবে গেছে। তুমি 'তাকওয়াকে নিজের জন্য জাহাজ বানিয়ে নাও। (তাহলে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পৌঁছাতে পারবে গন্তব্যস্থলে।)
আমলের নৌকা মজবুত করুন। দুনিয়ার সাগরে নেক আমল হলো নৌকা। এই নৌকার ছাদ হচ্ছে 'তাওয়াক্কুল'।আল্লাহর কিতাব কুরআন হচ্ছে পথ প্রদর্শক। মরণ হল সাগরের তীর। আর হাশরের ময়দান হচ্ছে গন্তব্যস্থান। আর মহান আল্লাহ হচ্ছে এর মালিক।